গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৯

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০১:১৭:২৪ দুপুর

গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৯

দুলাল আরও দুদিন অপেক্ষা করেও বিষয়টা সুরাহা করতে পারেনি। আলালকেও তার পর থেকে একাকি পাওয়া যাচ্ছেনা যে বিষয়টা সম্পর্কে খোজ নিবে। ওদিকে বাড়িতেও যাওয়া দরকার। গরুবাছুর রেখে এসেছে। নিজের ওয়ার্কশপেও দায়িত্বশীল কেউ নেই। যা হোক এযাত্রায় না হয় ফল নাই দিল কিন্তু কথা যখন একবার পেরেছে তখন ২/১ দিন আগে পরে হোক ফল দিবেই। অন্যদিকে ভাইর দুই মেয়েকে নিজের দুই ছেলের জন্য নিয়ে তার বিষয় সম্পত্তি দখলের যে চিন্তা করেছিল তাতেও কেমন যেন একটা সড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। দুলালের নিজের চুল এখন নিজেরই ছিড়তে মন চাইছে। কেন যে ভাইকে ঢাকায় চলে আসতে বাধ্য করল এখন তার জন্য আফসোস হচ্ছে। যদি বড় ভাই আলালকে ওয়ার্কশপ থেকে বের করে না দিত তাহলে তাকে আজ এই ঝামেলায় পরতে হত না। ভাইকে বের করে দিয়ে ওয়ার্কশপের কোন উন্নতি তো হয়ইনি পক্ষান্তরে ভাইয়ের মেয়ে মুন্নি ঢাকায় এসে ভালো লেখা পড়া করে ডাক্তারিতে চান্স পেয়ে গেছে। এখন নিজের ছেলে মুন্নার জন্য ভাই যে রাজি হবেনা তা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়। অবশ্য ভাইকে রাজি করানো গেলেও জয়নাল ভাই যে বাঁধ সাদবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। মেয়েটা মাশা’আল্লাহ যেমন সুন্দরী তেমনি লেহাজ চরিত্র, উপরন্ত ভর্তি হয়েছে ডাক্তারিতে। জয়নাল ভাইর ছেলে ইতিমধ্যেই ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়েছে। সে যদি কোন ফন্দি ফিকির করে তাহলে আলাল যে এক বাক্যে রাজি হয়ে যাবে তাতেও কোন সন্দেহ নাই।

জীবনে এই প্রথম দুলালের নিজেকে নিজের কাছেই খুব অসহায় মনে হচ্ছে। নিজের বৌ বাচ্চাদের সবারই, তার চেয়ে তার ভাই আলালের প্রতি টান বেশী। ফুফাত ভাই এবং ভায়রা হওয়ার পরেও জয়নাল ভাইও দুলালের চেয়ে আলালকে বেশী ভালোবাসে এমন কি জয়নালের বৌ’ও। নিজের বৌ পরীরও একই দসা। ছেলে মুন্নাইবা বাদ যাবে কেন? সবই কপাল। দুলাল তার জীবনে এমন কি করেছে তাই ভাবার চেষ্টা করছে। না দুলাল আর ভাবতে পারছেনা। হঠাত দুলাল মাথা ঘুড়ে পরে গেল।

দুলাল পরে গেলে সাথে সাথেই আলাল এবং জয়নাল এসে তাকে ধরে ফেলল। এম্বুলেন্স ডেকে তাকে সাথে সাথেই ঢাকার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বক্ষবেধী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। মুন্না, যাভেদ এবং মুন্নিও এসে যথারীতি হাজির। মুন্নি যেহেতু মেডিক্যালের ছাত্রী তাই তার সাথে অনেক সিনিয়র ডাক্তার এবং প্রফেসরের পরিচয় আছে। মুন্নির পরিচিত ডাক্তাররা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তার চাচা দুলালের চিকিৎসার ব্যবস্থা করল। রিপোর্টে দেখা গেল দুলালের হার্টের পাঁচটা ব্লক আছে যার মধ্যে তিনটাতে রিং পরালেই সারবে তবে দুইটা ব্লক এমন আছে যার চিকিৎসা ওপেন হার্ট সার্জারি ছাড়া সম্ভব নয় যা জন্য বেসি সময় অপেক্ষা করা যাবেনা। দুলালকে বাচানর মালিক তো আল্লাহ্‌ কিন্তু ডাক্তারদের যা চেষ্টা করতে হবে তাতে এই মুহুর্তে ১৫/১৬ লাখ টাকার দরকার।

ভালো হোক মন্দ হোক বাবাতো বাবাই, আর ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন তাই মুন্না তার চাচা আলালের হাত ধরে কেদে দিল।

- আম্মি যেভাবেই হোক বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। আমি আপনাদের দেনা পরিশোধ করব ইনশা’আল্লাহ।

- কাদেনা বাপ। তুই চিন্তা করিস না আমরা ব্যবস্থা করব ইনশা’আল্লাহ।

আলাল, জয়নালকে সাফ জানিয়ে দিল সে তার গাজীপুরের জমির তার অংশ বিক্রি করে হলেও দুলালের চিকিৎসা করাবে। অবস্থাটা এমন দাড়িয়েছে যে জয়নালের না আছে কিছু করার আর না আছে বলার। তাছাড়া ধার দেনা করে এত অল্প সময়ে এত টাকা জোগানও সম্ভব নয়। তাই আলাল আর জয়নাল মিলে জমির ক্রেতা খুজতে নেমে পরল। শেষ পর্যন্ত আলালের অংশ বিক্রি করেই দুলালের চিকিৎসা হল এবং দুলাল মোটামুটি সুস্থ্য হয়ে উঠল।

দুলালকে প্রায় মাস খানেক হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। এই এক মাস মুন্নিই চাচার যাবতীয় দেখভাল করেছে। দুলাল তার মায়ের আদর কতটুকু পেয়েছে জানেনা তবে মুন্নির পরম স্নেহ তাকে মায়ের আদরের কথাই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে।

বিষয়: সাহিত্য

১২২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File