আল্লাহ'র দলে লোক বাছাই এর পদ্মতি।
লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ১৫ মে, ২০১৪, ১১:৪২:৪৬ সকাল
আল্লাহ তার দলে লোক কিভাবে বাছাই করেন দেখুন। না পড়ে কোনো মন্তব্য করবেন না প্লীজ। এই তিনটি কেস আমার জানা সত্য ঘটনা। কেউ কষ্ট পেলে সেটা আমার ইচ্ছাকৃত নয়, আমি কারো নাম ঠিকানা দেইনি। আর যদি প্রটেস্ট করেন তবে নাম ধাম সব বলে দেবো।
কেইস স্টাডিঃ
কেস ১। তিনি একজন কামিল পাশ আলেম। ৩০ বছরেরও বেশী দিন ধরে ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত। সরবোচ্চ ক্যাডার ছিলেন। একটা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন। সংগঠনের বড়ো বড়ো নেতাদের সাথে ভারী সখ্যতা ছিল। এলাকায় বেশ প্রভাবও ছিল। শুরু করেন ব্যবসা। সাথে আন্দোলনের নেতা কর্মীও ছিলেন। একসাথে অনেক সুবিধা থাকায় ব্যবসায়ে উত্তরোত্তর উন্নতি হতে থাকে। রাতারাতি হয়ে যান কোটিপতি। টাকা আর টাকা। এতো টাকা কোথায় রাখবেন সেই চিন্তায় দিন যায়। এমনি সময় আল্লাহর কোন এক মহিমায়(?) হাসিনা ক্ষমতায় বসে। শুরু হয় বাতাস। সেই বাতাসে তার পরিকল্পনা এবং ব্যাবসা কিছুটা ক্ষতি গ্রস্থ হয়। এর পর আসে তুফান। সেই তুফানে তার পরিকল্পনার ডালপালা ভেঙে পড়ে। ব্যবসা এবার আরো মন্থর হয়ে যায়। এর পর আসে আসল ঝড় বা টর্নেডো। তাকে জেলে যেতে হয়। তবে বেশীদিন থাকতে হয়নি ওখানে কারণ টাকা আছে অঢেল। বের হয়ে আসেন এবং আল্লাহর রহমতে (?)। ভিজিট ভিসা নিয়ে সপরিবারে চলে আসেন স্বপ্নের দেশে। নানা ধরণের ফন্দি ফিকির করে শেষ পর্যন্ত একটা মসজিদের ইমাম হয়ে স্বপ্ন পুরিতে স্থায়ী ভাবে থেকে যাবার সব ব্যবস্থা পাকা পরে ফেলেছেন বলে শুনেছি। ইমামের পদটা কি করে বাগানো হয়েছে সে নিয়েও অনেক কিছু কানে আসে কিন্তু সেকথা বলা ঠিক না।
কেস ২। তিনিও একজন সরবোচ্চ শিক্ষা প্রাপ্ত আলিম, মহাদ্দিস, তবে কওমি মাদ্রাসা থেকে। ইয়া লম্বা দাড়ী, ঘণ্টার সামান্য উপরে পাজামা এবং পাঞ্জাবী। মুখে সব সময় পান এবং সাথে সুন্দর করে লাল লাল দাঁতের হাসি লেগেই আছে। দেখা হলেই সালাম দেন। বুকে জড়িয়ে ধরেন। এমন একজন অমায়ীক মানুষ সহজে পাওয়া যায়না। একটা কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন এবং সাথে একটা মসজিদের ইমামও ছিলেন। এ ছাড়াও কওমিরা যা করেন সেইসবও করেছেন। হেফাজতের ক্রেজের সময় মিছিল মিটিং করেছেন, মারামারিও করেছেন। শরীরে কিছু আগাতের চিহ্ণও দেখালেন। স্বপ্নের দেশে আসার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে পরিকল্পনা করছিলেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে ভারত, তার পর সিঙাপুর, মালইয়েশিয়া, থাইলেন্ড যান। এর পরে যান টার্কই। এর পর ইতালি। এর পর যান ব্রিটেন। কোথাও ভিসার মেয়াদের বেশী থাকে নি। এসব দেশে গিয়ে ওয়াজ নসিহত করে যা ই মিলেছে তা দিয়ে খরচ কাভার হয়নি। তার পরও ঋণ করে হলেও স্বপ্নের দেশের ভিসা চাই। সবগুলো দেশের ভিসা আছে দেখে এমব্যাসির লোকদের মনে আল্লাহ বিশেষ রহমত (?) করেছেন ফলে বৌ বাচ্চা সহ ভিসা হয়ে যায়। মাল্টিপল ভিসা, পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য। বৌ বাচ্চা নিয়ে চলে এলেন। এসেই এখানকার তাবলীগের সাথে কাজ শুরু করলেন আর সাথে সাথে এখানে থেকে যাবার জন্য যতো ধান্দা করা লাগে করতে লাগলেন। সাহায্য চাইলেন। বললাম এই সিটিতে আপনার থাকা সম্ভব হবেনা। অনেক গুলো কারণ দেখালাম যা আসলেই তার জন্য এখানে থাকা অসম্ভব হবে। আরেকটা সিটিতে চলে যেতে পরামর্শ দিলাম। মাস তিনেক থেকে সবকিছু জেনে বুঝে বললেন যেহেতু মাল্টিপল ভিসা আছে, বৌ বাচ্চা রেখে চলে আসবো। বললাম তথাস্তু। চলে গেলেন সপরিবারে।
দু সপ্তাহ আগে রাত তখন প্রায় ১টা। হঠাত মোবাইলে রিং। ধরেই একটা অপরিচিত গলা শুনলাম। "ভাইছাব, চিনছইন নি? আমি ওমুক।" বললেন তিন দিন আগে আবার চলে এসেছেন। সপরিবারে। বললাম, আগে যে বললেন একা আসবেন? জানালেন আগের বার এসে জেনেছেন যে যদি একটা বাচ্চা এখানে জন্ম হয়ে যায় তবে থেকে যাবার বিষয়টা অনেকটা কনফার্ম হয়ে যায়। সেই অনুযায়ী এখানে থাকতেও জান প্রান সপে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু বৌ এর পেট বাঁধাতে পারেন নি। তাই বলে ছেড়ে দেবার পাত্র তিনি নন। দেশে গিয়েও 'মারি আর পারি যে করেই হোক' কাজটা করতে হবে পণ করে কাজ শুরু করেন। আল্লাহর কি রহমত (?) মাস দিনের ভিতরেই কাজ হয়ে গেছে, তার বৌ এখন প্রেগন্যান্ট। মহা খুশী এবার। এখন আবার তাকে নিয়ে এসেছেন। ডেলিভারির সময় আরো বাকী আছে। আল্লাহ যদি দয়া করেন তবে এখানে থাকা ঠেকায় কে?
কেস ৩। টিনি একজন ডাক্তার। এমবিবিএস। ইসলামি আন্দোলনের সাথে ছাত্র জীবনেই জড়িয়ে যান। একটি থানার নায়েবে আমীর এখন। পারিবারিক ভাবে সমপদশালী এবং এলাকায় বেশ প্রভাব প্রতিপ্ততি আছে। ভাই বোনদের সবাই লন্ডণ আমেরিকায় থাকেন। শহরে থাকার মতো সবকিছু থাকা ষত্বেও থাকেন গ্রামের বাড়ীতে। দুই ছেলে ক্যাডেট কলেজে থাকে, পড়ে। গ্রামের বাজারে প্রেক্টিস করেন এবং এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো ফার্মেসী আছে তার। সাধারণ মানুষের কাছে একজন ভাল মানুষ হিসেবে চিহ্নিত।
হাসিনা ক্ষমতায় এলে শুরু হয় ধরপাকড়। তিনিও জেলে যান এবং মুক্তি পান। আবারও জেলে যান এবং মুক্তি পান। এলাকার আওয়ামী নেতারা ফন্দি করে তাকে বার বার জেলে পাঠায় যাতে তার প্র্যাকটিস লাটে উঠে সাথে ফার্মেসী ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। লন্ডনের ভাই বোনেরা বললেন আসুন, লন্ডন ঘুরে যান। তারা ভাবলেন লন্ডন এনে কিছুদিন রেখে দিলে আস্তে আস্তে আর আন্দোলন ফান্দোলন করবেনা। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। তাকে প্রস্তাব দিলে তিনিও নিজেকে কিছুটা ঝামেলা মুক্ত রাখতে চলে গেলেন লন্ডন। ওখানে গিয়ে কিছুদিন পর এলো হজ্বের মৌসুম। চিন্তা করলেন, বের যখন হয়েছি, হজ্বটা সেরে নেই। গেলেন হজ্বে। ফিরে এলেন আবার লন্ডন। এবার চলে আসবেন দেশে। এর মধ্যে হাসিনার গুম বাহিনীর তান্ডবে সারা দেশে হাজার হাজার মানুষ জেলে, নিখুজ আর ক্রস ফায়ারের শিকার হচ্ছেন। তার ভাই বোন, আত্নিয় সজন সবাই বেঁকে বসলেন। বললেন এই সময়ে দেশে যাওয়া যাবেনা। গেলেই তোমাকে হয় ক্রস ফায়ারে দেবে না হয় গুম করবে অথবা জেলে তো অবশ্যই নেবে আর অত্যাচার করবে। তিনি বললেন, আমার পক্ষে আর এক মুহূর্তও এখানে থাকা সম্ভব না। আমার ভাইরা যে অত্যাচার নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, যেভাবে আন্দোলনের কাজ করছে, যেভাবে দিনের পর দিন কষ্ট করছে আর আমি কি করে এখানে বসে থাকি? কিয়ামাতের দিন আমি কি জবাব দেবো? কিন্তু তবুও তার সজনরা তাকে দেশে ফিরতে দিতে রাজী নয়। তার এক ভাই আমেরিকায় থাকে। সেও আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল। এজন্য লন্ডনের ভাই বোন এবং আত্নিয়রা তাকে বললেন যে, তুই ওকে বুঝা যাতে এখন দেশে না যায়। আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকায় সে বলল, আমি কি করে তাকে বুঝাতে পারি? তিনি আমার চেয়ে কম বুঝেন না। তার পরও আমেরিকার ভাই সবার চাপে তার সাথে ফোনে কথা বলল। ছোট ভাইএর কথা শুনে তিনি বললেন " তুইও বলিস? তুই না সাথী ছিলে?" এর পর আর কোনো কথা বলা সম্ভব হলোনা। লন্ডনের ভাই বোন মিলে তার পাসপোর্ট লুকিয়ে রেখে দিলেন। তিনি বললেন এমি এমব্যাসিতে গিয়ে দেশে যেতে যা যা করার তা করে চলে যাবো, দেখি তোমরা আমাকে কি করে আটকাও।
তার এরকম ডেডিকেশন দেখে কেউ আর বাধা দিলেন না তিনি চলে এলেন দেশে। দেশে এসে আবারও এরেস্ট, আবারো ফেরার। প্রেক্টিস গেছে গোল্লায়। ফারমেসীর সব ঔষধ গেছে এক্সপায়ার হয়ে। আওয়ামী লীগের এক নেতা এই সুযগে হিন্দু এক ডাক্তার রেখে ফার্মেসী খুলেছে। লোকেরা এখন সেই ফার্মেসি আর ডাক্তারের কাছে যেতে বাধ্য। কিন্তু তার এখন রাত কাটে বনের ভেতরে, কেয়া বনে অথবা নদীর বাঁকে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৯ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
খবর ২- জামায়াত দমনে কঠোর সরকার।
আর কিছু বোঝার বাকি আছে?
কাঠমোল্লাদের না আছে ঈমানের জোর, না বুঝে ইসলাম, না বুঝে জ্ঞান বিজ্ঞান। শুধু পারে ফতোয়া দিতে।
এই করুণ অবস্থার মুখোমুখি হয়ে কেউ কঠিন পরীক্ষীয় অবর্তীণ হয়েছেন। আবার কেউ কেউ পরীক্ষার জটিল সমীকরণকে এড়িয়ে যাওয়ার পথ খুজতে গিয়ে কিছুটা দুনিয়াবী আরাম আয়েশের মোহে চন্দপতনের স্বীকার হয়েছেন। এটাকে অবশ্য কেউ কেউ মানবীয় দূর্বলতা হিসেবে যুক্তি দিয়ে তাদের প্রতি সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে পাক্ষপাতী।
আন্দোলনের লোক মনে হয়েছে। আমরা তো দেশের
বাহিরে থাকি। তাই ঈমানের পরীক্ষা দেওয়া লাগছে না। তারপরও সারা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের(মডেল) তাদের সামনে ছিল। এই ক্ষেএে ডিফেন্সিভ হওয়া উচিৎ ছিল। শক্তি নিঃশেষ হওয়ার দরকার ছিল না। ২০-২৫% লোকও ইসলামী আন্দোলনের সাথে যুক্ত নয়। এখন প্রকাশ্যে
ময়দানে কাজ করতে পারছে না। কর্মী সংখ্যা বাড়ছে না। এর জন্য একটা Special defensive team থাকা উচিৎ ছিল আগ থেকে,যারা সংগঠনের বাহিরের দিক থেকে কি ধরনে বিপদ আসবে এটা নিয়ে চিন্তা করবে। সরকার ইসলামী আন্দোলনকে ধংস করে। দিচ্ছে।
আবার যারা ভুলভাবে কম্প্রোমাইজ করে তারা হয়ত সত্যই দিশা হারায়
মন্তব্য করতে লগইন করুন