গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ০৮

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ০২:০৩:৩৮ দুপুর

#গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ০৮

বাসে বসে পরি পুরটা পথই চিঠির কথা ভেবেছে। যার সাথে কোন সম্পর্ক নাই, মাত্র কয়েক দিনের পরিচয় তাতেই যে মায়া লেগে গেছে তার পরিণতি কি হবে, আল্লাহ্‌ই ভালো জানেন। আচ্ছা, সেওকি আমার কথা ভাবে? নিশ্চয়ি ভাবে নাহলে চিঠিতে আমার নাম লিখল কেন? সেও হয়ত ভেবেছে আমি এখনও ঢাকায় আছি আর তার চিঠির অপেক্ষায় আছি। বেশী কিছু না লিখে ভালোই করেছে। দুলাভাই যেরকম মুখ পোড়া, বেশী কিছু লিখলে আমাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ত।

দেখতে দেখতে আলালের একটা বছর কেটে গেল, কিন্তু ৫০ হাজার টাকা দেনার মধ্যে জয়নাল ভাই এবং ভাবির ১৫ হাজার টাকা এখনও দেয়া হয়নি! হবে কিভাবে? একটার পর একটা কাজতো লেগেই আছে। দুলালকে কলেজে ভর্তি করতে, বই পুস্তক আর সাইকেল কিনতেই তো গেছে ১০ হাজার। আলালীর ফর্ম ফিলাপ আর স্কুলের বেতন দিতে হয়েছে ৫ হাজার। সংসার খরচও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।

একইভাবে দ্বিতীয় বছরটাও কেটে গেল কিন্তু তলায় কিছুই পরলনা। কেবল দেনা দেয়া হয়েছে কিন্তু এখনও ঘরের চালে টিন ওঠেনি। হালের বলদ না হয় নাই কিনল কিন্তু একটা দুধের গাভী না কিনলে কেমনে হয়? বাবা মা সারা জীবন দুধ খেয়েছে কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে যখন গাভী বিক্রি করা হয়েছে তার পরে আর কোনদিন দুধ কিনে খেয়েছে বলে মনে হয়না। তাই আলাল সিদ্ধান্ত নিল আগামী ২ মাসের বেতনের টাকা একত্র করে পাঠিয়ে একটা গাভী কিনতে বলবে।

আলাল যখন গাভী কেনার চিন্তায় বিভোর তখন হঠাৎ করে বাড়ি থেকে চিঠি আসল, আলালীর বিবাহের কথা চলছে। ছেলে ঢাকায় চাকুরী করে। প্রস্তাবটা অবশ্য জয়নালই এনেছে। ছেলে ভালো, বাড়ির সবারই পছন্দ হয়েছে। আলালীকেও তাদের পছন্দ হয়েছে। তারা অনুষ্ঠান করেই আলালীকে নিতে চায়। ছেলে, পরিবারের বড় আবার আলালীও তাদের পরিবারের বড় মেয়ে। দুই পরিবারেরই দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রথম বিবাহ, তাই সামর্থ থাক বা না থাক জাকজমকের সাথেই বিবাহের কার্য সম্পাদন করতে হবে! আলালকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা আর একসেট গহনা পাঠাতে বলেছে।

বিগত দুইটা বছর মা-বাবা, ভাই-বোনের মায়া ছেড়ে প্রবাসে আলাল কত কষ্টইনা করেছে। যে দশজন সহকর্মী একত্রে এসেছিল তাদের অনেকেই দুই বছেরর কন্ট্রাক্ট শেষে ছুটিতে দেশে গেছে। বাকীরাও যাওয়ার অপেক্ষায় কিন্তু আলাল এখনও ছুটিতে যাওয়া থাক দূরের কথা সে ব্যাপারে চিন্তাও করেতে পারেনি। বোনের বিবাহ বলে কথা, নগদ টাকা আর গহনা মিলিয়ে আলালকে এক লক্ষ টাকার বাজেট করতে হবে। তার মানে আলালকে চোখ বুজে আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে।

আলালীর বিবাহের কাজ শুভেলাভেই শেষ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্‌। শত কষ্টের ভিতরেও আলালের এতটুকুই শান্তনা। দ্রুত দেনা শোধ করে দেশে যাওয়ার প্রস্তুতির জন্য আলাল একটা পার্ট টাইমের কাজ নিয়েছে। সকাল ছয়টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোম্পানীর ডিউটি মাঝখানে এক ঘণ্টা রেষ্ট।

সারা দুনিয়ায় ৮ কর্ম ঘণ্টা হলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোর অনেক কোম্পানীই চালাকি করে ১০ ঘণ্টা কাজ করায়। সারা দিন রেস্ট আওয়ার সহ ১১ ঘণ্টা কাজ করে শরীর যখন শ্রান্ত, ক্লান্ত তখন আলাল ছুটে যায় পার্ট টাইমের কাজ করতে, চলে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত।

আলালীর বিবাহ হয়ে যাওয়ার পর দেশে যাওয়াটা আরো জরুরী হয়ে পরেছে। পরিও আলালীর বয়সি, এবছর এস এস সি পাশ করেছে। কে জানে কখন পরির জন্যও পাত্র এসে হাজির হয়ে যায়। পরি, মাশা’আল্লাহ পরির মতই, তাছাড়া ওদের আর্থীক অবস্থা এবং নাম কামও ভালো, তাই যে কোন বংশীয় শিক্ষিত ছেলেই পরিকে জীবন সাথী হিসেবে পেতে চাইবে। দেরী হলে স্বপ্নের পরি যে অধরাই থেকে যাবে তা আলাল ভাল করেই বুঝতে পারে। অবশ্য ভাবিও কয়েকবার ইংগিত দিয়েছে।

ভাবির বাবা যেরকম এক কথার মানুষ তাতে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলে কেউ হ্রদ করতে পারবেনা।

বিষয়: সাহিত্য

৭০৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384694
১৩ জানুয়ারি ২০১৮ দুপুর ০২:১৬
আবু নাইম লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৫ জানুয়ারি ২০১৮ বিকাল ০৪:৩৪
317286
আবু জারীর লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File