সুদৃঢ় নেতৃত্ব ছাড়া কিছুই হবেনা।

লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ০২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:৪১:৪৪ দুপুর



নেতা যখন নিজের এবং দলের শক্তি, সামর্থ্য, দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, ক্ষমতা ইত্যাদির উপর বিশ্বাস এবং নির্ভরতা হারিয়ে ফেলে তখনই ভিন্ন কিছুর উপর নির্ভর করতে চায়, দোষারোপ করে, ষড়যন্ত্র তত্ব খোঁজে এবং শেষে নিজেই ভিন্ন শক্তির কাছে শক্তি ধার করে এমনকি নিজেই ষড়যন্ত্র করে। কারো অবস্থা এমন হলেই বুঝতে হবে এদের দ্বারা ভাল কিছু করা সম্ভব না।

জগতে এরকম অনেক উদাহরণ আছে। দুর্বল শাসক এবং নেতারা যখনই নিজেদের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছেন তখন তারা নিজেদের স্বাধীনতা, স্বকীয়তা বিকিয়ে দিয়ে ভিন্ন শক্তির কাছে নিজের দেশকে বন্ধক দিতেও কুন্ঠিত হন নাই। প্রাচীন এবং মধ্য যুগে এরকম দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি আছে। এক নৃপতি যখনই আরেক রাজ্য আক্রমণ করেছে, তখন দুর্বল শাসক শত্রুর কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছ নিজেদের স্বকীয়তা নষ্ট করে হলেও। উদ্দেশ্য, টিকে থাকা। এরকম উদাহরণ এই যুগে কি কম আছে? আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাস কি দেখেন। সেই হাফিজুল্লা আমিনি থেকে শুরু করে রাশিয়াকে বন্ধক দেয়া নেতারা, এর পর কারজাই থেকে এখন পর্যন্ত যারা আছে তাদের দিকে তাকান। শুধু মোল্লা ওমর, যদিও তাদের দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা ইত্যাদি নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে, তারাই দেশকে বিকিয়ে দিতে চায়নি। এর পর ইরাক, লিবিয়া, মিশর, সিরিয়া, ইয়ামেনের দিকে তাকান। কি দেখেন? নিজেদের শক্তির উপর বিশ্বাস না থাকায় তারা সবকিছু বিকিয়ে দিয়ে হলেও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে মরিয়া। এমনকি, সৌদি আরব সহ মধ্য প্রাচ্যের সবগুলো দেশের অবস্থাও তথৈবচ। আর বাংলাদেশের ইতিহাস তো নিজেরাই দেখছেন এবং হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।

সৈয়দ আশরাফ যখন বলে,

নিশা দেশেই চার আনারও না, দুই আনার মন্ত্রী,

ডেন ডব্লিউ মজিনাকে বলে কাজের মেয়ে মরজিনা,

মোদিকে বলে মনোমোহন সিং এর চেয়ে কট্টর আওয়ামী বন্ধু

তখন কি মনে হয়? হাসিনা সরকার ডঃ মোহাম্মদ ইউনুসের মতো প্রভাবশালী লোককে হেনস্তা করে, আমেরিকার মতো পরাশক্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখায়, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আই এম এফ কে থুড়াই কেয়ার করে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউমেন রাইট ওয়াচকে সরাসরি বলে দেয়, তোমাদের মানবাধিকার আটলান্টিকের ওপারে রাখো, বান কি মুনের ফোন উপেক্ষা করে এমন কি এদের কারো ফোন ধরেও না, তখন এমন আচরণের কি ব্যাখ্যা দেবেন? বিনা ভোটে কেবল শক্তি দিয়ে একটা দেশের ক্ষমতায় তারা আছে কি করে? এদের কি এমন শক্তি আছে যে 'ধরাকে সরা' জ্ঞান করে?

উপরের কথাগুলো স্মরণ রেখে নীচের কথাগুলো পড়তে অনুরধ করছি। বেগম জিয়া সেই ২০০৭ সাল থেকেই আন্দোলন করবেন, বাকশালকে বিনাশ করবেন, গণতন্ত্র কায়েম করবেন, মানুষের মুক্তি আনবেন এইসব গাল ভরা কথা শুনাচ্ছেন। কিন্তু কাজে হাসিনার একটা চুলও ছিঁড়তে পারেন নাই, বরং নিজের বাড়ী থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন, সংসদে নিজের এবং দলের অবস্থান হারিয়েছেন, দলের শক্তি সামর্থ্য একতা সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এখনো তিনি কাগুজে হুঙ্কার ছাড়ছেন। দেশের মানুষ এখন তাকে নিয়ে তামাশা করে। কতো ঈদ আসলো গেলো, বন্ধু তো আর আইলোনা, আন্দোলন আর গাইলোনা। তার দলের সবাই নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত। কারো বুকে সাহস নাই। ছেলেকে দিয়ে একদম বাজে কথা বলাচ্ছেন। আর নিজে না কিছু করতে পারছেন না অন্য কাউকে কিছু করতে দিচ্ছেন। এর কারণটা কি? আসল কারন হলো, নিজের এবং দলের শক্তি, সামর্থ্য, দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, ক্ষমতা ইত্যাদির উপর বিশ্বাস এবং নির্ভরতা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। এখন তিনি নিশা দেশেই, মোদি, কিংবা ডেন মজিনাদের উপর দায় চাপাতে চাইছেন। একবার তিনি জামায়াতের উপর ভর করে বৈতরণী পার হতে চাইলেন কিন্তু নিজের এবং দলের অক্ষমতা সেটা হতে দিলনা। এবার তিনি ডুবে যাওয়া মানুষের খড় কুটো ধরার মতো বামদের উপর ভরসা করতে চাইলেন। কাজ হলোনা। আবার হেফাজত যখন উদ্ভট একটা স্বপ্ন দেখলো, ভাবলেন এদের কাঁধে সোয়ার হয়ে যাই। দলের সবাইকে হেফাযতের সাথে থাকার নির্দেশ দিলেন প্রকাশ্যে। কেউ এলনা। জাতিয়তাবাদিদের টিকিটিও দেখা গেলোনা। হা কপাল। দুঃশাসনে অতীস্ট মানুষ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাদেরকে ভোট দিল কিন্তু তিনি সেই সমর্থনকে নিজেদের ঝুলিতে ভরতে পারলেন না। এর পর ৫ জানুয়ারীর ইলেকশন বয়কট করলেন ঠিকই কিন্তু দলকে দিয়ে হাসিনার কিছুই করতে পারলেন না। উপজেলা ইলেকশনে কিছু ফলাফল আসতে শুরু করলে তিনি এবং তার দল আওয়ামী লীগকে প্রতিপক্ষ না ভেবে জামায়াতকেই সে স্থানে বসালেন। যা হবার তা হল। হাসিনা শেষ ধাপের নিরবাচনগুলোর ফল নিজের থলিতে ভরে দিল, তিনি হা করে দেখলেন।

নিজের দলের কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারেননা । তিনিও কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না। করবেন কি করে? স্থায়ী কমিটির মিটিংএ যা কথা বার্তা হয় তা চলে যায় হাসিনার কানে, চলে যায় ডীজীএফ আই এর কছে, চলে আসে মিডিয়ায়। ছাত্র দল বলুন, যুবদল বলুন, মহিলা দল বলুন, একটা কমিটি করার ক্ষমতা তার হাতে নাই। এই আট বছর ধরে ছত্র দলকে দিয়ে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিস্টানে একটা মিছিল করাতে পারলেন না। অথচ নিজেদের মাঝে তারা ঠিকই মারামারি করছে। আর ক্ষমতায় থাকার সময় কি করেছে সেটা কি আর বলে আওয়ামিলীগের হাতে আরেকটা অস্ত্র দেবো? কিন্তু তার অফিসের সামনে তথাকথিত পদবঞ্চিতরা প্রতিদিন মিছিল করে, গাড়ী ভাঙে। বিরোধী দলীয় সবগুলো ছত্র সংগঠন একসাথে একটা সংগ্রাম পরিসধ গঠন করতে পারলোনা। ছত্র দলের কমিটির সবাই নাকি বিক্রী হয়ে যায়। তারা নাকি শিবিরের সাথে মিশে আন্দোলন করতে চায়না। কেনো? জবাব নাকি আসে সেই বামদের কছ থেকে, ওরা রাজাকার। হা কপাল।

এমন অবিশ্বাস আর হতাশা গ্রস্ত নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধী দল হাসিনার মতো একজন 'র' মোশাদের এজেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করবে, সেটা কি করে ভাবতে পারি। হাসিনা নিজের এবং দলের শক্তি, সামর্থ্য, দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, ক্ষমতা ইত্যাদির উপর বিশ্বাস এবং নির্ভর করতে পারেনা বলেই 'র' মোশাদের হাতে দেশের সবকিছু দিয়ে দিয়েছে এবং তারাই তাকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে্যনা।(হাসিনা কিন্তু নিজের মুখেই সেকথা বলেছে। বলেছে আওয়ামী লিগের সবাইকে কেনা যায়, কেবল সে বাদে)। এজন্যই সে এখনো টিকে আছে। খালেদা যদি এর চেয়ে শক্তিশালী কারো কাছে কাছে দেশের সবকিছু দিয়ে দিতে পারেন তবে হয়তো এমন কিছু আশা করা যায়। তবে এই মহিলা কিন্তু এতো নীচে নামতে পারবেন বলে মনে হয়না।

সুতরাং... বুঝহ সুজন, যে জানো সন্ধান।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File