হেফাজতে ইসলাম নাকি অরাজনৈতিক সংগঠন?
লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ০৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৫৫:৫৩ সকাল
হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ বলেছেন তাদের সংগঠন নাকি অরাজনৈতিক। তেমনি শাহবাগিরাও বলেছে তারা নাকি অরাজনৈতিক সংগঠন। আবার তবলিগীরাও বলেন তারা রাজনীতি করেন না। আরো অনক সংগঠনের নাম করা যায় যারা নিজেদেরকে অরাজনৈতিক সংগঠন বলে প্রচার করেন। কিন্তু আসলেই কি ওরা অরাজনৈতিক? এসব নেতা দের কথায় আর কাজে কতো অমিল তা সাধারণ মানুষের চোখে ধরা পড়লেও চাকচিক্যময় বাক্য বিলাসে জনগণ প্রায়ই ভুল করে।
পাঠক, আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন যখন শাহরিয়ার কবির বা আল্লামা শফি সাহেব নিজেদেরকে অরাজনৈতিক বলে দাবী করেন অথচ তাদের সবগুলো কর্মকান্ডই ১০০% রাজনৈতিক। এ প্রসঙ্গে প্রয়াত ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের কথটা মনে পড়লো। আশীর দশকে বাংলাদেশে ন্যাপের মোটামুটি একটা কার্যক্রম ছিল। দেশ স্বাধীনের আগে অবশ্য ন্যাপ ভাষানি এবং ন্যাপ মোজাফফর এর বেশ প্রভাব ছিল। ঐ সময়ে সিলেটের রেজিষ্টারী মাঠে এক জনসভায় মোজাফফর আহমেদ বলেছিলেন মানুষের প্রতিটি কাজই রাজনৈতিক কাজ। এমনকি যে শিশুটি এইমাত্র ভুমিষ্ট হয়েই হুঁয়া হুঁয়া বলে কান্না শুরু করলো, তাও তার রাজনীতি। সে ভুমিষ্ট হয়েই জানান দিলো সে এসে গেছে, তার জন্য উপযুক্ত খাদ্য, বাসস্থান ইত্যাদি ইত্যাদি লাগবে। সে কেঁদে জানিয়ে দিল, তার দাবী। সেটাই তার রাজনীতি। কেউ কেউ অবশ্য এখোনো বলেন মানুষ হলো রাজনৈতিক জীব।
হেফাজতের তেরো দফা কিংবা ঘাদানি কমিটির দাবিগুলো'র কোনটা অরাজনৈতক?
হেফাজতের প্রথম দাবীটা হলো সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্তা ও বিশ্বাসকে পুনঃস্থাপন করতে হবে। এটা কি করে অরাজনৈতিক দাবী হয়? হেফাজতে ইসলাম কি করে সেটা বাস্তবায়ন করবে? একটা বিশাল আকারের লংমার্চ করে কি এই কাজ হয়ে যাবে? একটা না আরো একশোটা লং মার্চ করতে পারেন কিন্তু সংবিধানে এই লাইনটা লিখতে গেলে রাজনীতি করা লাগবে এবং তারা এই রাজনীতিই করছেন। ইসলামকে কটাক্ষকারীদের শাস্তির বিধান করতে হলেও একই কথা এবং তারা তা করছেন। বাকী দাবীগুলোও একই।
তারা তবে কেনো নিজেদেরকে অরাজনৈতিক বলছেন? আসল কথা হলো নিজেদের দুর্বলতা জনগণকে জানতে না দেয়া। তাদের কর্মী সমর্থকদের সবাই না হলেও প্রায় সবাই একটা বিশ্বাস কিংবা শ্রদ্ধার কারণে হেফাজতের ডাকে সাড়া দিয়ে সারা দেশে একটা তোলপাড় করে ফেলেছেন। এরকম আবেগে তোলপাড় করা এক জিনিস আর দাবী আদায় করা ভিন্ন বিষয়। একদিন বা কিছুদিন আবেগের উপর ভাসা যায় কিন্তু পেটে ক্ষুধা লাগলে কিংবা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার সময় হলে সব আবেগ পেছনের দরজা দিয়ে পালায়। হেফাজতের বেলায়ও তা হয়েছে।
দেশব্যাপি লংমার্চের কর্মসুচীর দিন যতোটা এগিয়ে আসছিল, দেশবাসীর মনে একটা অজানা শঙ্কা দেখা দিচ্ছিল। কি হবে, কি হবে একটা কথা সবার মুখে মুখে ছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি বরং মুখ রক্ষার একটা হরতালের কর্মসুচী দেয়েই হফাজতে ইসলাম নিজেদেরকে হেফাজত করে নিয়েছেন। এখন সবাই ঘরে ফিরে গেছেন, সবার মনে সেই আবেগও নাই। তবে একটা প্রাপ্তির তৃপ্তি অবশ্য সবাই উপভোগ করছেন আর তা হলো 'দেখিয়ে দিয়েছি'।
এই 'দেখিয়ে দেয়া'য় কার কি হয়েছে? হ্যা, হয়েছে একটা কিছু। কয়েকজন চুনাপুঁটিকে এরেস্ট করা হয়েছে, হেফাজতের নেতারা সেটা বলতেই পারেন। কিন্তু এসব কি কোনো মৌলিক পাওয়া? হেফাজতে ইসলামের নেতারা কি করে আশা করেন যে ধর্মনিরপেক্ষ একটা দলকে ক্ষমতায় রেখে সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্তা লিখা হয়ে যাবে? ক্ষমতাসীন সরকারের সবগুলো মন্ত্রী যেখানে কেউ পুরো নাস্তিক, কেউ আধা নাস্তিক এমনকি স্বয়ং সরকার প্রধান যেখানে দুর্গা দেবী'র ভক্ত তাদেরকে ধমক দিয়ে আপনারা সংবিধান পরিবর্তন করে ফেলবেন? আপনারা লংমার্চ করবেন আরা তারা আপনাদের কথায় সবকিছু ফেলে এসে বলবে, হুজুর কি চান বলুন আর দোয়া করুন। আমরা আপনাদের সব দাবী পুরণ করতে প্রস্তুত।
যে সংবিধান বদলানো'র জন্য তারা যুগের পর যুগ ধরে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। এই সময়ে কতো সংখ্যক মানুষকে হত্যা করে, কতো সম্পদ ধ্বংশ করে, কতো চুক্তি এবং দাসখত লিখে পরে তারা ক্ষমতায় গিয়ে এই কাজটি করেছে আর আপনাদের মিঠা মিঠা কথায় তারা সেটা বদলে দেবে? আমাদের হুজুরদের সরলতা দেখে আবারও মনে হয় মুসলমাদের নেতারা কোথায় আছেন।
নাস্তিকদের দোষর এই হাসিনা সরকার আজ জাতির উপর যেভাবে চেপে বসেছে তাকে সরানো'র জন্য দেশের মানুষ অধীর। হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসুচীকে ঘিরে মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল। দীর্ঘ দিন ধরে মানুষ এই সরকারকে বিতাড়ন করতে চাইলেও অক্ষম বিএনপিকে দিয়ে মানুষের আশা ভঙ্গ হয়েছিল। জামায়াত যদিও মরণ কামড়টা দিতে চেয়েছে কিন্তু বিভিন্ন কারণে তারাও সুবিধা করতে পারেনি। শেষ মেস মানুষ এই লংমার্চের মাঝে একটা আশার আলো দেখছিল কিন্তু হেফাজতের তথাকথিত 'অরাজনৈতিক' সমাবেশ থেকে দেশের মানুষ আবারও অন্ধকারে ডুবে গেলো।
এখন এই কোটি মজলুমের একমাত্র অবলম্বন হলেন আল্লাহ।
বিষয়: রাজনীতি
১৫৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন