গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৮
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০১:১৮:৫৫ দুপুর
গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৮
আলালের বাবা, আমার মনে হয় সময় আর বেশী দিন নাই। যদি আলালের বৌ দেখে যেতে পারতাম তাহলে শান্তিতে কবরে যেতে পারতাম। ছেলেটা ৫/৬ বছর পরে এসেছে, এবার গেলে আবার কবে আসবে জানিনা, আমাকে ও শেষ দেখা দেখতে পারবে কিনা তাও জানিনা। আপনি এক সপ্তাহের মধ্যেই ওর বিবাহের ব্যবস্থা করুন।
- তুমি শান্ত হও আল্লাহ্ চাইলে তুমি সুস্থ্য হয়ে যাবা ইনশা’আল্লাহ। আর আলালের বিয়ের কথা তুমি যা বলছ আমারও তাই ইচ্ছা ছিল কিন্তু ছেলেটা ৫০ হাজার টাকা দেনা করে দেশে এসেছে। গত দুই আড়াই মাসে আরো ২০/২৫ হাজার টাকা দেনা করেছে। এখন বিয়ে করতে গেলে আরো ৫০/৬০ হাজার টাকা দেনা করতে হবে।
- তা যাই হোক আপনি জয়নালকে খবর দিন। জয়নালই সব ব্যবস্থা করে দিবে।
জয়নালকে খবর দেয়া হলে সে স্বপরিবারে বাড়িতে চলে আসল। ফুফুর অন্তিম ইচ্ছা, আলালের অবস্থা আর দুলালের চিঠির কথা শুনে জয়নালের মনটাও খারাপ হয়ে গেল। পরির চিঠিতে যা লিখেছে তা জয়নাল শুনে একটা দীর্ঘ্যশ্বাস ফেলেছে। দুলাভাইর দীর্ঘ্যশ্বাস দেখে পরির মুখটাও মলিন হয়ে গেছে। এত অল্পসময় আলালের জন্য মেয়ে পাবে কোথায়? দেখেশুনে মেয়ে আনতে গেলে সেরকম খরচেরও বাজেট করতে হবে। জানাশুনা পরিচিতদের মধ্যে হলে হয়ত কম খরচে ঘরোয়া ভাবে কাজটা সারা যাবে। আলালও আগের মত উদ্যমি নাই, মায়ের অসুস্থ্যতা, পরিকে না পাওয়া আর মাথার উপর ঋণের বোঝা আলালকে কাবু করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় আলালের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যাবেনা। তাই যা করার জয়নাল ও জয়নালের বৌরই করতে হবে।
অনেক গবেষণার পরে মেয়ে একটা পাওয়া গেল। জয়নালের বৌ বললে মেয়ের পক্ষও হয়ত অমত করবে না। মেয়েটা দেখতে শুনতে সুন্দরী, নামাজি তাছাড়া মাদ্রাসায়ও ১০ম শেণী পর্যন্ত পড়েছে। মেয়ের বিস্তারিত শুনে আলালও মৌনতা অবলম্বন করল। মৌনতাকেই সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে জয়নাল, জয়নালের বৌ, পরি এবং হেলাল পরের দিন সকালেই মেয়েদের বাড়ি বাগের হাটে গেল। মেয়ে নূরী আর কেঊ নয় সে জয়নালের বৌর খালাত বোন এবং পরির বান্ধবীও বটে।
যথা সময় তারা নূরীদের বাড়িতে গিয়ে পৌছল। বলা নাই কওয়া নাই, জামাই আর দেবর নিয়ে আদুরি আর পরির এমন হুট করে চলে আসায় নূরী এবং নূরীর মা কেমন যেন একটা রহস্যের গন্ধ পেল। তা যাই হোক, জামাই নিয়ে এই প্রথম ওরা এসেছে তাই সামর্থ থাক আর না থাক আদর আপ্যায়নেতো আর ত্রুটি করা যায়না। তাই সাধ্য মত জামাই পুত্রার আদর আপ্যায়ন হল।
বিকেলেই তারা আবার ফিরতি পথ ধরবে তাই দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই জয়নাল বিষয়টা নিয়ে আলাপ করতে চাইল। কিন্তু নূরীর বাবার ইচ্ছা তার বড় ছেলে মাওলানা হুমায়ুনের উপস্থিতিতে আলোচনা করার। মাওলানা হুমায়ূন ৫/৬ কিলোমিটার দূরের একটা দাখিল মাদ্রাসার সুপারেন্টেন্ট। সকালে মাদ্রাসায় গেছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পরবে। অবশ্য ইতি মধ্যেই কথাটা চাউড় হয়ে গেছে। মেয়ে মানুষের পেটে কথা কতটা হজম হয় তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। পরিই সব নষ্টের মূল।
নূরী, পরির চেয়ে ৬ মাসের ছোট্ট, এত দিন নূরীই পরিকে আপু আপু বলত আর পরি নূরীকে নাম ধরেই ডাকত কিন্তু আজ পরিই নূরীকে আপু বলে ডাকা শুরু করলে আদুরী মুখ টিপে হাসলেও নূরী মাথামুণ্ড কিছুই বুঝতে না পেরে মায়ের কাছে বিচার দেয়। নূরীর মায়ের জেরার সামনে পরির পেট থেকে সব কথা পটপট করে বেরিয়ে আসে। এক কান দু কান হতে হতে ব্যাপারটা ইতিমধ্যেই বাড়ির সবার জানা হয়ে গেছে।
মাওলানা হুমায়ূন এলে আদূরীর আর পরির জোর দাবীর মুখে তাকে নতি শিকার করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে সেও তাদের সাথে যাবে। ছেলে এবং ছেলেদের পরিবেশ পছন্দ হলে আগামীকালই ছেলে, ছেলের বাবা, জয়নাল সহ ছেলের পক্ষের কয়েকজন আত্মীয় স্বজন নিয়ে এসে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করে ফেলবে।
বিষয়: সাহিত্য
৭৫৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন