তারাবিহ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান ২৮ জুন, ২০১৪, ০৯:৪৮:১৬ সকাল

সারাদিন রোজার শেষে রাতের তারাবিহ নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত। এই নামাজ শুধু রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট। তারাবি নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা রমজানের রোজাগুলো ফরজ করেছেন এবং এর রাতে তারাবি নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হওয়াকে অশেষ পুণ্যের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

তারাবিহ নামাজের নিয়ম: এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত দুই রাকাত করে ১০ সালামে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়।

আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবি নামাজ পড়াকালে প্রতি দুই রাকাত বা চার রাকাত পরপর বিশ্রাম করতে হয়। দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘবের জন্য প্রতি দুই রাকাত, বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করে দোয়া ও তসবিহ পাঠ করতে হয় বলে এ নামাজকে ‘সালাতুত তারাবিহ’ বা তারাবি নামাজ বলা হয়। তারাবি নামাজের জামাতে পবিত্র কোরআন খতম করা হয়, তাই জামাতে তারাবি নামাজ পড়লে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।

তারাবি নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা: তারাবিহ নামাজের ফজিলত অনেক। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াব প্রাপ্তির আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করে, তার অতীতকৃত পাপগুলো ক্ষমা করা হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম) মাহে রমজানে রোজা, তারাবি নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদতের দরুন আল্লাহ তাআলা রোজাদার ব্যক্তির আগের সব গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)। রমজান মাসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ও কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ। তবে ঘরে সূরা-কিরাআতের মাধ্যমে আদায় করলেও সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তারাবি নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবি নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে। মাহে রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীলের সাথে কুরআন পাঠ করতেন। তাঁর সীরাত অনুসরণ করে প্রত্যেক মু’মিনের উচিত এ মাসে বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা, বুঝা এবং আমল করা। ইবনু আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-“জিবরীল রামাদানের প্রতি রাতে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাকে নিয়ে কুরআন পাঠ করতেন”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৪৮)

তারাবিহ কত রাকাত: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কমবেশি তারাবিহর নামাজ আদায়ের ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি এই ইবাদত নিয়মিতভাবে করলে উম্মতের ওপর তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ থেকেই তো বোঝা যায়, তারাবিহ মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। খোলাফায়ে রাশেদিন ২০ রাকাত তারাবিহর নামাজ আদায় করেছেন। সাহাবায়ে কেরামের আমল ২০ রাকাতের ওপর। হজরত ওমর ফারুক (রা.) তার শাসনামলে ২০ রাকাত তারাবিহ আদায়ের জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ জারি করে তা বাস্তবায়ন করেছেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-‘আমার এবং আমার খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নত দৃঢ়ভাবে ধারণ করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য। অতএব, বোঝা গেল, কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা এবং কিয়াস ২০ রাকাত তারাবিহর পক্ষে। সুতরাং গুরুত্বের সঙ্গে এই আমল সব মুসলমানের প্রতিপালন করা জরুরি।

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

239543
২৮ জুন ২০১৪ সকাল ১০:০৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : Thanks a lot for for your valuable post lokman bhaiya.
২৮ জুন ২০১৪ সকাল ১১:১৩
185899
লোকমান লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।
242404
০৭ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:৪৩
আফরা লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ভাবে রোজা ও তারাবী আদায় করার তৌফিক দিন ।আমীন ।লেখা অনেক ভাল হয়েছে ।
০৭ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৫:৩২
188282
লোকমান লিখেছেন : আমিন। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File