গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৯
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৪:৫২:৫৪ বিকাল
গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৯
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। অতি দ্রুততার সাথে নূরীর সাথে আলালের বিয়ে হয়ে গেল। আলাল যেন নূরীর মধ্যেই পরির প্রতিচ্ছবি খুজে পেল। পরিও নিজ বান্ধবী নূরীকে ভাশুর আলালের সাথে বিয়ে দিতে পেরে দায় মুক্ত হল। জয়নাল এবং জয়নালের বৌও কিছুটা দায় মুক্ত হল। আলালের দেয়া আংটি ও চেইন পরি, নূরীর গলায় পরিয়ে দিয়ে এত দিনের বয়ে বেরান বোঝা থেকে হলকা হল। পরির বদান্যতায় আলাল মুগ্ধ। পরি যেন আলালকে আরো দায়বদ্ধ করে ফেল্ল।
দেখতে দেখতে আলালের ছুটি শেষ হয়ে গেল। স্ত্রী নূরী, মা-বাবা ও পরিকে কাদিয়ে আলাল আবার সৌদি’আরবের উদ্দেশ্যে ডানা মেল্ল। নতুন বৌকে ফেলে আসা, মায়ের অসুস্থ্যতা, মাথার উপর ঋনের বোঝা আলালকে কাবু করে ফেলেছে। আগের মত কাজে আর মন দিতে পারছেনা। এভাবে চলতে থাকলে যে কেয়ামত পর্যন্তও দেনা শোধ হবেনা তা আলাল ভালো করেই জানে। কিন্তু কিইবা করার আছে, কোন কাজেই যে মন বসছেনা। পার্ট টাইম থাক দূরের কথা কোম্পানীর কাজেই ঠিকমত মন দিতে পারছেনা। মাস শেষে দেখা গেল বেতন এসেছে মাত্র ১০০০ রিয়াল। তা থেকে কোম্পানীর ঋণ কেটে নিয়েছে ৫০০ রিয়াল। বাকি মাত্র ৫০০ মানে বাংলাদেশী টাকায় ৭৫০০ মাত্র। বন্ধুদের ঋণ শোধ করবে না বাড়ি পাঠাবে না নিজের হাত খরচ রাখবে, আলাল কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা। শেষ পর্যন্ত সহকর্মী জালালের কাছ থেকে ৫০০ রিয়াল ধার নিয়ে ১০০০ রিয়াল মানে ১৫০০০ টাকা দেশে পাঠিয়ে দিল। দেনার পরিমাণ আরো ৫০০ রিয়াল বেড়ে গেল!
না এভাবে আর চলতে পারেনা। মনের সাথে লড়াই করে আলাল আগের চেয়ে বেশী পরিশ্রম শুরু করল। একে একে ৮মাস কেটে গেল। ঋণের বোঝাটা কিছুটা হালকা হয়েছে কিন্তু শেষ করতে আরো ৬ মাস লাগবে। ৯ম মাসে এসে আলাল একই দিন দুটি ভিন্ন খামে দুটি চিঠি পেল। দুটো চিঠিই বাড়ির ঠিকানা থেকে এসেছে। আলালের আর তর সইছে না। নিশ্চয়ই তার কাঙ্খিত খবর এসে গেছে। হ্যা কাংখিত খবরই বটে। আলাল বাবা হয়েছে। বৌ নূরী একটা কন্যা সন্তানের জননী হয়েছে আর আলাল জনক। চিঠিটা কতক্ষণযে বুকের সাথে চেপে রেখেছিল তা আলাল নিজেও বলতে পারবেনা। দ্বিতীয় চিঠিটার কথা মনে না পরলে আলাল হয়ত প্রথম চিঠিটা বুকে জড়িয়ে রেখেই ঘুমিয়ে পরত। দ্বিতীয় চিঠিতেও হয়ত একই খবর। কিন্তু তারপরেওতো চিঠিটা পরে দেখা দরকার। একি দ্বিতীয় চিঠিটাও যে আলালের বাবারই লেখা। তবে তারিখ ভিন্ন। প্রথম চিঠিটার এক সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় চিঠিটা ছাড়া হয়েছে। চিঠিতে চোখ বুলিয়ে এবার আলাল আর স্থির থাকতে পারলনা। মা বলে চিৎকার দিয় অচেতন হয়ে গেল। রুম মেটরা ধরাধরি করে মাথায় চোখে মুখে পানির ঝাপ্টা দিলে আলালের হুশ ফিরল। এক দিকে আলাল পিতা হয়েছে, ঘরে এসেছে নতুন মা অন্যদিকে গর্ভধারিনী জনম দুঃখী মা দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে চলে গেছে।
তিনদিন পর আলাল আজ ডিউটিতে এসেছে কিন্তু কোন কাজেই মন বসছেনা। দুলাল মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেল কিনা আলাল তাও জানেনা। হঠাৎ আলালের মনে পরে গেল যে দুলাল তার কাছে গত মাস দুয়েক আগে যে চিঠি দিয়েছিল তাতে একটা ফোন নম্বর লেখা ছিল। সুপার ভাইজারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে আলাল চট জলদি রুমে গিয়ে পুরান সেই চিঠি খুজে দুলালের ফোন নম্বর আবিষ্কার করল। সাথে সাথেই কল সেন্টারে গিয়ে আলাল দুলালের অফিসে ফোন করল। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে এল। আলাল কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। ওদিক থেকে প্রথমে স্থানীয় ভাষা এবং পরে ইংরেজীতে কি যে বলছে তা আলালের বোধগম্য হচ্ছেনা। অনেক চেষ্টায় ভাঙ্গা ভাঙ্গা অশুদ্ধ ইংরেজীতে আলাল বুঝাতে পেরেছে যে সে দুলালের ভাই আলাল। আলাল সৌদি’আরব থেকে ফোন করেছে। দুলালের সাথে কথা বলতে চায়। অপর প্রান্ত থেকে যে জবাব আসল তা থেকে আলাল যা বুঝল তার মানে হল দুলাল এক সপ্তাহ আগেই বাৎসরিক ছুটিতে দেশে গেছে অতএব দুলালের সাথে কথা বলিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে দুঃখিত।
বিষয়: সাহিত্য
৭০২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাক তারপরও ধন্যবাদ....
মন্তব্য করতে লগইন করুন