৫ লক্ষ লোকের লাশের ভয় এটা ক্ষমতায় থাকার ব্লাক মেইলিং নয়ত?

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৯ অক্টোবর, ২০১৮, ০৫:৫৬:০৩ বিকাল

তোমাদেরকে তোমাদের নেতারা আজ ভয় দেখাচ্ছে যে ক্ষমতায় না আসতে পারলে ৫ লাক্ষ লাশ পড়বে!

না ভয় পেয়না। তোমরা না মুসলিম তাহলে ভয় পাচ্ছ কেন? অতীতে ভুল করেছে, যুলুম অত্যাচার করেছ তার প্রতিদান প্রাপ্তির ভয়?

ভুল শুধরে নেয়ার ব্যবস্থাত আল্লাহই করে রেখেছেন তাই তোমাদের উচিৎ ভুল শুধরে নেয়ার পথে হাটা।

নেতারা আসলে ভয় দেখিয়ে তোমাদের ব্লাকমেইল করে তাদের পাপ ঢাকতে চাচ্ছে। তারা হয়ত ভাবছে তাদের তওবার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তারা হয়ত ভাবছে যে তারা মাফ পাবেনা তাই তোমাদের কাধে বন্দুক রেখে নিজেদের কৃত পাপ আরো বাড়িয়ে নিতে চাচ্ছে!

যাদের ভয়ে তোমরা ভিত তাদেরকে আল্লাহ ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন। খারাপ ব্যবহারের বিপরীতে ভাল ব্যবহারের কথা বলেছেন। মাফ করে দেয়ার কথা বলেছেন।

যদি তারা তাদের বিশ্বাসে এবং তাদের শ্লগানে তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে তাহলে তোমাদের কৃত যুলুম তারা ভুলে যাবে। একান্ত প্রিয় বন্ধু হিসেবে বুকে জড়িয়ে নিবে।

কি বিশ্বাস হয়না? তাহলে নিজেড়াই সূরা হামিম সিজদার ৩৪ নং আয়াত এবং তার ব্যাখ্যা পড়ে দেখঃ

﴿وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ﴾

হে নবী, সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান নয়৷ তুমি অসৎ কাজকে সেই নেকী দ্বারা নিবৃত্ত করো যা সবচেয়ে ভাল৷ তাহলে দেখবে যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গিয়েছে ৷

** এ কথার অর্থও পুরোপুরি বুঝার জন্য যে অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ও তাঁর মাধ্যমে তাঁর অনুসারীদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো তা বিবেচনা থাকা দরকার।

তখন অবস্থা ছিল এই যে, চরম হঠকারিতার এবং আক্রমণাত্মক বিরোধিতার মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের মোকাবিলা করা হচ্ছিলো যেখানে নৈতিকতা, মানবতা এবং ভদ্রতার সমস্ত সীমা লংঘন করা হয়েছিলো।

নবী (সা) ও তাঁর সংগী সাথীদের বিরুদ্ধে সব রকমের মিথ্যা আরোজ করা হচ্ছিলো। তাঁকে বদনাম করা এবং তাঁর সম্পর্কে লোকের মনে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য সব রকমের দুষ্টবুদ্ধি ও কৌশল কাজে লাগানো হচ্ছিলো।

তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকমের অপবাদ আরোপ করা হচ্ছিলো এবং শত্রুতামূলক প্রচারনার জন্য পুরো একদল লোক তাঁর বিরুদ্ধে মানুষের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে যাচ্ছিলো।

তাঁকে তাঁর সংগীদেরকে সর্ব প্রকার কষ্ট দেয়া হচ্ছিলো। তাতে অতিষ্ঠ হয়ে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তাছাড়া তাঁর ইসলাম প্রচারের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পরিকল্পনা মফিক হৈ চৈ ও হট্রগোললকারী একদল লোককে সব সময় ওঁত পেতে থাকার জন্য তৈরী করা হয়েছিল।

যখনই তিনি ন্যায় ও সত্যের দাওয়াত দেয়ার জন্য কথা বলতে শুরু করবেন তখনই তারা শোরগোল করবে এবং কেউ তাঁর কথা শুনতে পাবে না। এটা এমনই একটা নিরুৎসাহ ব্যঞ্জক পরিস্থিতি ছিল যে, বাহ্যিকভাবে আন্দোলনের সকল পথ রুদ্ধ বলে মনে হচ্ছিলো। বিরোধিতা নস্যাত করার জন্য সেই সময় নবীকে (সা) এসব পন্থা বলে দেয়া হয়েছিলো।

প্রথম কথা বলা হয়েছে, সৎকর্ম ও দুষ্কর্ম সমান নয়। অর্থাৎ তোমাদের বিরোধীরা যত ভয়ানক তুফানই সৃষ্টি করুক না কেন এবং তার মোকাবিলায় নেকীকে যত অক্ষম ও অসহায়ই মনে হোক না কেন দুষ্কর্মের নিজের মধ্যেই এমন দুর্বলতা আছে যা শেষ পর্যন্ত তাকে ব্যর্থ করে দেয়। কারণ, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ, ততক্ষণ পর্যন্ত তার স্বভাব প্রকৃতি দুষ্কর্মকে ঘৃণা না করে পারে না।

দুষ্কর্মের সহযোগীই শুধু নয় তার ধ্বজাধারী পর্যন্ত মনে মনে জানে যে, সে মিথ্যাবাদী ও অত্যাচারী এবং সে তার উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য হঠকারিতা করছে। এ জিনিসটি অন্যদের মনে তার প্রতি সম্মানবোধ সৃষ্টি করা তো দূরের কথা নিজের কাছেই তাকে খাটো করে দেয়। এভাবে তার নিজের মনের মধ্যেই এক চোর জন্ম নেয়।

শত্রুতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এই চোর ভেতর থেকেই তার সংকল্প ও মনোবলের ওপর সংগোপনে হানা দিতে থাকে। এই দুষ্কর্মের মোকাবিলায় যে সৎ কর্মকে সম্পূর্ণ অক্ষম ও অসহায় বলে মনে হয় তা যদি ক্রমাগত তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত সে-ই বিজয়ী হয়।

কারণ, প্রথমত সৎ কর্ম নিজেই একটি শক্তি যা হৃদয়-মনকে জয় করে এবং ব্যক্তি যতই শত্রুতাভাবাপন্ন হোক না কেন সে নিজের মনে তার জন্য সম্মানবোধ না করে পারে না। তাছাড়া নেকী ও দুষ্কর্ম যখন সামনা সামনি সংঘাতে লিপ্ত হয় এবং উভয়ের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট পুরোপুরি উন্মেচিত হয় এমন পরিস্থিতিতে কিছুকাল সংঘাতে লিপ্ত থাকার পর এমন খুব কম লোকই থাকতে পারে যারা দুষ্কর্মের প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে না এবং সৎ কর্মের প্রতি আকৃষ্ট হবে না।

দ্বিতীয় কথাটি বলা হয়েছে এই যে, দুষ্কর্মের মোকাবিলা শুধুমাত্র সৎ কর্ম দিয়ে নয়, অনেক উচ্চমানের সৎকর্ম দিয়ে করো। অর্থাৎ কেউ যদি তোমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে আর তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও তাহলে শুধু সৎকর্ম। উন্নত পর্যায়ের সৎকর্ম হচ্ছে, যে তোমার সাথে খারাপ আচরণ করবে সুযোগ পেলে তুমি তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করো।

এর সুফল বলা হয়েছে এই যে, জঘন্যতম শত্রুও এভাবে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। কারণ, এটিই মানুষের প্রকৃতি। আপনি যদি গালির জবাব না দিয়ে চুপ থাকেন তাহলে নিসন্দেহে তা হবে একটি নেকী বা সৎকর্ম। অবশ্য তা গালিদাতার মুখ বন্ধ করতে পারবে না। কিন্তু গালির জবাবে আপনি যদি তার কল্যাণ কামনা করেন তাহলে চরম নির্লজ্জ শত্রুও লজ্জিত হবে এবং আর কখনো আপনার বিরুদ্ধে অশালীন কথা বলার জন্য মুখ খোলা তার জন্য কঠিন হবে।

একজন লোক আপনার ক্ষতি করার কোন সুযোগই হাত ছাড়া হতে দেয় না। আপনি যদি তার অত্যাচার বরদাশ করে যেতে থাকেন তাহলে সে হয়তো তার দুস্কর্মের ব্যাপারে আরো সাহসী হয়ে উঠবে।কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তখন যদি আপনি তাকে রক্ষা করেন তাহলে আপনার একান্ত অনুগত হয়ে যাবে।

কারণ, ঐ সুকৃতির মোকাবিলায় কোন দুস্কৃতিই টিকে থাকতে পারে না। তা সত্ত্বেও এই সাধারন নিয়মকে এ অর্থে গ্রহণ করা ঠিক নয় যে, উন্নত পর্যায়ের সৎকর্মের মাধ্যমে সব রকমের শত্রুর অনিবার্যরূপে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। পৃথিবীতে এমন জঘন্য মনের মানুষও আছে যে, তার অত্যাচার ক্ষমা করা ও দুষ্কৃতির জবাব অনুকম্পা ও সুকৃতির মাধ্যমে দেয়ার ব্যাপারে আপনি যতই তৎপর হোন না কেন তার বিচ্ছুর ন্যায় বিষাক্ত হুলের দংশনে কখনো ভাটা পড়বে না। তবে এ ধরনের মূর্তিমান খারাপ মানুষ প্রায় ততটাই বিরল যতটা বিরল মূর্তিমান ভাল মানুষ।

বিষয়: বিবিধ

১৩০১ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385919
০৯ অক্টোবর ২০১৮ সন্ধ্যা ০৬:৪৯
শেখের পোলা লিখেছেন : সুরাটি মক্কী জীবনের, তাই এ ব্যবস্থা। মাদানী জীবনে ঠিক এর উল্টোটা য়েছে।বলা হয়েছে কেসাস বা বদলা নেবার মাঝেই রয়েছে সমাজ। আমাদের দেখতে হবে যে আমরা কোন অবস্থায় আছি। সেই অনুযায়ী অগ্রসর হতে হবে। যেহেতু একতার অভাব আর স্বার্থের টানাটানি, তাতে আমরা কেয়ামত পর্যন্ত ঐ মক্কী জীবনেই পড়ে থাকব। আল্লাহ আমাদের সুমতি দিক।
০৯ অক্টোবর ২০১৮ রাত ১০:২৯
317964
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আপনার কথাই টিক আমরাতো সামনের চেয়ে পিছনের দিকেই অগ্রসর হচ্ছি শত গুন বেশী। আপনাকে ধন্যবাদ
১০ অক্টোবর ২০১৮ দুপুর ০২:৫২
317968
আবু জারীর লিখেছেন : মক্কা বীজয় মাদানী জীবনে হয়েছিল। তখন সবাইকে মাফ করে দেয়া হয়েছিল। এমনকি যাদেরকে কাবার গেলাফের নিচে আশ্রয় নিলেও হত্যা করার হুকুম হয়েছিল তাদেরকেও মাফ করে দেয়া হয়েছিল। যার মধ্যে আবু জাহেলের ছেল হযরত একরামা (রাঃ) এবং হামজা (রাঃ) এর হন্তারক ওয়াশী (রাঃ) ও ছিলেন!
385921
০৯ অক্টোবর ২০১৮ রাত ১০:৩৭
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ইসলামের শত্রু শয়তানেরা বুঝেগেছে ইসলামের তথা মুসলমানের ঘরে সেই বীর সেনারা আর নেই। তাই তারা যাই ইচ্ছে তাই করেই যাচ্ছে। আপনাকে ধন্যবাদ
১০ অক্টোবর ২০১৮ দুপুর ০২:৫৩
317969
আবু জারীর লিখেছেন : আসলে এরা ইসলাম বুঝেনি বুঝেছি শয়তানী।
385932
১০ অক্টোবর ২০১৮ সকাল ১০:১৭
আবু নাইম লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১০ অক্টোবর ২০১৮ দুপুর ০২:৫৩
317970
আবু জারীর লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
385949
১০ অক্টোবর ২০১৮ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসলে এরা ইসলাম বুঝেনি, বুঝেছে ইসলামের নামে শয়তানি।
385972
১১ অক্টোবর ২০১৮ সন্ধ্যা ০৭:০২
হতভাগা লিখেছেন : জামায়াত আগেই শেষ আর এখন বিএনপি শেষ। আগামী ৫০ বছর আওয়ামী লীগই থাকছে ক্ষমতায় এটা মোটামুটি নিশ্চিত । যদি না আল্লাহ তায়ালার অন্য কোন ইচ্ছা থাকে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File