মায়ের কাছে খোলা চিঠি

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০৯:০৭:৩২ সকাল

মা কেমন আছো ? তুমি ভালো আছো তো ?? কী হল তোমার, কোন কথা বলছো না কেন ??? কথা বলো মা। জানি মা আজ যতই ডাকি না কেন আমার কোন ডাকই তুমি শুনবে না। আমার কোন প্রশ্নের উত্তর তুমি আর কোন দিন দিবে না। তবুও তোমাকে আজ আমি বলবো। অনেক কথা তোমাকে বলতে হবে। মনের মাঝে অনেক কথা জমা হয়ে আছে তোমাকে বলার জন্য। বুঝতেই পারিনি তুমি এভাবে চলে যাবে। মা তোমাকে মনের মত করে দেখা হল না আমার। আজ তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তুমি থাকতে বুঝিনি তুমি কত আপন ? তোমাকে কত কষ্ট দিয়েছি। আজ যখন তুমি নেই তখন ঠিকই বুঝতে পেরেছি আমি কী হারিয়েছে। মা আজ আর কেউ তোমার মত করে ভালবাসে না। তোমার মত আদর, মায়া-মমতা দিয়ে কাছে টানে না। কে আছে তোমার মত আপন ? তোমার তুলনা শুধুই তুমি।

মা আমি এখন অনেক বড় হয়েছি। দেশ ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছি। বিদেশে প্রথম বেতনের টাকাগুলো তোমার হাতে তুলে দিতে পারলে আমার মনটা অনেক খুশি হত। একটি আফসোস আমার কোন দিনও শেষ হবে না আর তা হল আমার উপাজর্নের একটি টাকাও তোমার হাতে তুলে দিয়ে বলতে পারলাম না, মা এই নাও তোমার প্রয়োজনে খরচ করিও। জানো মা এই আফসোস কোন দিনও শেষ হবে না। মা এখন কত টাকা দুহাতে নাড়াচাড়া করি কিন্তু আজ আর তুমি নেই। আমার মনে আছে আমি যখন ছোট তখন তুমি আমাকে আদর করে আমার মাথা হাত বুলাতে বুলাতে বাবাকে বলেছিলে আমরা কি লোকমান এর উপার্জন খেয়ে যেতে পারবো ? এ কথাটি আজ আমার খুব মনে হয়। তখন খুব কষ্ট লাগে। বাবা ঠিকই পেরেছে। তুমি পারলে না মা। বাবাকে হজ্বেও এনেছিলাম। বাবাকে মক্কা মদীনা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছি তখন তোমাকে খুব মনে পরেছে। তুমি থাকলে তোমাকে নিয়ে আসতাম। কিন্তু সেই সৌভাগ্য আর আমার হল না। তোমার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। শুধু কষ্টই দিয়েছি তোমাকে। আজ তুমি নেই তোমার কথা মনে হলে আমার হৃদয়টা ফেটে যায় মা। দুচোখে নেমে আসে অশ্রুধারা।

অফিসে পাশের বন্ধুটি যখন ফোন করে ওর মায়ের সাথে কথা বলে। জানতে চায় কেমন আছো মা ? ওর মা জানতে বাবা ভালো আছো তো ? ওকে উপেদশ দেয় শরীরের প্রতি যতœ নিও বাবা। তখন আমার হৃদয়টা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। আজ যদি আমার মা থাকত তাহলে আমার মাও আমার সাথে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলত যে কথা শুনে আমার হৃদয়টা জুড়িয়ে যেত। মায়ের সাথে বন্ধুর মধুর আলাপ শুনে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। অফিস থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিরবে অশ্রু ঝরাই। তোমাকে ভেবে ভেবে কত অশ্রু ঝরিয়েছি। মা আমি আজ বুঝেছি তুমি কত আপন?

আজ ছয়টি বছর পর দেশে আসলাম। এত দিনে তিন বার বাড়ি আসা হত যদি তুমি থাকতে। তোমাকে ছেড়ে এতদিন আমি কিছুতেই থাকতে পারতাম না কিন্তু তুমি আজ নেই, আজ আপন বলে আর কেউ নেই মা। মা ছাড়া পৃথিবী যেন বিরান ভূমি, ফুলবিহীন গাছ, গাছ বিহীন বাগান। তুমি নেই বলে আজ আমার দেশ, বিদেশ সব সমান। যে বাড়িতে মা নেই সে বাড়ি আবার বাড়ি হল নাকি ? বাড়িতে আজ কাকে মা বলে ডাকবো ? কে আমাকে তোমার মত আদর করবে ? কেউ না মা কেউ না। মায়ের কোন তুলনা হয় না। মায়ের তুলনা শুধু মা শুধুই মা।

আজ তুমি যদি থাকতে তবে বিদেশ থেকে তোমার জন্য কত কিছু কিনে নিয়ে আসতাম। তুমি সেগুলো পরিধান করে আমার সামনে আসতে আর আমি ঘুরে ঘুরে তোমাকে দেখতাম দুই নয়ন ভরে। তোমাকে জড়িয়ে ধরতাম। তোমার কপালে একটি চুমু খেতাম। আর তুমি আদর সোহাগ দিয়ে আমাকে বুকে টেনে নিতে। ভুলে যেতাম তোমাকে ছেড়ে দীর্ঘ দিন প্রবাসে একা একা থাকার যন্ত্রনা। কিন্তু তা আর হবে না মা। আমি বড়ই হতভাগা।

ফোন করলে বোনেরা কাঁন্নাকাটি করে বলত ভাই তুই কি দেশে আসবি না ? মা থাকলে কি এত দিন বিদেশ থাকতি ? তোকে কি আমাদের দেখতে ইচ্ছে করে না ? এসব নানা প্রশ্ন করে আর কাঁন্নাকাটি করে। ওদের কথা শুনলে আমারও কান্না চলে আসত। তবুও মা ছাড়া বাড়ি আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাক তো না । মা আজ আমি বাড়ি এসেছি, তুমি কোথায় মা ? আমি কি তোমাকে আর কখনোই দেখতে পারব না ?? কেন এমনটি হল মা ? কেন মা ?? কেন ???

একদিন মেজ আপাকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম সেজ আপার নাকি শরীর খারাপ। এ খবর শুনে সেজ আপাকে ফোন দিলাম। কি আপু কেমন আছেন ? আপনার নাকি শরীর খারাপ ? আমার প্রশ্নের জবাবে সেজ আপু যা বললেন আমি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। শোন ভাই আজ সারা রাত তোদের দুই ভাইয়ের কথা মনে পরেছে ( আমি ও মেজ ভাইয়া আমরা দুই ভাই রিয়াদে থাকি)। তোরা কেমন আছোছ। তোরা দুইটা ভাই বিদেশে আছোছ আজ মা থাকলে তোদের নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতো। তোরা বাড়ি আসতি। কিন্তু মা নেই বলে আজ.........................। তোদের জন্য খুব খারাপ লাগছে। বোনের কথায় কান্না এসে গেল। আজ আমি বাড়ি এসেছি , তুমি কোথায় মা ?

মা তুমি যখন চলে গিয়েছো তখন এত বেশি খারাপ লাগেনি। দিন দিন যেন তোমার শূন্যতা বেড়েই চলছে। তুমি নেই বলে আজ আমার কেউ নেই। তোমার কথা ভেবে ভেবে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। তোমার খুকুমণি দুটি ( সালমা/শারমিন) ও তোমার বিয়োগে অনেক ব্যাথা সয়েছে। তবে ওরা এখন আর আগের মত ঝগড়া করে না। এখন ঝগড়া করে কার কাছে বিচার নিয়ে যাবে তুমি যে আজ নেই। সালমা শারমিন এখন একে অন্যকে খুব ভালবাসে। কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারে না। ওদের বিয়ে হয়েছে। দুজনের শ্বশুড় বাড়িও কাছাকাছি। দুজনের দুটি সন্তানও হয়েছে। ওরা ওদের শ্বাশুড়িকে আম্মার পরিবর্তে মা ডাকে। দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর চেষ্টা। ওদের দুজনারই শ্বাশুড়ি খুব ভাল ওদের নিজের মেয়ের মত আদর করে। ওরা কিছুটা হলেও তোমার শূন্যতা পূরণ করতে পেরেছে। তুমি ছাড়া আমি আ বড়ই একা।

জানি না মা তুমি আজ কেমন আছো ? তবে মহান রবের নিকট দুহাত তুলে দোয়া করছি হে মনীব মায়ের জন্য এত ভালবাসা আমার মনের মাঝে তুমিই সৃষ্টি করেছ। আবার তুমিই আমাকে একা রেখে মাকে নিয়ে নিয়েছো। মায়ের জন্য আমার মনের মাঝে কত ব্যাথা তা এক মাত্র তুমিই ভাল জানো। আজ আমি নিজে থেকে কিছুই বলতে চাই না। তোমার শিখিয়ে দেয়া ভাষায় বলছি “রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা”। আমীন।

বিষয়: Contest_mother

৫৭২৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File