গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২২
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০২:১৩:৫০ দুপুর
গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২২
৫ কাঠা জমির মূল্য মাত্র ৫ লাখ টাকা। জয়নালের কাছে এত টাকা নাই। অর্ধেকটা রাখার একজন খরিদ্দার পেলে যায়গাটা হাত ছাড়া করতে হতনা। জয়নাল চাচ্ছিল আলাল জয়নালের সাথে জমিটা রাখুক। জমির কথাটা আলালের মনে খেটেছে কিন্তু এই মূহুর্তে যে টাকা নাই।
তার পরেও পরের দিন জয়নাল, আলাল কে নিয়ে গিয়ে জমিটা দেখিয়ে আনলে আলাল জমিটা রাখার জন্য রাজি হয়ে গেল। দুই ভাই মিলে এক লাখ টাকা বায়না দিয়ে আসল। জমির খবর জানিয়ে আলাল দুলালের কাছে চিঠি লিখল। দুলাল সাথে সাথেই এক লাখ টাকা পাঠিয়ে দিল। টাকাটা সে ধার দেনা করে পাঠিয়েছে তাই সে আর টাকা দিতে পারবেনা বলেও জানিয়ে দিল।
আলাল ফিরতি ফ্লাইটে সৌদি’আরব চলে আসল। যেভাবেই হোক ধার দেনা করে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠাল। যথা সময় আলাল এবং দুলালের নামে সমভাবে জমিটা রেজিস্ট্রি হল। দুলাল দিয়েছে এক লাখ টাকা আর আলালকে গুনতে হয়েছে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার আর রেজিস্ট্রেশানের জন্য আরো ত্রিশ হাজার। কে কত দিল আর দিলনা সে হিসাব আলাল কোনদিনও করেনি আর কোন দিন করবেও না। কার সাথে হিসেব করবে? দুলাল আর হেলালের সাথে? কোন দিনও না, ওরা যে রক্তের বন্ধন আত্মার আত্মীয় মায়ের পেটের ভাই।
মাস ছয়েক পরে দুলাল ছুটিতে এলে রাজাপুর থানার প্রপারে মেইন রোডের সাথে পাঁচ কাঠা জমি পেয়ে গেল। জমির দাম ৫ লাখ টাকা। বাবার সাথে পরামর্শ করে দুলাল এক লাখ টাকা বায়না দিল। তিন লক্ষ টাকা চেয়ে আলালের কাছে চিঠি দিলে আলাল ধার দেনা করে পুর টাকাটাই পাঠিয়ে দিল। যথা ক্রমে আলাল এবং দুলালের নামে জমি রেজিস্ট্রি হল।
দুই বছর পরে আলাল আবার ছুটিতে এল এবং বাবার পরামর্শে ঘরের কাজ ধরল। ঘরের পিছনে আলালের ৫ লক্ষ টাকা খরচ হল কিন্তু দুলাল দিল মাত্র এক লক্ষ টাকা। ছোট ভাই হেলালকে সিঙ্গাপুর নিতে দুলালের দুই লক্ষ টাকা লাগবে যে কারণে সে এর চেয়ে বেশি দিতে পারবেনা। আলাল ভাবল খারাপ না, এবার তিন ভাইয়ের কামাইয়ে শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা। কিন্তু বিধি যে বাম!
বিল্ডিং এর কাজের সময় রাজ মিস্ত্রীদের সাথে ভারি একটা ভিম উঠাতে গিয়ে আলাল মাজায় প্রচন্ড আঘাত প্রাপ্ত হল। এক দিকে ঘরের কাজ করতে গিয়ে আলাল অনেক টাকার দেনা হয়ে গেছে অন্য দিকে হেলালকে সিঙ্গাপুর নিতে গিয়ে দুলালের হাতও খালি এমতাবস্থায় আলালের চিকিৎসার খরচ যোগানই মুশকিল হয়ে গেল। ঢাকার হাসপাতাল গুলো মাদ্রাজ যাওয়ার পরামর্শ দিল কিন্তু যাবে কিভাবে, হাত যে একেবারে খালি। শেষ পর্যন্ত থানা প্রপারের জমিটার নিজের অংশের ২.৫ কাঠা মাত্র ২ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে আলাল কোলকাতা গেল কিন্তু তেমন কোন ফল পাওয়া গেলনা। ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় আলালকে বাধ্য হয়েই মাজার ব্যাথা নিয়েই সৌদি’আরব চলে আসতে হল।
আলালের মাজায় যেহেতু আগের মত আর বল নাই সেহেতু তার জন্য ভারি কাজ করা বিপদজনক। সৌদি’আরবের ডাক্তাররা তাকে ৫ কেজি ওজনের জিনিস উঠাতেও নিষেধ করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় আলালের পক্ষে চাকুরী করাই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়াল। অবশ্য কোম্পানীর মালিকের গুড লিস্টে নাম থাকায় কোম্পানীর মালিক আলালের সাথে দুই জন হেল্পাররের ব্যবস্থা করে দিল যাতে আলালকে ভারি জিনিস উঠাতে না হয়। আলালকে এখন ঠিকই ভারি জিনিস উঠাতে হয়না কিন্তু নিজের হাতে জাক করতে যে মজা হেল্পারদের নিয়ে কাজ করতে সেই মজা নাই। তাই আলাল ধিরে ধিরে কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেল্ল।
দুই ভাই যেহেতু সিঙ্গাপুরে তাই সংসার চালাতে এখন আর অসুবিধি হবেনা তাছাড়া বাড়িতেও একজন গার্জিয়ান দরকার। এমতাবস্থায় আলাল ভাবল যে বাবাকে নিয়ে হজ্জ করে বিদেশ থেকে একেবারেই চলে যাবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ভাইদের সাথে পরামর্শ করে দেশ থেকে বাবাকে হজ্জে নিয়ে এল আর নিজে সৌদি’আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে হজ্জে গেল। বাবাকে আনতে দেশের ট্রাভেল এজেন্সিকে দিতে হয়েছে দুই লক্ষ টাকা যার মধ্যে দুলাল দিয়েছে এক লক্ষ আর আলাল দিয়েছে এক লক্ষ। বাবার সৌদি’আরবের খরচ আর নিজের খরচ এবং হজ্জ শেষে বাবাকে বাজার করে দেশে পাঠাতে আলালের আরো দুই লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে যা আলালকে ধার দেনা করেই করতে হয়েছে।
আলালের বাবা হজ্জ করে দেশে ফিরেছে আর আলাল নিজের কর্মস্থল রিয়াদে ফিরে গেছে। আলালের বাবা এখন হাজ্জি আব্দুর রহমান হাওলাদার। যে আব্দুর রহমানকে এক সময় মানুষের জমিতে কামলার কারজ করতে হত সেই আব্দুর রহমান নিজের বড় ছেলে আলালের ত্যাগ আর কুরবানির বিনিময়ে আজ দালানে থাকে মানুষ হাজ্জি সাহেব বলে সম্মান করবে! এমন সুখ ভাবনায় হাজ্জি আব্দুর রহমান হাওলাদারের মাথাটা আল্লাহর দরবারে নুয়ে আসে।
বিষয়: সাহিত্য
৭৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন