গল্প: বড় ছেলের বড় মেয়েঃ০৫
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ০১:৫১:০৪ দুপুর
#গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ০৫
ভিতর ঘরে আলালী দুলালীর ফাজলামো বারান্দায় বসে আলাল যে টের পায়নি তা নয়, কিন্তু লজ্জায় মুখ খুলতে না পেরে চুপচাপ বোবা হয়ে বাবা আর জয়নাল ভাইর অপেক্ষা করছিল। শেষ পর্যন্ত তারা এল কিন্তু মলিন মুখ দেখে আলালের বুঝতে বাকী রইলনা যে তাদের অভিজান সফল হয়নি।
আলালকে খাবার সাজিয়ে বসে থাকতে দেখে তারাও কোন কথা না বলে খাবার খেতে বসে পরল।
খাবার শেষে জয়নালই মুখ খুল্ল। জমি বন্ধক রেখে ২০ হাজার টাকার চেয়ে একটা টাকাও কেউ বেশী দিতে রাজি হচ্ছে না, অথচ টাকা দরকার ৩০ হাজার। জয়নালের কথা শুনে ঘরের ভিতর একটা নিস্তব্ধতা নেমে এল, আলালের মায়ের তো আর কোন গহনা নাই যা বিক্রি করে ২/১ হাজার টাকাও জোগাড় করতে পারেবে? ভাইয়ের কাছেইবা চায় কোন মুখে, ভাতিজা আর ভাতিজা বৌ যেখানে ২০ হাজার টাকার দিয়িত্ব নিয়েছে। সবাইকে অবাক করে পরি বলল, ‘আব্বুকে বললে হয়ত সে ১০ হাজার টাকা জোগাড় করে দিতে পারবে”।
মেয়েদের উপস্থিত বুদ্ধি একটু বেশী আর ছোটরা কিছুটা ঠোঁট কাটাও হয়। পরির কথা মাটিতে পরতে না পরতেই, আলালী দুলালী বলে ফেল্ল, ‘আমরা কিন্তু যৌতুক নিবনা, ধার দিলে দিতে পার, ভাইয়া বিদেশ যেতে পারলে প্রথমে তোমাদের দেনা পরিষোধ করার পরেই অন্য কাজ হবে মনে রেখ কিন্তু”।
সবাই চুপ করে থাকলেও জয়নাল হো হো করে হেসে দিয়ে বলল, ‘ফুফা, টাকার যোগাড় হয়ে গেছে, চলেন আব্দুর রহমান হাওলাদারের কাছে জমি বন্ধক দিয়েই ২০ হাজার টাকা নিয়ে আসি।
পৌশের শেষ আর মাঘের শুরুর যে শীতে বাঘও পালায় সেই শীতের মধ্যরাত, সাউদিয়ার দৈত্তাকৃতির বিমানাটা জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মার্কে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নীল তিমি যেভাবে হা করে ছোট মাছ গুলোকে গিলে খায় ঠিক একই ভাবে একের পর এক যাত্রীরূপি মানুষ গুলোকে গাট্টি বোস্কা সহ গিলে খাচ্ছিল! আলালকে বিদায় জানানোর জন্য তার বাবা, মেঝ ভাই দুলাল, ফুফাত ভাই জয়নাল, জয়নালের বৌ এবং জয়নালের শ্যালিকা পরিও বিমান বন্দরে উপস্থিত। আলালী দুলালীও আসতে চেয়েছিল কিন্তু ঢাকায় এসে এতগুলো লোক থাকবে কোথায় সেই ভেবে ওরা জাহাজ ঘাটেই প্রাণ প্রিয় ভাইকে বিদায় জানিয়েছিল।
পাসপোর্ট-টিকেটের ছোট্ট হতা ব্যাগটা শক্ত করে ধরে আলাল, বিমান বন্দরের ভিতরে প্রবেশের আগে যথাক্রমে দুলাল, জয়নাল এবং সবার শেষে বাবার সাথে কোলাকুলি করেছিল। দুলালের সাথে কোলাকুলির সময়ই চোখ দুটি বিস্ফারিত হচ্ছিল তাই জয়নালের বুকের মধ্যে নিজেকে সপে দেয়ার সাথে সাথেই বুকের ভিতরকার বরফ গলে গিয়েছিল আর যখন পিতার বুকে আশ্রয় নিয়েছ তখন চোখের লোনা জলে বুক ভাসিয়েছে। চোখে এত রাজ্যের পানি যে কোথা থেকে এসেছে আল্লাহ্ই ভালো জানেন।
বাপ ভাইর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দূরে দাড়িয়ে থাকা ভাবির কাছে যেতেই এক ভিন্ন পরিস্থিতির মুখমুখি হল আলাল। সবাইকে অভাক করে একটা গগণবিদারী চিৎকার দিয়ে বসল পরি! আলালও আবেগ ধরে রাখতে পারেনি তবে পুরুষ মানুষ বলে কথা, তার পর বাবা এবং ছোট ভাই সাথে তাই বহু কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কোনভাবে আল্লাহ্ হাফেজ বলে বিমান বন্দরের মধ্যে ঢুকে পরল।
বিষয়: সাহিত্য
৭৬৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
সব পর্ব এক সাথে পড়লাম,
সত্যিই আপনার গল্প প্রশংসার দাবী রাখে।
বাকি পর্বগুলো অপেক্ষায় রইলাম......
শুকরিয়া।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে উতসাহীত করার জন্য।
তবে অপেক্ষা করা বড়ই কঠিন।
আশাকরি পাঠকদের আর কষ্ট দিবেন না।
সুন্দর এবং উৎসাহ ব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন