একটি সোনালী ভোর
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান ০৭ মে, ২০১৪, ১০:৫২:১২ সকাল
হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। তবে একটুও বিরক্তি অনূভব হচ্ছে না। কেমন আনন্দের দোল খাচ্ছে মনের মাঝে। কিন্তু কেন? হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলে তো কেমন কেমন যেন লাগার কথা, বুক দরফর দরফর করা অথবা চমকে উঠার কথা। তবে আমার তেমনটি লাগছে না কেন বরং উল্টো আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে মনের মাঝে।
শুয়ে আছি ভাবীদের ঘরের বারান্দায়। ভাবী ও ভাইয়া শুয়েছেন ঘরের ভিতর। মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রবাস থেকে এসে ভাইয়া বিয়ে করলেন। একদম নতুন আত্নীয়। ভাবীদের পুরাতন একটি বড় টিনের ঘর। দেখলেই বুঝা যায় ঘরটি অনেক পুরাতন। ভাবী বলেছেন ঘরটি তার দাদার আমলের। তা যাই হোক আনন্দ লাগার কথা ভাইয়ার। নতুন শশুর বাড়ি বেড়ানোর নাকি মজাই আলাদা। আমার মনের মাঝে কেন আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে? এমনটিও নয় যে ভাবীর পরির মতন রুপসী ছোট বোনটি এসে আদরের সুরে ডাকছে "ভাইয়া.. লোকমান ভাইয়া... উঠেন নাস্তা করবেন না? সবার খাওয়া শেষ। আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি"। বাস্তবতা হলো ভাবীর ছোট বোন তো দুরের কথা চাচাতো মামাতো ফুফাতো কোন বোন ই নাই। আছে তিনটি বড় বোন যাদের বাচ্চাদেরও বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।
ঘুম ভেঙ্গে গেলেও আমি এখনো কম্বোল মুড়ো দিয়ে শুয়ে আছি। কম্বোলের নিচ থেকে মাথাটা বের করলাম। সময়টা ছিল শীতকাল। টিনের চালে টিপ টিপ করে শিশির পড়ছে। ভোরের পাখি মধুর সুরে ডাকছে। পাখিদের কিচির মিচির আওয়াজ আমার মন ব্যাকুল করে তুলছে। আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম। খুব মনযোগের সহিত পাখিদের গান শুনতে লাগলাম। এতেও আমার মন পরিতৃপ্ত হচ্ছে না। আস্তে করে কম্বোলের নিচ থেকে বাহির হলাম ঘরের ভিতর সবাই ঘুমাচ্ছে । বারান্দায় দরজার খিল খুলে বাহিরে উঠানে গিয়ে দাড়ালাম। ভোরের শীতল হাওয়া আমার শরীরে আদরের পরশ বুলাচ্ছে। এখনো সকাল হয়নি, জেগে উঠেনি সূর্যি মামাও। হাল্কা জোৎস্না হাল্কা অন্ধকার যেন আলো আঁধারীরা খেলা করছে। কত সুন্দর দৃশ্য বলে বুঝানোর উপায় নেই। তারপর পাখিদের সমধুর কলোতান তো আছেই।
প্রবাসে ঘড়ির এলার্ম শুনে খিটখিটে মেজাজে যার ঘুম ভাঙ্গে, এমন একটি সোনালী ভোর কি তার মনে আনন্দের ঢেউ তুলবে না? সেকি হারিয়ে যাবে না পাখিদের কলতানে আনন্দ ভুবনে? মনের মাঝে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাওয়ার কারণ আমার আর বুঝতে বাকি রইল না।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৪ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই বিষয়ে আপনার সাথে আমার মিলে গেছে। বড় আপুকে বিয়ে দিলাম, তালতো বইনরা সবাই বুড়ি। ধুর আপুর শ্বশুর বাড়িতে গেলে তারপরও মজা হয়...সুন্দর লিখেছেন।
মেহমান হয়েও আপনি শুয়েছেন বারান্দায় ! আপনাকে কি ঘরে শোয়ার ব্যবস্থা আপনার ভাবী করে দেন নি ?
ঘরের ভিতর বারান্দা বড় কথা নয় আন্তরিকতাই বড় বিষয়। মেহমানদারীতে কোন ত্রুটিই ছিল না। ঐ বাড়ির লোকগুলো খুব ভালো।
বাড়িতে কি এমন কেউ ছিল না যে বউয়ের সাথে নাইওরে আসা জামাইয়ের ছোট ভাইকে ঘরের ভেতর একটা রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় নিজেরটা স্যাক্রিফাইস করে ? উনারা তো খুব ভাল লোক ছিল ! এদের মধ্যে কোন ভাল লোক কি এগিয়ে আসে নি ?
জামাই ভাইটিও কি খেয়াল করে নি তার ছোট ভাইটিকে তার শশুড় বাড়ির লোকেরা কোথায় শোয়ার ব্যবস্থা করেছে ?
ভাবীর দাদা বাড়িতেও তো ঝাড় মোছ করে থাকার বন্দোবস্ত করতে পারতো ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন