এখন কাঁদতেও পারবেন না।
লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০১:১০:২৬ দুপুর
শেখ মুজিব কখন কোথায় একটা পা রেখেছিনে, কখন কোথায় একটা হাঁক মেরেছিলেন সেটাও জাতীয়ভাবে পালন করা হয়। তার জন্য এই দিবস সেই দিবস পালন করা বাংলাদেশে ফরজে আইন হয়ে গেছে। সেসব দিবসে রাজধানী সহ সারা দেশের এমন কোনো স্থান বাকি থাকেনা যেখানে 'ভায়েরা আমার' বাজানো হয়না। আর এইসব বাজানোর জন্য প্রতি ঘরে ঘরে চাঁদা বাধ্যতামূলক। এমনকি সরকারি অফিস থেকেও চাদার অংক ঠিক করে দেয়া হয়। একজন মন্ত্রী তো প্রকাশ্যে বলে দিয়েছিলেন কে কতো চাঁদা দেবেন। এর পর চমচাদের চামচামি দেখা যায় গণমাধ্যম গুলোতে। পারলে তাকে ভগবান বানিয়ে ফেলতে চায় সবাই। আচ্চা, বানাও। মাজারে ফুল, প্রতিকৃতিতে ফুল, যে সিঁড়িতে লাশ পড়েছিল সেখানে ফুল, মূর্তিতে ফুল। কোন জিনিসটা যে এসব দিনে করা হয়না সেটাই চিন্তা করে বের করা কঠিন। তোমরা ক্ষমতায় আছ, তমাদের ইচ্ছাই তো আইন। আমরা মানলে মানলাম না মানলে না, তাতে তোমাদের কিছুই আসে যায়না। ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক আমরা নাক কান বন্ধ করে মেনেই নেই।
কোনো দেশের ৫৭ জন অতি সাধারন মানুষও যদি একদিনে কোনো দুর্ঘটনায় মারা যায় তবে সেই দিনকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা না করলেও অন্তত ঐ দিনটিকে সভা সমাবেশ, দোয়া দুরুদ, স্মৃতিচারণ, কাঙালি ভোজ, মিলাদ, কবর জিয়ারত ইত্যাদির মাধ্যমে জাতি দিনটিকে পালন করে। এ দিনটিতে রেডিও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। নিহতদের আত্নিয় সজনদের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। তাদের নিয়ে দেশের বিশিষ্ট জনেরা আলাপ আলোচনা করেন। দৈনিন সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। এতে দেশের বড়ো বড়ো লেখক, চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের মতামত বিশ্লেষণ করেন। গোটা জাতির কাছে বছরে একবার ঘঠনাটি আবার ফিরে আসে এবং জাতি এই ধরণের ঘটনার পুনারাবৃত্তি যাতে না হয় সেই শপথ নেয়। আর মৃতদের পরিবার পরিজন আরো বেশী করে তাদের হারিয়ে যাওয়া সজনদেরকে স্মরণ করে। এক্সটেন্ডেড পরিবার একত্রিত হয়ে যার যার ধর্মীয় রিতী অনুযায়ী কোনো না কোনো অনুষ্ঠানের মাধ্যনে দিনটি পালন করেন। নিজেদের মাঝে কান্নাকাটি করে হলেও আপন জন হারানোর বেদনা লাঘব করেন। সরকারের তরফ থেকে প্রসিডেন্ট, প্রধান মন্ত্রী, বিরুধী দলীয় নেতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও বিশেষ বানী প্রদান করেন যা সকল গণ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়।
কিন্তু বাংলাদেশের সেরা সেরা ৫৭ জন সামরিক অফিসারকে এই দিনে হত্যা করা হয়েছে যা দুনিয়ার ইতিহাসে দ্বিতীয় উদাহরণ আর নাই। এমনকি বিশ্ব যুদ্ধ সহ ইতিহাসে কোনো যুদ্ধে একসাথে এতো অফিসার নিহত হওয়ার নজীর নাই।বাংলাদেশের মতো একটা ছোট্ট দেশের পক্ষে এই ৫৭ জন চৌকশ অফিসারকে হারানোর ক্ষতি সামাল দেয়া কখনোই সম্ভব না, হবেওনা। কিন্তু আজকের দিনটিতে আমরা কি দেখলাম? কি সরকারী, কি বেসরকারি, কি সামরিক বা বেসামরিক কোন সংগঠন বা প্রতিস্ঠান থেকে আমাদের এই আপন মানুষদের কথা একটি বারও স্মরণ করা হলোনা। বুদ্ধীজীবী, টক শো ওয়ালা, রেডিও, টিভি, পত্র পত্রিকা কোথাও একটা কিছু লেখা বা বলা হলোনা। কেউ একটা বানী দিল না। কেউ একটা মিলাদ বা দোয়ার আয়োজনও করলোনা। সরকারী তরফ থেকে তো করা হলোনা, সেটা নাহয় আমাদের বোধগম্য। কারণ এই হত্যা যজ্ঞ ঘঠানো হয়েছে সরকারের জ্ঞাতসারে এবং এর পরিকল্পনায়ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সায় ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষের লোকেরা কই? তারাও তো কিছু করেছেন বলে জানা গেলোনা। আর জানবোই বা কি করে? সবগুলো সংবাদ মাধ্যম তো এখন 'র' এর অর্ডারে চলছে। তারাও এই নিয়ে কোনো খবর বা কথা বার্তা প্রচার করতে পারছে না। সবাই একদম চুপ।
এই চুপ করিয়ে দেয়ার কারণে আমরা এই ৫৭ টি পরিবারের কান্না পর্যন্ত শুনতে পেলাম না। তারা নিশ্চয়ই আজ কেঁদেছেন কিন্তু সেই কান্নার আওয়াজ আমরা শুনতে পাইনি। তাদের কান্না তো থামানো যাবেনা কিন্তু সেই অশ্রু যাতে কেউ না দেখে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। তদের কান্নার আওয়াজ যাতে কেউ না শুনে সেটার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নাকি তাদেরও বলে দেয়া হয়েছে যে কেউ কাদতেও পারবে না, চোখে জল আনতে পারবেনা, দোয়া, মিলাদ, কাঙালি ভোজ কিছুই করতে পারবে না।
আসলে এই জাতি যে কি করতে পারবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বিষয়: বিবিধ
২১৭৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর যারা এই খুনের সাথে জড়িত তারা তো চাইবে না মানুষ এই দিনটিকে স্মরণ করুক। কারণ মানুষ জানে কারা এর পিছনে জড়িত।
নিউ এইজের ফেসবুক পেইজে দেখলাম , তিন বাহিনীর প্রধান ও আর্মি অফিসারের সম্মান জানাতে বনানী করবরস্থানে গিয়েছেন
তিন প্রধান গেছেন ভাল কথা।
দেশ এই ভাবে চলবেনা, ভারতের আন্ডারে যাবেই যাবে। দেশের তিন মারাত্মক শক্তিতে বিভক্ত হয়ে গেছে। যারা এক দল অন্য দলকে যবেহ করা দেশ প্রেমের দাবী মনে করে। বি এন পি, জামায়াত আর আওয়ামিতে বিভক্ত হওয়ার পর এই দেশ কে আর স্বাধীন রাখার কোন পথ আছে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন