Rose আজ সৌদি আরবের জাতীয় দিবস: সবাইকে শুভেচ্ছা Rose

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:১১:০৬ রাত



আজ ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার, সৌদি আরবের ৮৩তম জাতীয় দিবস। বর্নিল সাঝে সেজেছে পুরো সৌদি আরব। সবার মনে আনন্দের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। ঘোষনা করা হয়েছে দুই দিনের সরকারী ছুটি। কারন আজ সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠা দিবস।

১৯০২ সালের ১৫ জানুয়ারি সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আব্দুল আজীজ আব্দুর রহমান আল সৌদ এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে তার পৈত্রিক শহর রিয়াদ দখল করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩২ বছর সংগ্রামের পর ১৯৩২ সালের ২১ মে এক রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে আরবের বিভিন্ন অংশের একত্রিকরণের ঘোষণা দেয়া হয়। পরবর্তীতে একই বছর ২৩ সেপ্টেম্বর আধুনিক সৌদি আরব গঠিত হয়।



১৯৩২ সাল থেকে প্রতি বছর ২৩ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেন সৌদি বাদশা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজীজ।

এক নজরে সৌদী আরব:

সৌদি আয়তনের দিক থেকে পশ্চিম এশিয়ার সর্ববৃহৎ দেশ। আরব উপদ্বীপের বিরাট অংশই এ রাজ্যের আওতায়। নদীবিহীন এ দেশটি আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। বর্তমান বিশ্বের মজুদ তেলের এক-তৃতীয়াংশের অধিকারী ও মানবিক সাহায্যে বিশ্বসেরা এবং বিনিয়োগে সপ্তম স্থান অধিকারী মুসলিম বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালী এ দেশটির বাদশাহ প্রভাবশালী বিশ্বব্যক্তিত্বের মধ্যে চতুর্থ ও মুসলিম নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রথম স্থানের অধিকারী। জি-২০-এর একমাত্র মুসলিম রাষ্ট্র সৌদি আরব।



সৌদি আরবের সাধারণ মৌলিক সর্বশেষ তথ্যাবলি:

সরকারি নাম : আল মামলাকাতুল আরবিয়্যাতুস সউদিয়া (রাজকীয় সৌদি আরব) Kingdom of Saudi Arabia (KSA)

প্রথম সৌদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা : ১৭৪৪ ঈসায়ি, প্রতিষ্ঠাতা : মুহাম্মাদ বিন সাউদ

দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা : ১৮২৪ ঈসায়ি, প্রতিষ্ঠাতা : তুর্কি বিন আবদুল্লাহ

তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা : ১৯২৬ ঈসায়ি, প্রতিষ্ঠাতা : আবদুল আযীয বিন আবদুর রহমান

স্বীকৃতি লাভ : ২০শে মে ১৯২৭ ঈসায়ি

একত্রীকরণ ও স্বাধীনতা : ১৯৩২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর সব গোত্র ও প্রদেশ একত্রীকরণ করা হয়। সে জন্য প্রতি বছর ২৩শে সেপ্টেম্বরই সৌদি আরবের জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়। এটি সৌর হিজরি সনের প্রথম দিন।



রাজধানী : রিয়াদ। এ ছাড়াও সৌদি আরবে ১৩টি প্রাদেশিক প্রশাসনিক রাজধানী আছে।

সরকারপদ্ধতি : একচ্ছত্র রাজতন্ত্র, রাষ্ট্রপ্রধান খাদিমুল হারামাইন বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আযীয আল-সাউদ ও যুবরাজ সালমান বিন আবদুল আযীয আল-সাউদ।

আয়তন : প্রায় ২২,৫০,০০০ বর্গকিলোমিটার বা ৮,২৯,৯৯৬ বর্গমাইল

ভৌগোলিক সীমারেখা : উত্তরে- জর্ডান ও ইরাক, দক্ষিণে ওমান ও ইয়ামন, পূর্বে কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আরব সাগর, পশ্চিমে লোহিত সাগর।

ধর্ম : সৌদি আরবের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সৌদি পরিচয় বহনকারী সবাই মুসলমান। তাদের অধিকাংশই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অনুসারী। তবে আল-কাতিফ, আল-আহসা, নাজরানে কিছু শিয়াদের বসবাস রয়েছে। সেখানে অবস্থানরত অমুসলিম জনগণও তাদের মানবিক ও ধর্মীয় অধিকার পুরোপুরিভাবে ভোগ করছে।

ভাষা : আরবি, তবে আরবির পাশাপাশি বর্তমানে ব্যাপক হারে ইংরেজির ব্যবহার লক্ষণীয়।

জনসংখ্যা : ২,৮৬,৮৬,৬৩৩ জন (২০১০ সাল) জন্ম বৃদ্ধির হার ১.৮%, জন্মের হার ২৮.৫ ও প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার ১১.৫, গড় আয়ু পুরুষ : ৭৪ বছর, মহিলা : ৭৮ বছর, প্রতি বর্গমাইলে জনবসতির ঘনত্ব ২৯ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনবসতির ঘনত্ব ১৪ জন (২০০৯)।

জনশক্তি : ৬০,৪৯,০০০ জন, তন্মধ্যে শতকরা ৩৫ জন বিদেশী। শিল্প পক্ষত্রে শতকরা ২৫ ভাগ, চাকরি ক্ষেত্রে শতকরা ৬৩ ভাগ ও কৃষি ক্ষেত্রে শতকরা ১২ ভাগ (২০০৫ সাল)।





মাথাপিছু আয় : ২৫৪৬৬ মার্কিন ডলার, জিডিপি : ২২৬৩৫।

জাতীয় সঙ্গীত : ইসলামের মহানুভবতায় দেশপ্রেমকে উজ্জীবিতকরণের ও দেশের উন্নতিকল্পে দায়িত্ববোধ জাগ্রতকরণের বিষয়সংবলিত।

জাতীয় পরিচয় : সাউদি

স্থানীয় সময় : +৩ ঘণ্টা অর্থাৎ বাংলাদেশের দুপুর ১২টায় সাউদিতে সকাল ৯টা।

জাতীয় পতাকা : পতাকার রঙ সবুজ। দৈর্ঘ্যরে দুই-তৃতীয়াংশ প্রস্থ এতে তাওহিদের মর্মবাণী “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্যিকারের ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল) এই কালিমা আরবিতে উৎকীর্ণ রয়েছে। কালিমার নিচেই একটি কোষমুক্ত তরবারি অঙ্কিত রয়েছে, যা দ্বারা ন্যায়বিচারকে বোঝানো হয়েছে। এ কালিমা উৎকীর্ণ থাকায় সৌদি আরবের পতাকা কখনো অর্ধনমিত করা হয় না। সবুজ রঙ ইসলামের ঐতিহ্যের দিকে ইঙ্গিতবহ।

জাতীয় প্রতীক : আড়াআড়ি দুইটি তরবারির ওপর একটি খেজুরগাছ হলো সৌদি আরবের জাতীয় প্রতীক। খেজুরগাছ দ্বারা বোঝানো হয়েছে সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি। আর তরবারি দ্বারা ন্যায়বিচার, শক্তি ও নিরাপত্তা বোঝানো হয়েছে।

জাতীয় পঞ্জিকা : মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণার্থে রচিত হিজরি সন অনুযায়ী সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ৩৫৪ দিনে ও ১২ মাসে এক চান্দ্রহিজরি বর্ষ গণনা করা হয়। ঈদ ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান এই হিজরি তারিখ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয়। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বর্তমানে আরবির পাশাপাশি ইংরেজি তারিখ অনুযায়ী করা হয়।

সরকারি ছুটি : সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতি ও শুক্রবার। এ ছাড়াও ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, হজ ও জাতীয় দিবসে সরকারি ছুটি রয়েছে।

আবহাওয়া : তাপমাত্রা ১২ থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে। বৃষ্টিপাত বিক্ষিপ্ত ও অনিয়মিত। দীর্ঘস্থায়ী উষ্ম ও শুষ্ক গ্রীষ্মকাল। রাতে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। শীতকালে হালকা তুষারপাত হয়।

জাতিসত্তা : আরব ৯০%, আফ্রো-এশীয় ১০%।

মুদ্রা : সৌদি রিয়াল, ১০০ হালালায় ১ রিয়াল (১ মার্কিন ডলার সমান ৩.৭৫ সৌদি রিয়াল)

সংবিধান : ইসলামি আইন (শরিয়া) মোতাবেক রচিত, ১৯৯৩ সালে এতে সরকারের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কিত ধারা ও উপধারা সংযোজন করা হয়েছে।

আইন বিভাগীয় ক্ষমতা : সৌদি মন্ত্রী পরিষদ। বর্তমানে সৌদিতে ২২টি মন্ত্রণালয় আছে।

১. পররাষ্ট্র, ২. ইসলামিক, দাওয়াহ, ওয়াক্ফ ও ইরশাদ ৩. হজ ৪. স্বরাষ্ট্র ৫. বিচার ৬. অর্থায়ন ৭. অর্থ ও পরিকল্পনা ৮. প্রতিরক্ষা ও বিমান চলাচল ৯. সংস্কৃতি ও তথ্য ১০. শিক্ষা ১১. উচ্চশিক্ষা ১২. স্বাস্থ্য ১৩. বাণিজ্য ও শিল্প ১৪. পেট্রল ও খনিজ ১৫. কৃষি ১৬. শ্রম ১৭. সামাজিক বিষয়ক ১৮. পৌর ও পল্লী ১৯. জনসেবা ২০. যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি ২১. পরিবহন ২২. পানি ও বিদ্যুৎ।

বিচারব্যবস্থা : ইসলামি আইন অনুযায়ী বিচারব্যবস্থা পরিচালিত হয়।

গুরুত্বপূর্ণ শহর ও লোকসংখ্যা : (১) রিয়াদ, ৫৪৩১৮৯৩ (২) জিদ্দা (মক্কাঞ্চল), ৩৪৩০৬৯৭ (৩) মক্কা মুকাররমা, ১৫৩৪৭৩১ (৪) মদিনা মুনাওয়ারা, ১১০০০৯৩ (৫) দাম্মাম (পূর্বাঞ্চল), ৯০৩৩১২ (৬) তায়েফ (মক্কাঞ্চল), ৬৬০৭৮৮ (৭) আল-আহসা (পূর্বাঞ্চল), ৭২৮১২১ (৮) বুরাইদা (আল-কাছিম অঞ্চল), ৬১৪০৯৩ (৯) তাবুক, ৫০২৬২৬ (১০) আল-খুবার (পূর্বাঞ্চল), ৪৫৭৭৪৫ (১১) খামিস মুশাইয়াত (আছির অঞ্চল), ৪৩০৮২৮ (১২) আল-জুবাইল (পূর্বাঞ্চল), ৩৩৭৭৭৮ (১৩) হাইল, ৩১০৮৯৭ (১৪) নাজরান, ২৯৮২৮৮ (১৫) হাফরুল বাতন (পূর্বাঞ্চল), ২৭১৬৪২ (১৬) জাযান, ২৫১৯৩৩ (১৭) আবহা (আছির অঞ্চল), ২৩৬১৫৭ (১৮) ইয়ানবু (মদিনা অঞ্চল), ২৩৩২৩৬ (১৯) আরআর (উত্তরাঞ্চল), ১৬৭০৫৭ (২০) উনায়জা (আল-কাছিম অঞ্চল), ১৫২৮৯৫।

শিক্ষা : শিক্ষার হার ৯৫%। তন্মধ্যে পুরুষ- ৮৪.৭%, মহিলা-৭০৮%। সৌদি আরব আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সব নাগরিকের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা। বর্তমানে সৌদি আরবের বাজেটের ২৫% এ খাতের জন্য বরাদ্দ। সেখানে বসবাসরত বিদেশীদের সন্তানদের শিক্ষার সুন্দর ব্যবস্থা বিদ্যমান। রিয়াদ, জিদ্দা ও দাম্মামে অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত।

সংস্কৃতি : সৌদি আরবের সংস্কৃতি মূলত ইসলামি শরিয়াত ও ইসলামি শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমি মক্কা ও মদিনা উভয়টি সৌদি আরবে অবস্থিত হওয়ায় ইসলামি সংস্কৃতি খুবই শক্তিশালী। প্রতিদিনই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জন্য আজান হওয়ামাত্রই সব কিছুকে পেছনে ফেলে সবাই মসজিদপানে ছুটে যান, যা বিশ্বের দ্বিতীয় আর কোনো দেশে দেখা যায় না।

স্বাস্থ্য : স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয় উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ। বিদেশীসহ সব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ২০০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী সৌদি আরবে হাসপাতালসংখ্যা ৩৯৩টি, শয্যাসংখ্যা ৫৩৮১৯টি, চিকিৎসক ৪৭৯১৯ জন, নার্সসংখ্যা ৯৩৭৩৫, সহকারী স্বাস্থ্যকর্মী ৫১২৮৮ জন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৩১৩০টি (১৯৮৬ সরকারি)।

মোট জাতীয় আয় : মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার ১৩.৫% (২০০৮ সাল)

অর্থনীতি : সৌদি অর্থনীতি মূলত তেলকেন্দ্রিক। বিশ্বের অন্যতম তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরবের ৯০% ভাগের বেশি আয় আসে তেল রফতানি থেকে এবং ৭৫% ভাগ আসে রাজস্ব থেকে। দাহরানে অবস্থিত আরামকো সৌদি তেল ব্যবস্থাপনার সরকারি কোম্পানি।

প্রাকৃতিক সম্পদ : তেল ও গ্যাস সৌদি আরবের প্রাকৃতিক সম্পদ। বর্তমানে প্রতিদিন ১১ মিলিয়ন ব্যারেল করে তেল উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে গ্যাসের মজুদ ১৮০.৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এ ছাড়া সেখানে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ, রৌপ্য, তামা, দস্তা, সীসা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ইউরেনিয়াম, শিল্পের কাঁচামাল, ফসফেট, কয়লা, পাথর ও নির্মাণসামগ্রীর বিশাল মজুদ মরুময় দেশটিতে আছে।

শিল্প : বর্তমানে সৌদি আরবে দুই ধরনের শিল্প আছে। (১) ভারী (২) মাঝারি। ভারী শিল্পের মধ্যে রয়েছে তেল শোধনাগার, যা বছরে ৬৫২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিশোধন করে। পাশাপাশি বিটুমিন শিল্প যা ১৯৯০ পর্যন্ত ১৪ মিলিয়ন টন উৎপাদন করেছে। মাঝারি শিল্পের মধ্যে রয়েছে খাদ্যদ্রব্য, নির্মাণসামগ্রী, রাসায়নিক ও খনিজদ্রব্য। যা দেশটিকে দ্রুত শিল্পায়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুদবিহীন শিল্পঋণ প্রদান, কারখানার জন্য জায়গা ভাড়া প্রদান, সকল সুযোগ-সুবিধাসংবলিত শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের বাসস্থান নির্মাণ, নামমাত্র মূল্যে সমস্ত চাহিদা জোগান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে ক্রয়ের ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত দ্রব্যাদির অগ্রাধিকার দেয়া হয়। যাকাত ব্যতীত সর্বপ্রকার শুল্ক মাফ করা হয়। বর্তমানে মাঝারি আয়তনের শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ২৩০০টি। সেখানে বিনিয়োগ রয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলার। সেখানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার।

ভূমিরূপ : প্রধানত চার ভাগ। তন্মধ্যে (১) হিজায ও আছির এলাকার পাহাড়ি অঞ্চল; (২) নজদ এলাকার উঁচু ভূমি; (৩) বালুময় মরুভূমি এবং (৪) পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলীয় সমতল ভূমি।

কৃষি : কৃষি ক্ষেত্রে সৌদি আরব অতি অল্প সময়েই দ্রুত উন্নয়ন সাধিত করেছে। যদিও সেখানে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন: স্বল্প বৃষ্টি, ভূগর্ভস্থ পানির স্বল্পতা, সৌদি জনগণের কৃষির প্রতি অনীহা, কৃষিযোগ্য ভূমিসমূহ অধিক বালুকাময় বা অনেক উঁচু ও অনেক নিচু। তবুও কৃষি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনামূল্যে জমি বিতরণ করে দেয়ায় তা চাষের আওতায় এসেছে। উপরন্তু বিনা সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয় এবং উৎপাদিত ফসল সরকার অতি উচ্চ মূল্য দিয়ে সরাসরি কৃষক থেকেই ক্রয় করে নেয়। আর এসব কারণেই খাদ্যে আমদানিনির্ভর দেশটি অতি অল্প সময়ের মধ্যেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু কিছু পণ্যের যেমন গম রফতানিকারক দেশও হয়েছে। এতে করে ১৭ বছরের মধ্যে কৃষি আবাদযোগ্য ভূমির আয়তন প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ভূমিতে বর্তমানে শতকরা ৭৩ ভাগ খাদ্যদ্রব্য ও শতকরা ২৭ ভাগে তরিতরকারি, ফল ও ঘাস উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষিভূমির শতকরা ৫৭ ভাগ রিয়াদ, আল-কাছিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। শতকরা ১৯ ভাগ জাযান, আসির, নাজরান, বাহা ও উত্তরাঞ্চলে। শতকরা ১৩ ভাগ হাইল, তাবুক ও আল-জাওফে। বাকি ১১ ভাগ পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে।

বিদ্যুৎ : সৌদি আরবের সব আবাদি এলাকায় ইতোমধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় এসেছে। ২০০৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৮১০৯৮ মিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫৩% বাসাবাড়ি, ১২% বাণিজ্যিক, ১১% সরকারি, ১৮% শিল্প, ২% কৃষি এবং ৪% অন্যান্য খাতে ব্যবহৃত হয়।

দুই মসজিদের উন্নয়ন : সৌদি আরব হারামাইনের দেশ। তাই খাদিমুল খারামাইন এই পবিত্র দুই মসজিদের উন্নয়নের জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করেন। হজ্জযাত্রী, উমরাকারী ও যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমনকারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির নিমিত্তে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মসজিদদ্বয়ের ধারণক্ষমতা তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে।

মানবিক সাহায্য : জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায় যে, ২০০৮ সালের মানবিক সাহায্য ফান্ডে বিশ্বের সর্বোচ্চ ২০টি দাতা দেশের মধ্যে সৌদি আরব শীর্ষস্থান অধিকার করেছেÑ যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। প্রতি বছর রমজান মাসে সৌদি সরকার বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী শুভেচ্ছা উপহারস্বরূপ উন্নতমানের খেজুর প্রেরণ করে থাকে।

সৌদি-বাংলা সম্পর্ক : বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৭৬ সালের ৮ জানুয়ারি সৌদি আরবে বাংলাদেশী দূতাবাস খোলে ও সৌদি আরব ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাস খোলার মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরো দৃঢ়তর হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সৌদি আরবকে অগ্রাধিকার দেন। বর্তমানে সৌদি আরবে ২০ লক্ষের বেশি বাংলাদেশী সৌদি আরবের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখছেন।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ৩৭% সৌদি আরব থেকে আসে। বাংলাদশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এগ্রিকালচারাল কোম্পানি (সাবিনকো), মানারাত, ইবনে সিনা, ইসলামী ব্যাংক, সৌদি-বাংলা গ্রুপ এবং বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদসহ শত শত মসজিদ, মাদরাসা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, সিডরে অবারিত সহায়তা, রমজানে খেজুর ও কোরবানির গোশত প্রদান, শীতলক্ষ্যা সেতু ও মগবাজার ফাইওভারে অর্থায়ন ও দ্বিপাক্ষিক ভ্রমণ ও বৈঠক সব কিছুই এ সম্পর্কের নিদর্শন। ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যে অনেক বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ও ইসলামিক বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ২৫ লক্ষ বাংলাদেশী রয়েছে এবং দেশে প্রায় ৪৬% রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন সৌদি প্রবাসীরা।

উল্লেখ্য সৌদি আরবে দীর্ঘদিন বাংলাদেশি ভিসা ও তানাজুল (মালিক পরিবর্তন সিস্টেম) বন্ধ থাকায় অনেক বাংলাদেশী সৌদি আরবে অবৈধ্য হয়ে গিয়েছিল। বতর্মানে চলছে সৌদি সরকারের বিশেষ ক্ষমা। সুযোগ দেয়া হয়েছে অবৈধ লোকদের বৈধ হওয়ার এবং প্রয়োজনে মালিক পরিবর্তন করার। এই সুযোগে অনেক বাংলাদেশীর মুখে ফুটেছে আনন্দের হাঁসি। তারা অবৈধ থেকে বৈধ হয়েছে এখনো হচ্ছে। এই সুযোগ চালু থাকবে ৩নভেম্বর ২০১৩পর্যন্ত। এটা বাংলাদেশীদের জন্য এক সুবর্ন সুযোগ। আশা করি বিভিন্ন সময়ে এভাবে বাংলাদেশীদের সুযোগ সুবিধা দিবেন সৌদি সরকার। এবং বাংলাদেশীদের ভিসা চালু করবেন।



সৌদি আরবের জাতীয় দিবসে আমরা সৌদি আরবের সাফল্য কামনা করছি, সৌদি আরব বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সেই সাথে সৌদি আরব প্রবাসীদের পক্ষ থেকে সবাইকে জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

বিষয়: বিবিধ

৫৯৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File