কফিলে বন্দি প্রবাস জীবন

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান ০৮ জুলাই, ২০১৪, ০৭:০৩:৩৪ সন্ধ্যা



'কফিল' মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের কাছে একটি অতি পরিচিত শব্দ। সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, দুবাইসহ আরব দেশগুলোতে প্রবাসী শ্রমিকেরা যার অধীনে কাজ করেন বা প্রবাসে যিনি তার মালিক তাকে কফিল বলে। একজন প্রবাসী তার কফিলের কাছে বন্ধি। কফিলের কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ করার অনুমতি নেই। আসলে প্রবাসীদের কফিলের কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজের প্রয়োজনও নেই। প্রশ্ন হল যদি কফিলের কাজ না থাকে অথবা কাজ করিয়েও ন্যায্য মজুরী না দেয় তাহলে কি করবে প্রবাসী শ্রমিক? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো কফিল যা বলবে তাই করবে। কফিলের যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে হোক তা সঠিক বা বেঠিক। কারণ সে কফিলের বন্দিশালায় বন্দি।

সৌদি আবর প্রবাসী অধিকার বঞ্চিত শ্রমিককে নিয়ে এই লেখা। যারা পরিশ্রম করে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু পাচ্ছেন না তাদের ন্যায্য মজুরি।

রবিউল ইসলাম বাড়ি ঢাকা জেলার সাভারে। রিয়াদে 'ফুনদুক আল জুনুব' নামক একটি আবাসিক হোটেলে চাকুরি করেন। হোটেলটি তার কফিলের। আট ঘন্টার পরিবর্তে বারো ঘন্টা ডিউটি করানো হয়। শুক্রবার তো দুরের কথা দুই ঈদেও নেই ছুটি। এই অতিরিক্ত ডিউটির জন্য কোন অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। মাসিক বেতন মাত্র এক হাজার রিয়াল (প্রায় বিশ হাজার বাংলা টাকা)। অথচ অন্য আবাসিক হোটেলে এই ডিউটি করলে বেতন হবে সর্বনিন্ম দুই হাজার রিয়াল। কিছুই করার নেই ন্যায্য মজুরির অর্ধেক নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে কারণ সে কফিলের বন্ধিশালায় বন্ধি।

আমিনুল ইসলাম বাড়ি চট্টগ্রামের নাজিরহাটে। 'আরইয়াফুল মামলা' নামক একটি খবার হোটেলে চাকুরি করেন। তারও একই অবস্থা। বারো ঘন্টা কাজ করতে হয় শুক্রবার এবং দুই ঈদেও নেই কোন ছুটি। বেতন মাত্র এগারোশত রিয়াল। অথচ এই কাজেই অন্যান্য হোটেলে বেতন এর দ্বিগুন। তার কফিলের হোটেল তাই এই বেতনেই এই কাজ করতে হবে।

গনি মিয়া, বাড়ি ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া জেলার বানছারামপুর উপজেলায়। রিয়াদে 'আল হুসাইন' নাকম একটি কোম্পানীর শ্রমিক। তার কফিলের কোন কাজ নাই। তাই অন্য একটি কোম্পানীর সাথে চুক্তি করে তাকে কাজে দিয়েছে। ঐ কোম্পানী থেকে আল হুসাইন কোম্পানী নিবে মাসিক তিন হাজার রিয়াল অথচ গণি মিয়া পাবে মাত্র আটশত রিয়াল। বাকি বাইশ শত রিয়াল আল হুসাইন কোম্পানী তথা গনি মিয়ার কফিলের।

সৌদি আরবে এমন অসংখ্য রবিউল, আমিনুল ও গনি মিয়া কফিলের বন্ধিশালায় বন্ধি। শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু পাচ্ছেন না তাদের ন্যায্য মুজুরি। কফিলের কাছে ন্যায্য মজুরি দাবি করাও অন্যায়(?) তাই প্রাপ্যের অর্ধেক মজুরি নিয়েই তাদের কাজ করতে হচ্ছে। অন্যথায় কফিল দেশে পাঠিয়ে দিবেন। গনি মিয়াদের প্রশ্ন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রবাস কল্যান মন্ত্রী এবং দূতাবাস কর্মকর্তাগণ কি আমাদের নিয়ে একটু ভাববেন? তারা কি আমাদের ন্যায্য মজুরি পাওয়ার ব্যাপারে কিছু করতে পারেন না? আমাদের জন্য কি তাদের কিছুই করার নেই? আমরা তো বেশি কিছু চাই না। আমরা যা চাই তাতো আমাদের প্রাপ্য।

কফিলে বন্দি প্রবাস জীবন

কফিলের বন্দিশালায় বন্দি জীবন

বিষয়: বিবিধ

১৮৭২ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

242964
০৮ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৮ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৫
188668
লোকমান লিখেছেন : আমার তখন ভালো লাগবে যখন সকল প্রবাসীরা নিজেদের ন্যায্য মজুরী পাবে। ধন্যবাদ।
242966
০৮ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৯
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : প্রিয়তে রাখলাম। আমার স্বপ্ন:প্রবাস সিরিজে কাজে লাগবে।
০৮ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৬
188669
লোকমান লিখেছেন : স্বপ্ন:প্রবাস নাকে কি বই লিখতেছেন? এগিয়ে যান বহুদুর শুভ কামনা রইল। ধন্যবাদ।
০৮ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:১৭
188692
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : এই নামে এই ব্লগে একটি ধারাবাহিক লেখা শুরু করেছিলা।কিছুদিন থেকে বিরতি আছে, আবার শুরু হবে এবং একদিন হয়তো বই হয়ে যেতে পারে ইনশা আল্লাহ।
242967
০৮ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৯
নীল জোছনা লিখেছেন : আপনাদের এই কষ্ট কখনো শোধরাবার নয়। Sad
০৮ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৫১
188717
লোকমান লিখেছেন : সরকার চেয়ে থাকে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের আশায়। প্রবাসীদের সমস্যা সামধানের চিন্তা করার সময় তাদের নেই। আপনাকে ধন্যবাদ নীল জোছনা।
242968
০৮ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৩
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : প্রবাস যখন তখন সার্থক হয় যখন ন্যায্য মজুরী সময় মোট পাওয়া যায়।
০৮ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৫৩
188718
লোকমান লিখেছেন : ভাইরে আমাদের অনেক প্রবাসী ভাইয়েরা শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না তাদের পরিশ্রমরে সঠিক মূল্য। সরকার আমাদের রেমিট্যান্স ভোগ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন।
242991
০৮ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:১৬

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 9368

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> আমি মেঘ হবো লিখেছেন : ভালো লাগলো পিলাচ
০৮ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৫৪
188719
লোকমান লিখেছেন : এটি ভালো লাগার কথা নয়রে ভাই। অধিকার বঞ্চিত প্রবাসীদের ব্যাথায় ব্যাথিত হওয়ার কথা। ধন্যবাদ আমি মেঘ হবো ভাই/বোন।
243000
০৮ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভারত,পাকিস্তান,ফিলিপাইনি রাও তো কফিল এর অধিনে কাজ করে থাকেন। আমি শুনেছি একই কফিল এর অধিনে কাজ করে ভারতিয় ও পাকিস্তানি রা যা পায় বাংলাদেশিরা পায় অর্ধেক। কারন ভারতিয় বা পাকিস্থানি রা তাদের দুতাবাস এ জানালে তারা আইনি ব্যবস্থা নেন। আর বাংলাদেশের দূতাবাস এর উচ্চশিক্ষিত বিসিএস এ সর্বোচ্চ রেজাল্ট করা কর্মকর্তা রা এই শ্রমিক দের কথা শুনতেই তো অপমান বোধ করেন। তারা যে উচ্চশিক্ষিত!!!
০৯ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:২৪
188753
লোকমান লিখেছেন : আপনি ঠিকই শুনেছেন। আমাদের দূতাবাসের কথা বলে শেষ করা যাবে নারে ভাই। দূতাবাস কর্মকর্তাগণ যদি তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতো তাহলে প্রবাসীদের সমস্যা অনেকগুন কমে যেত।
243009
০৯ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:০৫
আফরা লিখেছেন : অনেক কষ্ট লাগল মনে ।আহারে উনারা আত্বীয়-স্বজন সব ছেড়ে কত কষ্টের কাজ করছে তবু নায্য মুজুরী পাচ্ছে না ।
০৯ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:২৬
188754
লোকমান লিখেছেন : আপনারা কিছু করতে পারবেন তবুও সম বেদনা প্রকাশ করছেন। ধন্যবাদ আপনাদের। আর যারা কিছু করতে পারবে তাদের এসব নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট (?) করার সময় নাই।
286717
২২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৪০
নাছির আলী লিখেছেন : আর যারা কিছু করতে পারবে তাদের এসব নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট (?) করার সময় নাই। অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File