একটি কঠিন মন্তব্য।
লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:৪৩:২৪ সকাল
যে সময়ে জামায়াত প্রচলিত পীর মুরিদী, কবর পুজা, ভণ্ডদের আবিস্কার তাসাউফ, শিরক বিদআতের বরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিল তখন আজকের শিরক বিদাআত এর বিরুদ্ধবাদিরা পর্যন্ত আওয়াজ দিতে সাহস পান নাই। জামায়াতই এইসব আনৈসলামিক কাজ এবং আকিদাকে প্রচন্ড আঘাত করে। এই আঘাতের কারণে স্বার্থ বাদিরা এক জোট হয়ে সত্য মিথ্যা মিলিয়ে জামায়াতকে পাল্টা আঘাত হানতে থাকে যা এখনো চালু আছে। জামায়াত এমন একটি আন্দোলনের সুচনা করে যাতে সব বাতিল ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায় শুধু জামায়াতকে প্রতিহত করার এজেন্ডা নিয়ে। এর মধ্যা যেমন নাস্তিক কমিউনিস্টরা ছিল, তেমনি স্বার্থ্বেসী আলিম ওলামা, পীর মাশায়েখ এবং জাতিয়তাবাদীরাও ছিল। আর বিশুদ্ধ তাওহিদের প্রচার প্রসারে জামায়েতের মতো এমন সুন্দর পরিকল্পনা কেউ ময়দানে আনতে পারেন নি। স্মরণ করুন, মাওলানা আব্দুর রহিম (রহ) তাঁর কালেমা তাইয়েবার অর্থ দিয়ে এ দেশে বিশুদ্ধ তাওহিদকে জাতির সামনে পেশ করেন। তিনিই বাংলাদেশে তাঁর সুন্নাত ও বিদায়াত গ্রন্থের মাধ্যমে বিদআতের উপর এমন আক্রমণ করেন যে আজ পর্যন্ত তাঁর মোকাবেলা করার সামর্থ্য কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি। বলতে গেলে এই গ্রন্থ প্রকাশের পর বিদআত সম্পর্কে মানুষ বিস্তারিত জানতে পারে।(আল্লাহ তাঁর এই খেদমতকে কবুল করে তাকে জান্নাতবাসী করুন)। 'সত্যের মাপকাঠি' বা 'মিয়ারে হক্ক' নিয়ে জামায়াতের আকীদা ভুল প্রমানের জন্য কতো শত চটি বই,লিফলেট আর ওয়াজ করা হয়েছে তার হিসাব নাই। কিন্তু এই বিষয়টা আজ আর তেমন বিতর্কে আসছে না। সহি আকিদার আলিমরাও এই সত্য প্রতিস্টায় সাহায্য করেছেন। সহি হাদিসের অনুসারী আলিমরা এইসব বিষয়ে মতানৈক্য করেন নাই। মুলত জামায়াতের মৌলিক আকীদার সাথে সহি হাদিসের অনুসারীদের কোন ভিন্নমত নাই। যেসব বিষয়ে মাজহাবের অনুসারী বা আহলে হাদিস দের ইজতিহাদি মতপার্থক্য আছে তাকে সাথে নিয়েও জামায়াতে শরীক হতে কোন বাধা নাই। জামায়াতের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই এমন অনেক আলিম জামায়াতে ছিলেন এবং এখনো আছেন। জামায়াত এমন একটি আন্দোলন, যেখানে নিজ নিজ মানহাজে থেকেও দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যে কেউ জামায়াতে শামিল হতে পারে। এজন্য জামায়াত নিজেদেরকে আলাদা ফিরকায় পরিণত করতে দেয়নি। তারা আলাদা মসজিদ, খানকাহ ইত্যাদি তৈরী করে সাধারণ মুসলমানদের থেকে নিজেদেরকে আলাদা করেও ফেলেনি।
আজ যারা নিজেদেরকে সালাফি বা আহলে হাদিস নামে প্রচার করেন তারা শিরক বিদআত মুক্ত সমাজ গঠনে ভাল ভুমিকা রাখছেন সন্দেহ নাই। কিন্তু একটু গভীর ভাবে তাকালে দেখতে পাই, ব্যক্তিগত শিরক বিদআত থেকে মানুষকে মুক্ত করার সাথে সাথে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় শিরক বিদআত থেকে মুক্ত করা আরো বেশী জরুরী। আমি তো বলতে পারি, যারা এখন শুধু শিরক বিদআত নিয়ে খুব বেশী মাতামাতি করছেন তাদের পেটের ভেতরে আছে সুদ, মাথার টুপিতেও আছে শিরক। এইসব নিয়ে তারা টু শব্দটি করেন না কেনো? যে টাকায় তিনি খাবার কিনছেন সে টাকা এবং খাবার কি সুদের ছোঁয়া থেকে মুক্ত? যদি না হয় তবে এর বিপক্ষে দাঁড়ানো তারা কেনো ফরজ মনে করছেন না? তাঁর মাথায় যে পাগড়ী আছে তাঁর প্রতিটি সুতায় সুতায় শিরক। বলবেন কি করে? দেখুন। ওই পাগড়ী তিনি কিনেছেন আর তাঁর জন্য যে দাম দিয়েছেন তাতে কমপক্ষে এক দশমাংশ টেক্স। এই টেক্সের টাকা দিয়েই নির্মান করা হয়েছে শিখা অনির্বাণ যেখানে দেশের হর্তা কর্তা সহ জাতির নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়জিত সেনারা পর্যন্ত পুজা করছেন। আপনার টাকায় যখন এমন শত শত মূর্তি বানানো হচ্ছে এবং পুজা চলছে তখন আপনি নিজেকে কি করে শিরক মুক্ত ভাবেন? ব্যাক্তিগত শিরক থেকে মুক্ত থাকার চেয়ে রাষ্ট্রীয় শিরক থেকে মুক্ত থাকা আরো বেশী জরুরী নয় কি? সমাজের কিছু ব্যাক্তি হয়তো শিরকে লিপ্ত হচ্ছে কিন্তু রাষ্ট্রীয় শিরক থেকে জাতির একজন মানুষও মুক্ত না। তাহলে কোন শিরক থেকে মুক্তির আন্দোলন বেশী জরুরী?
নিজেদেরকে সহি সুন্নাতের অনুসারী বলতে তারা কি বুঝান তা আসলেই একটা ধাঁধা। আল্লাহর রাসুল (সঃ) এর মিশনের দিকে না তাকিয়ে তারা শুধু কিছু ইখতিলাফি মাসআলা নিয়ে টানা হেঁচড়া করে চলেছেন। এঁরাই আবার কোথাও আইসিস নামে, কোথাও জেএমবি নামে আবার কোথাও বুকো হারাম নামে সন্ত্রাসী কন্ড ঘটিয়ে গোটা ইসলামকে বিশ্বাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। তারা গণতন্ত্রের বিপক্ষে কথা বলতে গিয়ে জামায়াতের মতো নির্ভেজাল একটা দ্বীনি আন্দোলনকেও একই ছাঁচে ফেলে দিচ্ছেন। অথচ কে না জানে, জামায়াত পাশ্চাত্য গণতন্ত্রে না বিশ্বাস করে না তা প্রতিস্টা করতে চায়। জামায়াতের মৌলিক আকিদাই হল পাশ্চাত্য গনতন্ত্রের বিপক্ষে আর তা হল, সার্বভৌমত্ব কেবল আল্লাহর এবং গনতন্ত্রের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সেক্যুলার মতাদর্শের বদলে জামায়াত কেবল ইসলামকেই আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা বলে ঘোষণা করেছে। এর পরও যারা জামায়াতকে গণতন্ত্র প্রতিস্টার আন্দোলন মনে করেন তারা আসলে জামায়াতের উপর জুলুম করেন। পাশ্চাত্য গনতন্ত্রের মাঝে এই দুইটা বিষয় বাদ দেয়ার পর জামায়াতের আন্দোলনে আর কোন বিষয়টা ইসলামের বিপক্ষে থাকে? তারা বলেন ভোটাভূটি। ভোট বা জনমত গঠন, নিজেদের আকীদা বিশ্বাস প্রচার, নিজেদেরকে সংগঠিত করা কি করে ইসলামের বাইরে হয়?
আরেকটা বিষয় বার বার তারা বলেন যে, জামায়াত ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম প্রতিস্টা করতে চায় এজন্য তারা যে কোনো মুল্যে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া যা সত্যের আপলাপ ছাড়া আর কিছুই না। অথচ জামায়াত তাদের মূল চার দফা কর্মসুচির প্রথম এবং প্রধান কাজই হল দাওয়াত অ তাবলীগ। এর মাধ্যমে মানুষকে হক্কের দাওয়াত দেবে। দুই নাম্বার কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, যারা জামায়াতের দাওয়াত কবুল করবে তাদেরকে সংগঠিত করতে হবে এবং সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে খাটী মুসলমান হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এর পর তৃতীয় দফায় এসেছে সমাজ সংস্কার। সমাজ থেকে শিরক বিদআত সহ সকল অনৈস্লামিক কাজকে নির্মূল করার জন্য সঠিক এবং বাস্তবসম্মত কাজ করা। এভাবে সমাজকে পরিশুদ্ধ করার পার একেবারে শেষ দফায় বলেছে রাষ্ট্র বা হুকুমাত সংস্কার বা সংশোধন। কোথাও এমন কথা বলা নাই যে জামায়াত নিজেকে ক্ষমতায় প্রতিস্টার আন্দোলন করছে। এমনও হতে পারে যে, যারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছেন তারা নিজেরাই রাষ্ট্রকে ইসলামের সঠিক দিক নির্দেশনা অনুযায়ী চালাবেন। তখন জামায়াতের গদিতে বসার কোনই দরকার হবেনা।
তারা আরো একটি অবান্তর ধারনা প্রচার করেন যে, জামায়াত শুধু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলাম প্রতিস্টা করতে চায়। অথচ এই ধারনা একেবারেই অমূলক। দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষকে সংগঠিত এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারলেই সমাজ সংস্কার হবে এবং এর প্রভাব সর্ব ক্ষেত্রেই পড়তে বাধ্য। বর্তমান দুনিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিবর্তনের যেসব ধারা আছে তাঁর যে কোন একটা হতে পারে ইসলামকে প্রতিস্টার নিয়ামক বা মাধ্যম। এখানে শুধু গণতন্ত্রই না, গন বিপ্লব বা জনগণের স্বতস্ফূর্ত অংশ গ্রহণও হতে পারে। এই বিষয়টা বুঝার জন্য মাওলানা মদুদী (রহ) এর ইসলামি বিপ্লবের পথ বা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের লেখা আধুনিক যুগে ইসলামী বিপ্লব পড়ে দেখা বাঞ্ছনীয়।
বিষয়: বিবিধ
১৮০৬ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আরেক দল আছে পিঠে গাট্টি বোচকা নিয়ে মসজিদে মসজিদে ‘বহুত ফায়দা’ বিলি করার তালে। বিশেষ একটি বই পড়িয়ে ওনারা কোন প্রকারের ইসলাম এ দেশে প্রতিষ্টা করতে চায়, আমি তো বুঝি না, ওনারাও কখনো বুঝিয়ে বলতে পারেনি এখনো। খেলাফত খেলাফত বলে চিল্লালেই খেলাফত খায়েম হয়ে যাবে?
এরাই ফতোয়া দেয় জামায়াত পাশ্চাত্য গনতন্ত্র প্রতিষ্টার জন্য ক্ষমতায় যেতে চাই। অথচ জামায়াতের বর্গীয় জ ও ওরা ঠিক মতো বুঝতে পারছে কিনা আমার সন্দেহ হয়।
তথাকথিত গনতন্ত্র এবং জামায়াতের গনতন্তের তফাৎ জানতে হলে অধ্যাপক গোলাম আজম স্যারের একটা প্রশ্নের জবাব পড়তে হবে। আমার কাঝে আছে, অনেক বড় বিদায় এখানে দিচ্ছি না। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটির জন্য
যাহোক, খুব ভাল্লাগ্লো মন্তব্যটি। মজা করেই পড়ছিলাম, কিন্তু হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে যেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
যারা সালাফি নাম নিয়ে এখন জামায়াত বিরোধিতায় লিপ্ত আছেন তাদের এটাও জানা উচিত সেীদি আরবেও শিরক এর সম্পুর্ন উচ্ছেদ হয়েছে রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জামায়াত সকল শ্রেণীর লোকের মধ্যে কাজ করেছে। পারিবারিকভাবে সম্পূর্ণ ইসলাম শিক্ষা বঞ্চিত লোকদের মাঝেও জামায়াত ইসলামের চেতনা জাগ্রত করে দিয়েছে। কিন্তু কারো কারো ব্যক্তিগত ত্রুটি রয়ে গিয়েছে যেটা জামায়াতের সংস্পর্শে না আসলে আরো অনেক বেশি থাকতো। কিন্তু অনেকে বাস্তবতা চিন্তা না করেই সেই ব্যক্তিত্রুটির জন্য জামায়াতকে দায়ী করে।
একটি উদাহরণ দিচ্ছি। ধরি, ক নামক জনৈক ব্যক্তি আগে ধূমপান করতো, নামায পড়তো না, ইসলাম পালন করতো না, গান বাজনা পছন্দ করতো। একসময় লোকটি জামায়াতের সংস্পর্শে এসে নিজেকে মোটামুটি বদলে ফেলল। নিয়মিত নামায, রোযা পালন করেন। ধূমপান ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এখনো মিউজিকসহ গান শুনে।
এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলতে থাকে- ঐ দেখ দেখ। জামায়াতের লোক গান শুনে। জামায়াত এদেরকে এসব শিখায়।
এখানে গান শুনা লোকটির ব্যক্তিগত ত্রুটি এবং উক্ত ব্যক্তি এটি ইসলামের নামেও চালায়নি বা এটি ইসলামে জায়েয এমন কথাও বলেনি। লোকটি পূর্বে যে অবস্থানে ছিল, জামায়াতের সংস্পর্শে এসে তার ত্রুটি অনেক হ্রাস পেয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন