গল্প বড় ছেলের বড় মেয়েঃ০৬
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ০১:৫৫:১২ দুপুর
#গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ০৬
সবার দেখাদেখি বোর্ডিং পাস নিয়ে আলাল যথারীতি ইমিগ্রেশণ শেষে ফাইনাল চেকিং এর পরে বিমানে আরহণ করল। বিমানটা যখন আকাশে ডানা মেলেছে তখন প্রাণের পানি টুকু যেন ছ্যাঁত করে শুঁকিয়ে গেল! মনের মধ্যে কি যেন খা খা করছে। শরীরটা নেতিয়ে আসছে। রাজ্যের চিন্তা মাথায় এসে ভর করছে। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকার দেনা মাথার উপর চেপে বসেছে।
বিমান বন্দরে সবার সামনে পরি অমন করল কেন? অবশ্য গ্রামের বাড়িতে যখন টাকা সংগ্রহের জন্য গিয়েছিল তখন থেকেই পরি কেমন যেন একটা অধিকার ফলানোর চেষ্টা করছিল! আগ বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকারও ব্যবস্থা করে দিয়েছে! তাহলে আলালী দুলালীর ফাজলামো কি পরি আন্তরিক ভাবেই নিয়েছে? ভাবি অবশ্য শুরু থেকেই আলালকে আদর করে তাই তার কোন আগ্রহ আছে কিনা বুঝা যায়নি।
বিমানটা কখন যে সৌদি’আরবের রাজধানী রিয়াদের কিং খালেদ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌছেছে আলাল তা টেরই পায়নি। পাশের সিটের ভদ্রলোক তাড়া না দিলে হয়ত আলাল বিমানের মধ্যেই রাজ্যের চিন্তা নিয়ে বসে থাকত। সবার সাথে সাথে এখানেও বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ রকল। কোম্পানীর ভিসায় এসেছে তাই রক্ষে। গ্রুপে মোট দশজন সহকর্মী। কোম্পানীর কাছে আগে থেকেই খবর ছিল তাই একজন পাকিস্তানী ড্রাইভার আলালদের নেয়ার জন্য বিমান বন্দরে এসেছে।
আলালদের নিয়ে কোম্পানীর গাড়িটা রাজ পথ দিয়ে শাসা করে এগিয়ে চলছে। ভাষা নাজানার কারণে কারো মুখে কোন কথা নাই। গাড়ি চলছে তো চলছেই। এক সময় শহর ছেড়ে মরুভূমির পথ ধরেছে! দিনের বেলা বলে কেউ ভয় পায়নি তবে একটা দুশ্চিন্তা যে সবার মাঝে ভর করেছে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। মরুভূমির রাস্তা ধরে আধা ঘণ্টা চলার পরে সামনে আর কোন রাস্তা আছে কিনা বুঝা যাচ্ছিলনা তবে একটা পাহাড় স্পষ্ট নজরে আসছিল। ড্রাইভার বলল ‘ডরিয়ে মাৎ, পাহাড়কি বাদই হামারা ক্যাম্প”। জীবনে এই প্রথম আলাল কারও মুখ থেকে উর্দূ শুনল। বাঙালীরা ১৯৫২ সালে কেন যে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিল তা আলালের কাছে এই প্রথম স্পষ্ট হল।
কোন রকম রাতটা পার করে পরের দিন সবাই অফিসে গিয়ে হাজির হল। হায় আল্লাহ্! কারো মুখেই বাংলা ভাষা নাই। ম্যানেজার, সুপারভাইজার, ইঞ্জনিয়ার, ফোরম্যান, ড্রাহভার একেক জনের এক এক ভাষা! নবাগত ১০ জন সহকর্মীই কেবল বাঙালী তাও আবার এক একজন এক এক জেলার। ভিণ দেশী পাকিস্তানী ড্রাইভারের কথার মধ্যে ‘পাহাড়’ শব্দটা বাংলায় ছিল কিন্তু স্বদেশী হওয়ার পরেও চিটাগাং আর সিলেটি সহকর্মীদের কথার মধ্যে শত চেষ্টা করেও আলাল কোন বাংলা শব্দ খুজে পেলনা!
বিদেশীদের সাথেতো বটেই চট্টগ্রাম আর সিলেটি সহকর্মীদের সাথেও আলাকে আকারে ইংগিতে কথা বলতে হয়। আলাল পাক্কা ওয়েল্ডার কিন্তু ভাষা না জানার কারণে কাজের আগামাথা কিছুই বুঝে না। তার পরেও অনুমানে যা কিছু করে তাতে তেমন কোন ভুল হয়না। বাকীরা কোন রকম কাজ শিখে এসেছে তাই তারা কোন কাজই করতে পারছেনা। ফলে দশ হাজার টাকা বেতনের কথা থাকলেও আলাল বাদে বাকী নয় জনের বেতণ কমিয়ে ৭ হাজার টাকা করা হয়েছে।
দিন যায় রাত যায় আলাল মাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকে। মাস শেষে আজ প্রথম বেতন পেয়েছে। সৌদি বাদশাহ ফাহাদ বিন আব্দুল আযীজের ছবি সম্বলিত একশত রিয়ালের ৭ টি নোট মানে সাতশত রিয়াল। টাকা গুলো হাতে নিয়ে আলাল বুকে চেপে ধরল। হায়রে টাকা? তোর জন্য, মা-বাপ, ভাই-বোন, জয়নাল ভাই-ভাবিকে ছেড়ে আজ এত দূরে। দুফোটা পানি গণ্ডদেশ বেয়ে নিচে নেমে এল।
আর দেরী না করে সাথে সাথে রুমে গিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে বাড়ির সবার কাছেই চিঠি লিখলতে বসে গলে।
বিষয়: সাহিত্য
৮৭৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে অপেক্ষায় রাখা ভাল না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন