গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ৩০
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০১ মার্চ, ২০১৮, ০১:১৮:৫৬ দুপুর
গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ৩০
হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়ে দুলাল বাসায় চলে এসেছে। এখানেও মুন্নিই চাচার যাবতীয় দেখা শোনা করছে। দুলাল যখন পুরাপুরি সুস্থ্য তখন তাকে তার চিকিৎসা খরচের যাবতীয় কাহিনী শোনান হলে জয়নাল ভেবেছিল দুলালই নিজের থেকে তার অংশের জমি আলালকে দিয়ে দেনা পরিশোধ করবে। কিন্তু না দুলাল শুনল বটে কোন জবাব দিলনা বরং নিরবতা পালন করল। দুলালের নাযুক শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে কেউ আর কথা বাড়াল না।
আরও এক মাস রেস্ট নেয়ার পর এবার দুলালের বাড়িতে যাবার পালা কিন্তু সে বায়না ধরে বসল যে মুন্নার সাথে সাথে মুন্নিকেও তার সাথে যেতে হবে। যুক্তি হল মুন্নি যেহেতু ডাক্তারি পড়ে তাই সে সব নিয়ম কানুন জানে। সে নিজেই গিয়ে যদি তার চাচিকে সব বিষয় বুঝিয়ে বলে তাহলে তার চলা ফেরা খাওয়াদাওয়ায় কোন অসুবিধা হবেনা। দুলালের দাবী সরল মনে সবাই মেনেও নিল তাই মুন্নি এবং ছেলে মুন্নাকে নিয়ে সে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেল।
গ্রামের বাড়িতে পৌঁছনর পর দুলালের বেশ উন্নতি হল। সপ্তাহ খানেক পর্যবক্ষনের পর মুন্নি ও মুন্না ঢাকায় চলে আসতে চাইলে দুলাল তাদেরকে আরও দুইটা দিন থেকে যেতে বলল। আর এই ফাকে বোন ভগ্নীপতি ও কয়েকজন মৌলুভি ডেকে সবার জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে বলল। বাবার আদেশ মত মুন্না বাজার সদায় করল মেহমানও দাওয়াত দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় যথারীতি খাওয়া দাওয়ার পরে দুলাল স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষে শহিদুল ইসলাম সাহেব যে কিনা কাবীন রেজিস্ট্রির কাজও করেন তাকে একটু বসার অনুরোধ জানালেন। দুই ভগ্নীপতি যথা আলালী ও দুলালীর স্বামীদেরও বসতে বলল। দুলালের শরীরটা আজ পুরাপুরি সুস্থ্য। সবার সাথে সে অনেক দিন পর পেটপুরে খাবার খেয়েছে। তার যে এতবড় একটা অপারেশান হয়েছে তা বোঝার কোন উপায় নাই। একদম ভালো মানুষের মত টাসটাস করে কথা বলছে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর শহিদুল ইসলাম সাহেব যাওয়ার অনুমতি চাইলে দুলাল বলল হুজুর আমার মনে হচ্ছে আমি আর বাচবনা। আপনি আমাকে একটু তওবা পড়ান! হঠাৎ দুলালের এমন কথায় সবাই নড়ে চড়ে বসল এবং তাকে অভয় দিল। তার পরেও দুলালকে শহিদুল ইসলাম হুজুর তওবা পড়ালেন। তওবা পড়ার পর দুলালের মধ্যে কেমন যেন একটা প্রশান্তির ভাব লক্ষ করা গেল। দুলাল সোফায় পিঠ এলিয়ে দিয়ে চোখ মুদে নিলে। সবাই আশ্চর্য হয়ে তার দিকি তাকিয়ে রইল। এভাবে কয়েক মিনিট কেটে গেলে সে মুন্নিকে ডাকল। যদিও মুন্নি ইতস্তত করছিল কারণ মজলিশে তার দুই ফুফা, চাচাত ভাই মুন্না এবং তার স্কুলেরই ধর্মীয় শিক্ষক শহিদুল ইসলাম সাহেব উপস্থিত। তার পরেও চাচার ডাকে সারা না দেয়ার মত মেয়ে মুন্নি নয়।
চাচার কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে মুন্নি বুঝতে পারল চাচার অবস্থা ভালো নয়। সাথে সাথে নার্ভের পালস দেখে মুন্নি ঘাবড়ে গেল। দুলাল বলল ঘাবড়ানর কোন কারণ নেই, সময় শেষ হয়ে গেলে কেউ থাকতে পারেনা তাই আমার সময়ও মনেহয় শেষ হয়ে এসেছে তাই আমাকেও বিদায় নিতে হবে। তবে যাওয়ার আগে আমি কিছু কথা বলে যেতে চাই।
- আমার বড় ভাই আলাল আমার জন্য যা কিছু করেছে সেই ঋণ শরীরের চামড়া কেটে তার পায়ের জুতা বানিয়ে দিলেও শোধ হবেনা। আমি সারা জীবনই তাকে শুধু ঠকিয়েছি। চেয়েছিলাম সোনার হরিণ ধরতে কিন্তু শত চেষ্টা করেও সে হরিণ ধরতে পারিনি। অনেকবারই সোনার হরিণ হাতের নাগালেও পেয়েছি কিন্তু ভেবেছিলাম দুইভাই মিলে ধরলে আমার ভাগে কম পড়বে তাই হরিণ ধরার আগেভাগেই ভাইকে তাড়িয়ে দিয়েছি। ভাইকে দূরে সরিয়ে এসে দেখি সোনার হরিণ পালিয়ে গেছে।
- বাবা মুন্না আমার হয়ে তোমার আম্মির কাছে ক্ষমা চেয় নিও। আর ঝালোকাঠির ওয়ার্কশপ গাজীপুরের জমি সহ আমার যেখানে যা কিছু আছে তার সব কিছুরই অর্ধেক আমার বড় ভাই আলালের নামে লিখে দিও।
- মা-মুন্নি তোমার হাতে তোমার চাচিকে তুলে দিয়ে যাচ্ছি তাকে তুমি সারা জীবন আগলে রেখ। মা’ সবার সামনে তোমার কাছে একটা জিনিস দাবী করছি। তোমার হাতটা দাও। মা সম্ভব হলে আমার মুন্নাকে বিয়ে করে তোমার জীবন সাথী বানিয়ে নিও। তাতে আমার আত্মা শান্তি পাবে আর মরেও তোমার চাচীর জন্য নিশ্চিন্ত থাকতে পারব। লা’ইলাহা ইল্লালাহু মোহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ......।
দুলাল তো দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল কিন্তু মুন্নির কাছে যে দাবী করে গেল মুন্নি কি পারবে চাচার অনুরোধ রক্ষা করতে? মুন্না যেহেতু মুন্নির প্রতি যাভেদের দূর্বলতার কথা জানে সেহেতু বাবার নছিহত মত সে কি পারবে মুন্নিকে তার জীবন সঙ্গী করতে? জয়নাল আলালের সাথে যে পরিকল্পনা করেছিল মুন্নিকে যাভেদের সাথে আর তানিয়াকে মুন্নার সাথে বিবাহ দেয়ার সেই পরিকল্পনারই বা কি হবে। এসব প্রশ্নের সমাধান হয়ত তখনই হবে যখন দুলালের দাফন কাফন সম্পন্ন হবে।
চল্লিশ দিনের শোক পালনের পর যখন সবাই পারিবারিক ভাবে বসবে এবং পরামর্শ্বের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিবে। তবে এটা ঠিক যে আলাল ছোট ভাই দুলালের প্রতি সারা জীবনই স্নেহ বৎসল ছিল। যতবারই মনে আঘাত দিয়েছে ততবারই ক্ষমা করে দিয়েছে। বড়দের মনটা আল্লাহ্ নিশ্চয়ই উদারতা দিয়ে ভরে দিয়েছেন তাইতো তারা স্বার্থ চিন্তা করেনা কিন্তু ছোটরাও যদি বড়দের কথা মেনে চলত এবং বড়দের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে পারতে তাহলে সোনার হরিণ বার বার হাতের নাগালে এসেও পালিয়ে যেতে পারত না। দুলাল ভাইর কাছে মাফ চেয়ে গেছে বটে তার দেনা শোধ করার জন্য নিজের জমির অর্ধেক ভাইকে দিয়ে দিতেও অনুরোধ করে গেছে কিন্তু সাথে সাথে ভাইয়ের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তার মেয়েকে দাবী করে গেছে।
সমাপ্ত...
বিষয়: সাহিত্য
১১৭৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করার ভাষা পাইনাই। তবে এমন জায়গায় এসে শেষ করলেন...
শেষ হয়ে্ও হল না শেষ..........
সবাই বই ছাপালে পাব্লিকের জন্য কিছু তো আর উন্মুক্ত থাকলনা।
কেউ যদি আমার লেখা সম্পাদনা করে ছাপে তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। সেক্ষেত্রে আমি কৃতজ্ঞতা স্বিকারেরও আশা করিনি। ধন্যবাদ।
আরো পড়তে ইচ্ছে করছে.............
পরবর্তী লেখাটা তাড়াতাড়ি পোস্ট করুন। এভাবে আর ক'দিন মুলা ঝুলিয়ে রাখবেন? অপেক্ষার যন্ত্রনা যে সইছে না......। জাযাকুমুল্লাহ্
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন