কিছু মনের রাখবার পারিনা। আসলেই কি তাই?
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১১ নভেম্বর, ২০১৭, ০২:৪২:৪৯ দুপুর
কিছু মনের রাখবার পারিনা। আসলেই কি তাই?
নিয়মিত দাওয়াতি কাজের অংশ হিসেবে গতকাল এশার পরে একটা মেসে গিয়েছিলাম দাওয়াতি কাজে। মেসের ৪ সদস্য আর আমি মিলে মোট পাঁচ জন।
সবাই মোটামুটি নবাগত। তাদের প্রবাসের বয়স ৩ থেকে ৭ মাস আর বয়স আনুমানিক ৪৫, ২৮, ২২,২০ আর আমার বয়স নাহয় নাই বললাম তবে প্রবাসের বয়স ১৬ বছর। তারা যথা ক্রমে ড্রাইভার ৫ম শ্রেনী, কৃষক ৫ম শ্রেনী, কওমী ৯বম এবং এসএসসি।
৪৫ বছর বয়ষ্ক ড্রাইভার ভদ্রলোক দেশে প্রাইভেট ড্রাইভিং জব করতেন। ধুমপানেও প্টু আর ফরিদপুরের লোক হিসেবে কিছুটা চেতনাটেতনাও আছে।
শুরু থেকেই নামাযের দাওয়াত দিয়ে আসছিলাম এবং মাঝে মাঝে নামায পড়াতেও সক্ষম হয়েছি। গতকাল অবশ্য এশার নামায তখনো পড়েনি যদিও আমি সহ আরও দুইজন এশার নামায জামায়াতে আদায় করেই এসেছিলাম, তবে ওয়াদা করেছে ঘুমানোর আগেই নামায পড়বে।
তাদের নিয়ে বৈঠকে বসে ওজুর নিয়ম থেকে শুরু করে সূরা ফাতেহার তেলাওয়াত শুনেছি। আশ্চর্যের বিষয় হল তারা চারজনই আমার চেয়েও ভালো তেলাওয়াত করেছে।
৪৫ বয়ষ্ক ড্রাইভার ভদ্রলোক যে কিনা কথায় কথায় বলে কিছু মনে রাখবার পারিনা তার তেলাওয়াতই সবচেয়ে ভালো হয়েছে, এমনকি সে আমারর একটা ভুলও ধরেছে!
তিনি যে গল্প শুনালেন তা আমাকে বিমোহিত করেছেঃ
জীবনের ৪২ বছর নামায রোযার ধারও ধারেনি, কালে ভদ্রে ঠেকায় পরে নামায পড়লেও জাস্ট মসজিদে গিয়ে সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলে আসত। তার মেয়ে অনার্সে ভর্তিহলে ধর্ম কর্মের ব্যাপারে কিছুটা মনযোগি হয়ে উঠে এবং বাবাকেও উতসাহিত করতে থাকে।
দুঃখের বিষয় হল মেয়ে যেমনি সূরা কেরাত পারেনা তেমনি তার বাবাও। মেয়ের জোরাজুরিতে বাবা বাধ্য হয়েই সূরা কেরাত শেখার জন্য একজন হুজুর ঠিক করেন এবং বাবা মেয়ে একত্রে সেই হুজুরের কাছে ২২টা সূরা সহীহ ভাবে মুখস্ত করেন গত তিন বছর আগে!
চেষ্টা এবং আন্তরিকতা থাকলে যে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে এটা তার একটা অনন্য দৃষ্টান্ত।
কিছু নাকি মনে রাখবার পারেননা এমন প্রশ্নের জবাবে, 'সত্যিই কিছু মনে রাখবার পারিনা তবে সূরা গুলো ভালোই মনে আছে'!
এই মনে থাকা আল্লাহর করুণা ছাড়া আর কিছুইনা। আশা করি উপযুক্ত পরিবেশ পেলে সিগারেট ছারবেন এবং নিয়মিত নামাজিও হবেন। আমরা যারা নামায এবং ইকামতে দীনের গুরুত্ব বুঝি তাদের উচিৎ দীনের এই দাওয়াত সবার কাছে সহীহ ভাবে পৌছে দেয়া। দাওয়াতি কাজের জন্য শায়খ, মাদানী, মুফতি মওলানা হওয়া জরুরী নয়। দীন সম্পর্কে একটা মাত্র বাক্য জানলেও তা অন্যের কাছে পৌছি দেয়া প্রতিটা মুসলিম নরনারীর জন্য জরুরী।
﴿وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ أُولَٰئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ﴾
(সূরা তওবাঃ৭১) মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী , এরা সবাই পরষ্পরের বন্ধু ও সহযোগী৷ এরা ভাল কাজের হুকুম দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবংআল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্র করে। এরা এমন লোক যাদের ওপর আল্লাহর রহমত নাযিল হবেই৷ অবশ্যি আল্লাহ সবার ওপর পরাক্রমশালি এবং জ্ঞানী ও বিজ্ঞ৷)
আমাদের আমল আখলাকে কুর'আন আর সহীহ হাদীস বিরোধী যদি কিছু থেকে থাকে তা পরিহার করা এবং কুর'আন হাদীসের আলোকে নিজেদের চরিত্রকে ঢেলে সাজাতে হবে। আর এটাই আমাদের তিন দফা দোয়াতের এক দফা। আল্লাহ আমাদের দাওয়াতি কাজকে কিয়ামত পর্যন্ত জারি রাখুন এবং সর্ব সাধারণের কাছে দীনের এই দাওয়াত পৌছে দেয়ার তাওফিক দিন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
৮২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন