গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৩
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ৩০ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৫:৩৫:২৮ বিকাল
গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৩
দুলালকে বের হয়ে যেতে ইংগিত দিয়ে এবার হাওলাদার সাহেব মুখ খুল্লেন।
- বেয়াই সাহেব, আপনার যুক্তিটা আমরা বুঝি, আপনার বেহাইনের আবেগেরও অমর্যাদা হোক তাও আমি চাইনা। পরিমাকে আমারও খুব পছন্দ হয়েছে। জয়নালের বৌ আমাকে ফুফা শ্বশুর হওয়ার পরেও যেভাবে সম্মান করে তাতে পরিমা পুত্র বধূ হলে যে আলালী দুলালীর জায়গায় পরিকে পাব তাতে কোন সন্দেহ নাই। তাই বলছিলাম বেয়াই সাহেব আলাল যেহেতু কম শিক্ষিত তাই দুলালের ব্যাপারে না মত করবেন না। দুলাতো কলেজ পাশ দিয়েছে, ভালো চাকুরী নিয়ে সিঙ্গাপুর যাচ্ছে, আশা করি পরিমা আমাদের সাথে সুখেই থাকবে ইনশা’আল্লাহ।
আলালের বাবা এমন প্রস্তাব দিবেন তা কেউই আশা করেনি। তার কথার উপর কেউ কথা বলবে এমনও কেউ নেই। জয়নাল বৈঠক থেকে উঠে সোজা নিজের বেডরুমে চলে গেল, আদুরীও জয়নালের পিছু নিল। স্বামী স্ত্রী দুজনই বাকরুদ্ধ, কারো মুখে কোন ভাষা নেই, দুই মুরুব্বির যুক্তির কাছে আবেগ মূল্যহীন। আলালের সাথে জরুরী যোগাযোগের কোন ব্যবস্থাও নেই, তাছাড়া আলালের সাথে যোগাযোগ করে কোন লাভও নাই। আলাল তার বাবার ইচ্ছার কাছে যে নিজের ইচ্ছাকে কুরবানি করবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। আলাল আর পরির আবেগ যা বলতে গেলে সুপ্ত বাসনা তার মূল্য যে কেউই দিবেনা তা আদুরী এবং জয়নাল ভাল করেই বুঝতে পারে। আলালের মায়ের চাই পরিকে পুত্রবধূ করে পাওয়া তা আলালের বৌ’ই হোক আর দুলালের বৌ’ই হোক তাতে কোন পার্থক্য নাই। এরই মধ্যে আলালের মনের গহীনে পরি যে বাসা বেঁধেছে তাতো আর তার জানা নাই। আলালের বাবার অবস্থাও তার মায়ের মতই। স্ত্রীর জীবনাবসানের সময় ঘনিয়ে এসেছে জেনেই তার শেষ ইচ্ছাটা পূরণের জন্যই মূলত আলালের বাবা দুলালের ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছেন, নাহলে বেপারী সাহেব যে কথা বলেছে সে কথা শুনার পর হাওলাদার সাহেব এমন প্রস্তাব দিতেন না। আলালের মত মাটির মানুষের যোগ্যতা শিক্ষিত দুলাল তথা সমাজের যে কারো চেয়ে যে বেশী তা আর কেউ বুঝুক আর না বুঝুক আলালের বাবা তা ভাল করেই বুঝেন।
বৈঠক থেকে জয়নালের উঠে যাওয়ায় বেপারী সাহেব কিছুটা অপমান বোধ করেছে, কিন্তু মেয়ের জামাই বলে কথা, তাই সে মুখ বুঝে সহ্য করেছে। হাওলাদার সাহেবের কথায়, বেপারী সাহেবের উপর একটা আসমানী প্রভাব পরেছে, ফলে একেবারে সে লা জওয়াব হয়ে গেছে। নিরবতা ভেঙ্গে আলালের বাবাই মুখ খুল্ল।
- বেয়াই সাহেবের আশা করি দুলালের ব্যাপারে কোন আপত্তি নাই।
- না বেয়াই, বিষয়টা ওভাবে দেখবেন না। আমি আসলে ছোট্ট মেয়েটাকে নিজের কাছাকাছি কোন ভালো পাত্রের কাছে দিতে চেয়েছিলাম। বুঝেনই’ত যেহেতু বয়স হয়েছে, কবে যে ওপার থেকে ডাক এসে যায় তা তো আমরা কেউই জানিনা।
- ঠিক আছে বেয়াই, দরকার হলে দুলালকে বলব আপনার বাড়ির কাছে বাড়ি বানাতে, আর অমত করবেন না। দুলাল যেহেতু মাস খানেকের মধ্যেই সিঙ্গাপুর যাচ্ছে তাই সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই যদি বিবাহের কাজটা সম্পন্ন হয় তাহলে ওরা কয়েকটা দিন সময় পাবে আর আপনার বেহাইনের মনের ইচ্ছাটাও পুরা হবে। দুলালের যাওয়ার পরই পরি মা’মণি পুরাপুরি স্বাধীন, যত দিন মন চায় আপনার বাড়িতে গিয়ে থাকবে আর মাঝে মধ্যে এসে এই বুড়ার বাড়িতে থাকবে।
বেপারী সাহেব আর হাওলাদের সাহেব মিলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলেছে অথচ জয়নাল, দুলাল, আদুরী ও পরির কাছে কোন খবর নাই। জয়নালের মা অবশ্য শুনেছে এবং মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ্ পড়েছে। পরিকে হারাতে হচ্ছেনা এটাই শান্তনা। আলাল যখন দেশে আসবে তখন ওর জন্য পরির চেয়েও যোগ্যতা সম্পন্ন কোন হুরপরি এনে দেয়া যাবে। আলালের মনে যে পরি বাসা বেঁধেছে তার খবর কি আর আলালের মায়ের আছে?
বিষয়: সাহিত্য
৭৪০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কাজটা ভাল করতেছেন না.....।
একজনের টা অন্যজনের হলে কিন্তু ভাল হবে না....
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন