জাফর স্যারের উদ্যেশে কিছু কথা-সাহাব উদ্দিন

লিখেছেন লিখেছেন চন্দ্রাবতী ০৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:০৮:২০ সন্ধ্যা

স্যার প্রথমে আমার সশ্রদ্ধ সালাম নিবেন । আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমি সে বিশ্ববিদ্যালযের ছাত্র। সুতরাং যেকোন ক্ষেত্রেই আমি আপনার চেয়ে কম বুঝি এটাই স্বাভাবিক। সাম্প্রতিক “তোমরা যারা শিবির কর” শিরোনামে আপনার একটা লেখা পড়ার পর আর বসে থাকতে পারলাম না। সত্যি যারা শিবির করে তারা যৌবনের অনেক উপভোগ থেকে বঞ্চিত হয়! আপনার এ বিষয়ে আক্ষেপ

দেখে আমার ও খারাপ লাগছে। আপনার লেখাটা পড়ার পর ভাবলাম গতানুগতিক কোন বিষয়ে লেখে লাভ নেই। এ ধরনের লেখা প্রায় সবাই লেখে, সবাই পড়ে, সবাই শুনে । কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছু হয় না। শুধু হিংসা বিদ্বেষের বীজ বপন ছাড়া। সেজন্য চিন্তা করলাম আমার দেখা শিবিরের কিছু কর্মকান্ড এবং তাদের ব্যাপারে আপনাদের বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির কিছু বিষয় তুলে ধরব (যদি দঃসাহস মনে না করেন)। , তরুণ প্রজন্ম কে শিবির হতে দূরে রাখার স্বার্থে এবং আমরা যারা ইতোমধ্যে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছি, তাদেরকে সুপথে আনার লক্ষ্যে হলেও অন্তত আপনি এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন। আপনি যদি ইচ্ছুক হন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত সেন্ট্রাল অডিটরিয়ামে এ বিষয়ে এক সেমিনারের আয়োজন করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

আমরা শাবি পরিবার ইতিমধ্যে অনেক ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, যেমন ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রথম পরীক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ন, ওয়াই ফাই সমৃদ্ধ ক্যাম্পাস, মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য ক্যারাতে শিখানো ইত্যাদি। তাই আসুন না জামায়াত- শিবিরের সাথে ওপেন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা বা ডিবেট করার মাধ্যমে ভিন্ন আঙ্গিকে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এই উদ্যোগ সংঘাত সংঘর্ষময় রাজনীতি পরিহার করে সুস্থ ধারার রাজনীতি ও নিজ নিজ আদর্শের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে ও মাইলফলক হবে বলে মনে করি। সে যা হোক এবার কিছু বিষয় আলোকপাত করা যাক-

প্রথমত

গহীন অরণ্য বনভূমি আমাজান যেটি এতই আবিশ্বাস্য ও লোমহর্ষক যে ঐ জঙ্গলের শুধু মাত্র একটি গাছেই পৃথিবীর পাঁচ ভাগের এক ভাগ জীব বৈচিত্র্য পাওয়া যায়। শুধু তাইনা প্রতিদিন কম পক্ষে তিনটি করে নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কার হচ্ছে। মিডিয়ায় সামনে বসলে মনে হয় জামায়াত- শিবিরকে শুধু নিষিদ্ধ বা নিশ্চিহ্ন বরং জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সবাই মিলে ঐ গহীন জঙ্গলে পাঠিয়ে দিই। তাই মিডিয়া বা অন্য কেউ কি বলল এটার উপর ভিত্তি করে আমি আপনাকে প্রশ্ন করব না। প্রথমে আপনার এবং আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া একটি জঘন্য বর্বরতাকে কেন্দ্র করে চ্যালেঞ্জ করতে চাই। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি, যেদিন আপনাদের ভাষায় কুখ্যাত রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী অধ্যাপক গোলাম আজমকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাবিপ্রবির ইতিহাসে ছাত্রশিবিরকে ঘিরে ঐদিন যে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছে, তার স্বাক্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় ৯ হাজার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকাবাসী। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় সাড়ে তিন বছরে ছাত্রশিবিরের সাথে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও ঐদিন বিকাল বেলা উন্মাত্ত ছাত্রলীগ প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের দল-বল নিয়ে ছাত্রশিবিরের নির্দোষ-নিরপরাধ ও হলের বৈধ ছাত্রদেরকে অত্যন্ত নির্দয়, নিষ্ঠুর ও অমানবিক কায়দায় এক কাপড়ে হল ত্যাগ করতে বাধ্য করে। স্যার আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে এতবড় একটা অন্যায় ঘটে যাচ্ছে, অতচ আপনি নিরব ছিলেন কেন? যে মুক্তিযুদ্ধের গান আপনি আমাদের শুনান, যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনি টকশো করেন, যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমরা গর্ব – অহঙ্কার করি, সেই মুক্তিযুদ্ধকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য নবনির্মিত ‘চেতনা ৭১’ এর পাশে আপনি, আপনার সহধর্মীনী জনাব প্রফেসর ড. ইয়াসমিন ম্যাডাম ও মাননীয় ভিসি মহোদয় সহ প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষকবৃন্দ জড়পদার্থের মত হা করে তাকিয়ে ছিলেন। নিরপরাধ ও হলের বৈধ ছাত্রদেরকে হায়েনাদের হিংস্র থাবা থেকে বাঁচানোর কোন উদ্যোগ নেননি বরং শত শত র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করেছেন। এই নির্মম সত্যটুকু মিডিয়ার অপব্যবহার বা তথ্য সন্ত্রাসের কারণে বাংলাদেশের প্রায় সকল জনগণ উল্টোভাবে দেখেছে, শুনেছে, বুঝেছে, শুধুমাত্র আপনাদের কারণে। প্রচার-প্রচারণা চালানো হলো “ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিলে শিবিরের হামলা।” এটিই কি আপনাদের সোনার বাংলা? এটিই কি আপনাদের ন্যায়ের শাসন?

এটিই কি চেতনা ৭১?

মিডিয়ার প্রচার প্রচারণা দেখে যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন হওয়ার জন্য ছাত্রশিবিরকে নসিহত করেছেন। আমরা কোন মিডিয়াকে বিশ্বাস করব, আমরা কাদেরকে বন্ধু ও নিরপেক্ষ হিসাবে ভাবব, আমার উপস্থিতিতে আমার চোখের সামনে আমার প্রত্যেকটি শিরা-উপশিরা অনুভব করল যে ঘটনা, তাকে তারা পরিবেশন করল সম্পূর্ণ উল্টোভাবে, তাদের কথায় আমরা বিভ্রান্ত হব! আমরা তরুন প্রজন্ম, আমরা ছাত্রশিবির, আমরা ৭১ দেখিনি, কিন্তু ঐদিন আমাদের প্রিয় হলে কী পরিমান লুটপাট হয়েছে দেখেছি, আগুনের লেলিহান শিখা প্রত্যক্ষ করেছি, মূল্যবান সম্পদ ভাঙ্গার শব্দে হৃদয়ে প্রকম্প অনুভব করেছি, আরো দেখেছি কীভাবে নিজেরা জুলুম করে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়।

দ্বিতীয়ত,

চোরে শুনেনা ধর্মের কাহিনী। যারা আল¬াহকে ভয় করে, আল কোরআনকে বিশ্বাস করে, রাসুল (সঃ) কে সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও তার আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাঁরা কখনো অর্থলোভী বা অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হতে পারে না। যে কোন দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে যদি আর্থিক স্বার্থ বা পার্থিব কোন সুযোগ-সুবিধা জড়িত থাকে, তাহলে ঐ দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা, মারামারি বা গ্র“পিং হওয়া অনিবার্য। দৃষ্টান্তস্বরূপ ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলকে টেনে আনতে পারি। যে ছাত্রশিবিরের ছেলেদের সাথে আপনি ধমকের সুরে কথা বলেন, তাদের মধ্যে কি মারামারি বা গ্রুপিং হতে দেখেছেন? দয়া করে লেখাটি পড়ার সময় আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনার দিকে তাকাবেন এবং হাইপোথেটিক্যাল দৃষ্টান্ত দিয়ে নিজেকে বুঝ দেওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করবেন না। এক্ষেত্রে আমি আপনার সাথে চ্যালেঞ্জ করলাম অর্থের লোভে সাধারণ ছাত্ররা শিবির করে বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা সম্পুর্ন অসত্য। মাঠ পার্যায়ের খবর নিলে দেখবেন সাধারণ ছাত্ররা শিবির করে অর্থ নেয়া নয়, বরং দেওয়ার জন্য। একজন সাধারণ ছাত্র সমর্থক থেকে যখন কর্মী হতে চায়, তখন তার কাছ থেকে কর্মীর ৪ টি বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে সম্মতি আদায় করা হয়। তার মধ্যে একটি হল “নিয়মিত আর্থিক সাহায্য দেওয়া।” কর্মী থেকে সাথী হলে “নিয়মিত আর্থিক সাহায্য দেওয়া বাধ্যতামূলক। আর ছাত্রশিবিরের সদস্যরা কি পরিমান সময়, শ্রম ও অর্থ দিয়ে প্রিয় সংগঠন শহীদি কাফেলাকে সহযোগিতা করে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।

তৃতীয়ত

খাও-দাও ফ‚র্তি কর, দুনিয়াটা মস্ত বড়। যারা আল্লাহকে ভয় করে, আখিরাতকে বিশ্বাস করে, জাহান্নামের আগুনকে ভয় করে, তারা কখনো আল্লাহ হুকুম ও তাঁর রাসুলের আনীত বিধান বাদ দিয়ে আমোদ ফূর্তি করার মাধ্যমে জীবনের মূল্যবান সময় অতিবাহিত করতে পারে না। মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন-

“সময়ের কসম। নিশ্চই মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে। তবে তারা ছাড়া যারা ভাল কাজ করে, করতে বলে ও ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেয়।” সূরা আল-আসর

স্যার আমি বিশ্বাস করি আপনি মুসলমান এবং আপনার ঈমানও আছে। তাহলে শিবিরের ছেলেরা গান গায় না, একদিকে টগবগে যুবক, অন্যদিকে সুযোগ-সুবিধাও আছে, তারপরও সুন্দরী বান্ধবীদের সাথে ঘুরা-ফেরা করে না, পহেলা বৈশাখ, ভালবাসা দিবস, থার্টি ফার্স্ট নাইট বিভিন্ন নামে বেনামে তুরুণ-তরুণীদের অবাধে মেলা মেশা করার পথ প্রশস্ত কারী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে না, তাতে অপরাধ কোথায়? আপনারাইত বলেন বাঁচতে হলে জানতে হবে। শুধু থেকে বেঁচে গেলেই শেষ বাঁচা নয়। জাহান্নামের অবর্ণনীয়, অকল্পনীয়, অন্তর পর্যন্ত পৌঁছানো আগুনের চিরস্থায়ী তেজ হতে বাঁচতে হলে ঐ সমস্ত পশুবৃত্ত ও আমোদ-ফ‚র্তির কঠিন ও কঠোর পরিণাম সম্পর্কে মৃত্যুর আগেই সজাগ ও সচেতন হওয়া জরুরী। সময়ের একফোড়, অসময়ের দশফোড়। জনাব হুমায়ুন আহমদ স্যার চলে গেছেন। আমরাও চলে যাব, আপনিও চলে যাবেন। সুতরাং দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টান, জীবন পাল্টে যাবে। অন্যথায় মালাকুল মাওত এসে গেলে খবর আছে। দশফোড় কেন, দশ লক্ষ মিলিয়ন-বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ফোড় দিলেও কাজ হবে না। তাছাড়া আপনাদের আমোদ ফ‚র্তি করা প্রজন্ম একটি সুসভ্য জাতি গঠনে কতটা হুমকি, আপনি কি জানেন? যারা নামাজ পড়ে না, আখেরাতে বিশ্বাস করে না এবং ধর্ম-কর্ম করতে ও মানতে রাজি না, তারা কিভাবে দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করে, আপনি কি জানেন ?

ক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে যারা মাদকাসক্ত তারা আপনার আমোদ ফ‚র্তি গ্রুপের সদস্য।

ক্স ছোট ছোট বালু কণা, বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তুলে মহাদেশ সাগর অতল।

আমোদ ফ‚র্তির ফলাফল গড়াতে গড়াতে এক সময় অবৈধ মেলামেশা পর্যন্ত যায়। এই দায় আপনারা কিছুতেই এড়াতে পারেন না।

ক্স তরুণ বয়সে এমনিতেই আগুনের প্রতাপ অনেক বেশি। তার মধ্যে আপনাদের মত বিজ্ঞ অভিভাবকদের অতিউৎসাহ পেয়ে তারা শুধু নেচে গেয়ে দিন অতিবাহিত করে তা নয়। বরং বিভিন্ন ধরনের কার্ড খেলে মূল্যবান সময় অপচয়, বাজে প্রেরণ, রাত জেগে কথা বলা ও পর্নোগ্রাফি দেখা ইত্যাদি নৈতিক অবক্ষয় মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকে, যা তরুণ-তরুণীদের ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র আপনাদের জ্ঞানপাপী মানসিকতা, কুৎসিত দৃষ্টিভঙ্গি ও সমান অধিকারের নামে বেপর্দা ও উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা করার স্বীকৃতি দেয়ার কারণে। এখন আমি আপনাদের সাথে চ্যালেঞ্জ করতে চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত যে সম¯Í ছাত্র-ছাত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, ব্যক্তিগত জীবনে পর্দার বিধান মেনে চলে, তাঁরা কেউ উলে¬খিত ঘৃণ্য ও নৈতিক অবক্ষয়মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নয়। বিশেষ করে ছাত্র শিবিরের যে কোন পর্যায়ের জনশক্তিকে সুসভ্য সমাজ গঠনে অন্তরায় যে কোন ধরনের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের সাথে আপনি জড়িত হতে দেখেননি এবং ইনশাল¬াহ দেখবেন না। নৈতিক অবক্ষয়ের ফলাফল কি পরিমাণ ভয়াবহ ও অমানবিক হতে পারে তা আমরা ইউরোপীয় দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪% শিশু পিতৃপরিচয়হীনভাবে জন্ম নেয়। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা মা-বাপের সামনে পর্নোগ্রাফি ব্রাউজ করে, ফলে স্বয়ং মা-বাপরা বিব্রতবোধ করে। নেই বললেই চলে, বুড়ো হলে শেষ ঠিকানা বিদ্ধাশ্রম। যদিও তারা অর্থনৈতিক ভাবে অনেক বেশি সমৃদ্ধ কিন্তু তারপরও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নাই। আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি ঐ দেশগুলোতে। আর নৈতিকতা ও লজ্জা-শরমের সীমা পরিসীমা যদি নির্ধারণ করা না হয়, তাহলে মাঠে ময়দানের বিবেকহীন চতুষ্পদ জন্তু গরু-ছাগল আর আমরা বিবেকওয়ালা সৃষ্টির সেরা জীব দাবিদার মানুষের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? সুতরাং সমান অধিকারের বুলি আওড়িয়ে শুধু বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা চিন্ত করলে হবে না, সাথে সাথে নৈতিকতা ও হায়া-শরমের ব্যাপারটিও লক্ষনীয়। নৈতিকতা সম্পন্ন একটি সমৃদ্ধ জাতি ও সুসভ্য সমাজ গঠনে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অন্যথায় ঐ বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও অর্থই অনর্থের মূল হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য। আর এই বিরাট উপলব্ধির কাজটি করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির। কিন্তু এগুলো আপনাদের পছন্দ হয় না। এখন চিন্তা করে দেখুন আপনারা দেশের জন্য যতটা না মঙ্গল, তার চেয়ে অনেকগুণ ভয়ংকর।

চতুর্থত

যুগে যুগে অনেক স্বনামধন্য ও বিখ্যাত মনীষী ধর্মীয় কারণে অথবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে অথবা প্রভাবশালীদের পদলেহী বা অনুগত না হওয়ার কারণে নির্মম নিষ্ঠুর নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন, কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, এমনকি মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। ইতিহাসের পাতা ও বর্তমানের সমসাময়িক কিছু প্রেক্ষাপটের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখতে পাই খ্রিষ্টপূর্ব ৩৯৯ তে সক্রেটিস কে হেমলক বিষ পান করিয়ে নিষ্টুরভাবে হত্যা করেছিল। অপরাধ ছিল তৎকালীন সময়ে তিনি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন আর শাসকবর্গ মূর্খ ছিল। ১৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে গ্যালিলিওকে কারাবন্ধী করা হয়েছিল। অপরাধ কি? এতদিন মানুষ একটা বিষয় সম্পর্কে ভুল জানত, আর তিনি ভুলটা সংশোধন করে, সত্যটা আবিষ্কার করলেন। ১৯৬২ সালে নাশকতামূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয় নেলসন ম্যাডেলাকে। দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর ১৯৯০ সালে মুক্তি লাভ করে এবং ঐ কয়েদী ১৯৯৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান। দীর্ঘ ২৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে প্রায় ১৫ বছর গৃহবন্ধী থাকে মায়ানমারের আপোষহীন নেত্রী অংসান সুচী। শুধু কি তাই, অন্যায় সহ্য না করে লেখনীয় মাধ্যমে প্রতিবাদ করার কারণে কারগারে যেতে হয়, আমাদের সকলের প্রিয় বিদ্রোহী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে। এই হল দুনিয়ার বিচার ব্যবস্থা।

আর যদি ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন শুধু ইসলামের সুমহান আদর্শের প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠার অপরাধে ষড়যন্ত্রভাবে জেলে রাখা হয়েছে, ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে বর্বরতার ইতি টানা হয়েছে। যেমন বর্তমান আরব বসন্তের ফসল মিসরের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসানুল বান্নাহকে গুলি করে শহীদ করা হয়। শীর্ষস্থানীয় নেতা সাইয়্যেদ কুতুব কে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়। প্রখ্যাত ইমাম আবু হানিফা (রঃ) কে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে নির্যাতন করতে করতে শহীদ করা হয়। এ ধরনের অসংখ্য দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। জামায়াতে ইসলামির প্রতিষ্ঠাতা শ্রদ্ধেয় মাওলানা মওদুদী (রঃ) ও এর ব্যতিক্রম না। আপনি উলে¬খ করেছেন যে, কাদেয়ানীরে হত্যার অভিযোগে ওনার ফাঁসির রায় হয়েছিল । তৎকালীন সরকার শ্রদ্ধেয় মাওলানার পরিচালিত আন্দোলনের তেজ ও সুদৃর প্রসারী চিন্তাভাবনা দেখে শুধুমাত্র আদর্শের দ্বন্ধের কারনে ওনার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে সাজানো রায় ঘোষণা করেছিলে। কিন্তু বিবেকবান বিশ্বাসী ও তাওহীদী জনতার তীব্র আন্দোলন ও প্রতিবাদের মুখে জালেম সরকার রায় প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ওনাকে প্রাণ ভিক্ষার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু শ্রদ্ধেয় মাওলানা বলেছিলেন- “জীবন মৃত্যুর ফায়সালা আসমানে হয়, জমীনে নয়।” মহান আল¬াহর উপর কতটুকু অগাদ ও অবিচল বিশ্বাস থাকলে পরে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে ক্ষমা না চেয়ে একথা বলা যায়। সে যাহোক এখানে ওনার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত লেখার অবকাশ নাই। আপনি আপনার লেখার পরোক্ষভাবে বলেছেন, আমরা না জেনে না বুঝে মাওলানা মওদূদী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত জমায়াতে ইসলামী কে সমর্থন করছি। আমি যদি আপনাকে বলি মাওলানা মওদূদী (রঃ) সম্পর্কে ১ ঘণ্টা বক্তব্য দেন। তাহলে ১ ঘণ্টাতো দূরের কথা, ১০ মিনিটও আপনি পারবেন না। আপনারা কিছু বিষয় জানছেন, শুনছেন এবং এগুলোই আওড়াতে থাকেন। কিন্তু আমরা অন্ধ অনুগত্য বা অনুসরণে বিশ্বাসী নয়।

পঞ্চমত

জমায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বিচার চলছে। অপরাধ কি ? তাঁরা যুদ্ধপরাধ করেছে। যুদ্ধপরাধী বললে খুব বেশি সুবিধা করা যাবে না চিন্তা করে, পরবর্তীতে বললেন তাঁরা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে।। কোথায় বিচার চলছে? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে। ঐ ট্রাইবুনালের আন্তর্জাতিক মান নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠল, তখন বললেন এটি ডমেস্টিক ট্রাইবুনালও হতে পারে। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে আন্তর্জাতিক মানের আইনজীবী আনা হল। কিন্তু বিমান বন্দর থেকে পরোক্ষভাবে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বিদায় করলেন। অভিযুক্তের পক্ষে স্বাক্ষী দেবে নিশ্চিত হওয়ার পর, আদালত চত্ত¡র থেকে স্বাক্ষীকে গুম করলেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল যার অধীনে এই বিচারকার্য পরিচালনা হচ্ছে, ঐ বিচারক নিজেও একসময় প্রকাশ্যে হুংকার দিয়ে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি করছিলেন। আল¬াহর রহমতে সময়ের ব্যবধানে ব্রিটিশ সাময়িকি দ্যা ইকোনমিস্টের মাধ্যমে ঐ বিচারক নামের কলঙ্ক নিজামুল হক নাসিমের আসল চেহারা উন্মোচিত হল এবং সাহসী দৈনিক আমার দেশের মাধ্যমে দেশবাসী তা প্রত্যক্ষ করল। ফলে সর্বমহলের তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলো। আমার যতদূর মনে পড়ে আমি ক্লাস এইট পর্যন্ত বাংলা সিনেমা দেখছিলাম। যুদ্ধপরাধীদের বিচারের নাম দিয়ে জামায়াত ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে নিয়ে যে নাটক সিনেমা করা হচ্ছে তা শুধু বাংলা সিনেমা কেন, পৃথিবীর যেকোন কল্পকাহিনীকেও শতগুণে ছাড়িয়ে যাবে। কারণ এটি জীবন্ত নাটক সিনেমা।

আপনারা যে ব্যক্তিকে টর্গেট করে নাটকের প্রথম পর্ব শুরু করেছেন, ওনাকে আপনারা চিনেন? ওনি হচ্ছেন পৃথিবীর অর্ধশতদেশে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে অত্যন্ত সুললীত কণ্ঠে, হুদয়গ্রাহী, যুক্তিক ও মর্মস্পর্শী বক্তব্যের মাধ্যমে সুমহান ইসলামের শ্বাশতবাণী পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেয়া বাংলার লাখো-কোঠি তাওহীদী জনতার হৃদয়ের স্পন্দন, নয়নের মনী, জননন্দিত জননেতা ও মুফাচ্ছিরে কুরআন আল¬ামা দেলোয়ার হুসাইন সাঈদী। যার হাত ধরে প্রায় শতাধিক অমুসলিম ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। আমি আপনার সাথে চ্যালেঞ্জ করছি যে, দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধীদলীয় নেত্রী সমাবেশ করলে যে পরিমাণ মানুষ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে সাড়া দেয়না, ওনার ওয়াজমাহফিলে আল¬াহর রহমতে তার চেয়ে বেশি লোকের স্বতঃস্ফ‚র্ত সমাগম হয়। প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্যদের সমাবেশে অধিকাংশ মানুষ আসে টাকার বিনিময়ে। অস্বীকার করবেন? পারবেন না। কিন্তু ওনার ওয়াজমাহফিলে আসে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে। আর তিনি জমায়াতে ইসলামী করেন। ঐ জমায়াতে ইসলামী করাটাই ওনার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। এই মানের লোক জামায়াতে ইসলামী করলে আগামীতে আপনাদের বারোটা বাজতে পারে। সুতরাং যুদ্ধপরাধ নয়, জনপ্রিয়তাই উনার একমাত্র অপরাধ। তাই ওনার ওয়াজ মাহফিলে অঘোষিতভাবে ১৪৪ ধারা জারি করলেন। যা সংবিধান পরিপন্থী। ‘৭১ সনে কোন ধরণের রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না থাকার পরও, ভিত্তিহীন অভিযোগ আনলেন। প্রহসনের বিচারকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সহজ-সরল জনগণ ও সরলমনা তরুণ প্রজন্মদের ধুকা দিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। এই হল আপনাদের মুখ ও মুখোশ। দয়া করে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করবেন না। যদি করেন তাহলে তরুণ প্রজন্ম কখনো আপনাদের ক্ষমা করবে না।

আমি আপনাদের সাথে শেষ চ্যালেঞ্জ করতে চাই, সা¤প্রতিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়াতে জামায়াত শিবিরের তান্ডবলীলা বলে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। সবসময় দাবি করা হয়, জামায়াত-শিবির প্রথমেই হামলা করেছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত প্রায় প্রত্যেকটি সমাবেশ মিছিলে আমি উপস্থিত ছিলাম।

আল¬াহর কসম করে বলছি, একটি বারের জন্যও জামায়াত-শিবির প্রথমে র‌্যাব বা পুলিশের উপর আক্রমণ করেনি। আক্রান্ত হওয়ার পর গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় ও বাঁচার জন্য প্রতিহত করেছে মাত্র। তাহলে কিসের জন্য, কাদের স্বার্থে জামায়াত ইসলামীকে নিয়ে এ ধরণের জঘন্য মিথ্যাচার করা হচ্ছে? তাদের প্রতিহতকে কেন তান্ডবলীলা বলা হচ্ছে?

স্যার আপনি কোনদিন রাজপথে মিছিল করছেন কি না জানি না। আমার খুব ইচ্ছা হয় আপনারা যারা প্রচণ্ড জামায়াত বিদ্বেষী তাদেরকে হেলম্যাট পরিয়ে হলেও যদি মিছিলে নিয়ে যেতে পারতাম সত্যিকারের ঘটনা কি, আর মিডিয়া কি পরিমান তথ্য সন্ত্রাস করছে তা নিজ চোখে দেখাতে পারতাম। জানি আপনি মিছিলে যাবেন না। যে সত্যিকারের ঘুমে থাকে তাকে জাগানো যায়। আর যে জেগে জেগে ঘুমের ভান করে তাকে জাগানো যায় না। আপনি যদি সত্য ঘটনা জানতে চান, আপনাকে একদিনের জন্য হলেও জামায়াত-শিবিরের মিছিলের স্থান ও সময় জানাব। আমার অনুরোধ থাকবে মিছিলে অংশগ্রহণের সম্ভব না হলেও অন্তত সত্য জানার জন্য বোরখা পরে হলেও রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকবেন। সত্যকে জানার পর লেখালেখি করবেন। দয়া করে না জেনে, না বুঝে এই স্বাধীন বাংলাদেশের সহজ-সরল জনগণ ও তরুণ প্রজন্মের সাথে মিথ্যাচার করবেন না।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনি যদি অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে গবেষণা করেন এবং সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার চেষ্টা করেন, তাহলে অবশ্যই সত্যকে জানতে পারবেন। আর তখন জামায়াতে ইসলামীর লোকজন ছাড়া অন্য কোন লোকের সাথে হ্যান্ডশেক করবেন না। জামায়াতে ইসলামীর প্রোগ্রাম ছাড়া অন্য কারও প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করবেন না। যে ছাত্রশিবিরের ছেলেদের সাথে ধমকের সুরে কথা বলতেন, তাদেরকে অনেক অনেক বেশী ভালবাসবেন। আর অন্য ছেলেদেরকে “কেন তোমরা ছাত্রশিবির কর না” বলে ধমক দেবেন। এই প্রত্যাশায় রইলাম। আল¬াহ আমাদের সবাইকে অন্তত মৃত্যুর আগেও হলেও সত্য-মিথ্যা বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক

শিক্ষার্থী

জি.ই.বি বিভাগ

শাবিপ্রবি, সিলেট।

বিষয়: বিবিধ

১৪০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File