গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৭
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৪:১০:৫২ বিকাল
গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৭
সবাই যখন নিরব তখন আলালীই নিরবতা ভঙ্গ করলঃ
- ভাই চল পুকুরপার থেকে ঘুরে আসি।
- চল
- জান ভাই, মা আর বেশী দিন বাচবে না। ডাক্তাররা মায়ের আশা ছেড়ে দিয়েছে। আমার পর দুলালীরও বিয়ে হয়ে গেছে। মেঝ ভাইর বিদেশ যাওয়া যখন ফাইনাল হয়েগেছে তখন মা হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পরলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। সব রকম পরীক্ষানিরীক্ষা করে ডাক্তাররা দেখতে পায় যে মায়ের দুটো কিডনিই অচল হয়ে গেছে। ফলে কোন চিকিৎসায়ই আর কাজ হবেনা। এখন ঔষধ খেয়ে শেষ গন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নাই। মা একেবারেই অচল হয়ে পরলে আমি আর দুলালী এসে সংসার সামলাতে থাকি কিন্তু আমাদের সংসার ফেলে এরকম করা সম্ভব নয় বলে তোমাকে বিয়ে করানর সিদ্ধান্ত হয়। মেয়েতো আগে থেকেই ঠিক করা ছিল, আর পরিকে যে তুমিও পছন্দ কর এবং পরিও তোমাকে পছন্দ করে তাতো আমি, জয়নাল ভাই এবং ভাবির জানাই ছিল। তুমি যে পরির জন্য আংটি পাঠিয়েছিলে ভাবি আমাকে তাও বলেছে।
- এত না ঘুড়িয়ে সোজা করে বলতো দেখি। তোরা কি আমার অনুপস্থিতিতেই পরিকে বৌ করে ঘরে নিয়ে এসেছিস?
- হ্যা তাই। তবে।।
- তবে আবার কি? আমার মতামত? না দরকার নাই। তুই তো মাশা’আল্লাহ বড় পণ্ডিত। তাছাড়া মায়ের পর বড় মুরুব্বিও। তোর কথা তো আর আমি ফেলতে পারিনা তাই না?
- হ্যা তা আমি জানি কিন্তু তুমি যা ভাবছ বিষয়টা যদি তাই হত তাহলে আমাদের লজ্জিত হতে হত না। আমরা সেই মোতাকে নিয়েই অগ্রসর হচ্ছিলাম কিন্তু বাধ সেধেছিল পরির বাবা। তিনি শিক্ষিতা পরিকে তোমার মত অশিক্ষিত সৌদি প্রবাসীর সাথে বিয়ে দিতে কোন ভাবেই রাজি হচ্ছিলেন না তাই বাবা হঠাৎ করে মেঝভাইর নাম বলে ফেল্লে সে রাজি হয়ে যায়।
- আচ্ছা তাহলে এই কথা? ভালো, খুব ভালো।
- হ্যা ভাই, এটাই বাস্তবতা। আরো বাস্তবতা হল, বাবা এবং মেঝ ভাই কিন্তু তোমার আর পরির ব্যাপারটা জানত না। আমি জানতাম কিন্তু ঢাকার সেই বৈঠকে আমি ছিলাম না। জয়নাল ভাই চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তার শ্বশুরকে রাজি করাতে পারেন নি। চোখের পানি ফেলা ছাড়া পরির কিছুই করার ছিল না। পরি কিভাবে তোমাকে মুখ দেখাবে সেই চিন্তায়ই বেচারি প্রেশান। আর হ্যাঁ তোমার পাঠানো আংটি দিয়েই পরিকে মেঝভাইর বৌ সাজান হয়েছে।
- যাক আমার আংটিটা তাহলে শেষ পর্যন্ত কাজে লেগেছে। ধর এই বক্সে তিনটা চেইন আছে। একটা তোর, একটা দুলালীর আর একটা পরিকে দিবি। পরির প্রতি আমার কোন অনুযোগ নাই। আমিতো ওকে মুখ খুলে কোনদিন কিছু বলিনি। তাছাড়া ও যে আমার মায়ের খেদমত করছে তাতেই আমি খুশি। ওর কাছে আমার আর কিছুই চাওয়া পাওয়ার নাই। তুই, দুলালী যেমনি আমার বোন, আজ থেকে পরিও তেমনি আমার বোন।
আশা ভরসা স্বপ্ন সাধ বলতে আলালের আর কিছুই রইল না। গোসল করে খানা খেয়ে মায়ের শিয়রে বসে আলাল নয়ন ভরে মাকে দেখছিল। হঠাৎ পিয়ন এসে একটা চিঠি দিয়ে গেল। চিঠিটা আর কারও নয়। এটা যে দুলালের চিঠি। আলালের বাবার নামে চিঠিটা এসেছে তাই সে সাথে সাথেই চিঠিটা খুলে পড়া শুরু করল।
প্রিয় মা-বাব,
আসসালামু’আলাইকুম
আশা করি আল্লাহর ইচ্ছায় ভালোই আছেন। আমিও আল্লাহর ইচ্ছায় ভাল আছি। এখানে আসার পর আমাদেরকে শহরের বাহিরে ট্রনিং এর জন্য নিয়ে যাওয়ায় সময় মত চিঠি দিতে পারিনি। ট্রেনিং শেষে গত সপ্তাহে শহরের মূল কেন্দ্রে আমাদের থাকার জায়গায় এসেছি। আলহামদুলিল্লাহ্ আপনাদের দোয়ায় সঠিক ভাবে ট্রেনিং সমাপ্ত হয়েছে। ট্রেনিং এ ছিলাম বলে পুরা বেতন পাইনি। যা পেয়েছি তা থেকে ১০ হাজার টাকার একটা ড্রাফট পাঠালাম। এখান থেকে পরির হাত খরচের জন্য এক হাজার, আলালী, দুলালী ও হেলালকে এক হাজার টাকা করে দিবেন আর বাকী টাকা সংসারে খরচ করবেন। আগামি মাস থেকে নিয়মিত সংসারের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পাঠাব। বাকী টাকা থেকে আমার নিজের খরচ ও শ্বশুরের দেনা পরিশোধে ব্যায় করব। বড় ভাইর ঠিকানাটা দিবেন, এখান থেকে চিঠির মাধ্যমে তার খোজ খবর নিব। মায়ের সেবা যত্নের দিকে খেয়াল রাখবেন।
আল্লাহ্ হাফেজ
আপনাদের স্নেহের দুলাল।
যে আশা নিয়ে আলালের বাবা দুলালের চিঠিটা পড়া শুরু করেছিল সে আশায় গুড়ে বালি। ভেবে ছিল আলাল যেমন ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকুরী করে মাসে গড়ে ২০ হাজার টাকা পাঠায় তেমনি দুলাল সিঙ্গাপুর থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে ৫০ হাজার টাকা পাঠাবে। ৫০ হাজার না হোক ৩০ হাজার তো পাঠাবেই কিন্তু এখন এ কি শুনছে! ১০ হাজার টাকায়তো ওর মায়ের চিকিৎসা খরচই চলবে না। ছেলেরই বা দোষ কি? কামাই না করতে পারলে পাঠাবে কোথা থেকে?
দেখতে দেখতে আলালের ছুটি প্রায় শেষ। আলালের মায়ের অসুস্থ্যতা আরো বেড়েছে। এমতাবস্থায় আলালের মা একদিন পরিবারের সবাইকে ডাকল।
বিষয়: সাহিত্য
৭০৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন