গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ০৭
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ০২:২১:১৭ দুপুর
#গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ০৭
শ্রদ্ধেয় বাবা ও মা,
আমার সালাম নিবেন,
আশা করি, দুলাল, হেলাল, আলালী ও দুলালীকে নিয়ে আপনারা ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ার বরকতে ভালো আছি। দীর্ঘ্য একমাস কাজ করার পর আজ বেতন পেয়েছি। বাংলাদেশী টাকায় ১০,০০০ আর এখানকার হিসেবে ৭০০ রিয়াল। দেশের থেকে আসার সময় জয়নাল ভাইর বৌ আমাকে শাবান, ব্রাশ এবং টুথপেস্ট কিনে দিয়েছিল তাই আগামী দুই মাসের মধ্যে আর ওগুলো কিনতে হবেনা। তাছাড়া পান সিগারেট খাওয়ার অভ্যেসও আমার নাই। খাই কোম্পানীর খাবার। প্রতিদিনই একই খাবার তাই অনেকে সপ্তাহে ২/১ দিন বাজার করে নিজেদের রুচি মত খাবার খায়। কিন্তু আমার কাছে টাকা না থাকায় সেরকম খাবার খেতে পারিনি। দেনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর উপর ভরসা করে কোম্পানীর ক্যাটারিং এর খানা খেয়েই দিন কাটাব।
চিঠির সাথে পুরা টাকাটাই পাঠিয়ে দিলাম। আপনারা দুই জনে ১০০০ টাকার ফল খাবেন, দুলাল, হেলাল, আলালী দুলালীকে ১০০ টাকা করে দিবেন। ২ হাজার টাকা খরচ করে কয়েকজন আলেমকে দাওয়াত করে খাওয়াবেন। ৫,০০০ টাকা জয়নাল ভাইকে দিবেন, তার শ্বশুরের কাছ থেকে নেয়া ১০,০০০ টাকার প্রথাম কিস্তি। সাথে ৫০০ টাকা বেশী দিবেন ভাবির জন্য। সে আসার সময় আমাকে অনেক কিছু কিনে দিয়েছে। হিসাব করলে ৫০০ টাকার বেশীই হবে তবে তাদের সাথে হিসাব করলে হয়ত মনে কষ্ট পাবে। আলালী দুলালী এবং দুলাল হেলালকে আমার স্নেহ ও ভালোবাসা দিবেন। ওদেরকে ঠিক মত লেখা পড়া করতে বলবেন। আজ এই পর্যন্তই, আল্লাহ্ হাফেজ।
আপনাদের স্নেহের আলাল।
দিয়াদ, সৌদি’আরব।
প্রিয়,
ভাই ও ভাবি,
আমার সালাম নিবেন। পরিকেও আমার সালাম দিবেন।
আশা করি ভালোই আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আজ বেতন পেয়েছি তাই চিঠির সাথে বাবার নামে ১০,০০০ টাকার একটা ব্যাংক ড্রাফট পাঠালাম। বাবার চিঠিতে বিস্তারিত লিখেছি। আপনারা ভালো থাকবেন, আমার জন্য দুয়া করবেন।
আজ এ পর্জন্তই
আল্লাহ্ হাফেজ
আপনাদের ছোট ভাই আলালাল।
এক সপ্তাহ আগেই পরিকে নেয়ার জন্য তার বাবা ঢাকায় এসেছে কিন্তু আজ কাল করে পরি আলালের চিঠির অপেক্ষা করছিল। পরির দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আলাল অবশ্যই চিঠিতে তার কথা কিছু লিখবে। পরির কথা যে আলাল কিছু লিখবে তা জয়নাল এবং তার বৌও ধারণা করেছিল। সকলের ধারণাই সত্য হল, কিন্তু তা যে নাম উল্লেখ করে সালামের মধ্যেই সীমিত থাকবে সেটা কেউ ভাবেনি। অবশ্য এর মাধ্যমে আলালের ব্যক্তিত্বই যে ফুটে উঠেছে তা জয়নাল এবং তার বৌ ঠিকই বুঝতে পেরেছে।
- পরি?
- জ্বি দুলাভাই।
- এদিকে আস, তোমার প্রতিক্ষিত রত্ন এসে গেছে। দেখ দেখ আমাদের কথা বাদ দিয়া সব তোমার কথাই লিখেছে।
- দুলাভাই আপনি না?
- আমি না? আমি কি?
- একটা ফাজিলের বংশ ফাজিল।
- আচ্ছা ঠিক আছে, এই যে চিঠিটা ছিড়ে ফেল্লাম।
ছো মেরে অবিশ্বাস্য ভাবে পরি চিঠিটা নিয়ে নিল। যতটা আশা করেছিল ততটা না লিখলেও ৩/৪ লাইনের চিঠিতে যে তার নাম উল্লেখ করেছে তাইবা কম কিসে। তবে দুলাভাইর ফাজলামটার একটা উচিৎ জবাব দিতেই হয়।
নিজের নামটা কেটে দিয়ে পরি চিঠিটা জয়নালের হাতে ফেরত দিল।
- জানতাম আপনারমত আপনার ভাইও একটা...
- একটা কি?
- ফাজিল...
- কই আমার কথাতো কিছুই লিখেনি। আর লিখবেই বা কেন? আমি তার কে? আপু তার ভাবি আর আপনি তার ভাই তাইতো আপনাদের কথাই লিখেছে।
- আচ্ছা আচ্ছা, তুমি তার কিছুইনা না? যখন কিছু একটা করে দিব তখন দেখবা তোমার চিঠিতে আমারদের নাম পর্যন্ত লিখবে না।
- দুলাভাই, ভালো হবেনা কিন্তু।
- তুমিওনা? কি ফাজলামো শুরু করছ। বাদ দাও ওসব। যখন সময় হবে তখন দেখা যাবে। কাল সকালের বাসেই আব্বাকে আর পরিকে বাগের হাটে পাঠিয়ে দিতে হবে। অফিসে যাওয়ার সময় ওদেরকেও বাস স্টান্ডে পৌছে টিকেট কেটে দিয়ে যাবে কিন্তু।
- আরে এত তারা কিসের। থাকনা আরো কয়টা দিন। চিঠির রেশ কাটতে না কাটতেই মহারণী চেল যাবে? তা কি হয়?
- হ্যা। আমার বয়েই গেছেনা, ফাজিল লোকদের বাসায় বেশরমের মত আরো থাকি? আমিতো আরো আগেই যেতাম, আপুই না বলে কয়ে রেখেছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আমার ভুল হয়ে গেছে, ভাবি সাহেবা।
বিষয়: সাহিত্য
৭১২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জনাব এতদেরী করলে ও এত কম লেখা দিলে পাঠক অধৈর্য হায়ে কেটে পড়বে..
পাঠক হারিয়ে ফেলবেন।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন