গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৮
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০১:৫৮:০১ দুপুর
গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৮
গাজীপুরের পাঁচ কাঠা জমির মালিক যৌথভাবে জয়নাল আলাল এবং দুলাল। যেহেতু জমিতে দুলালেরও মালিকানা আছে তাই বিষয়টা তাকে জানানো জরুরী। জয়নালই দুলালের সাথে যোগাযোগ করল এবং অনুমতিও পেল কিন্তু শর্ত হল তার জমির জন্য তাকে নির্দিষ্ট হারে ভাড়া দিতে হবে এবং সে যখন জমিতে কোন স্থাপনা তৈরী করতে চাইবে তখন জমি ছেড়ে দিতে হবে। আপাতত তার ছেলে মুন্নাকে থাকার জন্য একটা রুম ছেড়ে দিতে হবে। জয়নাল দুলালের শর্তে রাজি হল বটে কিন্তু বুঝতে পারল যে আলাল আর দুলাল তার ফুফুর পেটের সন্তান হলেও দুজনের প্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আলাল যেখানে অন্যের সুখের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দিতে পারে সেখানে দুলাল স্বর্থ ছাড়া এক দকম চলতেও রাজি নয়।
যাভেদের তত্ত্বাবধানে গাজীপুরে টিনশেড বাড়ি হল, বাড়ির সামনে ওয়ার্কশপ হল। টিনশেড বাড়ির প্রথম দুইটা রুম যাভেদ ও মুন্নার জন্য ছেড়ে দেয়া হল। ভিতরের দিকের এক দিকের তিনটা রুমে জয়নাল আর ওপর তিনটা রুমে আলাল তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করল।
দেখতে দেখতে চারটা বছর কেটে গেল। যাভেদ বুয়েট থেকে সবে মাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং করে বেরিয়েছে, মুন্না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ছে আর মুন্নি ভর্তি হয়েছে ঢাকা মেডিক্যালে। জয়নাল আর আলালের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাদের ওয়ার্কশপও ভালোই চলছে। মুন্নি আর যাভেদের ব্যাপারে দুই পরিবারে অঘোষিত একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিংও হয়ে গেছে। দুলালের ছেলে মুন্নাও লেখা পড়া এবং চরিত্র মাধুর্যে চাচা আলালের ট্রু কপি। যে কারণে তাকে নিজের বাবা দুলালের টিপ্পনীও শুনতে হয়েছে অনেক বার।
আলাল আর জয়নালের ওয়ার্কশপও যে ভালো চলছে এবং দিন দিন উন্নতি হচ্ছে সে খবর দুলালেরও অজানা নয় কিন্তু কিভাবে যে নিজের জায়গার দাবীতে ওয়ার্কশপের শেয়ার দাবী করবে সেই পথই দুলাল খুজছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট পেয়ে মুন্না গাজীপুরের রুম ছেড়ে হলে উঠলে দুলালের হাতে সেই সুযোগটাও এসে যায়। মুন্না যেই না হলে উঠেছে অমনি দুলাল মিয়া গাজীপুরে এসে হাজির। পরিবার সহ গাজীপুরে থাকে বিধায় এবং নিজের শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে গত চার বছরে আলাল একবারও গ্রামের বাড়িতে যায়নি আর দুলালও ঢাকায় আসেনি। অনেকদিন পরে দুলালকে পেয়ে আলাল যার পরনায় বেশ খুশি। সাধ্যমত ভাইকে আদর আপ্যায়ন করায় দুলাল কোন মুখে যে কথাটা তুলবে ভেবে পাচ্ছিল না। তাছাড়া জয়নালও আলালের পিছনে জোকের মত লেগে ছিল। জয়নালের সামনে কথাটা তুল্লে যে হিতে বিপরীত হতে পারে তা দুলাল ভালো করেই জানত তাই ধৈর্য নিয়ে দুলাল, আলালকে একাকি পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।
দুদিন পরেই দুলাল সেই সুবর্ন সুযোগটা পেয়েগেল।
- ভাই, কিছু বলার ছিল।
- বল।
- বলছিলাম কি জায়গাটাতো এতদিন ধরে আপনারা দুজনেই ভোগ করছেন তাই আমি চাচ্ছিলাম আমার অংশটায় নিজেই কিছু একটা করতে।
- হুম! আমি জানতাম তুমি এমন দাবী করবে তা আশ্চর্য হচ্ছি তোমার ধৈর্য দেখে। আমিতো ভাবেছিলাম বছর খানেকের মধ্যেই তুম দাবীটা তুলবে। যাহোক তোমার জমিতে তুমি একটা কিছু করতে চাইলে কর আমার কোন আপত্তি নাই। তবে জমিটা কিন্তু জয়নাল ভাই দৌড় ঝাপ করে রেখেছিল তাই তুমি এ বিষয়ে তার সাথে আগে আলাপ করে নাও। সে যেমন আমার ফুফাত ভাই তেমনি তোমারও, উপরন্ত সে তোমারর ভায়রা ভাইও। সে দিক দিয়ে তুমি আমার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে।
- তা বটে তবে সে আমার চেয়ে আপনাকেই বেশী অগ্রাধীকার দেয়। তাছাড়া আপনারা দুজনই আমার মুরুব্বি তাই বলছিলাম কি আপনিই যদি জয়নাল ভাইকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলতেন।
- ঠিক আছে বলব তবে তুমি যে বললে এতদিন আমরা ভোগ করেছি তা কিন্তু ঠিক বলনি। চুক্তি মোতাবেক তোমার ছেলেকে একটা রুম ছেড়ে দেয়া হয়েছিল এবং ভাড়াও তোমার ছেলে মুন্নার কাছে নিয়মিত দিয়েছি। অন্যদিকে আমার গ্রামের জমি এবং বাড়ির ফসল এতদিন তুমি ভোগ করেছ যা থেকে এক কেজি আতপ চালও কোনদিন আমার জন্য পাঠাও নি।
- আপনি বড় ভাই তাই আপনার জমি জিরাত বাড়ি ঘড় দেখে রেখেছি। এখন জমিতে তেমন ফসল হয়না আর বাড়িতে যে গাছগুলো আছে তাতেও তেমন ফলফলাদি হয়না।
- কিন্তু আমি যখন দেশে ছিলাম তখন কিন্তু হত।
আচ্ছা বাদ দাও ওসব, কথার পৃষ্ঠ্যে কথা বললাম। জয়নাল ভাইকে তোমার বিষয়টা বলব। নিশ্চিন্তে থাক।
- ভাই বলছিলাম কি, দুলাল এসেছে তাতো জানেনই। তবে ও এমনি এমনিই আসেনি।
- হুম! ওকে দেখেই আমি এমন কিছু আঁচ করতে পেরেছিলাম। সেজন্যই আমি গত দুদিন তোমাকে একা ছেড়ে কোথাও যাইনি। আজ যেইনা তোমাকে একা ছেড়ে গিয়েছি ওমনি সুযোগ বুঝে দুলাল তোমাকে তার দাত দেখিয়ে দিয়েছে তাই না?
- না মানে, জমিটায়তো ওরও অংশ আছে তাই না?
- হ্যা আছে, আমরা তো আর অস্বিকার করিনাই, তাই না? তার অংশ সে নিয়ে যাক আপত্তি নাই। কিন্তু যদি ওয়ার্কশপের দাবী করে তাহলে আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না। আর শোন আলাল আমি আর একটা কথা বলে রাখি। তোমার ভাই কিন্তু তোমার মরার অপেক্ষায় আছে। তোমার মৃত্যুর সাথে সাথেই সব জমি জায়গা দখল করে তোমার বৌ বাচ্চাদের বাড়ি থেকে বের করে দিবে, সে খেয়াল কি তোর আছে? তোমার যেহেতু ছেলে নাই তাই এমনিতেই সে তোমার জমির তিনভাগের এক ভাগ পাবে। সেই সূত্রে পুরটা দখল করে নিলেও তোমার বৌ বাচ্চারা কিছু করতে পারবেনা। আর শোন তোমাকে নতুন আর একটা খবর শুনাই। তোর মেয়ে মুন্নির প্রতিও তোমার ভাই দুলালের নজর পরেছে। সে যদি মুন্নিকে তার ছেলে মুন্নার জন্য রাজি করাতে পারে তাহলে তোমার আম ছালা দুটই কিন্তু যাবে।
- বলেন কি ভাই?
- কি আর বলি। তুমি এখনও সেই সোজা সরলই রয়ে গেছ।
- তাহলে উপায়?
- উপায় একটা অবশ্য আছে যদি তুমিই অমত না কর।
- কি যে বলেন ভাই। আমি কি এ জীবনে আপনার কোন কথা অমান্য করেছি?
- না তা করনি।
- তাহলে বলুন ভাই আপনি কি বলতে চান।
- বলছিলাম কি মুন্নিকে আমাদের যাভেদের জন্য নিতে চাই। আর তোমার ছোট মেয়ে তাতিয়াকে দুলালের ছেলে মুন্নার সাথে বিয়ে দিতে চাই। মুন্না মোটেই ওর বাবার মত না। ছেলেটা একদম তোমার মত সরল সহজ। এখন নির্ভর করছে তোমার উপর। তুমি রাজি হলে দেখবে দুলালের আজীবনের লোভাতুড় জিহ্বাটা কেমনে কেটে দেই।
- ভাই আমার কোন আপত্তি নাই তবে ছেলে মেয়েদের মতামত নেয়াটাও জরুরী। আর দুলালকে না জানিয়ে মুন্নার বিষয়টা আমি ভাবতে পারছি না।
- সে হবে বিষয়টা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।
বিষয়: সাহিত্য
১২৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন