সরকারকে পরাজিত করতে গিয়ে জামায়াত শিবির নিজেদেরকে পরাজিত করছে নাতো?

লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ২৬ ডিসেম্বর, ২০১২, ১২:৪৯:০৩ দুপুর

এই সময়ে এই লেখাটা লিখবো কিনা, ব্লগে দেবো কিনা, দেয়া উচিত হবে কিনা, এর প্রতিক্রিয়া কি হবে, আন্দোলনে এর কি কোনো প্রভাব পড়বে, নেতা কর্মীরা কথাগুলো কিভাবে নেবে, বিরোধী পক্ষ কথাগুলোকে আমাদের দুর্বলতা ভেবে বা অন্তর্দ্বন্দ ভেবে আরো মরিয়া হয়ে অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে কিনা এসব নিয়ে বেশ চিন্তা ভাবনা করেছি। শেষমেশ আমার মনের কথাগুলো বলার এবং প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলাম। আল্লাহ সবকিছুই দেখছেন এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছুই নাই এই বিশ্বাসের কারণেই লেখাটা প্রকাশের জন্য দিলাম।

ইসলামী আন্দোলনের কাছাকাছি থেকে, আন্দোলনের গতি প্রকৃতি কাছে থেকে দেখে, ইসলামের সৌন্দর্য্য বুঝতে পেরেই এই আদোলনের সাথে একাত্ন হয়েছি। দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলনের নেতাদের চরিত্র , তাদের নির্দেশনা, তাদের নৈতিক মান, কর্মীদের প্রতি দরদ এবং সংগঠন পরিচালনায় ইসলামি অনুশাষন ও জজবা, গণতান্ত্রিক প্রথা পদ্বতির চর্চা এবং সর্বোপরি সন্ত্রাস পরিহারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ দেখে আসছি। এমনকি, অধঃস্তন নেতা কর্মীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ বা বিভিন্ন ইস্যুতে সামান্য মারামারির অনুমতিও দেয়া হয়নি। একান্ত বাধ্য না হলে সন্ত্রাসীদের মুখোমুখী হতেও নিষেধ করা হতো। বলা হতো এড়িয়ে যাও। নিজেদের প্রেস্টিজ ইস্যু বলে এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় ভেতরে ভেতরে কে্উ কেউ অসন্তুষ্টও হয়েছেন কিন্তু শেষ কালে ঐসব নির্দেশনা অনেক ভাল ফল দিয়েছে এবং যারা অসন্তুষ্ট হেতেন তারাও এর ফলাফল পেয়ে নেতাদের প্রজ্ঞা ও দুরদৃষ্টির প্রশংসা করেছেন।

আমার কথাগুলো যারাই পড়বেন তাদের কাছে আগেই বলে রাখি, এই লেখাটা একান্ত ভাবেই নিজের গরজ থেকেই লিখছি। সংগঠনে ভালবাসি, সংগঠনের মানুষদেরকে ভালবাসি এবং ইসলামী আন্দোলনের একজন ক্ষুদ্র সমর্থক বলেই এই কথাগুলো বলতে চাইছি। বিভেদ সৃষ্টি, আন্দোলনে ফাটল ধরানো, নেতৃত্বের ভুল ধরা, কর্মীদের মনোবল নষ্ট করা এসব কিছুই আমার উদ্দেশ্য নয় । দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে আন্দোলন করে জামায়াত মানুষের মাঝে একটা সুন্দর, নৈতিক মান সম্পন্ন এবং সুশৃঙ্খল আদর্শবাদী সংগঠন হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্টিত করতে পেরেছে। সাথে সাথে শিবিরও খুব অল্প দিনে তাদেরকে সেরকম ভাবেই ছাত্র সমাজ সহ আপামর জনতার কাছে প্রতিষ্টিত করতে পেরেছে। এই সংগঠনের লোকদের প্রজ্ঞা ও ধৌর্যের প্রশংসা সবাই করেন। এমনকি যারা তাদের বিরোদ্ধ বাদি তারাও এদের ভাল দিকগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে না হলেও অন্তত গোপনে বা তাদের নিজেদের মাঝে আলাপ আলোচনা করেন। এই যে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে, শত ত্যাগ আর কুরবানি দিয়ে গড়া ঐতিহ্য, মানুষের মনের গভীরে পোষা ভালবাসা, শত অত্যাচার নিপীড়নেও অন্যায় পথে পা না বাড়ানোর কারণে মানুষের সহানুভুতি, এসব কিন্তু মিডিয়ায় প্রচার প্রপাগান্ডা দিয়ে হয়নি। মানুষ নিজের চোখে নেতা কর্মীদের আচার আচরণ , কাজ কারবার, চাল চলন, এবং মোয়ামিলাত দেখেই এমন হয়েছে। ইয়ানতের জন্য গেলে মানুষ লুকিয়ে হলেও দেয়। কেনো? এদেরকে তারা ভালবাসে বলেই নিজের কষ্টার্জিত অর্থ অন্যদেরকে লুকিয়ে এবং অন্যরা রুষ্ট হবে জেনেও এদেরকে দেয়। এরা কখনো বিপদে পড়লে আশ্রয় দেয়, খাবার দেয়। পুলিশের আগমন বার্তা আগেই জানিয়ে সাবধান করে দেয়। ভাত রান্নার আগে এক মুষ্টি চাল শিবিরের জন্য তুলে রাখেন আমাদের মা বোনেরা। রাজনৈতিক ভাবে ভিন্ন মতের হয়েও ছেলেকে তার নৈতিকতার কারণে পিতা শিবির না করার কথা বলেন না, ধমক দেন না। ভিন্ন মতের স্বামীর কাছ থেকেও মহিলারা এয়ানতের টাকা আদায় করে নিয়ে এয়ানত দেন। সংঠনের মানুষগুলোকে দেশের ইসলাম প্রিয় লোকেরা এরকম ভাবেই তাদের ভালবাসা দিয়েছে এবং এখনো দিয়েই আসছে। এমন কি, এখন তো খোদ বাম পন্থীদেরকেও এদের নৈতিক মান দেখে তাদের প্রশংসা করতে দেখা যাচ্ছে। পিয়াস করিমরা কোন দায়ে পড়ে এখন কথা বলেন বুঝতে পারেন কি?

সেই কুড়ি বছর আগে যখন দেশে ছিলাম তখন দেখেছি। যে কোনো মিছিল বের হলেই মানুষ পটাপট ধড় ফড়িয়ে দোকান পাট বন্ধ করে বাইরে এসে দাঁড়াতো। মিছিলটা অতিক্রম করে গেলে যদি কোনো গন্ডগোল না হয় তবে আবার দোকানের শার্টার খোলা হতো। মিছিলের আওয়াজ শুনা মাত্রই দোকানের শার্টার বন্ধ করার আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে যেতো, পথচারিরা হকচকিয়ে যেতো। যে কোনো দলের মিছিল হোক না কেনো মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতো। এই বুঝি ভাংচুর শুরু হয়, কি আগুন লাগিয়ে দেয়, কি লুটপাট মারামারি শুরু হয়। পথচারিরা দৌড়ে জান বাঁচানোর চেষ্টা করতো। রাস্তার ধারের হকাররা তাদের পশরা নিয়ে নিরাপদ দুরত্বে চলে যেতো। কিন্তু একমাত্র ব্যাতিক্রম ছিল জামায়াত বা শিবিরের মিছিল। মিছিলের শব্দ শুনেই সবাই শার্টার বন্ধ করার উদ্যোগ নিতো ঠিকই কিন্তু যখনই জামায়াত বা শিবিরের মিছিল আসছে বুঝা যেতো তখন কেউ আর শার্টার বন্ধ করার কথা ভাবতো না। মিছিল দেখার জন্য বাইরে দাঁড়াতো ঠিকই। তারা জানতো এই মিছিল থেকে কোনো ভাংচুর হবেনা, আগুন লাগানো হবেনা, কেউ লুটপাটও করবে না, মারামারিও হবেনা।

তখনও জামায়াত শিবিরের বিরোদ্ধে অপপ্রচার ছিল এবং এখনো আছে। তখন কিন্তু একটা মাত্র নিজস্ব পত্রিকা বাদে তাদের আর কোনো মিডিয়া ছিলনা। সবগুলো মিডিয়া তখনও এরকম মিথ্যা প্রচারণা চালাতো, এখনো চালায়। কিন্তু এখন একটি নয়, বেশ কয়েকটা মিডিয়া জামায়াতের সরাসরি পক্ষে না বললেও বিপক্ষে ততোটা বলে না। অন্য সব মিডিয়া মিথ্যা বললেও অন্তত তাদের সব মিথ্যাকে বিনা বাক্যে মানুষের কাছে চালাতে তারা পারছে না। এটা এই কয়েক দশকে জামায়াতের অর্জন বলতেই হবে।

অধ্যাপক গোলাম আজমকে যখন বিএনপি সরকার জেলে নিয়ে গেলো। তখনও আন্দোলন হয়েছে কিন্তু তাতে কোনো ভাংচুর বা আগুন দেয়ার ঘঠনা ঘটেছে বলে মনে পড়েনা। অবশ্যই এটা সত্য যে, এরকম আত্যাচারের ষ্টিম রোলার তখন চালানো হয়নি।আইয়ুব খানের সময়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয় এবং সব নেতা দেরকে বন্দি করা হয়। এর পর প্রহসনের বিচারে মওলানা মওদুদীকে (রাঃ) ফাঁসির রায় দিয়ে তা কার্যকর করার প্রস্তুতি চলতে থাকে। সেসময়ও আন্দোলনেও এরকম ভাংচুর বা আগুন দেয়ার ঘঠনা ঘঠেনি।

আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের আগেই জামায়াত শিবির নিধনের যে পরিকল্পনা দিল্লীতে হয় তা জামায়াতের কেউ ঘুনাক্ষরেও হয়তো চিন্তা করতে পারেন নি। মঈণ উদ্দীনরা ক্ষমতাসীন থাকতে তার রাজকীয় ভারত সফরের সময়ই বিষয়টা পাকাপাকি হয় এবং তিনি দিল্লীর দে্যা ঘোড়া নিয়ে যখন ঢাকায় অবতরণ করেন ঠিক সেদিনই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথাটি নতুন করে জনসমক্ষে আনেন। এর পরই সবার অলক্ষ্যেই এক সিগনালে গঠিত হলো সেক্টর কামান্ডার ফোরাম। এর আগেই দিল্লী বিষয়টাকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানে বেশ প্রতিষ্টা করে ফেলেছিল। মাঝখানে এ নিয়ে তেমন হল্লা চিৎকার করা থেকে বিরত ছিল তারা। কিন্তু চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর জামায়াত শিবিরের সমর্থনের বিষয়টা দিল্লীর রাডারে পুরোপুরি ধরা পড়ে যায়। তারা এ নিয়ে বিষধ গবেষনা এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে দেখতে পায় যে, বাংলাদেশের মানুষ যদিও জামায়াতকে ততোটা ভোট দেয়না কিন্তু তাদের সততা, ন্যাপরায়নতা এবং কর্ম দক্ষতার প্রতি মানুষের আস্তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর্থ সামাজিক বিভিন্ন দিকে জামায়াতের প্রতিষ্টাও চোখে পড়ার মতো। আওয়ামী লীগকে টেক্কা দিবার মতো শক্তি এবং জনসমর্থন জামায়াতের তখন না থাকলেও অচীরেই তারা তা অর্জন করে ফেলতে পারে। বিশেষ করে বিএনপি'র রাজনৈতিক আচরণ এবং অন্তর্দলীয় কোনদল, অসততা এবং অপরিনামদর্শী কাজ গুলো দক্ষীন পন্থী ভোটারদেরকে ক্ষুব্ধ করে জামায়াতের পক্ষে নিয়ে যেতে পারে। আর বিএনপি থেকে মানুষের আস্তা নষ্ট হয়ে গেলে জামায়াত ছাড়া দক্ষীন পন্থীদের যাবার আর জায়গা নেই। তখন জামায়াতই হবে একমাত্র দল যাকে সামাল দেয়া ভারতের পক্ষে সম্ভব হবেনা। এমনকি আওয়ামী লীগকে দিয়েও তাদেরকে ঠেকানো যাবেনা। সুতরাং যে কোনো মুল্যে জামায়াতকে ঠেকাতেই হবে। সাথে দেশের ভেতরে প্রকৃত দেশ প্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করে দিতে হবে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দিল্লী যেভাবেই হোক, যাদের মাধ্যমেই হোক জামায়াত শিবিরকে সরিয়ে দিতে সবকিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য তারা আওয়ামী লীগকে প্রয়োজনে ছেড়ে দিয়ে হলেও জামায়াতকে সরিয়ে দিতে চায়। গত কিছুদিনের ঘঠনা প্রবাহ আরো বেশী করে এর প্রমাণ করে। তারা বিএনপি'কে জামায়াত ছেড়ে দেবার পুরষ্কার হিসেবে ক্ষমতায় বসানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রদূত সরাসারি এমন কথা বলেছেন যা যে কোনো কুনৈতিক শীষ্টাচারের বরখেলাপ। অথচ আমাদের দেশের কোনো দল থেকেই এর প্রতিবাদ করা হয়নি। ঘাদানিকের আন্দোলন, সেক্টর কামান্ডার ফোরামের কাজ করবার, শুশীল সমাজের নিরব সমর্থন, মানবাধীকার বাদীদের উল্টো প্রচারণা, সংস্কৃতিক কর্মীদের আবেদন নিবেদন, ভুঁইফোঁড় বামদের হরতাল এবং সাথে মখা বাহীনির আচরণ, সবগুলো মিডিয়ার সিন্ডিকেটেড তারস্বরে মিথ্যা প্রচারণা এসবই এই পরিকল্পনার অংশ।

বাংলাদেশের অধীকাংশ মানুষই জানে এবং বিশ্বাস করে জামায়াতের নেতারা নির্দোষ। তাদেরকে মানবতা বিরোধী আপরাধে বিচারের নামে শতাব্দির জঘন্যতম মিথ্যাচারের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্যই নাটক করা হচ্ছে। মিডিয়া, বসংবদ শুশীল আর নাস্তিকরাই কেবল এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দিল্লীর ভরসা। এর সাথে দেশের মানুষের বেশীরবাগেরই কোনো সম্পর্ক নাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই দেশের কোথাও তাফসির মাহফিল সহ সব ধরণের ইসলামী অনুষ্টান বন্ধ করে দেয়। জামায়াত শিবির এবং অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলোকেও কোনো সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। অফিসে, ঘরের ভেতরে, প্রেসক্লাবে এমনকি নিজের ঘরেও কথা বলতে দিচ্ছেনা। সভা সমাবেশ, মিছিল মিটিং এর গণতান্ত্রিক সব অধীকার থেকে জামায়াত শিবিরকে জোর করে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। চিরুণি অভিযানের নামে সারা দেশের নিরিহ ছাত্রদেরকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করে অকথ্য নির্যাতন করা হচ্ছে। নির্দোষ নেতাদেরকে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হয়েছে। কোথাও দাঁড়াবার এমনকি একটা মানব বন্ধনেরও কোনো সুযোগ দেয়া হয়না। সারা দেশ থেকে হাজার হাজার নেতা কর্মিদেরকে ধরে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল ভরে দেয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে জীবনের তরে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। একবার কোনো ক্রমে জামিনে বের হলে আবারও নানা মামলায় গ্রেফতার এবং আবারও রিমান্ডে নির্যাতন। ছেলে বুড়ো কেউই এই নি্যাতন থেকে রাহাই পাচ্ছেনা। এদিকে সারা দুনিয়া জুড়ে প্রতিবাদ সত্বেও ক্যাঙারু কোর্টে বিচার নামক প্রহসনের রায় বেলজিয়াম থেকে এনে নিরপরাধ আলেমে দ্বীনকে ফাঁসিতে ঝুলানোর ব্যবস্থা। এতোসব অন্যায়, নির্যাতন, নিপীড়নের পরও জামায়াত একটা সভা সমাবেশ বা মিছিল করলেই পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলে পড়ছে। পুলিশের গুলি, টিয়ার গ্যাস খেয়ে নিজেদের আত্ন রক্ষার জন্য ক'টা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলেই সরকারের সাথে সাথে সবগুলো মিডিয়া একসাথে প্রপাগান্ডা চালানো শুরু করে জামায়াত শিবির পুলিশকে মারছে। বলা হয় এসব নাকি চোরা গুপ্তা হামলা। শিবিরের ছেলেদেরকে ধরে রিমান্ডে নিয়ে গোয়েন্দা দের জিজ্ঞাসাবাদে ঢাহা মিথ্যা নাশকতার পরিকল্পনার কথা মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। এমন অবস্থায় যখন শিবিরের ছেলেরা শান্তিপুর্ণ একটা মিছিল বা মানব বন্ধন করতে গেলেও পুলিশের বুট তাদের বুকের উপর উঠে যায়, রাস্তায় ফেলে শাপের মতো পিটায়, গ্রেফতার করার পরও জনসমক্ষে লাটি দিয়ে পিটিয়ে হাত পা ভেঙে দেয় তখন তারা করবেটা কি? মার খেতে খেতে এক সময় আত্ন রক্ষার্থে তারাও পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশকে পিটিয়েছে। অধীকাংশ মানুষ শিবিরের এই সাহসী কাজকে বাহবা দিয়েছে। কিন্তু আমাদের মিডিয়াগুলো আর কিছুই না দেখে শুধু শিবিরের মারাকেই দেখলো। আরে বাবা, শিবিরের ছেলেগুলো যদি সন্ত্রাসী হতো তবে বন্দুক কেড়ে নিয়ে কি পিটাতো, নাকি গুলি করতো? সে তো গুলি করেনাই। আবার কি ঐ বন্দুক ফেরত দিতো? সন্ত্রাসী হলেতো বন্দুকটা নিয়েই চম্পট দিতো। এর পরেও ঐ আহত পুলিশকে তারাই ধরে নিয়ে হাসপাতালে নিতো? আমাদের একচক্ষু মিডিয়া কখনো এসব দেখেনা। তবে জনগণ তা ঠিকই দেখে।

প্রচারণা এমন অবস্থায় উঠানো হলো যে, খোদ কৃষি মন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে বললেন 'তারিখ দাও, সময় বলো'। অর্থাত ইচ্ছা করেই জামায়াতের সাথে মারামরি করার ঘোষনা। একটি বৈধ রাজনৈতিক দলকে আইন অনুযায়ী সমাবেশ করতে না দিয়ে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো সরকারের তরফ থেকে। বাধ্য হয়েই সরকারের কাছে জামায়াত আবারও সমাবেশের লিখিত অনুমতি চাইলো এবং তার কপি মিডিয়ায়ও দেয়া হলো। কিন্তু অনুমতি দেয়া তো হলোইনা, উল্টো দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী সারা দেশ বাসীর সামনে ঢাহা মিথ্যা বলে একজন মিথ্যাবাদী প্রমানিত হওয়ার পরও সমাবেশ করতে দিলোনা। এই পর্যায়ে একটি বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক অধীকার রক্ষার জন্য এবং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে আগেই ঘোষিত হরতাল ডাকা ছাড়া জামায়াতের জন্য অন্য কোনো পথই খোলা ছিলান। ইতোপূর্বে জামায়াত একক ভাবে সারা দেশে হরতালের ডাক দিয়েছে কি না আমার জানা নাই। জামায়াত কোনো হরতাল মুখী দল না, এরা শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অভ্যস্ত একটি দল। কিন্তু এই হরতাল ছিল সরকারের গায়ে পড়ে হরতাল ডাকতে বাধ্য করাএকটি কর্মসূচী। সমাবেশ করতে দিলে হরতাল ডাকার কোনো পর্শ্নই উঠতোনা। কথাটা আরো অনেকেই বলেছেন।

আর একটি রাজনৈতিক দল যদি হরতাল বা যে কোনো কর্মসূচীই দে্য় এবং তা যদি পালিত বা বাস্তবায়িত না হয় তবে সেটা দলের গ্রহণযোগ্যতা, ক্ষমতা এবং প্রেষ্টিজ ইস্যু হয়ে যায়। সেজন্য দলের ঘোষিত হরতালকে সফল করতে ঐদিন জামায়াত শিবির সর্ব শক্তি দিয়ে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের গত চার বছরে আহুত সব হরতালকে ম্লাণ করে দিয়ে জামায়াতের হরতাল সফল হয়। সারা দেশের মানুষ জামায়াত শিবিরের আন্দোলনের দক্ষতা দেখে সমীহ করতে শুরু করে। ভিন্ন ভাবে হলেও সবগুলো মিডিয়া সবিরোধী কথা বলতে থাকে। সরকারের ইশারায়ই এসব প্রচারণা চালানো হয়।

এই হরতালকে সফল করতে গিয়ে জামায়াত শিবির কিছু গাড়ি ভাংচুর করেছে, আগুন লাগিয়েছে এবং পুলিশের সাথে কিছু মারামারির ঘঠনাও ঘঠেছে। বিষয়টি বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দৃষ্টিতে দেখলে তেমন কিছুই নয়। এমন হাজার হাজার ঘঠনা আওয়ামী লীগ এবং তার সমগোত্রীয়রা সারা জীবন ধরেই ঘঠিয়ে চলেছে। দেশের মানুষ এসব জানেন। কিন্তু ইসলামী দৃষ্টিতে দেখলে তা মারাত্নক অপরাধ। কোনো মুসলমানের পক্ষেই জনগণের সম্পদ ধংস করা বা সরকারী সম্পত্তির উপর হামলা করা উচিত নয়। তার পরও কেনো জামায়াত শিবির এসব করলো? তবে কি জামায়াত শিবির আদর্শচ্যুত হয়ে যাচ্ছে? তারা কি আর ইসলামকে তাদের আদর্শ বলে মানে না? আওয়ামী লীগের মতো তারাও যদি এসব করে তবে তো তারাও আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করে ফেললো। সঙ্গত কারণেই এসব প্রশ্ন উঠছে। এর পর আমেরিকান দুতাবাসের গাড়ি ভাংচুরের জন্য জামায়াতের সেক্রেটারীর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ এবং দায় স্বীকার করার কথাও আসছে। ইসলাম পন্থী কিছু ভাইও এসবে দেখে জামায়াতের প্রতি কিছুটা রুষ্ঠ হয়েছেন। আর জামায়াত বিরোধীরাতো হরতাল হারাম বলেই ফতোয়া দেয়া শুরু করেছেন। ইসলামী দল হয়ে জামায়াত এই করে সেই করে। যেনো তারা এসব করার লাইসেন্স নিয়েছেন, জামায়াত করলেই ইসলাম চলে গেলো।

বিষয়টা নিয়ে একজন দায়িত্বশীলের সাথে আলাপ করে যা জানলাম তা ও পাঠকের কাছে বলা জরুরী। তিনি যেমন বললেন যে, বর্তমানে জামায়াত এমন একটি সময় পার করছে যা জামায়াতের জীবনে আর ঘঠেনি। একটি নয়, কয়েকটি রাষ্ট্র মিলে, 'র' মোশাদ এবং আরো কিছু গোয়েন্দা সংস্থার শলা পরামর্শে এবং প্রত্যোক্ষ সাহায্য সহযোগিতায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং আরো কয়েকটি দল একাট্টা হয়ে সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যাবহার করে রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাসের মাধমে একটি বৈধ রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ণ করে দিতে যখন সমস্ত শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে তখন জামায়াতের মতো একটি দল যে এখনো টিকে আছে সেটাই একটা অবিশ্বাস্য বিষয়। তিনি বললেন, জামায়াতের সব নেতা জেলে, যারাওবা বাইরে আছেন তারাও আত্নগোপনে, সারা দেশের সব অফিসে তালা, সবার ফোন পর্যন্ত মনিটর করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় কারো সাথেই কোনো যোগাযোগ করা প্রায় অসম্ভব। কোনো বৈঠক করা কিংবা পরামর্শ করারও উপায় নাই। এমন অবস্থার পরও যখন কোনো কর্মসুচী দেয়া হয় তখন নেতা কর্মীরা যার যা আছে তাই নিয়ে কর্মসূচী সফলের চেষ্টা করেন। মার খাতে খেতে কিছু সংখ্যক কর্মীর মনের অবস্থা এরকম হয়েছে যে, যে কোনো উপায়েই হোক কর্মসুচী সফল করতে হবে। তারা এখন ন্যায় নিতীর ধার ধারতে চায়না। বিক্ষুব্ধ এইসব কর্মীদেরকে ভাংচুর থেকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো সুযোগ ,উপায় উপকরণ এখন আর নাই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া লোকদের কাছে বৈধ আর অবৈধতার প্রশ্ন করা বৃথা। এর পর আছে সাবোটাজ। জামায়াত শিবিরের বদনাম করার জন্য, তাদেরকে মানুষের কাছে হেয় করার জন্য এমন কাজ নাই যা সরকার তার দলের লোকদের দ্বারা কিংবা গোয়েন্দাদের দ্বারা করছে না। যেসব ভাংচুর হয়েছে তা যে সবই শিবিরের ছেলেরা করেছে তার প্রমাণ নেই। হতে পারে এসবের পেছনে সরকার আছে।

তার কথাগুলো শুনার পর আমার মনের ভেতরে উঁকি দেয়া কিছু প্রশ্নের আধা জবাব পেয়েছি কিন্তু খটকা দুর হচ্ছে না। ইসলামী আন্দোলন করতে গিয়ে যদি নিজেরাই ইসলামের নির্দেশের বাইরে চলে যাই তাহলে এর গ্রহণযোগ্যতা কতোটুকু? যেসব লোককে আজ তারা ফাঁসিতে ঝুলাতে চাইছে, জামায়াত শিবির রাজপথের আন্দোলন করে কি তাদেরকে বাঁচাতে পারবে? মাওলানা মওদুদী (রহঃ) এর উক্তি স্মরণ করলে তো বলতেই হয় জীবন ও মৃত্যুর ফায়সালা আসমানে হয়, জমিনে হয়না। মুসলমানদের আকীদা যদি এ ই হয় তবে এইসব আন্দোলন করে কি লাভ? আন্দোলন করেকি স্কাইপি কেলেঙ্কারি উদঘাটন করা হয়েছে নাকি সেটা মহা শক্তিশালীর মহাণ ষড়যন্ত্র? সারা দুনিয়ায় তারা এখন মুখ দেখানো'র মতো অবস্থায় নাই। এই কাজটি কি আসমান থেকে করা হয়নি? টার্কি থেকে যে দলটি এলো তাদেরকে তারা দেশে আসতে দিলো কিকরে? টার্কির প্রসিডেন্টের চঠি পাওয়ার পরও তারা এই দলটিকে আটকে দেয়নি কেনো? কি করে তারা সমস্ত প্রটোকল দিয়ে আইন মন্ত্রী পর্যন্ত দলটিকে তারা নিয়ে এলো? এই দলটি যখন সমস্ত তথ্য উপাত্ত নিয়ে চলে গেলো, এখন সরকারের টনক নড়েছে যে হায় হায়, টার্কির দলটির কাছে সবকিছু তো ফাঁস হয়ে গেলো। এখন তারা নিজেরাই নিজেদেরকে দোষছে আর নিজেদের মাথার চুল ছিঁড়ছে। এই কাজটি কি কোনো আন্দোলনের ফলে হয়েছে নাকি মহান আল্লাহই তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে বেখেয়াল করে দিয়ে ট্রাইব্যুনালের সবকিছু ফাঁস করে দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন?

তারা কি রাজপথের আন্দোলনের ভয়ে নেতাদেরকে ছেড়ে দেবে? এর অর্থ এই নয় যে আমি বলছি আন্দোলন করতে হবেনা, আল্লাহই তার বান্দাদেরকে রক্ষা করবেন। আমার কথা হলো, আমরা আমাদের সর্ব শক্তি দিয়ে আন্দোলন করবো, কিন্তু অনৈতিক ভাবে দেশের সম্পদ এবং জান মালের ক্ষতি করবোনা। ৭০ বছরে জামায়াত যে ইমেজ গড়েছে তা এই সময়ে নষ্ট করা যাবেনা। এই সময়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করাই সঠিক। আমাদের ধৈর্য চ্যুতি ঘটানোই তাদের আসল টারগেট। আমর যদি এই সময়ে ধৈর্যের পরীক্ষায় পাশ করতে না পারি তবেই আমরা হেরে গেলাম। আমার ধারণা হলো তারা ইচ্ছা করেই জামায়াত শিবিরের উপর অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে এজন্য যে অত্যাচারিত হয়ে যদি তারা আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যায় এবং অস্ত্র হাতে নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করে। তাহলেই তাদেরকে জংগী, আলকায়দার অনুসারী বলে প্রমাণ করে চির দিনের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়া যাবে। গত সপ্তাহে ২১ জন নারীকে বিনা কারণে গ্রেফতার, রিমান্ড, জামিন না দেয়া এবং জেলে পাঠানোর আর কোনো কারনই নাই। এর একমাত্র কারণ হলো এই যে, আমাদের নারীদের গায়ে হাত দিলে তা মারাত্নক স্পর্শ কাতর বিষয় বলে গণ্য হবে এবং সবার গায়ে লাগবে। এতে জামায়াত শিবিরের লোকেরা আবারও আইন ভঙ্গ করে কিছু একটা করবে যাতে বিশ্বের কাছে তাদেরকে সন্ত্রাসী বলে প্রমাণ করা যাবে। এই ফাঁদে আমাদের পড়া যাবেনা, এই সময়েই সবর ইখতিয়ার করতে হবে নাহয় আমরা পাশ করতে পারবোনা।

তাদের টারগেটই হলো জামায়াতকে জংগী, আলকায়দার অনুসারী প্রমান করে নিষিদ্ধ করা। এই টারগেট নিয়েই তারা যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখন আমরা যদি তাদের টারগেট বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের নিরবুদ্ধিতা দিয়ে সাহায্য করি তবে শেষে কাকে দোষ দেবো? এই বিষয়টি চিন্তা করে সেই কবে শুনা মান্না দে'র একটি গানের কলি মনে পড়লো।

তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছো

দিতে পারনি

কি তার জবাব দেবে যদি বলি আমি কি হেরেছি !?

তুমিও কি একটুও হারোনি ।

এখন মনে হচ্ছে, সরকারকে রাজনৈতিক ভাবে হারাতে গিয়ে ইসলামে অনুমোদিত নয় এমন কর্মসূচী পালন এবং আচরণ করে কি আমরা শুধু সরকারকেই হারাতে পারছি? নিজেরাকি একটুও হারছি না?

আল্লাহ আমাদের নেতৃবৃন্দ সহ সবাইকে সব ধরণের ফাঁদ থেকে রক্ষা করুন এবং নিজেরাই যেনো নিজেদের পরাজয়ের কারন না হই।

বিষয়: রাজনীতি

১৪৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File