আওয়ামী লীগই এমন আন্দোলন শিখিয়েছে।
লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০১:১১:৪৭ দুপুর
একটা সময় ছিল যখন যে কোনো মিছিল দেখলেই ভ্যে মানুষ দৌড় শুরু করতো, দোকানিরা শারটার ধুম ধুম করে লাগাতো, ফুটপাতের ফেরিওয়ালারা তাদের পসরা গূটিয়ে নিয়ে গলির ভেতরে চলে যেতো। ঐসব মিছিল থেকে বেশীর ভাগ সময় ভাঙচুর হতো এবং লুটপাটও হতো।
জামায়াত শিবির ময়দানে আসার পর যখন মিছিল করা শুরু করলো, প্রথম দিকে মানুষ এমনই করতো। কিন্তু কিছুদিন যেতেই মানুষের ধারণা পাল্টে গেলো। তারা যখন দেখলো যে জামায়াত শিবিরের মিছিল থেকে কখনো ভাংচুর বা লূটপাট হয়না তখন এদের মিছিল দেখলে আর দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়না বা দোকান লাগানোর দরকারও হয়না। তখন মিছিল দেখলেই শুধু খেয়াল করতো 'জয় বাংলা' শুনা যায় কিনা। এটা শুনলেই শুরু হতো দৌড়াদৌড়ি।
বিএনপি যখন থেকে এরকম মিছিল করা শুরু করলো, তারাও প্রথম দিকে এরকম ভাংচুর বা লূটপাট করতো না। ভদ্র লোকদের দলে যখন কিছু সন্ত্রাসী আর লুটেরা জুটতে শুরু করলো, তাদেরকেও মানুষ ভয় পেতে শুরু করে কিন্তু 'জয়বাংলা'র লোকদের মতো না।
আওয়ামী লীগের আন্দোলন মানেই ছিল মিছিল, ভাংচুর, আগুণ দেয়া, লুটপাট, গুলি, ছুরি মারা, পুলিশ মারা, বোম মারা এইসব। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, আওয়ামীলীগের আন্দোলনকে (আসলে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা) ভয় পেতো এবং আওয়ামীলীগকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করতো।
আওয়ামী লীগ এরকম অরাজক কর্ম কান্ড করে তাদের দাবী আদায় করে ফেলতে পারে দেখে এক সময় অন্যরাও আওয়ামী লীগের মতো আন্দোলন করতে উৎসাহিত হয়। আর তখন থেকেই আন্দোলনের অর্থ হয়ে যায় জ্বালাও পোড়াও ভাংচুর করো আর অরাজকতা সৃষ্টি করো- তাহলেই দাবী আদায় হবে।
এর পর ন্যায্য কোনো দাবীও যখন মিছিল মিটিং বা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় হয়না, সরকার শুনে না তখন সাধারণ মানুষ বলা শুরু করে যে, এরকম নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দাবী আদায় হবে না, সরকার শুনবে না। তোমরা আন্দোলন করতে জানোনা, আওয়ামী লীগ জানে এবং তারা দাবী আদায় করেই ছাড়ে। এমনও দেখা গেছে যে, লোকজন বার বার টিটকারি মেরে বলেছে, তোমরা করবে আন্দোলন? এসব কি আন্দোলন? আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আন্দোলন শিখে এসো। এই সেদিন পর্যন্ত সরকার এবং এর বাইরের লোকজন বার বার বিশ দলকে টিটকারী মেরেছে, আন্দোলনের মোরোদ নাই বলে। এভাবেই ভাংচুর, আগুণ দেয়া, লুটপাট, গুলি, ছুরি মারা, পুলিশ মারা, বোম মারা, জ্বালাও পূড়াও হয়ে যায় আমাদের দেশের আন্দোলনের ট্র্যাডিশন। এমন না করলে সরকার শুনে না। হরতাল ডেকে যদি গাড়ী ভাঙ্গাচুর করা না হয় তাহলে সেটা সাক্সেস হয়না, পত্রিকায় টিভিতে খবর আসেনা, উল্টো বলা হয় হরতাল ডেকে রাস্তায় কেউ নাই, পিকেটিং নাই। কেউ কেউ এ নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে।
বিশ দলীয় জোট কি নিয়মতান্রিক আন্দোলন করে নাই? সারা দেশের আনাচে কানাচে মিটিং মিছিল হয়েছে। বেগম জিয়া সারা দেশে বিশাল বিশাল জনসভা করে তার দাবী তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন মিডিয়ার জরিপেও কেরার টেকার সরকারের দাবী ৮০ থেকে ৯০ পারসেন্ট মানুষের দাবী বলে উঠে এসেছে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন যে কেউ গ্রহণযোগ্য মনে করেনা সেটাও দেশের মানুষ সহ সারা দুনিয়া বলেছে। কিন্তু সরকার কিছুই শুনে নাই, পাত্তা দেয়নাই। এর পরও বিএনপি এবং বিশ দল যখনই আন্দোলনের কথা বলেছে, আওয়ামী লীগ তখন ঠাট্টা করেছে। তারা ধরেই নিয়েছিল বিশ দলের ভদ্র মানুষেরা তাদের শিখানো এবং দেখানো আন্দোলন (অরাজকতা) করতে পারবে না তাই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়েই ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল।
কিন্তু আর কতো। চারিদিক থেকে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে যখন মানুষের সামান্য অধিকার পর্যন্ত সরকার দিতে অস্বীকার করলো তখন বাংলাদেশী ট্র্যাডিশনাল আন্দোলনের পথ ধরা ছাড়া আর কোনো পথই সামনে রইলো না। আসলে এরকম ট্র্যাডিশনাল (আসলে আওয়ামী ট্র্যাডিশনাল) আন্দোলনে যেতে বিশ দলকে সরকারই বাধ্য করলো। আর যখন বিশ দল এটা শুরু করলো, তখনই সরকারও সেটা আরো শক্তি দিয়ে নিঃশেষ করে দিতে সকল সভ্যতা, ভব্যতা, মানবাধিকার কিংবা গণতান্ত্রিক অধিকার পায়ে দলে এবং লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে চাইলো। এখন যা হচ্ছে সেটা আওয়ামীলিগের নিরবুদ্ধিতার কারণে হচ্ছে এবং এর ফল তারা ভোগ করবেই করবে।
মাঝখানে দেশের এবং জনগণের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেলো।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিএনপি যখন আন্দোলন না করে ন্যায্য দাবি সুন্দর করে তুলে ধরেছিল-তখন তারা বলেছিল, বিএনপি’র আন্দোলনের হ্যাডম নাই।
এখন আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন গৃহপালিত মিডিয়া দিয়ে নিজেদের নাশকতার ভার বিএনপি’র ঘাড়ে চাপাচ্ছে BAL.
আন্দোলনের এই পরিবর্তিত রুপ দেখেই আপনি রাগ করে ছিলেন শ্রদ্ধেয় আয়নাশাহ জ্বী???
বাংলাদেশের মানুষ এরকম ড্যাসিং দলকেই পছন্দ করে ।
২০০৬ এ ধুম ধাড়াক্কা মাইর পিটের সাফল্য ঘরে তুলেছে ২০০৮ এর নির্বাচনে
এভাবেই আমাদের চোখের সামনে একটি জাতির রাজনৈতিক কালচার স্থায়ীভাবে খারাপ হয়ে গেল ।
আওয়ামিলিগ এর ইতিহাস দেখলে এটি সুস্পষ্ট যে এই দল সবসময় গায়ের জোড়ে চলতে চায়। মুসলিম লিগের যে অংশটি আওয়ামি লিগ হয়েছিল সেই অংশটিও তাই ছিল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন