গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১২
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৫৭:২০ দুপুর
#গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১২
রাতের খাবার শেষে পারিবারিক বৈঠক বসল। বৈঠকের সদস্যরা হলেন সর্ব জনাবঃ
১) আব্দুর রহমান হাওলাদর (আলালের বাবা),
২) আবুল খায়ের বেপারী (জয়নালের শ্বশুর),
৩) জয়নাল,
৪) দুলাল,
৫) দরজার আড়ালে ভিতরের রুমে জয়নালের বৌ।
অসুস্থতার কারণে আলালের মা, এবং বয়সে ছোট্ট হওয়ায় পরি বৈঠকের সদস্যা হতে পারেনি।
শুরুতেই দুলালের সিঙ্গাপুরের ভিসার ব্যাপারে কথা হল। জয়নালের শ্বশুর এক লাখ টাকা বের করে দিলেন, আলাল পাঠিয়েছে এক লাখ, জয়নাল দিবে ত্রিশ হাজার আর দুলাল নিজে বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে সংগ্রহ করবে ২০ হাজার আর কাপড়চোপড় যা লাগে তার ভার নিল জয়নালের বৌ। আগামি কালই টাকা জমা দেয়া হবে। আশা করা যায় এক মাসের মধ্যেই দুলালের ফ্লাইট হবে ইনশা’আল্লাহ।
দুলালের প্রসঙ্গ শেষ হতেই জয়নাল, পরির প্রসঙ্গটা তুল্ল। জয়নালের শ্বশুর হতচকিত হয়ে গেল। এখানে পরির পরসঙ্গ কেন তা মাথায় ঢুকলনা। জয়নালকে তিনি প্রসঙ্গটা বাদ দিতে বললেন কিন্তু জয়নালের বৌ তার বাবাকে বাধা দিয়ে বিষয়টা নিয়ে আলোচনার জন্য বললেন। মেয়ের কথায় বেপারী সাহেব রহস্যের গন্ধ পেলেন। নিজের মতের বিরুদ্ধেই বেপারী সাহেবকে মেয়ে-জামাইর ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করতে হল।
জয়নাল পরির ব্যাপারে আলালের নাম প্রস্তাব করতেই বেপারী সাহেব বিরক্তি প্রকাশ করলেন। তার কথা হচ্ছে পরির মত সুন্দরি এবং শিক্ষিতা মেয়েকে সে কিছুতেই আলালের মত সামান্য শিক্ষিত সৌদি প্রবাসী ছেলের কাছে দিবেনা। আর দুই মেয়ের এক মেয়েকে যেহেতু দূরে জয়নালের কাছে বিবাহ দিয়েছে তাই ছোট্ট মেয়েকে যথা সম্ভব নিকটে বিবাহ দিবে। অবশ্য শিক্ষিত, সরকারী চাকুরে ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে কয়েক জন পাত্রের পক্ষ থেকে তার কাছে প্রস্তাবও আছে। পরিকে ঢাকায় নিয়ে এসে ছয়মাস পর্যন্ত রেখে না দিলে এত দিন হয়ত শুভ বিবাহের কাজটা সম্পন্ন হয়েই যেত।
বেপারী সাহেবের যৌক্তিক কথার পরে হাওলাদার সাহেব একেবারে চুপষে গেলেন। জয়নালের মুখেও কোন কথা নেই, জয়নালের বৌ আদুরীইবা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলনা। জয়নালের মা ততক্ষণে পরির কাঁধে ভর দিয়ে আদুরীর কাছে একটা চেয়ার টেনে বসল। আদুরীর ইশারায় পরি চলে গেল। সবাই যখন নিশ্চুপ তখন আলালের মাই মুখ খুল্ল।
- বেয়াই সাহেব আপনার মেয়েকে পুত্র বধূ করার প্রস্তাব দেয়ার যোগ্যতা আমাদের নেই কিন্তু ভাগ্নে আলালের কাছে যদি বড় ময়েকে না দিতেন তাহলে এমন প্রস্তাব দেয়ার সাহস করতাম না। বেয়াই সাহেব, গত পাঁচ বছর থেকেই নিজের মেয়ে আলালী, দুলালীর মতই পরি ও আদুরীকে এক চোখে দেখি। আদুরীকে ভাগ্নে বৌ নয় বরং নিজের মেয়ের মতই মনে করি। আমার মেয়ে দুটিকে ইতি মধ্যেই পরের ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি। ঘরটা একেবারে ফাকা হয়ে গেছে। তাছাড়া আমি আর কত দিন বাচব জানিনা তবে দিন যে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে তা বুঝতে পারছি। তাই আপনার কাছে পরিকে ভিক্ষা চাচ্ছি। মৃত্যুর সময় ওর নেক মুখটা দেখে যদি মরতে পারি তাহলে মনে কোন দঃখ থাকবে না।
- বেয়াইন সাহেবা, আপনার আবেগটা আমি বুঝি কিন্তু কি করব বলেন, কোন বাবাই তার মেয়ের উপযুক্ততার নিচে যেতে চায়না। পরি মাশ’আল্লাহ কলেজ পর্যন্ত পড়েছে, আমিই পরীক্ষাটা দেয়াইনি। পরীক্ষা দিলে হয়ত কলেজটাও পাশ করত অথচ আপনার আলালের জন্য পরিকে নিতে চান, আলালতো প্রাইমারির গণ্ডিটাই পার করেনি, তার পরে থাকে সৌদি’আরবে, পাঁচ বছর হয়ে গেল অথচ এখনও দেশেই আসতে পারলনা। বলুনত, এত কিছু জেনে শুনে আপনাদের আবেগের কাছে আমার কলিজার টুকর মেয়েটাকে কি ভাবে বলি দেই? বেয়াইন আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে মাফ করবেন।
বিষয়: সাহিত্য
৬৮৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বড়ই জটিলতায় ফেলে দিলেন......
মন্তব্য করতে লগইন করুন