একটা কঠিন সত্য বলতে চাই। শুনবেন কি?
লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ২৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:৪৭:৫৪ দুপুর
একটা কঠিন সত্য বলতে চাই।
মনটা খুবই খারাপ হয় যখন কেউ প্রশ্ন করে
মেজর ফারুক, রশীদ আর ডালিমরা এখন আসেনা কেনো?
জাতীকে হায়েনা'র কবল থেকে বাঁচাতে আর কি কেউ আসবে না?
আমার মনে হয় আসলে আমাদের মতো নিমক হারাম দুনিয়ায় আর কেউ নাই।
আল্লাহ'র বিশেষ রহমত হয়েছিল বলেই সেদিন শেখ মুজিবের অনুগত সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী বা রক্ষী বাহিনী'র একটা মানুষও এই ক'জন মাত্র মর্দে মুজাহিদের হিম্মতের সামনে দাঁড়াতে সাহস করেনি। মাত্র কিছু সময়ের মধ্যে ফেরাউনের রাজত্ব খতম করে দিতে তারা সক্ষম হয়েছিলেন। তারা যদি সফল না হতেন তবে আজ বাংলাদেশের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে শেখের মূর্তি শোভা পেতো। শেখের আরেক নাম হয়ে যেতো কোনো মূর্তির নামে। দেশের মানুষ ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, সেই মূর্তির পদতলে পুজার আরতি দিতে বাধ্য হতো। দেশের কোটি কোটি মানুষকে যারা এই শিরকের হাত থেকে বাঁচালেন, এই জালিমের অপশাসন থেকে উদ্ধার করলেন, যাদের হিম্মতের কারণে দেশে গণতন্ত্র এলো, যাদের সহায়তায় মেজর জিয়া প্রাণে রক্ষাই পেলেন না শুধু, বরং দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হলেন, সেই মুজাহিদ দের প্রতি আমাদের নিমক হারামীর সীমাহীনতা পরিমাপ করা যাবেনা।
অথচ কি আচরণ আমরা করলাম তাদের সাথে?
হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে স্পষ্ট করেই বলেছে যে, তার রাজনীতিতে আসার প্রধান কারণই হল তার পিতাকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়া। (বিবসি'র সাথে সাক্ষাতকারে - সিরাজুর রহমান) তার জিঘাংসা চরিতার্থ করার জন্য সে যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে এবং লোচ্চা এরশাদ এর সমর্থন নিয়ে (এমন কি জামায়াতের সমর্থনও ছিল) ক্ষমতায় এসেই তার পিতার হত্যার বিচার শুরু করে। দেশের একটা মানুষও ঐ বিচারের বিরদ্ধে একটা টু শব্দ উচ্চারণ করেনি বা করতে পারেনি। ১৫ আগস্টের সবচেয়ে বড়ো বেনিফিশিয়ারী দল বিএনপি একটা বিবৃতিও দেয়নি। মুখ খুলেনি জামায়াতও। নিরব থেকে হাসিনার প্রতিষ্ঠিত বিশেষ আদালতকে (গোলাম রব্বানীর ক্যাঙারু কোর্ট) তারা সাপোর্ট দিয়ে গেছে। ৯৬-২০০১ এর সময়কালে হাসিনা বিচার শেষ করলেও রায় কার্যকর করতে পারেনাই। ২০০১ সালের নির্বাচনে জোট ক্ষমতাসীন হলে অনেকের মনে (সেই মর্দে মুজাহিদ গন সহ) একটা আশার সঞ্চার হয় যে, হয়তো একটা পথ বের করে এদেরকে খালাস দেয়া হবে অথবা অন্তত মৃত্যু দণ্ড ত্থেকে তারা রেহাই পাবেন। আজকে আইসিটি তে যেভাবে আসামীদেরকে সরকারের ইচ্ছামতো শাস্তি দেয়া হচ্ছে, সেদিন সেই ক্যাঙারু কোর্টও হাসিনার ইচছামতো রায় দিয়েছিল। ঐ রায়ে আইন বিশেষজ্ঞের মতে অনেক ত্রুটি ছিল । এবং সবচেয়ে শক্ত যুক্তিও ছিল এই যে, সময়ের প্রয়োজনে, জাতির প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে যারা কাজটি করেছিলেন তারা কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য করেন নাই। তারা নিজেরা ক্ষমতা দখল করেন নাই। বাকশাল করে শেখ মুজিবকে ক্ষমতা থেকে নামানোর আর কোনও রাস্তা ছিলান। তারা যা করেছিলেন, তা ছাড়া জাতীকে বাঁচাবার আর কোনো উপায়ই ছিলনা। ইতিহাসে এরকম অনেক নজীর আছে। তা ছাড়া শেখ মুজিব কার গুলিতে নিহত হয়েছেন সেটা পরিষ্কার প্রমাণ করা যায়নি।
যা হোক, আইনি বিষয়ে কথা না বলে আমি যা বলতে চাই তা হলো, ২০০১ সালে জোট ক্ষমতায় এলো। জাতীর ত্রান কর্তা এইসব মুজাহিদরা তখন মৃত্যু দণ্ডের শাস্তির রায় পেয়ে কনডেম সেলে বন্দি ছিলেন এবং তাদের আপীল সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন ছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রী মওদুদ আহমদের কাছে আপীল নিস্পত্তির জন্য বার বার চাপ দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু তিনি আপীল বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নাই, সহসাই নিয়োগ দেয়া হবে, উপযুক্ত বিচারকের অভাব ইত্যাদি নানা অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। তার সময় ক্ষেপণের উদ্দেশ্য ছিল কোনোমতে ওদেরকে হাসিনার হাতে (অথবা অন্য কারো হাতে) তুলে দিয়ে দায়ভার নিজেদের কাঁধ থকে সরানো যাতে মানুষ এটা না ভাবে যে বিএনপিকে (এমনকি মওদুদ নিজেও) ক্ষমতায় আনলো যারা তাদেরকে তারা মেরে ফেললো! এভাবে বিএনপি পুরো পাঁচটি বছর তাদেরকে কন্ডেম সেলে রেখে পচালো। পাঁচটা বছর তারা অপেক্ষা করলো, তাদের সজনরাও আশায় ছিল , এমনকি যারা ঐ ঘটনায় খুশী হয়েছিলেন ( খুশী হয়েছিলেন দেশের ৯৯% মানুষ) তারাও এটা ভেবেছিলেন যে, বিএনপি হয়তো একটা পথ বের করবে। ২০০১ সালে জোটকে ভোট দেয়ার এটাও একটা কারণ ছিল যে তারা ক্ষমতায় গেলে জাতীর ত্রাণকর্তাদের প্রতি একটা সুবিচার হবে। কিন্তু জোট সরকার তাদের প্রতি সুবিচার তো দুরের কথা, সুবিচার পাবার জন্য সামান্য তম কাজও তারা করেন নি। ঐ সময়ে ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী মন্ত্রীদের মধ্যা জামায়াতের দু'জন মন্ত্রীও ছিলেন। ছিলেন বেগম জিয়া সহ ১৫ আগস্টের সব বেনিফিসিরী।
জামায়াত সহ জোট সরকারের কারো রাজনীতি করার সুযোগ হতোনা যদি ১৫ আগস্ট না হতো। দেশের কেউ ইসলামী রাজনিতি, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এমনকি কমিউনিস্ট রাজনীতিও করতে পারতেন না যদি তারা জীবন বাজী রেখে সেদিন জাতীকে বাঁচাতে এগিয়ে না আসতেন।
অথচ আমাদের জোট সরকার তাদের প্রতি এমন নিমক হারামী করলেন যে, পাঁচ পাঁচটি বছর তারা ক্ষমতা ভোগ করলেন, কিন্তু জাতীর ত্রাণকর্তাদের প্রতি কিছুই করলেন না। সবকিছু পারলেন, নিজেদের উপর আওয়ামী লীগের দেয়া অসংখ্য মামলা তুলে নিলেন, কোটি কোটি টাকা বানালেন, হাওয়া ভবন দিয়ে সারা দেশকে হাওয়া খাওয়ালেন কিন্তু যারা আপনাদের জন্মদাতা (রাজনৈতিক জন্মদাতা) তাদের প্রতি কী জঘন্য আচরণটা করলেন। সত্য পন্থী বলে আমরা যাদেরকে বিনা প্রশ্নে অঘাধ বিশ্বাস করি সেই জামায়াতের ভুমিকা কেনো এমন ছিল? তারাওতো এজন্য কিছু করেছেন বলে জানিনা। ঐ সময়ে জামায়াতের কিছু নেতাকে এ নিয়ে প্রশ্নও করেছিলাম। জবাব পেয়েছি যে, "আমরা তো হত্যাকারীদের পক্ষে কথা বলতে পারিনা। আফটার অল, একটা বিচারে তারা সাজা পেয়েছেন।" অত্থচ ঐ বিচারও ছিল আইসিটি'র মতো একটা সাজানো আদালতে। আজ কেনো আইসিটি'কে ক্যাঙ্গারু কোর্ট বলেন?
আর ঐ পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকেও সুপ্রিম কোর্টকে দিয়ে তাদের বিষয়টা নিষ্পত্তি করতে পারলেন না? পরে জল্লাদ হাসিনার কাছে ওদেরকে শপে দিয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেন। সে ক্ষমতায় এসেই আরেকটা প্রহসনের আয়জন করে আসামীদের সাংবিধানিক অধিকারকে প্রকাশ্যে পায়ে মাড়িয়ে ফাঁসী দিয়ে ওদের মরদেহের উপর জুতা নিক্ষেপের মতো পৈশাচিক কান্ড করলো, আর আমরা 'শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম, বলার কিছু ছিলানা'। পাঁচ বছর ক্ষমতা ভোগ করার সময় এদের প্রাপ্য সুবিচার নিশ্চিত না করার জন্য কিয়ামতের দিন আপনারা আল্লাহর কাছে কি জবাব দেবেন?
এর পরও আপনারা কি করে আশা করেন আবারো ওরা আসবে? কি করে আশা করেন, আবারো তারা আপনাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে আর আপনারা ওদেরকে হত্যা করবেন?
এমন নিমক হারাম জনগণক এবং তাদের নেতাদেরকে আল্লাহ কি শাস্তি দেবেন না?
বিষয়: রাজনীতি
২৪৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন