নির্ভেজাল ইসলাম পন্থীদের আন্দোলন এবং ভেজাল যুক্ত জাতীয়তাবাদী জগাখিছুড়ী মার্কা বর্জোয়া দলের আন্দোলনের রকমফের। আমড়া গাছে ফজলী আম আশা করেন কি করে?
লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ২৬ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:৩৯:৩২ সকাল
অনেক দিন ধরে লিখিনা কিন্তু বিষয়টা পরিষ্কার করা অনেক আগেই দরকার ছিল।
ফেসিবাদি আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসর পর থেকেই ইসলামকে নির্মুল করার লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পিত ভাবে ইসলামের উপর একের পর এক আঘাত করে যাচ্ছে। নির্ভেজাল ইসলামপন্থীদের উপর ইতিহাসের বর্বরতম নির্যাতন তারা চালাচ্ছিল এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেবল নির্যতিতরা ছাড়া একটা প্রাণীও তাদের পক্ষে কথা বলে নাই। এমনকি তথাকথিত ইসলাম পন্থীরাও রা করে নাই। বরং কেউ কেউ প্রকাশ্যে এবং বাকীরা আড়ালে আবডালে মুখ লুকিয়ে হাসছিলেন। এমনও দেখা গেছে যে, বিশ্ব বরেণ্য আলিমকে যখন ইতিহাসের নিকৃষ্টতম মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় তখনও কেউ কেউ বলেছেন ' যা রটে, কিছু না কিছু বটে'। আর এসব বলেছেন কারা? যারা নিজেদেরকে ইসলামের সোল এজেন্ট দাবি করেন এবং অনেকেই তাদেরকে সত্যিকার ইসলমিষ্ট বলে প্রচারও করেন তারা। তাদের মনে কি ছিল তা আল্লাহই ভাল জানেন তবে তাদের কাজ কর্মে এবং কথা বার্তায় ছিল এমন একটা ভাব যে, এইসব লোককে শেষ করে দিলেই বরং আমাদের পোয়াবারো হবে। এজন্যই দেখা গেলো এই ডাইনি হাসিনার সাথে গণ ভবনে বসে তারা মিটিং করেন, দেন দরবারও করেন যখন ইসলামী দলটির নেতাদেরকে নির্যাতন করে ডান্ডা বেড়ি পরানো হচ্ছিল। কিন্তু তারা এ নিয়ে টু শব্দটিও করেন নাই।
এতো গেলো আমাদের দুর্ভাগা জাতির এক শ্রেণীর আলেমদের কথা। যদেরকে ক্ষমতায় আনার জন্য এই সব খালেস ইসলামপন্থীরা যারপারনাই পরিশ্রম করেছেন, তারাও কোনো বাক্য ব্যায় করতেও চায়না। তারা ধরে নিয়েছে যে ওরা আমাদেরকে ছেড়ে যেতে পারেনা এবং যাবেওনা। যতোই উষ্টা মারিনা কেনো, ওদের যাবার আর কোনো জায়গা নাই। ওদেরকে আমাদের ধারে কাছেই থাকতেই হবে। অবশ্য এরকম একটা ধারনা হওয়ার যথেষ্ঠ কারণও আছে। সেই '৭৮ সাল থেকেই আমরা তাদেরকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে আসছি। কেবল মাত্র '৯৬ সালে কেয়ার টেকার সরকার ইস্যুতে তাদের কাছ থেকে আমরা দুরে সরে গিয়েছিলাম। এ নিয়েও আমাদের মাঝে কতো অনুশোচনা, কতো বিশ্লেষন। এর পর থেকেই দুর দুর করেও তারা আমাদেরকে তাড়াতে পারেনাই। কথায় আছেনা 'মেরেছিস কলসীর কানা, তাই বলে কি প্রেম দেবোনা'। সুতারং আমরা প্রেম দিয়েই আসছি যেহেতু তারাও এখন এটা তাদের পাওনা বলেই ধরে নিয়েছেন।
অনেক দিন ধরে ইসলাম পন্থীরা বেগম জিয়ার কাছ থেকে একটা কঠোর কর্মসুচীর আশা করে আসছিলেন যাতে এই বাকশালীয় ফেসিবাদ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। শীতের পর, গরমের পর, পরীক্ষার পর, ঈদের পর, .........এর মাসিকের পর 'কঠোর' কর্মসুচী দেয়া হবে হবে করে করে আমাদেরকে বার বার ধোকা দেয়া হয়েছে কিন্তু তারা কিছুই করেনাই। মাঝে মাঝে হরতাল ডেকে নেতারা তাদের অফিসের সামনে তাহরিমা বেঁধে দাড়িয়া বান্ধা খেলার অভিনয় করেছেন আর আমাদের লোকেরা নিহত আহত এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও আমরা বুঝতে পারিনাই যে আমড়া গাছ থেকে ফজলী আম আশা করা উচিত না বরং বোকামী।
১৮ দলীয় জোটে যারাই আছেন তারা কারা? তাদেরকে চিনতে হবে। জানতে হবে তাদের মূল কোথায়? আর এখনকার ১৮ দলের নেতৃত্ব কারা দিচ্ছেন? তাদের এজেন্ডা কি? খালেদা জিয়াকে কারা চালাচ্ছেন? কে তার ভাষন লিখে দেন, কারা তাকে দিনরাত ঘিরে রাখে? ওদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কি? তারা সমাজের কোন শ্রণী পেশার লোক? কাদের চিন্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গি দল এবং জোটের উপর প্রভাব ফেলে? এসব বিষয়গুলো না ভেবে শুধু আমাদের মতো করে ভাবলে আমাদেরকে হতাশ এবং বিক্ষুব্ধ হতেই হবে। কেনো আমরা আমাদের মনমতো গরম গরম কঠোর কর্মসুচী পেলাম না এরকম কথা মনে হতেই থাকবে আর আমরা মাথা গরম করে ফেলবো।
আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার। ইসলাম পন্থীদের প্রাজ্ঞ নেতারা যখন ১৮ দলের বৈঠকে থাকতেন তখন তাদের যুক্তি এবং তথ্য বাকীদেরকে প্রভাবিত করতে পারতো। কিন্তু এখন তারা না থাকায় জুনিয়র নেতাদের কথা জোটকে ততোটা প্রভাবিত করছে না। আমাদের যে গরজ তা ১৮ দলের কারোই নাই। তারা ক্ষমতার ভাগই শুধু চান কিন্তু রিস্ক নিতে চান না। তারা চান আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে মোটা মোটা কোষগুলো তারা খাবেন।
এই ১৮ দলের মধ্যে কারা নাই? স্বৈরাচারের দোষর থেকে নিয়ে কমিউনিষ্ট, পুঁজিবাদী, মৌলবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, ১/১১ এর উচ্ছিষ্ট ভোগি, পাঁড় নাস্তিক, দালাল সহ কিছু ভাল লোকও আছেন। ওদের সবাইকে কিন্তু একটা মাত্র শব্দে 'সুবিধাবাদি' অথবা রাজনৈতিক ভাষায় 'বর্জোয়া কায়েমী স্বার্থবাদি' বলে চিহ্নিত করা যায়। তো এইসব বর্জোয়া কায়েমী স্বার্থবাদিদের কাছ থেকে নির্ভেজাল ইসলাম পন্থীরা তাদের মনমতো কর্মসুচী পেতে পারেনা, পাওয়া সমভবও নয়। আশা করাটা বাতুলতা মাত্র।
দেখুন, খালেদা জিয়া তার ভাষনে কতো কায়দা করে সবাইকে খুশী করতে চান। ওয়ার অন টেরর, বহুজাতিক কোম্পানি, ব্যবসায়ি এবং ভারতকে খুশী করতে যা বলেন তা আমাদের জনগণের মনের কথা নয় কিন্তু তাকে তা বলতেই হয়। আবার জামায়াতকে খুশী না করলে রাস্তায় মরবে কে, মার খাবে কে, পঙ্গু হবে কারা? অথচ যুদ্ধাপরাধীদের নাম নেয়াও কবিরা গুনাহ। এজন্য দেলোয়ারের নাম নিয়ে শিবিরের উড়ন্ত বেলুনে আরো হিলিয়াম গ্যাস (বাতাস) দিলেন যাতে জামায়াত শিবির বগবগা হয়ে যায়। লাগাতার কর্মসুচী দিলে দলের নেতাদের ফেক্টরি চলবেনা তাতে গারমেন্ট রফতানীর ওর্ডার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। আরো কতো কিছু তাকে ভাবতে হয়। তাকে যারা চালান তারাও বোকা নয়। তারা এখনকার রজনৈতিক কৌশল নির্ধারনের সুযোগে কি করে নিজেদের ভবিষ্যত পাকা পোক্ত করা যায় সেদিকটাও খেয়াল রাখেন এবং রাখবেন। এতে করে নির্ভেজাল ইসলাম পন্থীরা একটু আধটু বিরক্ত হলেই বা কি আসে যায়?
এজন্য গত দু'মাস ধরে ২৫শে অক্টোবরের জন্য মহা উদ্বেগে কালাতিপাত করা ইসলাম পন্থীদেরকে বুঝতে হবে যে, আপনারা যা পেয়েছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এর চেয়ে বেশী কিছু আপাতত আপনাদের জন্য বরাদ্দ নাই। নাই মামু থেকে কানা মামু নিয়েই আপনাদেরকে আন্দোলন করতে হবে এবং বাংলার আপসহীন ণেত্রী, ১৮ দলীয় জোটের কান্ডারী, বিএনপি চেয়ার পার্সন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আবার ক্ষমতার বসাতে হবে। বোল্ড করা বাক্যটি আজ শুনা জামায়াতের একজন নেতার বক্তব্য যিনি একটি সংসদীয় সিটে প্রতিদ্বন্দিতা করে হেরেছেন এবং আগামীতেও আবার প্রতিদ্বন্দিতা করবেন বলে শুনা যাচ্ছে।
সুতরাং, মন খারাপ করবেন না, চালিয়ে যান।
বিষয়: রাজনীতি
১৯৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন