পুরুষের দশা, কখনো হাতি কখনো মশা।

লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:৩৯:০৭ সকাল



ইয়াহইয়া বিন মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি, আদদাউর নামক বাগদাদের এক স্থানে ৪৯৯ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। আব্বাসি্য খলিফা মোক্কতাফা লি আমরিল্লা এবং তাঁর ছেলে খলিফা মোস্তানজিদ লিল্লাহ এর সময়ে গভর্ণর হিসাবে কর্মরত ছিলেন। গভর্ণর হওয়ার পুর্বে তিনি খুবই গরীব ছিলেন।

গভর্ণর হিসাবে কর্মরত অবস্থায় একদিন পুলিশ একজন লোককে খুনের দায়ে তাঁর সামনে হাজির করে। আসামী পক্ষ ও ফরিয়াদী পক্ষ উভয়ই উপস্থিত ছিলেন। গভর্ণর ফরিয়াদীকে ৬০০ দিনার রক্তপণ দিয়ে বিদায় করেন এবং খুনীর হাতেও ৫০টি দিনার দিয়ে দেন। এর পর উপস্থিত জনগনকে গভর্ণর জিঞ্জাসা করেন, আপনারা কি জানেন, কেনো আমি আমার ডান চোখ দিয়ে দেখতে পাইনা? জনতা না সুচক জবাব দেন। গভর্ণর তখন ঘটনাটি বর্ণনা করেন।

" আমি একদিন রাস্তার পাশে বসে একটি বই পড়ছিলাম। এই সময়ে এই খুনি লোকটি ফলমুল ভরতি একটি ঝুড়ি নিয়া আমাকে সেটা ধরে রাখতে বলে। আমি সেটা করতে আস্বীকার করি। জবাব শুনে লোকটি আমার ডান চোখে একটি ঘুষি মারে ফলস্বরুপ এর পর থেকে আমি আর এই চোখে দেখতে পাইনা। আজ ইচ্ছা করলে যথার্থ প্রতিষোধ নিতে পারতাম কিন্তু তা নাকরে তাকে ক্ষমা করে দিলাম। শুধু তা ই নয়, রক্তপণ হিসাবে ৬০০ দিনার এবং তার নিজের খরচের জন্য ৫০টি দিনারও দিলাম।"

আরেক দিনের ঘটনা। হঠাৎ করে একজন সৈন্যকে গভর্ণরের সামনে হাজির করা হয়। গভর্ণর তার গার্ডকে হুকুম দেন যেনো সৈন্যটির হাতে ২০ দিনার দিয়ে তাকে এই বলে নির্দেশ দেয়া হয় যে, সে যেনো আর কখনো গভর্ণরের সামনে না আসে। এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে গভর্ণর বলেন, " আমি আমার জন্মস্থানে থাকাকালিন সময়ে আমাদের এলাকায় কোনো কারণ বশত খুন খারাবি শুরু হয় এবং তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য সেখানে সৈন্য পাঠানো হয়। সৈন্যরা নির্বিচারে লোজনকে বন্দি করে সাথে নিয়ে যায়। এখানে যে সৈনিকটি এসেছিল, আমি তার হাতে বন্দি ছিলাম। অনেক বন্দিরা সৈন্যদেরকে টাকা পয়সা দিয়ে মুক্ত হয়ে গেলেও আমি যেহেতু ভীষন গরীব ছিলাম তাই আমি তাকে কোনো টাকা দিতে না পারার অপরাধে আমাকে নির্মম ভাবে পিটাতে থাকে। ইতোমধ্যে আসরের নামাজের ওয়াক্ত হলে আমি তার কাছে নামাজ পড়ার অনুমতি চাই। কিন্তু সে আমার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। তার এই রুঢ আচরণের পরিবর্তে আজ সুযোগ পাওয়া সত্বেও প্রতিষোধ না নিয়ে বরং ২০টি দিনার দিয়ে বিদায় করলাম। "

একজন গরীব লোক থেকে তিনি কিভাবে গভর্ণর হলেন তার বর্ণনা নিম্নরুপ।

গরীব হলেও তিনি কুরআন হাদিস, ইসলামী আইন ইত্যাদি বিষয়ে পড়াশুনা করে বিখ্যাত একজন ইসলামী আইনজ্ঞ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন এবং চাকরীর জন্য খলিফার দরবারে যাতায়াত শুরু করেন, কিন্তু কোনো চাকরী ঝুটাতে পারেন নাই। বিফল মনোরথ হয়ে বাড়ি ফেরার পথে নামাজের জন্য এক মসজিদে যান এবং মুমুর্ষ এক ব্যক্তির যন্ত্রনা কাতর শব্দ শুনেন। সেখানে গিয়ে রোগীর মুখে তার দুর্ভাগ্যের কথা শুনে তাকে প্রয়োজনীয় সাহায্যের আশ্বাস দেন। রোগী তার দুর্ভাগ্যের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন " আমার নাম আহমদ। আমার সাথী ভাই এর নাম মাহমুদ। আমাদের জন্মস্থান খোরাসান। সেখান থেকে আমরা দুই ভাই ব্যবসা করার জন্য বাগদাদের পথে রওয়ানা হই। আমার ভাই তার মুলধন এক হাজার দিনার আমার কাছে জমা রাখে। এক রাতে ডাকাতরা আমাদেরকে আক্রমণ করে সর্বস্ব লুটে নেয় এবং আমাদেরকে মেরে আহত করে ফেলে যায়। আমার জ্ঞাণ ফেরার পর ভাই এর খোঁজে বাগদাদ চলে যাই কিন্তু ব্যর্থ হই। নিজর জীবন ধারণের জন্য কাজ কর্ম শুরু করি কিন্তু দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ি। অবশেষে অসুখে জর্জরিত অবস্থায় এই মসজিদে আশ্রয় নেই। হয়তো আর বাচার আশা নাই তবে আপনাকে তিনটি অনুরোধ করছি। প্রথমত আমাকে পাকা আঙ্গুর খাওয়ান, দ্বিতিয়ত আমার মরার পর আমাকে দাফনের ব্যবস্থা করবেন এবং সর্ব্বশেষ আমার ভাই এর রাখা এই হাজার দিনার তাকে খোঁজ করে ফেরত দিবার চেষ্টা করবেন। তাকে না পেলে যেভাবে ভাল মনে করেন সেভাবে টাকা গুলো কাজে লাগাবেন। শুনে তিনি কিছু পাকা আঙ্গুর জোগাড় করে তাকে খাওয়ান। কিছুক্ষণ পরেই আহমদ মারা যান। তাকে দাফন কাফন শেষ করে তার ভাই মাহমুদের খোঁজে ই্য়াহইয়া আবার বাগদাদের পথে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে নদী পার হওয়ার সময় মাঝির সাথে কথা প্রসঙ্গে জানতে পারেন খোরাসান থেকে আগত এই মাঝি এবং তার আরেক ভাই আহমদ ডাকাত দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে এখন নৌকা চালিয়ে জীবন ধারণ করছেন। দুই ভাই ব্যবসার জন্য বাগদাদে আসার সময় ভাই আহমদের নিকট তার মুলধন এক হাজার দীনার জমা রাখার কথাও জানান। ঘঠনা শুনে মাহমুদকে এক হাজার দীনার সংক্রান্ত বেগ ও পয়সার নমুনা সম্মন্ধে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হন যে এই সেই মাহমুদ যার খোঁজে তিনি বাগদাদ যাচ্ছিলেন। তিনি তাকে তার এক হাজার দীনার ফেরত দিলে তাতে কিছু টাকা কম পাওয়া গেলো। কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইয়হইয়া জানান যে, এই পয়সা দিয়ে তার ভাইকে আঙ্গুর খাওয়ানো এবং দাফন কাফন করা হয়। এতে খুশি হয়ে মাহমুদ তাকে ১০টি দীনার উপহার দেন।

কপর্দক শুন্য ইয়হইয়া এই দশটি দিনার পেয়ে বাড়ি না গিয়ে পুনরায় খলিফার দরবারে চলে যান। তাকে দেখেই খলিফার কর্মচারীরা জানান যে, খলিফা তাকে নিয়োগের জন্য খোঁজছনে এবং সেদিনই খলিফার দরবারে তার চাকরী হয়ে যায়। নিজের জ্ঞান, সততা এবং দক্ষতার বলে একপর্যায়ে তিনি গভর্ণর হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। মৃত্যর পুর্ব পর্যন্ত তিনি সততার সাথে গভর্ণরের দায়িত্ব পালন করে ৫৬০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। আল্লা তাকে উত্তম পুরষ্কারে ভুষিত করুন।

কবি বলেন,

বহুমুল্য পরিচ্ছদ রতণ ভুষণ নরের মহত্ব নারে করিতে বর্ধন,

ধর্ম পরিচ্ছদ আর বিদ্যা অলঙ্কার করে শুধু মানুষের মহত্ব বিস্তার।

দ্রষ্টব্য : এই লেখাটি আমার মুরব্বী এবং বন্ধু জনাব মুহিবুর রহমান খান সাহেবের লেখা । আমি শুধু প্রকাশ করলাম।

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

269771
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৫১
মু. মিজানুর রহমান মিজান (এম. আর. এম.) লিখেছেন : আপনার বন্ধু সহ আপনাকে ধন্যবাদ
০২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৪৭
214685
আয়নাশাহ লিখেছেন : মুহিবুর রহমান খান সাহেব আপনাদের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন। আমি তার লেখা চিরকুট খানা সরাসরি আপলোড করে দিলাম। দয়া করে একেবারে নিচের মন্তব্য দেখুন।
269776
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
শিক্ষনিয় ঘটনাটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
০২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৪৭
214686
আয়নাশাহ লিখেছেন : মুহিবুর রহমান খান সাহেব আপনাদের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন। আমি তার লেখা চিরকুট খানা সরাসরি আপলোড করে দিলাম। দয়া করে একেবারে নিচের মন্তব্য দেখুন।
269834
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৪
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার মুরুব্বীকে আমার সালাম। খুবই উপরকারী একটি লেখা। ভাল লাগলো। আ'মাল করার চেষ্টা থাকবে।
০২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৪৭
214687
আয়নাশাহ লিখেছেন : মুহিবুর রহমান খান সাহেব আপনাদের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন। আমি তার লেখা চিরকুট খানা সরাসরি আপলোড করে দিলাম। দয়া করে একেবারে নিচের মন্তব্য দেখুন।
269868
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫০
আবু ফারিহা লিখেছেন : খুবই শিক্ষনীয় লেখা। ধন্যবাদ।
০২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৪৮
214688
আয়নাশাহ লিখেছেন : মুহিবুর রহমান খান সাহেব আপনাদের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন। আমি তার লেখা চিরকুট খানা সরাসরি আপলোড করে দিলাম। দয়া করে একেবারে নিচের মন্তব্য দেখুন।
270006
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৩৯
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

কোথায় লুকিয়ে থাকেন আপনি- Catch
আমরা খুঁজে খুঁজে হয়রাণ !!

একটু ঘণঘণ আসা যায় না?? Rose
০২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৪৮
214689
আয়নাশাহ লিখেছেন : মুহিবুর রহমান খান সাহেব আপনাদের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন। আমি তার লেখা চিরকুট খানা সরাসরি আপলোড করে দিলাম। দয়া করে একেবারে নিচের মন্তব্য দেখুন।
270097
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:৪৮
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : শিক্ষণীয় গল্পটির জন্য লেখক এবগ্ন তাঁর মহানুভব পোস্টদা বন্তাধুকে আন্তরিক ধন্যবাদ Rose RoseRose
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:৪৯
214039
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : পোস্টদাতা বন্ধুকে
০২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৪৮
214690
আয়নাশাহ লিখেছেন : মুহিবুর রহমান খান সাহেব আপনাদের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন। আমি তার লেখা চিরকুট খানা সরাসরি আপলোড করে দিলাম। দয়া করে একেবারে নিচের মন্তব্য দেখুন।
270738
০২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৪৪
আয়নাশাহ লিখেছেন :
০২ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
214889
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


:Thinking Worried Good Luck Praying
অগ্রীম শুভেচ্ছা ও কুরবানীর ঈদ মোবারক- Big Hug
ত্যাগের অনুশীলনে সমাজ আলোকিত হোক [-o

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File