পাল্টিবাজের গুরু মওদুদ (নাকি মরদুদ) কি আবারও পাল্টি মারবেন?
লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৪২:০২ দুপুর
পাল্টিবাজের গুরু মওদুদ (নাকি মরদুদ) কি আবারও পাল্টি মারবেন?
বিএনপি'র শীর্ষ নেতা ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ সম্প্রতি যে বই এর মোড়ক উন্মোচন করেছেন তা নিয়ে বিএনপি নেতারা তেমন কিছুই বলছেন না। কিন্তু বিষয়টা কি?
যদিও বইটি পড়া হয়নি, তবে পত্রিকান্তরে যতোটুকু বলা হয়েছে তাতে কিছু কথা বলা জরুরী।
কে এই মওদুদ?
এই লোকের বাপ ছিলেন একজন খ্যাতনামা আলিম মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।
এই আলিমের সন্তান হয়ে ১-১১ এর পরে তিনি গ্রেফতার হলেন মদের বতল সহ। সেই মদ নাকি তাঁর বাড়িতে রাখা ছিল বিদেশি মেহমানদের জন্য। মেনে নিলাম সেগুলো বিদেশীদের জন্য। প্রশ্ন হল, একজন মুসলমান হয়ে অন্যকে মদ দিয়ে আপ্যায়ন করতে হবে কেনো? যাক, সে মামলায় তিনি নিষ্কৃতি পান। এর পর এই সেদিন হাসিনা তাঁকে গ্রেফতার করলো। রোজার মাস ছিলনা, কিন্তু তাঁর ড্রাইভারকে দিয়ে মিডিয়ায় প্রচার করা হল 'স্যার রোজা রেখেছেন'। যা হোক, সেটাও ভাল, যিনি মদ দিয়ে মেহমানদারী করেন তিনি কি নফল রোজা রাখতে পারেন না? অবশ্যই পারেন।
যে লোক '৭১ এর আগে একজন তরুণ আইনজীবী হিসেবে আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন, '৭১ সালে ইয়াহিয়ার সাথে শেখ মুজিবের বৈঠকে তিনিও ছিলেন শেখের একজন সহযোগী সেই মওদুদই শেখ মুজব নিহত হলে জিয়ার পেছনে লাইন ধরে বিএনপি গঠনে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি শীর্ষ স্থানীয় একজন। পরে মন্ত্রিত্ব এবং উপ-প্রধান মন্ত্রীত্বও বাগিয়ে নেন।
আবার জিয়া নিহত হলে এরশাদের পেছনে লাইন ধরেন। গঠন করেন জাতীয় পার্টি। এরশাদকে পাল্টিবাজ বলা হয়। কিন্তু এই পাল্টিবাজের গুরু হলেন এই মওদুদ সাহেব। এরশাদকে সব পাল্টিবাজী শিখিয়েছেন তিনিই। জাপা থেকে নির্বাচন করে প্রথমে মন্ত্রী এবং পরে আবারও উপ-প্রধান মন্ত্রী হয়ে যান। পরের বছর প্রধান মন্ত্রী বনে গেলেন এরশাদের পা টিপে। তার পরও থেমে যান নি তিনি। এরশাদের ...টিপে হয়ে যান এরশাদের উপ রাষ্ট্রপতি। এরশাদের পতনের দুনিন আগেও তিনি এরশাদের পক্ষে বক্তৃতা দিয়েছেন। সেদিনও তিনি এরশাদকে ক্ষমতা না ছাড়ার জন্য ইন্দন দেন। কিন্তু '৯০ এ এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হলে তিনিও ক্ষমতা হারান। '৯১ এ তিনি আবারো জাপা থেকে এম্পি হয়ে যান। কিন্তু পাল্টিবাজ মওদুদ কি থেমে যাবার পাত্র?
আবার তিনি পাল্টি মারেন এবং বেগম জিয়াকে স্মমোহিত করে ঢুকে যান বিএনপি'তে। আবারও এমপি, আবারও মন্ত্রী। আইন মন্ত্রী। এহেন পাল্টিবাজ দেশের বা জাতির জন্য কি করেছে্ন কেউ কি জানেন?
এরশাদ এবং জিয়ার আমলে নোয়াখলিতে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় অনেক কাজ করেছেন বলে শুনেছি। তাঁর প্রভাব খাটিয়ে সারা দেশকে বঞ্চিত করে উন্নয়নের জোয়ার নাকি বইয়েছেন। এজন্য তাঁর এলাকাবাসি তাঁকে বার বার ভোট দেন। সে না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু গত টার্মে চার দলীয় জোট যখন ক্ষমতায় তখন তিনি কি করেছেন?
আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এই পাল্টিবাজ দেশের সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি করেছেন বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করতে না দিয়ে। তাঁর একক ক্ষমতাকে ধরে রাখতেই 'মাসদসার হোসেন' মামলার রায় কার্যকর করেন নি। বার বার সুপ্রিম কোর্ট থেকে তাগাদা দেয়া হলেও তিনি বার বার সময় চেয়ে চেয়ে শেষ পর্যন্ত বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা থেকে বিরত থাকেন যা আজও হয়নি। এখন হাসিনা তাঁর ইচ্ছামতো বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সমস্থ বিরোধী দলকে নির্যাতনের হাতিয়ার করেছে। আজ বেগম জিয়ার রিট খারিজ হতোনা যদি বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতো। আব্দুল কাদের মোল্লার মতো একজন নির্দোষ মানুষের ফাঁসী হতোনা যদি বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতো। এরকম হাজারো অবিচার আজ দেশবাসীকে সহ্য করতে হচ্ছে কেবল তাঁর কারণে।
এর পর বেগম জিয়াকে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ী থেকে উচ্ছেদের জন্যও এই মওদুদ আহমেদকে অনেকেই দায়ী করেন। বেগম জিয়াকে মিসগাইড করে বাড়ি নিয়ে হাসিনার চাকর তথা ঘুষখোর বিচারকদের কাছে রিট করতে পরামর্শ দিয়ে তাঁকে বাড়িছাড়া করেছেন তিনিই।
সর্বোপরি, মওদুদ আহমেদ জাতির যে অপুরনীয় ক্ষতি করেছেন যা কক্ষনো পূরণ হবার নয়। যারা তাদের জীবন বাজী রেখে এই দেশকে, এই জাতিকে ধর্মনিরপেক্ষতার জিঞ্জীর থেকে, শিরকের মতো মহা পাপ থেকে এবং ভারতের খপ্পর থেকে মুক্ত করে একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের মর্যাদায় অধিস্টিত করেছিলেন, '৭৫ এর সেই সব বীর মর্দে মোজাহিদ দেরকে ফাঁসীর কাষ্ঠে ঝুলাতে দিয়েছেন এই ক্ষমতা পাগল পাল্টিবাজ। '৯৬ সালে হাসিনা ক্ষমতায় গিয়ে তার পিতা জনগণের ঘৃণিত, অভিশপ্ত, শয়তানের ওস্তাদ শেখ মুজিব হত্যার বিচারের নামে একটা প্রহসন করে '৭৫ এর বীর দেরকে মৃত্যু দণ্ডে দণ্ডিত করে। কিন্তু দেশের জনগণ এমন বিচার কক্ষনও মেনে নেয়নি বলে সে ২০০১ এর নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তাই বিচারের নামে অবিচারে দন্ডিত এই বীরদেরকে ফাঁসী দিতে পারেনি। ২০০১ সালে জোট ক্ষমতায় এলে সেই মামলা আপীলে যায়। কিন্তু এই মরদুদ শয়তানটা নানা অজুহাতে সেই আপিল নিষ্পত্তি করে্ননি। বিচারক নাই, সিডিউল নাই, বিচারক নিয়োগ দিয়ে আপিল নিষ্পত্তি করা হবে, এইসব আজব কথা বলে বলে জোটের ক্ষমতা কালীন ৫ টি বছর এই বীরদেরকে ফাসির আসামি হিসেবে কন্ডেম সেলে রেখে দেন। দেশের মানুষ এমনকি আওয়ামী লীগ পর্যন্ত বার বার তাঁকে এই বিচার নিষ্পত্তি করার জন্য আবেদন নিবেদন করে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। শেষ পর্যন্ত জোটকে নানা কায়দায় কোন্ঠাসা করে আবারও হাসিনা ক্ষমতায় বসে ২০০৮এ। মওদুদ এবার এই বীদেরকে হাসিনার হাতে তুলে দিয়ে বলেন, 'নাও তোমার গিফট, আবার এদেরকে ঝুলিয়ে দাও'। মওদুদের দেয়া তোহফা হাতে পেয়ে হাসিনা এই বীরদেরকে চরম অস্মমানের সাথে হত্যা করে। এমনকি মৃতদেহের উপর তারা জুতা এবং থুথু নিক্ষেপ করে লাশেরও অমরযাদা করে। নিশ্চয়ই মওদুদ তখন বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছিলেন। অথচ এই পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে আপিল শেষ করতে পারতো। হাসিনার কেনা গোলাম, বিচারপতি গোলাম রব্বানী যে রায় দিয়েছিল সেই রায়ে অনেক ত্রুটি ছিল, সেই বিচারেও অনেক আইনের ফাঁক ফোঁকর ছিল যা অনেক বিজ্ঞ আইনজীবীরা বার বার বলেছেন। সেইসব ত্রুটি এবং ফাঁক বিশেষ করে কার গুলিতে শেখ মুজিব নিহত হয়েছিলেন তার কোনো প্রমান না থাকায় এই মামলায় কারো মৃত্যুদণ্ড হতেই পারেনা। যদি এই মামলাটা নিষ্পত্তি করে ওদেরকে লঘু একটা দণ্ড দেয়া হতো তবে যেমন শেখ মুজিব হত্যার বিচার হতো তেমনি জাতিয় এই বীরদেরকে আমাদের হারাতে হতোনা, দেশ আজ এই গুম খুন আর অবিচারের খপ্পরে পড়তো না।
আজ তিনি আবারও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে হেয় প্রতিপন্ন করতে বই লিখেছেন। তাতে তিনি বেগম জিয়াকে দেশনেত্রীর চেয়ে তারেক ককো'র মা হিসেবে চিত্রিত করেছেন। অথচ, আমার স্পষ্ট মনে আছে, যেদিন বেগম জিয়া মুমূর্ষু তারেক রহমানকে দেখতে যান তখন জামায়াতের আমির মাওলানা নিজামি সাহেবও সাথে ছিলেন। মাওলানা বলেছিলেন, বেগম জিয়া নিজের সন্তানের এমন অবস্থা দেখেও সামান্য বিচলিত হন নি যা আমাকে বিস্মিত করেছে। তাঁর স্থানে যদি আমি হতাম তবে নিজেকে অটল রাখতে পারতাম কি না আমিও জানিনা।
১-১১ এর পরে বেগম জিয়া এবং তাঁর পরিবারের উপর যে অত্যাচার শুরু হয়েছিল, আজ পর্যন্ত তা চলছে। হাসিনা যখন মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বিদেশে গিয়ে মৌজ করছিল তখন বেগম জিয়া দেশ থেকে বের না হওয়ার জন্য জীবন এবং পরিবারকে বাজি ধরেছিলেন। আর আজ এই সুবিধাবাদি পাল্টিবাজ কি বলছেন?
এই সেদিনও এই পাল্টিবাজ যখন আন্দোলনকে ফাকি দিতে অসুস্থতার ভান ধরে হাসপাতালে ছিল তখন তাঁর ভায়রা হাসিনার উপদেস্টা এবং ডান হাত তাঁকে দেখার ছলে কি পরামর্শ দিয়েছে? পরে চিকিৎসার নাম করে লন্ডনে চলে যান। সেখানেও তিনি নানা সড়যন্ত্রে মেতেছি্লেন বলে অনেকেই বলেছেন। আসার পর থেক সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। এখন মেতেছেন নতুন খেলায়। এই খেলার রহস্য কি?
বিষয়: রাজনীতি
১২৫০ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো
পিলাচ
১/১১ এর ঘটনায় মদের বোতল নিয়ে গ্রেফতার! এ বিষয়টি সাজানো হতে পারে না কি? ১/১১ এ এবং বর্তমানে এমন সাজানো কাহিনী অনেক ঘটে। গ্রেফতার করে এটা/ওটা ধরিয়ে পত্রিকায় ছবি তোলা হয়।
আমি মওদুদের সাফাই গাচ্ছিনা। তবে রাজনীতিতে যে কয়জন রুচিবান ও জেনুইন ভদ্রলোক আছেন তাঁদের মধ্যে ব্যারিষ্টার মওদুদ অন্যতম। তিনি বিএনপিতে যখন ফিরে এসেছেন যখন ছিল বিএনপির দূর্দিন, অনেক সুবিধাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকলেও আওয়ামীলীগে ফিরে যান নি। রাম বাম বিরোধী বলে মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে অপপ্রচার হয়েছে বেশি।
তাঁর বইগুলিতে অনেক অপ্রিয় সত্য উঠে আসে। সেসব আমাদের পছন্দ নাও হতে পারে।
স্মরণ করে দেখুন, চার দল যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সংসদে কোণ উপনেতা ছিলনা। বেগম জিয়া মরহুম সাইফুর রহমানকে সংসদের উপনেতা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু এই পালটিবাজ তখন বাগড়া দিয়ে গোঁটা পাঁচটি বছর সংসদকে উপনেতা বিহীন রাখেন। শেষ পর্যন্ত সাইফুর রহমান পরপারেই চলে গেলেন কিন্তু তাঁর বাগড়া দেয়া থামেনি। এখন তিনি দেখতে পাচ্ছেন, আগামীতে বিএনপ'র ক্ষমতাসীন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ তাই আবারও পাল্টি মারতে ক্ষেত্র তৈরী করছেন বলেই মনে হচ্ছে। এখন তাঁর বয়স প্রায় ৭৫ বছর। এখন রাজনিতী থেকে অবসর নিয়ে এসব কথা বললে আমাদের সন্দেহ করার কোনো কারণ ছিলনা। গত সাত বছর বুঝি বিএনপি'র সুদিন যাচ্ছে? কই তিনি এই সময়ে বিএনপি'র জন্য কি করেছেন? সব সময় নিজেকে সেইফ রেখেছেন এবং মাঝে মাঝে ভান ধরেছেন, এই যা। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোন মহত কাজটি করেছেন যাতে জাতি তাঁকে স্মরণ রাখবে? অথচ, তাঁর হাতে বার বার অনেক সুযোগ এসেছে জাতিকে অনেক কিছু দেবার।
মনে রাখবেন বিদেশি দালালের খাতায় নাম লিখালে আর দেশপ্রেমিক হওয়া যায় না...কারণ বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা তার আকাম-কুকামের আদ্যপান্ত রেকর্ড রাখে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন