গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১০
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ০১:১৭:৩৪ দুপুর
গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১০
সবার ভিতরে একটা নিরবতা নেমে আসল। এমতাবস্থায় মিষ্টি না খেলে যে আলাল মনে কষ্ট পাবে, ভাববে সবাই ওকে করুণা করছে তা বুঝতে কারো বাকী রইল না। কেউ আর কথা না বাড়িয়ে নিরবে মিষ্টি খেয়ে ঘুমিয়ে পরল।
রাত সাড়ে এগারটায় এশার নামায পড়ে খেয়ে দেয়ে বিছানায় যেতে যেতে ১২টা। সকাল ৫টায় আবার ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামায পড়েই ডিউটিতে যেতে হবে। সারা দিন গাধার খাটুনি খেটে রাত ১১টায় যখন আলাল বিছানায় গা এলিয়ে দেয় তখন ঘুমতে এক মিনিটও সময় লাগেনা কিন্তু আজ আর ঘুম আসছেনা। দু’চোখ বেয়ে লোনা জলে আলালের কণ্ঠদেশ ভিজে যাচ্ছে। হ্যা মা, ‘আমি তোমার কথা মত রাত আটটার মধ্যেই ঘুমিয়ে পরব কিন্তু মা তোমার আটটা আর আমার আটটা যে একনা। রাত বারটায় আমার আটটা বাজে। কারণ তার আগে যে আমি এশার নামায পড়তেই পারিনা।
মা, সব কিছুইতো বল্লা কিন্তু একটা বারের জন্যওতো ছুটিতে যাওয়ার কথা জানতে চাইলা না? জানি তুমিও হয়ত এখন আমার জন্য চোখের পানি ফেলছ। আব্বা টের পাবে বলে তোমার কান্নার আওয়াজ হয়ত তোমার বুকের মধ্যেই গুমড়ে মরছে।
বাবা পুরুষ মানুষ, মহিলাদের মত কাঁদা পুরুষের সোভা পায়না কিন্তু আমি জানি সকাল সন্ধ্যা আমার বাবাও আমার জন্য চোখের পানি না ফেলে পারেন না। হয়ত তিনি বাড়ির বাহিরে গিয়ে কাদেন এবং নিজেকে ধিক্কার দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ঘরে ফিরেন। তোমরা কাছে থেকেও একে অপরের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাওনা কিন্তু আমি এই দূরদেশে থেকেও তোমাদের কান্নার আওয়াজ ঠিকই শুনতে পাই।
মা, তুমিই তো পরিকে পছন্দ করেছ, সেই পরি কে পুত্রবধূ না করতে পারলে তুমি যে কতটুকু কষ্ট পাবে তা আমাকে বলে বোঝাতে হবে না। মা, আমি কথা দিলাম, যে কোন মূল্যেই হোকনা কেন পরিকে তোমার পুত্রবধূ বানাবই ইনশা’আল্লাহ।“
রাজ্যের ভাবনা ভাবতে ভাবতে কখন যে আলাল ঘুমিয়ে পরেছে তা বলা মুশকিল। ফজরের আজান হলেই কেবল আলালের ঘুম ভাঙ্গে, নতুন করে শুরু হয় কর্ম তৎপরতা। টিকেটের টাকার জন্যও যথারীতি দরখস্ত করে। পিছনের দেনা শেষ হতে না হতেই নতুন করে ধার দেনা করে ভাগ্নীর জন্য স্বর্ণের চেইন, নতুন জামা, দুলালী আর হেলালের জন্য পরীক্ষার টাকা এবং সংসার খরচের জন্য টাকা পাঠিয়ে দেয়।
টাকা চাইতে দেরী আছে কিন্তু পাঠাতে দেরী নাই। অবশ্য প্রতিটি চিঠিতেই আলাল দেনার কথা উল্লেখ করে কিন্তু কেউ গায়ে মাখে না। সবাই ভাবে ড্রাফটের সাথের চিঠিতে দেনার কথা লিখে দেয়া প্রবাসীদের এক প্রকার বাতিখ।
হ্যা, বাতিখই, কারণ দেনা না করে খুব কম প্রবাসীই টাকা পাঠাতে পারে কিন্তু সে কথা কেউ বিশ্বাস করেনা! কথায় বলেনা, ‘যার জিনিস চুরি করি সেও বলে চোর আর যার জন্য চুরি করি সেও বলে চোর”। প্রবাসী আলালদের অবস্থাও অনেকটা তাই।
পঞ্চম বছর শেষ হতে আর মাত্র তিন মাস বাকী, এই তিন মাস বাড়িতে টাকা না পাঠাতে হলে আলালের দেনা শেষ হবে, তার পরে ছয়মাসের ইনকাম দিয়ে বাজার ঘাট করে বাড়ি যাওয়া যাবে। ভাবতেই আলাল একটা পুলক অনুভব করে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরির চাঁদ মুখ।
পার্ট টাইমের টাকায় আর হাত দেয়া যাবেনা। ঐ টাকা দিয়ে পরির জন্য কিছু গহনা কিনতে হবে। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। প্রথম মাসের পার্ট টামের পাঁচশত রিয়াল দিয়ে আলাল সুন্দর দেখে মনের মত করে পরির জন্য একটা আংটি কিনে। আলালের মনে যেন ফাগুণের আগুণ লেগেছে। সে এখন আর আগের মত গুরু গম্ভীর হয়ে থাকেনা। তাকে দেখলেই বুঝা যায় এবার সে লঙ্কা জয় করেই ছাড়বে।
এইত আর কটা দিন পরেই নতুন বছর শুরু হবে। আলালের ধার দেনা শেষ হয়ে যাবে তার পরে চলবে বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি। পরির জন্য আংটি কেনা হয়ে গেছে, আর কি ই বা বাকি? ডিউটি শেষে রুমে এসে বরাবরের মত এশার নামায পড়ে রাতের খাওয়া শেষে কেবল বিছানায় গা এলিয়ে দিবে অমনি বিছানার উপর একটা খাম পরে থাকতে দেখে আলালের অন্তরাত্মা কেপে উঠল। আলাল একবার ভাবে চিঠিটা খুলে পড়ে দেখবে, আবার ভাবে না, কাল সকালেই পড়া যাবে। এমনতো হতে পারে যে চিঠিতে পরির কথা কিছু লেখা আছে।
বিষয়: সাহিত্য
৭১২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন