গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৩
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০১:২৯:১২ দুপুর
গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৩
হজ্জ করে এসেছে বলে হাজ্বি আব্দুর রহমান হাওলাদার সাহেবের সাথে দেখা করতে গ্রামের ছেলে বুড়রা ভিড় জমিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই মুরুব্বিদের কেউ কেউ আলালের খোজ খবরও জানতে চেয়েছে। অনেকে আবার আলালকে একেবারে দেশে চলে আসতে বলেও হাজ্বি সাহেবকে পরামর্শ দিচ্ছে। আলালের বাবারও তাই খেয়াল আর আলালের পক্ষে বিদেশ করা অনেকটা অসম্ভবই।
কিছুদিন পর দুলাল ছুটিতে দেশে এলে তার বাবা আলালের প্রসঙ্গ তুল্লে দুলালের সাফ জওয়াব, ‘আসবে, সমস্যা কি? বাড়ি ঘর আছে, বিদেশ থেকে হয়ত কিছু টাকাও জমিয়েছে তাই নিজের সংসার নিজে করে খাবে সেটাইতো বরং ভালো।“
দুলালের মনোভব বুঝতে হাজ্বি সাহেবের আর বাকী রইলনা। বিষয়টা জানিয়ে আলালকে তার বাবা চিঠি লিখল। আলাল এত দিন আশায় বুক বেধে ছিল যে দেশে গিয়ে জীবনের বাকী দিন গুলো শান্তিতে কাটাবে। নিজেদের বাড়ি ঘর সংসার দেখবে আর দুই ভাই সিঙ্গাপুর থেকে উপার্যন করবে, ব্যাস আরামেই সংসার চলে যাবে। কিন্তু এখন এ কি শুনছে? কর্মক্ষমতা হারিয়ে আলাল নিজের স্ত্রী, বুড় বাবা ও তিন মেয়েকে নিয়ে কি করে চলবে সে ভাবনায় অস্থির হয়ে পরল।
দিন দিন আলালের অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে গেল যে এখন আর সে নিজ হাতে কাজই করতে পারছেনা। অনেকের নিষেধ সত্যেও আলাল বিষয়টা মালিককে অবহিত করল। ফল হল মালিক তাকে নিজের হাতে কাজ করতে নিষেধ করে দিয়ে সুপার ভাইজার বানিয়ে দিলেন।
এখন আলালের কাজ শুধু চেয়ারে বসে থাকা আর সহ কর্মীদের কাজ পর্যবেক্ষন করা। কোন ভুল ভ্রান্তি হলে ধরিয়ে দেয়া। কিন্তু কর্ম বীর আলালের আর বসে বসে বেতন নিতে ভালো লাগছিলনা, তাছাড়া কোমড়ের ব্যাথাটা মাঝে মধ্যে এমনভাবে বেরে যায় যে বিভিন্ন ধরণের ব্যাথানাশক মলমের মালিশের প্রয়জন হয়। এই প্রবাসে তার সেই সেবা কে করে, তাই সে কোম্পানীর মালিকের কাছে তাকে একেবারে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার আবেদন করল।
আলাল দেশে এসে দেখে ইতি মধ্যেই সংসার ভাগ হয়ে গেছে। দুলাল আর হেলাল একত্র আছে শুধু আলালকেই আলাদা করে দেয়া হয়েছে! আল্লাহর উপর ভরসা করে আলাল নিজের কাজে মনযোগী হল। ভাগের ভাগ জমি জিরাত যা পেয়েছে তা দিয়ে যেভাবে সম্ভব সংসার চালিয়ে নেয়া যাবে। কিন্তু কপালে যার নিত্ত কষ্ট সুখের মুখ সে কিভাবে দেখে?
জলোচ্ছাসে আলালের জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে গেল। নগদ আয়ের কোন পথ না থাকায় আলালের মাথায় হাত পরল। বাধ্য হয়েই আলাল নিজের পুরাণ পেশা ওয়ার্কসপের কাজ করার এরাদা করল। কিন্তু এবয়সে তো আর অন্যের কাজ করা সোভা পায়না, তাই নিজেই একটা ওয়ার্কসপ দেয়ার চিন্তা করল।
সুবিধামত জায়গায় ওয়ার্কশপের জন্য দোকান পাওয়া না যাওয়ায় আলালকে দুলালের দারস্ত হতে হল। ইতিপূর্বে চিকিৎসার জন্য মেইন রোডের বার্শ্বের আলালের অংশের যে জমিটা বিক্রি করেছিল সেই জমির দুলালের অংশে ওয়ার্কশপ করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করলে দুলাল বিনা বাক্যেই রাজি হয়ে গেল। আলালও ভাবেনি যে দুলাল এক কথায়ই রাজি হয়ে যাবে। তা যাই হোক রাজি হয়েছে এটাই বড় কথা তাই এগুলো নিয়ে আর না ভেবে সে পূর্ণদ্দমে কাজে নেমে পরল।
ছয়মাসের মধ্যেই ধার দেনা করে ওয়ার্কশপ কাজ সেষ করে ফেল্ল। ওয়ার্কশপ রেডি কিন্তু কোনভাবেই বিদ্যুৎ সংযোগ আনতে পারছিলনা ফলে ওয়ার্কশপের কার্যক্রম শুরু না করতে পারায় আলাল আবার বিপাকে পরল।
এক দিকে আলালের হাত খালি আবার অন্য দিকে পয়সা ছাড়া কোন কাজই হয়না। দেখতে দেখতে আরও ছয়মাস কেটে গেল কিন্তু বিদ্যুতের সংযোগ মিল্লনা! অফিস থেকে মিটারের জন্য শত্তুর হাজার টাকা দাবী করে বসে আছে অথচ সরকারী ফীস মাত্র ৬ হাজার টাকা!
বছর শেষে ইতিমধ্যে দুলাল সিঙ্গাপুর থেকে পূণুরায় ছুটিতে এসেছে। জাকজমকের সাথে বাজার ঘাট করছে আনন্দে দিন কাটাছে অথচ আলালের নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে!
ওয়ার্কশপ দেখে দুলালের মনে ধরেছে কারণ আলাল যে কাজ করে তা সুন্দর সূচারু রূপেই করে।
দুলালের জমিতে আলালের ওয়ার্কশপ! আলাল যদি ওয়ার্কশপের মালিকানা দাবী করে বসে তাহলে দুলাল বিপাকে পরতে পারে তাই আগে ভাগেই একটা সুরাহা হওয়া দরকার তাই সুবিধামত সময় দুলাল, আলালকে বললঃ
- ভাই ওয়ার্কশপ যেহেতু চালু করতে পারছেন না তাই যাবতিয় খরচ আমার থেকে নিয়ে নেন। এমনিতেই জমি যেহেতু আমার তাই আপনার টাকায় করা ওয়ার্কশপের মালিকানা আমি দাবী করি কিভাবে?
- তুমি এভাবে ঘরের মালিকানা দাবী করবা সেটা ভাবিনি। ভেবেছিলাম তোমার জমি আর আমার ঘর, দুই ভাই আপসে ভাগাভাগি করে নিব। তাছাড়া জমিটা কিন্তু আমিই কিনেছিলাম, অবশ্য তুমিও কিছু টাকা দিয়েছিলে।
আমার চিকিৎসার খরচের একটা অংশ যদি দিয়ে সহযোগিতা করতা তাহলে কিন্তু আমার অংশের জমিটা বিক্রি করতে হতনা। মায়ের পেট থেকে পরেই সংসারের হাল ধরেছি। তোমার পড়া লেখার খরচ যুগিয়েছি, সিঙ্গাপুর যেতে টাকা দিয়েছি কিন্তু ফেরত চাইনি। কার কাছে চাইব? ভাইয়ের কাছে? না, সেটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা, কখন সম্ভব হবেনা।
- বড় ভাই হিসেবে আপনি ওগুলো করেছেন। তাছাড়া আমরা তখন একত্র ছিলাম। এখন আমরা ভিন্ন। যার যার সংসার তার তার কাছে।
আচ্ছা ঠিক আছে বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে জমির টাকা দিয়ে পুর ওয়ার্কশপের মালিকানা আপনি নিয়ে ওয়ার্কশপ চালান। ভাই হিসেবে আমি আপনার জন্য আর কি করতে পারি? আমারওতো ছেলে মেয়ে আছে তাইনা? তাদের ভবিষ্যৎও তো আমার দেখতে হবে তাইনা?
- তুমি জান যে আমার হাতে টাকা নাই’ তাই তোমার এমন প্রস্তাব, তাই না? ঠিক আছে আমার শ্রম ছাড়াই দুই লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে তা দিয়ে দাও আর বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৭০ হাজার টাকা লাগবে তাও দাও তার পরে দোকানের ভাড়া কত নিবা তা নির্ধারন করে দাও।
দুলাল যেমনটা চেয়েছিল আলাল ঠিক ঠিক তেমনটাই বলেছে তাই ওয়ার্কশপের যাবতীয় খরচ বাবত দুই লক্ষ শত্তুর হাজার টাকা এবং ছয়মাস পর্যন্ত আলাল খেয়ে না খেয়ে যে পরিশ্রম করেছে তার জন্য ত্রিশ হাজার টাকা হিসেব করে আলালকে মোট তিন লক্ষ টাকা দিয়ে পরিপূর্ণ ভাবে দোকানের মালিকানা নিয়ে নিল।
বিষয়: সাহিত্য
৭২৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন