ধারাবাহিক গল্পঃ০৩ বড় ছেলের বড় মেয়ে
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০১:১৩:২৯ দুপুর
ধারাবাহিক গল্পঃ০৩ বড় ছেলের বড় মেয়ে
সদর ঘাটে জাহাজটা যখন ভিরল, তখন সকাল সাতটা। জয়নাল অবশ্য এশা এবং ফজরের নামাযটা জাহাজে বসেই আদায় করে নিয়েছে। আলালও আজ ভাইয়ের সাথে নামায পড়েছে।
যাত্রা পথের দুয়া আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় তাই তারা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আগামির দিনগুল যেন তাদের সুন্দর ভাবে কাটে সেই প্রার্থনা করেছে।
মেসে এসে গা’গোসল দিয়ে হোটেলে গিয়ে ডিম পোজ আর গরম গরম পরোটা দিয়ে দু’ভাই নাস্তা করল। জীবনে এই প্রথম এমন সুন্দর খাদ্য দিয়ে নাস্তা করল তাই তৃপ্তিতে অন্তরটা ভরে গেল বটে, কিন্তু একটু পরেই আলালের মুখটা মলিন হয়ে এল!
-কিরে আলাল নাস্তা ভালো হয়নি?
-ভাই, এমন সুন্দর এবং তৃপ্তিদায়ক খাবার জীবনে এই প্রথম খেলাম। কিন্তু আজ সকালে আমার মা-বাবা, ভাই বোনেরা কিছু খেতে পেরেছে কিনা জানিনা।
-ভাবিসনা, তোকে কোন কাজে লাগাতে পারলে তোর বাবা-মা, ভাই-বোন এর চেয়েও ভালো খাবার খেতে পারবে ইনশা’আল্লাহ।
হ্যা, জয়নাল সিটি ওয়েল মিলের ম্যানেজারকে বলে আলালকে মেইন্টেনেন্স ডিপার্টমেন্টে ফুট-ফরমায়েশ খাটার একটা কাজ জুটিয়ে দিয়েছে।
সেদিন থেকেই আলালের জীবন যুদ্ধ শুরু। তার পর থেকে তার ভাই-বোন, বাবা-মাকে আর কোনদিন খাবারের জন্য কষ্ট করতে হয়নি।
আলাল এখন বিশ বছরের তরুণ। এত দিনে ওয়েল্ডিং এর কাজটাও রপ্ত করে ফেলেছে। মিলেও মোটামুটি খারাপ বেতন পায়না। তবে, তাদিয়ে সংসার চললেও হালের বলদ, দুধের গাভী কেনার পয়সা জমাতে পারেনি, এমনকি ঘরের চালে টিনের ছাউনিও দিতে পারেনি। আলালের এখন এটাই চিন্তা, কিভাবে হালের বলদ, দুধের গাভী আর ঘরের চালের জন্য টিন কিনবে?
একদিন সন্ধ্যায় জয়নাল আলালের মেসে এল।
-কিরে আলাল বিদেশ যাবি নাকি?
- বিদেশ?
-নে বিজ্ঞাপনটা দেখ।
সৌদি’আরবের একটা কনশট্রাকশান কোম্পানিতে ওয়েল্ডার নিবে। বেতন দশ হাজার টাকা, থাকা খাওয়া এবং দু’বছর পর আপ-ডাউন টিকেট সহ দুই মাসের ছুটি।
আলাল যেন মনে মনে এমনই একটা কিছু খুঁজছিল। পরদিন সকালেই দু’ভাই মিলে গুলশানের হামিদ ওভার্সিজে গেল। সৌদি’আরব থেকে আগত ডেলিগেটের কাছে ইন্টার্ভিউ দিলে এক নম্বরেই আলাল সেলেক্ট হয়ে গেল।
আলালের খুশির যেন সীমা পরিসীমা নাই। কিন্তু সে খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলনা। জয়নাল বলল, সবই ঠিক আছে। কিন্তু প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। শুনে আলালের হাত থেকে যেন স্বপ্নের পাখিটা উড়ে গেল!
-৫০ হাজার টাকা?
-চিন্তা করিস না, দেখি কি করা যায়?
চিন্তা করিসনা বললেই তো আর নিশ্চিন্ত হওয়া যায়না। সম্ভাবনাটা উঁকি দিয়েই ম্লান হয়ে যাচ্ছে দেখে আলালের মুখ থেকে কথাই বেরুচ্ছিলনা।
রাত্রে জয়নালের বাসায় দু’ভাই একটা পরিকল্পনা বৈঠকে বসল। সিদ্ধান্ত হল জয়নাল দিবে ২০ হাজার টাকা, আর আলালদের ধানি জমি যতটুকু ছিল তা বন্ধক দিয়ে এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের বলে কয়ে ৩০ হাজার টাকা জোগার করা হবে। মাঝখানে জয়নালের বৌ বলল, “চিন্তা করোনা আলাল, দরকার হলে আমার গহনা গুলো তোমাকে দিয়ে দিব।
জয়নাল ও তার বৌ এর আশ্বাসে আলাল হাঁফ ছেড়ে বাচল বটে কিন্তু বিষয়টা অত সহজ না। পরের দিন থেকে শুরু হল নতুন অভিজান। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবা-মার সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করল।
আলালের মা কিছু না বললেও বাবা রাজি হতে চাইলেন না। রাজি হবেন কি করে? চারিদিকে যা দিন কাল পরেছে তাতে কাকে বিশ্বাস করবেন? বিষয়টা নিয়ে যখন কোন সুরাহা হচ্ছিলনা তখন আবারও জয়নালেরই ডাক পরল।
বিষয়: সাহিত্য
৭৯৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন