গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১১

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২২ জানুয়ারি, ২০১৮, ০১:২৫:০৮ দুপুর

গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১১

পরির কথা মনে পরতেই আলাল চিঠিটা খুলে পড়া শুরু করল। হ্যাঁ পরির কথা ঠিকই লেখা আছে কিন্তু আলাল যে অসহায়।

স্নেহের আলাল,

আমাদের সালাম ও শুভেচ্ছা নিও,

আশা করি আল্লাহর ইচ্ছায় ভালই আছো, আমরাও তোমার দুয়ার বরকতে ভালো আছি।

পর সংবাদ হল এই যে, আমরা দারুণ ভাবে আন্তরিকতার সাথে তোমার অনুপস্থিতি অনুভব করছি। প্রত্যাশা ছিল তুমি দুই বছর পরেই দেশে আসবে কিন্তু দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচটি বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলও তুমি এলেনা! তোমার আম্মা পরিকে খুব পছন্দ করে এবং আমরাও তোমাদেরকে ভালোবাসি। তুমিও যে আমাদেরকে ভালোবাস তাও আমরা অনুভব করি। তোমার ভাই তোমাকে আপন ভাইয়ের মতই স্নেহ করে তাই তারও একান্ত ইচ্ছা পরিকে দূরে কোথাও না দেয়া। কিন্তু কোন বাবা-মাই ভাল পাত্র পেলে উপযুক্ত মেয়েকে ঘরে বসিয়ে রাখতে চায়না। আমার বাবা মাও তার ব্যতিক্রম না।

ইতি মধ্যে পরির জন্য পর পর কয়েকটি প্রস্তাব এসেছে। বাবা রাজিও হয়েছিলেন কিন্তু পরির মনোভব লক্ষ করে আমরা ওকে ঢাকায় এনে আমাদের কাছে রেখেছি। ছয়মাস যাবত বাবাকে নয় ছয় বুঝিয়ে রেখেছি। গতকাল আব্বার চিঠি পেয়েছি, তিনি আগামী সপ্তাহে পরিকে নিতে ঢাকায় আসবেন।

বিগত ছয়মাসে তিনি পরিকে নেয়ার জন্য ৩/৪ বার ঢাকায় এসেছেন কিন্তু প্রতিবারই তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি, এবার যে কি হয় জানিনা। তোমার মতামত জানার অপেক্ষায় রইলাম। তোমার মতামত পেলে তোমার ভাই চাচ্ছে পরিকে আংটি পরিয়ে রাখতে। সে ক্ষেত্রে ভালো মনে করলে একটা আংটি পাঠিয়ে দিও। আর হ্যাঁ দুলাল সিঙ্গাপুরের ভিসা পেয়েছে। হয়ত ইতি মধ্যে ফুফা তোমাকে জানিয়েছে। ২,৮০,০০০.০০ টাকা খরচ হবে। আব্বাকে তোমার ভাই বিষয়টা জানিয়েছে, আশা করি তার কাছ থেকে ধার হিসেবে ১,০০,০০০.০০ টাকা নিতে পারব। তোমার ভাইও ২০/৩০ হাজার টাকা দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাকী টাকা কিভাবে যোগার হবে জানিনা। তবে শুরুতেই ৩০ হাজার টাকা বেতন পাবে। দুলাল শুভেলাভে সিঙ্গাপুর যেতে পারলে আশা করি তোমাদের আর পিছনের দিকে তাকাতে হবেনা।

আল্লাহ্‌ তোমার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল করুন।

আল্লাহ্‌ হাফেজ

তোমার ভাবি ও ভাই।

চিঠিটা পড়ে আলালের ভিতরে একটা মিশ্র প্রতিকৃয়া হল। আলালদের এমন মুহুর্তের কথা কল্পনা করেই হয়ত কবি বহু যুগ আগে লিখেছিলেন, “আনোন্দ বেদনায় মিলন বিরহ সংকটে’।

পরের দিন আলাল আরো একটা চিঠি পেল, চিঠিটা আলালের মা লিখেছেন। অন্যান্য বিষয়ের সাথে তার নাজুক শারিরীক অবস্থার কথা বলেছেন। মৃত্যুর আগে পুত্র বধূ দেখে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কেন যেন তিনি বেশীদিন বাঁচবেন না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দুলালের সিঙ্গাপুরের ভিসা সম্পর্কে জয়নালের বৌ যা লিখেছে, মায়ের চিঠিতেও অনুরূপ কথা লেখা আছে।

নতুন দিনের স্বপ্নে, মাকে পুত্রবধূ দেখাতে, ভাইকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে আলাল কোমর বেধে নেমে পরল টাকা সংগ্রহের অভিজানে। কমছে কম এক লাখ টাকা মানে ৭ হাজার রিয়াল যোগার করতে হবে। এক হাজার রিয়াল বেতনের চাকুরের পক্ষে ৭ হাজার রিয়াল সংগ্রহ করা যে কতটা কষ্টের তা ভুক্তভোগী ছাড়া কাউকে বুঝান সম্ভব নয়। অনেক চেষ্টার পর ৫ হাজার রিয়াল সংগ্রহ হল কিন্তু এখনও ২ হাজার রিয়াল বাকী। শেষপর্যন্ত অফিসে গিয়ে ধর্ণা দিতে হল। অনেক বলে কয়ে দুই মাসের বেতন অগ্রিম নিয়ে শেষ পর্যন্ত এক লাখ টাকা পাঠান সম্ভব হল। ভাবির কথা মত পার্সেলের মাধ্যমে আগেই কিনে রাখা সেই আংটিটাও পাঠিয়ে দিল।

আলালের মায়ের বুকের ব্যথাটা আবারও বেড়ে গেছে। তার সময় যে ফুরিয়ে এসেছে তা ডাক্তার আগেই বলেছিল। খবর পেয়ে দুলাল বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাকে সাথে নিয়ে ঢাকায় এসে জয়নালের বাসায় উঠেছে। জয়নালের শ্বশুরও পরিকে নিতে এবং দুলালের সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য এক লাখ টাকা নিয়ে ঢাকায় এসেছে। সন্ধ্যায় দুলাল বাবাকে সাথে করে মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছে। ডাক্তার কয়েকটি টেস্ট দিয়েছে। আজকাল ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মানেই একগাধা টেস্ট করানো। জ্বর সর্দি হলেও এখন আর ৫/১০ টি টেস্ট না করিয়ে ঔষধ পাওয়া যায়না যা সাধারণ মানুষের জন্য বড়ই কষ্টের। আলালের মায়ের সাধারণ কোন জ্বর সর্দিনা তাই তার টেস্ট করানোটা যে অপরিহার্য তা দুলালের মত শিক্ষিত ছেলে যে বুঝে না তা নয়।

পরের দিন দুলাল আর দুলালের বাবা রিপোর্টের জন্য ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার যা বললেন তাতে শুধু শুধু ডাক্তার দেখিয়ে পয়সা খরচ করা ছাড়া কোন লাভ হবেনা। যে বেদি তলে তলে বহু বছর ধরে বাসা বেঁধেছে তা আর সারার নয়। সাধারণ ঔষধের মাধ্যমে ব্যাথার কিছুটা উপশম হবে কিন্তু এভাবেই একদিন তার জীবন

প্রদীপ নিভে যাবে। তা হতে পারে ৬ মাস, বড় জোর একবছর, আল্লাহ্‌ই ভালো জানেন সে দিনটি কবে হবে। ডাক্তারের কথা শুনে বাপ-বেটা যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ডাক্তার শান্তনা দিয়ে একটা ঔষধের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে দুলালদের বিদায় করে দিলেন।

বিষয়: সাহিত্য

৬৯৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384728
২৩ জানুয়ারি ২০১৮ দুপুর ০৩:৩৯
আবু নাইম লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File