গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ20

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৫:০১:৩৭ বিকাল

গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ20

আলাল যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। যাক দুলাল নিশ্চয়ই মাকে শেষবারের মত দেখতে পেরেছে।

সপ্তাহ খানেক পরে আলাল আর একটা চিঠি পেল যা দুলালের লেখা। সে জানিয়েছে যে সেও মাকে দেখতে পারেনি। মায়ের মৃত্যুর একদিন পরে সে বাড়িতে পৌছেছে। বাড়িতে পৌছার আগেই মায়ের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মাত্র একমাসের ছুটিতে সে দেশে এসেছে।

বিগত এক বছরে শ্বশুরের দেনা পরিশোধ হয়েছে কিন্তু হাত খালি বলে বাড়ির কারো জন্য কিছুই আনতে পারেনি এমনকি পরির জন্যও না। ওদিকে মায়ের মৃত্যু হওয়ায় দেশীয় রেওয়াজ মত চল্লিশা করতে হবে যাতে ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে অথচ দুলালের হাত একেবারেই খালি। বংশের প্রথম সন্তান দুলালের ছেলের আকিকা এখনও দেয়া হয়নি অন্য দিকে আলালেরও মেয়ে হয়েছে তাই ওদের নামে আকিকা দেয়াও জরুরী।

দুলালের চিঠি পড়ে আলালের মাথা আবার দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। আলাল জানে চল্লিশা করাটা হাদীস সম্মত নয় কিন্তু দেশাচল বলে কথা। না করলে বাবারও হয়ত মন খারাপ হবে আর পারাপ্রতিবেশীরাও নানা কথা বলবে। বেদাতের এ দেয়াল হয়ত একদিন ভাঙবে কিন্তু আলালকে বাধ্য হয়েই এমন বেদাতি কাজের জন্য অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, তাও আবার ঋণ করে!

দুলালের হাত যেহেতু খালি তাই আলাল আবার বন্ধুদের শরণাপন্ন হল। ধার দেনা করে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিল।

দুলাল খালি হাতে এসেছে সেটা কতটা ঠিক তা সেই ভাল বলতে পারবে তবে নিজের বৌর জন্য কিছু আনবেনা তাতো হয়না, আর পরির মত অপ্সরীর জন্য কিছু না আনা যে একেবারেই অন্যায়, তাই গোপনে গোপনে দুলাল নিজের বৌর জন্য ঠিকই এক সেট গহনা নিয়ে এসেছে।

দুলাল ভেবেছিল গহনা পেয়ে অন্য সব মেয়ের মত পরিও নিশ্চয়ই মহা খুশি হবে, নিন্তু হয়েছে তার উল্টোটা! দুলালের মুখের উপরেই একদম কাঠখোট্টার মত বলে দিয়েছে, এ গহনা সে কিছুতেই পরবে না। যেদিন আলালের বৌ নূরী আর আলালী দুলালীর জন্য গহনা আনাতে পারবে সেদিনই সে এ গহনা পরবে তার আগে নয়। দুলাল মনে মনে প্রমাদ গুনল। কথা না বাড়িয়ে প্রসঙ্গ বদলাল।

দুলালের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় মায়ের চল্লিশার জন্য আর চল্লিশ দিন অপেক্ষা করা গেলনা। যথারীতি ২০ দিনের মাথায়ই চল্লিশা সেরে ফেলতে হল। অবশ্য পাড়ার দুষ্ট ছেলেরা বলাবলি করছিল, সবাই চল্লিশা করলেও দুলাল ভাই তার মায়ের জন্য বিশা করেছে। আলাল ভাই এসে বাকি বিশা করে চল্লিশা পুরা করবে। এখন থেকেই সেই বিশা খাওয়ার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

মায়ের চল্লিশা, ছেলে আর ভাতিঝির আক্বিকা সহ অন্যান্য খরচ মিটাতে দুলালের প্রায় লাখ খানেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। আলালের প্রেরিত ৫০ হাজারের পরেও ধার দেনা ও বাকী বাক্কা মিলিয়ে আরো ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। সিঙ্গাপুর পৌছে দুলাল আলালের কাছে বিস্তারিত জানিয়ে একটা চিঠি লিখেছে। দুলাল আরো জানিয়েছে যে সম্ভব হলে আলাল যেন দোকানের বকেয়া ও টুকটাক ধার দেনা পরিশোধের জন্য আরো ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয় সাথে সংসার খরচের জন্যও যেন কিছু টাকা পাঠায়। আগামী তিনমাস দুলাল কোন টাকা পাঠাতে পারবেনা। তার ওয়ার্ক পার্মিট রিনিঊ করতে অনেক টাকা লাগবে যা পরবর্তি তিন মাসের বেতন থেকে পরিশোধ করবে।

দুলালের চিঠি পড়ে আলালের মাথায় আবারও বাজ পরল। কি আর করা? ভাতিজা ও নিজের মেয়ের আক্বিকা আর মায়ের চল্লিশার জন্য খরচ হয়েছে বলে কথা। যে ভাবেই হোক ধার দেনা করে আলাল আবারও ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিল। পরের মাসে সংসার খরচের জন্য পাঠাল আরো ৩০ হাজার।

রাতে এখন আর আলালের ঠিক মত ঘুম হয়না। মাথার উপর প্রায় দুই লাখ টাকার ঋণের বোঝা। এভাবে দিন গুলো কিভাবে যে চলে গেল আলাল তা টেরই পেলনা। দেখতে দেখতে দুইটা বছর শেষ হয়ে গেছে। ঋণের বোঝাও মোটামুটি ঝেড়ে ফেলেছে। শিশু কন্যাটার বয়সও এক বছর পেরিয়ে গেছে। বাচ্চার মায়ের জন্যতো বটেই বাচ্চার জন্যও মনটা কাঁদে।

যখনই বাচ্চার কথা মনে পরে তখনই এ্যালবাম থেকে বের করে বাচ্চার ছিবি দেখে চুমু খায়, ছবির সাথে কথা কয়। সে যে কত কি কথা! আলাল ভাবে এইত দুই মাস পরেই জানুয়ারী মাস তখন দুলালও দেশে আসবে আর আলালও ছুটিতে যাবে। স্নেহের ভাইটার সাথে ৭/৮ বছর যাবত দেখা নেই এবার হয়ত দেখা হবে। দুই ভাই মিলে অনেক যায়গায় বেড়াতে যাবে। দু’ভাই মাছ ধরায় বেশ পারদর্শি, দুই ভাইয়ের শ্বশুর বাড়িতেই পুকুর আছে, তাই একত্রে মাছ ধরে শ্বশুর বাড়ির লোকদের তাক লাগিয়ে দিবে।

বিষয়: সাহিত্য

৮২৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384816
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বিকাল ০৫:১৯
আবু নাইম লিখেছেন : এরকম বোকা হলে কি আর চলে....
অনেক ধন্যবাদ
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বিকাল ০৫:২৪
317384
আবু জারীর লিখেছেন : সংসারের হাল যারা ধরে তারা একটু বেশিই বোকা হয়।
ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File