গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৭
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০১:২২:১৭ দুপুর
গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৭
যাভেদ চট জলদি সংগঠনের এক বড় ভাইকে ফোন করল যে কিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাথমেটিক্সে এমএসসি করছে এবং পাশাপাশি টিউশুনিও করে। যাভেদ চেষ্টা করলেও পারত কিন্তু তাতে হয়ত সময় বেশী লাগত। তাছাড়া বিষয়টা পুরাপুরি ক্লিয়ার করতে না পারলে নিজের প্রেষ্টিজের চাকাই পাংচাড় হত। তার পরে মুন্নাটা যেভাবে পিছনে লেগেছে তাতে ইজ্জতের বারটা বাজারও আশঙ্কা ছিল।
যথা সময়ে মুন্নাকে নিয়ে যাভেদ মুন্নিদের ঘরে গেল এবং মুন্নিকে খুব সুন্দর করে চ্যাপ্টারটা বুঝিয়ে দিল। মুন্নিও একবারেই বিষয়টা বুঝে গেল এবং সাথে সাথেই ৩/৪টা অঙ্ক করে নিজের মেধার দৌরাত্ত দেখাল। যাভেদ মুগ্ধ হয়ে মুন্নির সামাধান দেখছিল। সামান্য সময়ের মধ্যেই সে পুর চ্যাপ্টারের অঙ্ক গুলোই নির্ভুল ভাবে করে ফেল্ল। এ যেন যাদুর কাঠি, সামান্য স্পর্শেই জ্বলে উঠেছে। যাভেদ মনে মনে ভাবছে, ‘দেখলাম আজ তোমার মেধার প্রখরতা, এদেখাই যেন শেষ দেখা না হয় হে নীল আকাশের দ্রুব তারা’।
- দেখ যাভেদ ভাইয়া তুমি যে তোমার বন্ধুকে ফোন করে সমাধান করে নিয়েছ তা বলে আমি তোমাকে লজ্জা দিতে চাইনা।
- মুন্না ভাইয়া, তুমি যাভেদ ভাইয়াকে লজ্জা দিচ্ছ কেন? ভাইয়া খুব সুন্দর করে বুঝাতে পারে। আমার স্কুলের স্যার হলে এটা বুঝাতে তিন দিন সময় লাগত। আর তুমিতো বুঝানো থাক দূরের কথা অংকটা পড়তেও পারবে না।
- হুম! বুঝেছি। নানা ভাইর জন্য আমার নানু মণির টান লেগে যাচ্ছে।
- দেখ ভালো হবেনা কিন্তু। তুমি এত বেশরম হয়েছ কেন?
- আচ্ছা ঠিক আছে বাবা, আমরা যাচ্ছি। আর হ্যা তুমি চাইলে ভাইয়াকে তার রেজাল্ট না হওয়া পর্যন্ত কম পক্ষে এক মাসের জন্য রেখে দিতে পারি। তখন তুমি পুর বইর অঙ্ক, জ্যামিতি এমনকি বিজ্ঞানও বুঝে নিতে পারবে। ভাইয়া না পরলে কি হয়েছে তার বন্ধুরা আছে না, তাদের কাছ থেকে শিখে নিয়ে তোমাকে শিখাবে। তোমাকে শিখান নিয়েই যখন প্রশ্ন তখন ভাইয়া নিজে থেকে শিখাল না অন্যের কাছ থেকে শিখে তোমাকে শিখাল সে প্রশ্ন অবান্তর।
- হয়েছে হয়েছে। তুমি এবার বকবকানি থামাও আম্মা টেবিলে তোমাদের জন্য খাবার রেডি করেছে, চল যাভেদ ভাইয়াকে নিয়ে খাবে।
যাভেদ আর মুন্না টেবিলে বসে খাচ্ছিল আর মুন্নিই বেড়ে বেড়ে খাওয়াচ্ছিল। এতদিনে মুন্নির জড়তা কিছুটা হলেও কেটেছে। অবশ্য সে বড় একটা ওড়না দিয়ে আপদ মস্তক নিজেকে আবৃত করে রেখেছে। মুন্না যতই দুষ্টমি করছিল যাভেদের মন ততই আন্দলিত হচ্ছিল। সে ভাবছিল, ‘আমি তাকে পাইলাম, খালামণি বললে তার জন্য একমাস কেন সারা জীবনের জন্যই থেকে যাব যদি সে বা পরি খালামণি বা মুন্নির আম্মা নূরী খালামণি মুখ খুলে একটা বারের জন্য হলেও থেকে যেতে বলে’।
শেষ পর্যন্ত যাভেদের আশাই পুরা হল। মুন্নির বাবা আলালের অনুরোধে জয়নাল তার ছেলেকে রেজাল্ট না হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকার অনুমতি দিল। বাবার অনুমতিতে যাভেদ এক মাসের মত গ্রামের বাড়িতে থেকে ছিল। পুর মাসই সে মুন্নিকে পড়িয়েছে। অঙ্ক, ইংরেজী বিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিতে মুন্নি এখন খুবই পারদর্শি। যাভেদের রেজাল্ট হলে সে ঢাকায় চলে যাওয়ার সময় কেন যেন তার মনে হচ্ছিল সে মনটাকে এই পাড়া গায়ে রেখে যাচ্ছে। মুন্নির সাধ্যের মধ্যে থাকলে সে যাভেদকে আটকে রাখত কিন্তু যা সম্ভব নয় তা নিয়ে শুধু শুধু অবাস্তব ভাবনার জগতে হারিয়ে যাওয়ার মত মেয়ে মুন্নি নয়।
যাভেদ চলে যাওয়ায় আলালেরও কেমন যেন একা একা লাগছে। এই পুর একমাস যাভেদ যেমন বিনা পারিশ্রমিকে মুন্নিকে পড়িয়েছে তেমনি আলালকেও সঙ্গ দিয়েছে। আশাহত আলাল চাচাকে সে নতুন করে বাচার স্বপ্ন দেখিয়েছে। সংসারটাকে খাদের কিনারা থেকে টেনে উঠানর স্বপ্ন দেখিয়েছে। যে কারণে আলাল যেমন জয়নালের কাছে কৃতজ্ঞ তেমনি জয়নালের ছেলে যাভেদের প্রতিও।
মুন্নির এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেলে জয়নাল আর জয়নালের বৌর আমন্ত্রণে আলাল স্বপরিবারে ঢাকায় চলে যায়। যাভেদ ততদিনে বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়েছে। যথেষ্ট মেধাবী আর ভদ্র ছেলে হিসেবে সে তার বাবা মায়ের কাছে খুবই প্রিয়। জয়নাল এখন যা কিছু করার ছেলে যাভেদের পরামর্শ্বেই করে। যাভেদ যেহেতু আলাল চাচার আধ্যপান্ত সব কিছু জানে তাই সেই তার বাবা এবং তার আলাল চাচাকে গাজী পুরে তাদের যে যৌথ জায়গাটা আছে তার পিছনের অংশে টিন শেড করে থাকার জন্য কয়েকটা রুম করার এবং সামনের অংশে একটা ওয়ার্কশপ করার পরামর্শ্ব দিল। বুদ্ধিটা জয়নাল ও আলালের বেশ মনপুত হয়েছে।
বিষয়: সাহিত্য
১৩৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন