গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৪
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৩:১২:২১ দুপুর
গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৪
মনের কষ্ট মনের মধ্যে চাপা দিয়ে আলাল মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দেয়ার চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করে ওয়ার্কশপের কাজ শুরু করল। শুরুতে ওয়ার্কশপ তেমন জমছিলনা। কর্মচারীদের বেতন দিয়ে দোকান ভাড়ার টাকা দিতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। মাস ছয়েক যাওয়ার পরে আলাল মোটামুটি ঘুরে দাড়িয়েছে। কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়ার পরে এখন নিজের শ্রমের মূল্যও আলাল পেতে শুরু করেছে। দেখতে দেখতে কিভাবে যে একটা বছর কেটে গেল, আলাল তা টের পেল যখন দুলাল ফের ছুটিতে দেশে আসল।
ওয়ার্কশপ দেখে দুলালেরতো চক্ষু চড়ক গাছ। নিজের দোকান থেকে বড় ভাই এত টাকা আয় করে নিচ্ছে যা দুলাল কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলনা, আবার মুখ খুলে কিছু বলতেও পারছিলনা। শেষ পর্যন্ত বুদ্ধি খাটিয়ে দুলাল লেদ মেশিন বসানর বাহানা করে আলালের কাছে শেয়ারে ব্যবসা করার প্রস্তাব করল। সহজ সরল আলাল ছোট্ট ভাই দুলালের প্রস্তাব মেনে নিল। সুযোগ বুঝে দুলাল নিজের শ্যালককে দোকানের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ করে দিল।
লেদ মেশিন সহ কাটিং গ্রাইন্ডিং গ্যাস ওয়েল্ডিং সহ নতুন নতুন প্রযুক্তি সংযুক্ত হওয়ায় ব্যাবসা আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড় গেল। দোকানের হিসাব করতে গিয়ে দুলাল দেখল সে সিঙ্গাপুরে থেকে যা উপার্যন করে তার চেয়ে দোকানের উপার্যন বেশী অথচ পুরা আয়ের অর্ধেকই চলে যাচ্ছে বড় ভাইর পকেটে।
দুলালের শ্যালকও আলালকে ওয়ার্কশপ থেকে বিদায় করার জন্য উঠেপড়ে লেগে গেল কিন্তু মুখ খুলে কিছু বলতে পারছিলনা। নিরবতা ভেঙ্গে শেষ পর্যন্ত দুলালই নিজে ব্যবসা পরিচালনা করবে বলে আলালকে জানিয়ে দিল, তবে আলাল যদি বেতনে কাজ করতে রাজি থাকে তাহলে দুলালের কোন আপত্তি নাই বলেও জানাল। বেতনে কাজ না করলে ওয়ার্কশপে আলালের যেসকল যন্ত্রপাতি আছে তা দাম ধরে দুলালকে দিতে পারে আর না চাইলে সে তার যন্ত্রপাতি নিয়েও যেতে পারে।
আলালের মাথায় বজ্রপাত হল। কথায় আছে অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর। আলাল ঠিক পাথেরর মূর্তি হয়ে গেল। ওয়ার্কশপ থেকে বাড়ির দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার রিক্সায় বসে সে পথটুকুও যাওয়ার শক্তি আর আলালের রইলনা। কোন মতে পার্শ্বের হোটেলে গিয়ে এক গ্লাস পানি পান করে বেঞ্চির সাথে গা এলিয়ে দিল। চোখের পানিতে বুক ভেসে যাচ্ছিল। হোটেলের মালিক আলালের বন্ধু বিষয়টা আচ করতে পেরে নিজেই একটা রিক্সা ডেকে সাথে করে আলালকে সান্তনা দিয়ে বাড়িতে পৌছে দিল।
প্রচণ্ড জ্বর আর মাথা ব্যাথা নিয়ে আলালকে ঝালকাঠি স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হল। আলালের জ্বর টাইফয়েডে রূপ নিলে তাকে পুর একমাস হাসপাতালেই কাটাতে হয়েছে। আলালের এই অনুপস্থিতি দুলালের জন্য পোয়া বার হল। সে তার শ্যালককে নিয়ে মোটামুটি ওয়ার্কসপের কাজ গুছিয়ে ফেলেছে। এখন আলালকে ছাড়াই সে ওয়ার্কশপ চালাতে পারছে।
আলালের হাসপাতালের খরচ এসেছে প্রায় এক লক্ষ টাকা যা পুরটাই দুলাল দিয়েছে। বড় ভাই বলে কথা তাই তাকেতো আর পয়সার অভাবে হাসপাতালে রেখে আসা যায় না। মাস দুয়েক পরে আলাল যখন হাটা চলার উপযুক্ত হল তখন দুলালকে ডেকে তার মেশিন পত্রের দাম ধরে রেখে দেয়ার অনুরোধ করল। দুলাল অবশ্য আগে থেকেই হিসাব করে রেখেছিল। কোন রকম জড়তা ছাড়াই সে টু দ্যা পয়েন্টে হিসাবের একটা কাগজ আলালের হাতে ধরিয়ে দিল। এসব কাজে যে দেরী করতে নাই তা দুলালের চেয়ে কে আর ভালো জানে।
হিসাবের কাগজটার দিকে তাকিয়ে আলাল চোখের পানি ছেড়ে দিল।
- কি ভাই কাদছেন কেন? হিসেবে কি কোন গড়মিল হয়েছে নাকি?
- নারে ভাই এটা সুখের কান্না। তুমি হিসেবে যে এতটা পাকা তাই ভেবে আনোদাশ্রু ফেলছি। মেশিনারির দাম এসেছে ৮০ হাজার টাকা অথছ তুমি হাসপাতালের বিলই দিয়েছে এক লক্ষ টাকা। বাকী ২০ হাজার টাকা তোমাকে কি ভাবে পরিশোধ করব তাই ভাবছি।
- ভাই কেন চিন্তা করছেন। ২০ হাজার টাকা আপনাকে এখনই দিতে হবেনা। পরে যে কোন সময় দিলেই হবে আর যদি নাই দিতে পারেন তাহলেও কোন সমস্যা নাই। শত হলেও আপনি আমার বড় ভাই।
- হ্যারে দুলাল এক সময় আমি তোর বড় ভাই ছিলাম যখন কোমরে বল ছিল, দু হাতে জোড় ছিল। খেটে খাওয়ার যোগ্যতা ছিল। কিন্তু এখন তো আর সেই অবস্থায় নাই। একেতো বয়স হয়ে গেছে অন্য দিকে কামাই নাই। এমন লোককে তুই ভাই বলছিস!
- ভাই আপনাকে ২০ হাজার টাকা ফেরত দিতে হবেনা। এই নেন এখানে দশ হাজার টাকা আছে বড় ভাই হিসেবে এটা আপনাকে দিলাম।
- নারে ভাই লাগবে না। ২০ হাজার টাকাও ২/১ দিনের মধ্যে ফেরত দিব। আল্লাহ্ যখন মুখ দিয়েছেন রিজিকের মালিকও তিনি। হয়ত আমার জন্য তিনি কোথাওনা কোথাও উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। ধন্যবাদ ভাই দুয়া করি আল্লাহ্ তোকে কামিয়াব করুন।
- আচ্ছা ভাই এখন উঠি। দোকানে যেতে হবে অনেক কাজ বাকী আছে।
দুলাল চলে গেল। ছোট ভাইর চলে যাওয়ার পথের দিকে আলাল এক পলকে তাকিয়ে রইল। হয়ত এভাবেই দু’ভাইয়ের পথ চিরদিনের জন্য আলাদা হয়ে গেল।
বিষয়: সাহিত্য
৭৮৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কেঁদে ফেললাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন