অজ্ঞতা মুসলিম উম্মাহর ফের্কাবাজির অন্যতম কারণ।
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০২ নভেম্বর, ২০১৭, ০৩:০৫:৫১ দুপুর
অজ্ঞতা মুসলিম উম্মাহর ফের্কাবাজির অন্যতম কারণ।
হীরের হারের গল্পটা পড়ে আমার তাই মনে হয়েছে। সংগৃহীত গল্পটা লেখার শেষের দিকে উল্লেখ করেছি।
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ
সূরা আলাকঃ০১) পড়ো, তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ তা'য়ালার প্রথম আদেশই 'পড়' অথচ আজ মুসলিম উম্মাহই পড়া লেখার দিক দিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে!
আবার যারা পড়ে তারা জ্ঞানের মূল উৎস বাদ দিয়ে শাখা প্রশাখা নিয়ে পড়ে, তাই বিবাদ বিসম্বাদ বাড়ে।
যাকে দেখতে নারী তার চলন বাকা অমনি শুরু হয়ে যায় অন্যের সমালোচনা, অথচ কেউ কানে হাত দিয়ে দেখেনা আসলেই কান চিলে নিয়ে গেছে কিনা?
যাদেরকে নিয়ে সমালোচনা, তাদেরকে জানার জন্য তাদের সারা জীবনের কর্ম এবং লেখনি ও মতামত নিয়ে জ্ঞানের মূল উৎসের সাথে মিলিয়ে নিজের ধারণা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
হোকনা তিনি আমিরে মুয়াবিয়া(রাঃ), তদিয় পুত্র ইয়াজিদ, সাইয়েদ মওদূদী বা আল্লামি শফি অথবা ডাঃ জাকির নায়েক বা আল্লামা সাঈদী?
আমরা কজন সেটা করি? বরং এনার সম্পর্কে উনি কি বললেন আর ওনার সম্পর্কে ইনি কি বললেন আমরা অনেকে তা নিয়েই ব্যস্ত থাকি!
সাঈদী সাহেবের বক্তব্যের সমালোচনা করে যে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে এখন মূল বক্তব্যের সাথে মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে যে তার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশের উপর সমালোচনা করায় সমালোচনাকারীর অনেক কথাই ভুল প্রমাণীত হয়েছে। অতি আবেগী যেসব ভাই একজন সম্মানিত শায়খকে দিয়ে এ কাজ করিয়ে জাতির সামনে হেয় করলেন তারা এর কি জবাব দিবেন?
হিল্লা বিবাহ সম্পর্কে সমালোচনা কারী শায়খ এবং সাঈদী সাহেবের মতামত একই অথচ একজন প্রশ্ন কারীর প্রশ্নকে সাঈদী সাহেবের বক্তব্য মনে করে এমন সমালোচনা করলেন যা তোহমতের পর্যায়ে পরে! এ দায় কে নিবেন? সমালোচনা কারী শায়খ নাকি তার গুণমুগ্ধ অনুরাগী যে এই খণ্ডিত বক্তব্য শায়খের নজরে এনেছেন?
আল্লাহ তা'য়ালা রব্বুল আ'লামিন আমাদেরকে যে জ্ঞান দিয়েছে সেই জ্ঞান কাজে লাগাইনা, জ্ঞানের যে উৎস আছে তার ধারে কাছেও যাইনা অথচ সমানে তর্ক করি!
আমরা যারা নিজেদের পাণ্ডিত্ব জাহির করতে চেষ্টা করি তারা কি কুর'আনুল কারিমের পুর তাফসির পড়েছি? তারাকি হাদীস গ্রন্থগুলো পড়েছি? ফুকাহা এবং মনিষীদের সব লেখা পড়েছি? যার সমালোচনা করছি তার লেখা কি নিজে পড়েছি? অন্তত যে বাক্যটা বা বক্তব্যটা নিয়ে সমালোচনা করছি সেই কেতাবটা কি পুরা পড়েছি? সেই বক্তব্যটা কি নিজের কানে পুরাপুরি শুনেছি?
উত্তর যদি না হয় তাহলে আসুন নিন্মের গল্পটা অন্তত একবার পড়ে দেখিঃ
এক স্বর্ণকারের মৃত্যুর পর তার পরিবারটা বেশ সংকটে পড়ে গেল। খাদ্য-বস্ত্রে দেখা দিল চরম অভাব।
স্বর্ণকারের বিধবা স্ত্রী তার বড় ছেলেকে একটা হীরের হার দিয়ে বললোঃ এটা তোর কাকুর দোকানে নিয়ে যা, বলবি যে এটা বেচে কিছু টাকা দিতে।
ছেলেটা হারটি নিয়ে কাকুর কাছে গেল।
কাকু হারটা ভালো করে পরীক্ষা করে বললোঃ বেটা, তোমার মাকে গিয়ে বলবে যে এখন বাজার খুবই মন্দা, কয়েকদিন পর বিক্রি করলে ভাল দাম পাওয়া যাবে।
কাকু কিছু টাকা ছেলেটিকে দিয়ে বললেনঃ
আপাতত এটা নিয়ে যাও আর কাল থেকে তুমি প্রতিদিন দোকানে আসবে আমি কোন ১দিন ভাল খদ্দোর পেলেই যেন তুমি দৌড়ে হার নিয়ে আসতে পার তাই সারাদিন থাকবে।
পরের দিন থেকে ছেলেটা রোজ দোকানে যেতে লাগলো। সময়ের সাথে সাথে সেখানে সোনা-রুপা-হীরে কাজ শিখতে আরম্ভ করলো।
ভাল শিক্ষার ফলে অল্প দিনেই খুব নামি জহুরত বনে গেল। দূর দূরান্ত থেকে লোক তার কাছে সোনাদানা বানাতে ও পরীক্ষা করাতে আসত। খুবই প্রসংশীত হচ্ছিল তার কাজ।
একদিন ছেলেটির কাকু বললোঃ তোমার মাকে গিয়ে বলবে যে এখন বাজারের অবস্থা বেশ ভালো, তাই সেই হারটা যেন তোমার হাতে দিয়ে দেন। এখন এটা বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।
ছেলেটি ঘরে গিয়ে মায়ের কাছ থেকে হারটি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখলো যে এটা একটা নকল হীরের হার। তাই সে হারটা আর কাকুর কাছে নিয়ে যায় নি।
কাকু জিজ্ঞেস করলোঃ হারটি আনো নি?
ছেলেটি বললোঃ না কাকু, পরীক্ষা করে দেখলাম এটা একটা নকল হার।
তখন কাকু বললোঃ তুমি যেদিন আমার কাছে হারটি প্রথম নিয়ে এসেছিলে সেদিন আমি দেখেই বুঝে নিয়েছিলাম যে এটা নকল, কিন্তু তখন যদি আমি তোমাকে এই কথাটা বলে দিতাম, তাহলে তোমরা হয়তো ভাবতে যে আজ আমাদের মন্দ সময় বলেই কাকু আমাদের আসল জিনিষকে নকল বলছে। আজ যখন এ ব্যাপারে তোমার পুরো জ্ঞান হয়ে গেছে, তখন তুমি নিজেই বলছো এটা নকল হার।
এই দুনিয়াতে প্রকৃত জ্ঞান ছাড়া তুমি যা কিছু দেখছো...যা কিছু ভাবছো, সবটাই এই হারের মতই নকল, মিথ্যে।
জ্ঞান ছাড়া কোন জিনিসের বিচার সম্ভব নয়। আর এই ভ্রমের শিকার হয়েই অনেক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। আমি সেই সম্পর্কটা নষ্ট হোক তা চাইনা।
বিষয়: বিবিধ
৮৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন