মুখশ নিয়ে যত কথাঃ
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ০২:৩৫:৫৬ দুপুর
মুখশ নিয়ে যত কথাঃ
যে যেমন তার তেমনই চলা উচিৎ তাতে অন্তত অন্যদের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর তা প্রকাশ পেলে নিজের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আর যেন এমন কাজ না হয় সে ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
চার্চের কিছু কিছু ফাদার, মন্দিরের কিছু পুরহিত, স্কুল কলেজের কিছু শিক্ষক, মাদ্রাসার কিছু মোদাররেস এমনকি মসজিদের কিছু ইমামের চরিত্রের যে অন্ধকার দিকগুলো মাঝে মধ্য প্রকাশ পেয়ে যায় সে সম্পর্কে যদি অভিভাবকদের আগেই ধারণা থাকত তাহলে নিজেদের শিশুদের তাদের কাছে রেখে এসে বিপদে ফেলতন।
কোন দুশ্চরিত্রের যুবক যুবতিকে মুখশ পরিয়ে চরিত্রবান সাজালে হয়ত তাদের বিয়ে হবে কিন্তু প্রতিপক্ষ পক্ষ প্রতারিত হবে এবং শেষপর্যন্ত বিয়ে নাও টিকতে পারে, আর মাঝখানে যদি একটা সন্তান হয় তাহলে দুই পরিবারের সাথে একটা নিষ্পাপ সন্তানও বিপদে পরবে।
গিবত করা অবশ্যই গর্হিত কাজ তবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যদি কারো চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় তাহলে যে জানে তার উচিৎ ঐ ব্যক্তির মুখশ উন্মচন করে তার আসল চরিত্র প্রকাশ করা।
উলঙ্গ থাকাকে সমাজ এলাউ করেনা তবে নিজের সহজাত বৈশিষ্টকে লুকিয়ে রেখে মেকিভাব ধারণ করাও কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। আখেরে তাতে হীতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভাবুনতো যেসব মেয়ের সাথে আমার ভাব ছিল তা যদি আমি লুকিয়ে রাখি আর কোননা কোন ভাবে আমার বৌ তা জেনে ফেলে তাহলে কি হবে? তারচেয়ে বরং এটাইকি ভালোনা যে আমি আসল ঘটনা আগেই জানিয়ে তাকে জানিয়ে দেই? তাতে হয়ত সে মনে কষ্ট পাবে তবে পরক্ষনে আমার ব্যাপারে সে সঠিক সদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং আমাকে সঠিক পথে রাখার কৌশল খুজে পাবে।
আমার মেজাজ সহজেই বিগ্রে যায়, ছাত্রজীবনে হাত থাকতে মুখ ব্যবহার করব কেন এই ফর্মূলায় চলতাম। ইসলামী সংগঠন করার পরেও অন্যায় দেখলে নিজেকে ১০০% নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনা। এজন্য আমার বন্ধু বান্ধবের এমনকি নিজের স্ত্রীকেও বলে দিয়েছি যে আমার মেজাজ বিগ্রে গেলে সবাই চুপ থাকে। যখন মাথা ঠাণ্ডা হবে তখন যেন আমার ভুল ধরিয়ে দেয়। আলহামদুলিল্লাহ ফল পেয়েছি হাতেনাতে।
ডাক্তারের কাছে রোগীকে রোগের কথা প্রকাশ করতে হয় তা যত গোপনীয়ই হোকনা কেন? তা না করলে রোগ নির্নয় করে সঠিক চিকিৎসা করা যায়না।
টিন এজ মেয়ে বা ছেলে মুখশের আড়ালে প্রেম না করে বাবা মায়ের সাথে নিজেদের ফিলিংস শেয়ার করতে পারে তাহলে বাবা মা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কোন টিচারের আচরণ যদি আপত্তিকর হয় তা বাবা মাকে জানাতে পারলে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সমূহ বিপদ থেকে নিজেদের সন্তানদের বাচাতে পারে।
আমি আমার সন্তানদের বলে দিয়েছি তারা যেন সব বিষয়েই আমাদের সাথে শেয়ার করে। কিছু বাজে অভিজ্ঞতা আছে যা অভিভাকদের না জানিয়ে নিজে নিজে সলভ করতে গিয়ে অনেককেই প্রতারিত হতে দেখা গেছে।
এক সাহাবি বাজারে কোন এক মেয়েকে চুমু দিয়ে ফেলেছিল এবং তিনি তা রাসূল (সঃ) এর কাছে প্রকাশ করে ছিলেন।
এক মহিলা জেনা কারেছিল এবং রাসূল (সঃ) এর কাছে এসে নিজের দোষ স্বীকার করে বিচার চেয়েছিল। রাসূল (সঃ) বার বার মুখ ঘুড়িয়ে নিয়েছিলেন কিন্তু মহিলা ছিল নাছর বান্দি। শেষ পর্যন্ত রাসূল (সঃ) সেই মহিলার বিচার করেছিলেন। মহিলা ইচ্ছা করলে ঘটনা গোপন রেখে তওবাও করতে পারতেন। নিজের অন্যায়কে মুখুশে না ঢেকে নিজের বিচার চাওয়ার ঘটনা দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
আমার দাদির কাছে শোনা একটা গল্প বলবঃ আমাদের এলাকায় একজন মুখশধারী লোক ছিল সে দূরবর্তি এক এলাকায় গিয়েছিল মাদ্রাসার নাম করে ধান কালেকশানে। ঐ এলাকায় তেমন আলেম ওলামা ছিলনা। তার পোশাক দেখে লোকেরা তাকে আলেম ভেবে নামাজের ইমামতি করতে দিলে সে মুসুল্লিদের সেজদায় রেখে নাকি পালিয়েছিল।
আমি মাঝে মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে জিন্স প্যান্ট আর টি শার্ট পরে যাই। কেউ কেউ সমালোচনা করে তা বুঝতে পারি। এক প্রগ্রামে আমি ইচ্ছা করেই টি-শার্ট এবং জিন্স পরে গিয়েছিলাম এবং গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আলোচনার ফাকে আমার পোশাকের বিষয়েও কথা বলেছি।
অফিসে সাধারণত আমি এমন পোশাক পরিধান করি। যারা আমাকে আদর্শ ভাবে তারা যদি আমাকো কালে ভদ্রে জিন্স প্যান্ট আর টি শার্ট পরা দেখে তাহলে হয়ত মনে কষ্ট পাবে তাই যখন নিজের অবস্থান কিলিয়ার করলাম তখন থেকে আর কেউ আমারদিকে বাকা চোখে তাকায়নি, অন্তত ঐ প্রগারমে যারা উপস্থিত ছিল এবং যারা বিষয়টা জানতে পেরেছে।
এ থেকে আমরা এতটুকু বুঝতে পারি যে কেউ চাইলে নিযের সহজাত বৈশিষ্ট প্রকাশ করতে পারে আবার না চাইলে নাও পারে। বিষয়টা একান্তই নিজস্ব। আমি প্রকাশের পক্ষে।
হয়ত আমার যুক্তির পাল্টা যুক্তিও কেউ কেউ দিবেন। তবে দয়া করে এই যুক্তি কেউ দিবেন না যে আমরা তাহলে আমাদের লজ্জা স্থানকে মুখশ পরিয়ে ঢেকে রাখি কেন?
বিষয়: বিবিধ
৭৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন