প্রসঙ্গ, শহিদ মিনারে লাশ রাখা এবং এর পবিত্রতা।
লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ১৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:৩৪:১১ দুপুর
প্রথম এবং সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন হল, কারো লাশ শহিদ মিনারে নেয়া হবে কেনো?
শ্রদ্ধা জানানোর নামে ওখানে কি হয়? সেটা কোন ধর্মের বিধান? যদি এটা রাষ্ট্রীয় বিধান হয় তবে তা কোন আইনে বা বিধানে আছে? এই প্রশ্নের কোনো জবাব কেউ দিতে পারবেন না। এমনকি পিয়াস করিমের লাশ শহিদ মিনারে নেয়ার জন্য যিনি সবচেয়ে বেশী সরব এবং ইচ্ছুক সেই Dr. Asif Nazrul , তিনিও এসব প্রশ্নের জবাব জানেন না, যারা বাধা দিচ্ছে তারাও এই প্রশ্নের জবাব জানেনা। আর আমার তো জানার কথাই না। সুতরাং এই প্রশ্নের জবাব আমরা খুঁজে পাবোনা।
এর পরের প্রশ্নঃ 'শহীদ মিনার' নাকি 'অপবিত্র' হয়ে যাবে যদি অমুকের লাশ ওখানে নেয়া হয়।
তাহলে ঐ স্থানাটা কি পবিত্র? পবিত্রতার সজ্ঞা কি? যারা শহীদ মিনার নামক স্থানকে পবিত্র বলে তারা কি পবিত্রতার সজ্ঞা বলতে পারেন? পবিত্রতার ধারনা কি করে মানুষের মনে কাজ করে তা কি তারা জানে?
'পবিত্র' জিনিসটা কি? ওটা কি খাওয়া যায়? নাকি বিক্রী করা যায়? তবে আর যা ই করা যাক না কেনো, আজকাল ওটা দিয়ে যে রাজনীতি করা যায়, ব্যবসা করা যায় সেটা কিন্তু প্রমান হয়ে গেছে।
এবার আসুন দেখি 'পবিত্র' বলতে কি বুঝায়?
পবিত্রতা আসলে একটি বিমূর্ত ধারনার নাম। এটা শুধু অন্তর দিয়ে বুঝা যায়, আর কোনো ভাবেই এর ব্যাখ্যা চলেনা। এটা মানুষের মনের একটা অনুভুতির নাম। মানুষ যখন নিজেকে পবিত্র মনে করে তখনি সে পবিত্র হয়। বাইরে থেকে কেউ জানতেই পারেনা মানুষটি কি পবিত্র নাকি অপবিত্র। বিষয়টা শুধু তার এবং তার অন্তর্যামী সৃষ্টিকর্তার মধ্যেই থাকে, এর মাঝখানে কেউ জানেনা।
আরবী তাহরাত দিয়ে যা বুঝানো হয়, ইংরেজীতে Sacred এবং Holy শব্দ দিয়ে এরকম কিছু বুঝানোর চেষ্টা করা হয় আর বাংলায় বলা হয় পবিত্রতা। কিন্তু আরবী তাহরাত শব্দের মাধ্যমে যে ধারণার সৃষ্টি হয় দুনিয়ার আর কোনো ভাষা দিয়ে এরকম ধারনা প্রতিস্টা করা যায়না। এই ধারনাটা একমাত্র ইসলামই প্রতিস্টা করতে পেরেছে, দুনিয়ার আর কোনো ধর্ম, মতবাদ, ইজম বা জীবন ব্যবস্থা ইসলামী 'তাহরাত' এর সমান ধারনা সংরক্ষণ করেনা।
প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে হিন্দুরা এক ধরণের পবিত্রতার ধারনা পোষণ করেন যা আসলে পবিত্র কি না সেটা অনেক জিজ্ঞাস্য বিষয়। তারা কখনো গোচনা কখনো গোবর ছিটিয়ে ঘর দোর পবিত্র করেন। আবার মহিলাদের রজঃশ্রাব পরবর্তী সময়ে কাঁসার একটা ঘণ্টায় হাতুড়ী পিটিয়ে ঢং ঢং আওয়াজ করে ওদেরকে পবিত্র করেন বলে শুনেছি। এ ছাড়া সোনা রূপা ধোয়া পানিও তারা ছিটান যাতে ঘরে বা ব্যবসায়ে উন্নতি হয়। তাদের মধ্যে এমন একটা ধারনাও প্রচলিত আছে এবং ছিল যাতে কেউ কোনো নীচু জাতের মানুষকে বা মুসলমানকে ভুলক্রমে ছুঁয়ে ফেললে গোবর ভক্ষণ করতে হয় যাতে প্রায়সচিত্ত করে পবিত্র হওয়া যায়। মুসলমানদের গোসল করার মতো হিন্দুরাও স্নান করে পবিত্র হওয়ার ধারনা পোষণ করেন যদিও মুসলমানদের গোসলের সাথে হিন্দুদের স্নানের কিছু পার্থক্য আছে। রতিক্রিয়ার পর হিন্দুরাও নাকি স্নান করেন যা তাদের পবিত্র হওয়ার ধরনা থকে উৎসারিত। মলত্যাগের পর হিন্দুরা লূটা ব্যবহার করলেও মুত্র ত্যাগের পর এরকম কিছু করা তাদের বিধানে আছে কি না জানিনা। তবে সচরাচর কেউই মূত্রত্যাগের পর কোনও লুটা বা অন্য কিছু দিয়ে পবিত্র হতে দেখা যায়না। ছোটবেলায় দেখা অনেক হিন্দু রমণীকে একদিকে কলসিতে পানি ভরার সাথে সাথে পানিতে ঝর ঝর শব্দে মুত্রত্যাগের দৃশ্য আজও চোখে ভাসে। অবশ্য গঙ্গা স্নান, ত্রিবেনি সঙ্গমে স্নান বা বড়ো বড়ো নদীতে হাজার হাজার হিন্দু একসাথে একই সময়ে স্নান করে পুন্য অর্জনের সাথে সাথে পবিত্র হওয়ার দৃশ্য আমরা দেখি যদিও একসাথে এতো লোকের সমাগমের কারনে ঐসব স্থানে মাঝে মাঝে মহামারিও হয়। সে যা ই হোক, আমরা পবিত্রতা নিয়ে আরো কিছু জানতে চেষ্টা করি।
পাশ্চাত্যে পবিত্রতা সম্মন্ধে কেমন ধারনা সেটা তেমন জানিনা তবে ইংরাজি hygiene শব্দ দ্বারা একটা ধারনা তারা তৈরি করেছেন। hygiene শব্দটি দিয়ে তারা মুলত খাওয়া দাওয়া কিংবা জীবানু সংক্রমণ হতে পারে এমন কোনো জিনিস নাড়াচাড়া করার আগে প্রিকশন হিসেবে কিছু কাজ করেন যেমন হাত ধোয়া, হাতে গ্লাভস লাগানো, নাকে মুখে মাস্ক লাগানো, এন্টি বেক্টেরিয়াল স্প্রে ব্যবহার ইত্যাদি। আবার ইংরেজী ablution শব্দ দিয়ে তারা হাত মুখ ধোয়াকে বুঝান যা একটি ধর্মীয় পরিভাষা। মুসলমানদের ওজূ করার যে নিয়ম রয়েছে ablution দিয়ে সেটা বুঝানো যায়না কিন্তু আর কোনো যুতসই শব্দ না থাকায় মুসলমানরাও অজু এর পরিবর্তে এটা ব্যবহার করেন। খ্রিস্টানরা চার্চে যেতে বা প্রার্থনা করার আগে পবিত্রতা হাসিলের জন্য কিছু করতে হয় কিনা তা নিয়ে কিছুই পেলাম না। চার্চে যাবার আগে তারা অবশ্য ভাল এবং সুন্দর জামা কাপড় পড়েন কিন্তু সেগুলো পবিত্র কি না সেটা দেখা হয়না। এমনকি রতিক্রিয়ার পরও পবিত্র হওয়ার জন্য কোনও বাধ্যনাধকতাও আছে বলে জানিনা। পাশ্চাত্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি খুবই সতর্ক নজর রাখা হয় ঠিকই কিন্তু যে অর্থে পবিত্রতা অর্জন করা হয় তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
ইসলামে তাহরাত বা পবিত্রতা অর্জনের উপর আসামান্য গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দুনিয়ার আর কোনও ধর্মে বা মতবাদে পবিত্রতা নিয়ে এমন ভাবে বিস্তারিত বর্ণনা নাই। তাহরাত নিয়ে ইসলামের ফিকাহ এবং মাসআলা মাসায়েল এর উপর বিসদ গবেষণা করে যতো কিতাব লেখা হয়েছে তার হিসাব করা যাবেনা। হাদিসে বলা হয়েছে,(আত তাহুরু শাত্রুল ঈমান) পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ। চিন্তা করে দেখুন, পবিত্রতাকে ইসলাম কতো উপরে স্থান দিয়েছে। একজন মুসলমান সদা সর্বদা নিজেকে পবিত্র রাখতে বাধ্য। নামাজ কিংবা অন্য ইবাদত করার জন্যই শধু নয়, প্রশ্রাব পায়খানা করার পর তাকে পবিত্র হওয়া একান্তই আবশ্যক। সহবাসের পর কিংবা যে কোনো ভাবেই বীর্যপাতের পর গোসলকে ফরজ করে দেয়া হয়েছে যাতে মুসলমান নিজের শরীরকে পবিত্র রাখে। এর পর পরিধানের কাপড়কেও পবিত্র রাখতে হয়। এমনকি ঘর, ঘরের মেঝে, আসবাবপত্র, বাসন কোসন কি করে পবিত্র রাখতে হয় সেটাও বর্ণনা করা হয়েছে। কিভাবে এবং কি বস্তু দিয়ে কি জিনিস পবিত্র করা যায় তাও ইসলাম বিস্তারিত জানিয়ে দেয়। নামাজ কিংবা আল্লাহর ইবাদত করার আগে সাধারন পবিত্রতাতো থাকা আবশ্যক, এর পরও অজু নামক এক বিশেষ পদ্ধতিতে পবিত্রতা অর্জনের শিক্ষা কেবল ইসলামেই আছে। কি কি জিনিস শরীরে, কাপড়ে অথবা অন্য কোথাও লেগে গেলে তা অপবিত্র হয়ে যায় তাও এমন বিস্তারিত এবং খুঁটিনাটি ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা সত্যিই বিস্ময়কর। অপবিত্র বস্তুকে নাজাসত নামে আখ্যায়িত করে নাজাসতের প্রকারভেদ করে দেয়া হয়েছে। কোন ধরণের বা প্রকারের নাজাসত কি করে পরিষ্কার করা যাবে এবং কিভাবে তাহরাত হাসিল করতে হবে সেইসব পদ্ধতিও সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। মেয়েদের হায়েজ নেফাস বিষয়ক মাসআলা মাসায়েল প্রত্যেকটি মেয়েকে কিশোরী বয়সেই জেনে নিতে হয়। পবিত্রতা ভংগের কারন সমূহ বর্ণনা করার সাথে সাথে এইসব বিষয়ে বিস্তারিত জানা এবং তা মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে। মুসলমান ছেলে হোক, মেয়ে হোক সবার জন্য এইসব মাসআলা মাসায়েল শিক্ষাকে ইসলাম ফরজ করে দিয়েছে।
পবিত্রতার এই ধারনা মুসলমানদের মনে এমন একটা দ্যুতনা সৃষ্টি করে যা আর কোনো ভাবেই সম্ভব না। নামাজ পড়ার আগে নিজেকে বড়ো নাপাকী থেকে পরিষ্কার করার পরও অজু করতে হয়। অজু করার সময় হাত, মুখ, পা এবং মাথা মুছা সহ কুলি করা, নাকে পানি প্রবেশ করানো হয়। অথচ যদি কেউ নামাজে অট্টহাসি হাসে তবে তার নামাজ তো ভঙ্গ হবেই সাথে সাথে তার অজুও চলে যাবে। তাকে আবারও অজু করে নামাজ পড়তে হবে যদিও তার শরীরে কোন নাজাসত লাগেনি। এমনি ভাবে যদি কারো প্রশ্রাব, পায়খানা হয় বা শরীর থেকে রক্ত ঝরে যায় তবে তার অজু ভঙ্গ হয়ে যায়। এমনকি পায়ু পথে যদি এক্টুখানি বাতাসও বের হয় তবুও তার অজু ভঙ্গ হয়ে যায় অথচ আবার অজু করার সময় তাকে পায়ু পথ ধোয়া বা ম্রবাবস্থায়। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে এমন একটা ধারনা দেয় যে, মানুষ নিজেকে পবিত্র রাখতেই হবে সব সময় এবং সর্বাবস্থায়। ঘুমাতে যাবার আগে এমনকি স্বামী স্ত্রী একত্রিত হওয়ার আগেও নিজেকে পবিত্র করে নিতে ইসলাম বলে দেয়।
পবিত্রতার এমন একটা সিরিয়াস বিষয়কে নিয়ে যারা আজ খেলা খেলছে তারা কারা? মুসলামান হিসেবে সবাই বিষয়টা নিয়ে ভাব্বেন আশা করি।
বিষয়: বিবিধ
১৭৪০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এক কথায় অসাধারণ এবং সময়োপযোগী
আপনার এমন উপস্থিতি খুবই আকাঙ্খিত!!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মূর্তির মত একটা মূর্তি। এই মূর্তি গুলো কখনো বলে না আমাদের পূজা কর। মানুষ
মূর্তি গুলো বানিয়ে নিজে পূজা করে।
সমগ্র সমাজের লোকরা একত্র হয়ে ২১ ফেব্রুয়ারী শহীদ মিনারের পূজা করে। গ্রাম ও গজ্ঞের সবত্র ৫২ এর পর থেকে এই মূর্তি পূজার চলন শুরু হয়।
শহিদ মিনার পবিত্র হলে তো যেখানে শিব লিংগ আছে ঐ জায়গাটা ও পবিত্র। আ'উযুবিল্লাহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন