কাঁচা ধানে মই (পর্ব -০৭)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:৫২:৫৪ দুপুর
কাঁচা ধানে মই (পর্ব -০৭)
প্যাদানী খেয়ে ছাত্রটা পড়তে আসছিলনা তবে ছাত্রীটা নিয়মিত পড়তে আসছিল। তার ভাইকে মারার কারণে কিনা জানিনা সে আমার সাথে শত্রুতা শুরু করেছিল। কিছু বললেই সে আমাকে বলত স্যার আপনার দাত এত বড় কেন? আপনি মাথা উচ আর সিনা টান করে হাটেন কেন।
তার বড় ভাইয়েরা বেশ লাম্বা এবং অতিশয় ভদ্র ছিল তাই মাথা নিচু করে হাটত আর আমি মাঝারি গোছের সুঠাম দেহের অধিকারী তাছাড়া সর্বহারা আর আওয়ামী স্বভাবের এবং হাল আমলে সত্যের সৈনিক হওয়ার কারণে সর্বদা সিনা টান করে চলার অভ্যেস। তাদের প্রতিবেশী কলেজ পড়ুয়া এক কিশোরী আমাকে দেখলে প্রায়ই আমার ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলত, ‘তোর স্যার কোন দোকানের চাউল খায় রে?’
দুদিন পর ছাত্র মহদয়কে তার বাবা যাকে আমিও স্যার বলতাম তিনি নিয়ে এসে আমার কাছে মাফ চাওয়ায়ে পড়তে বসিয়ে গিয়েছিলেন। পরে আর কোনদিন সে এমন রিএক্ট করেনি। ৫ম শ্রেণীতে সে ট্যালেন্টপোল বৃত্তি পেলেও ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারেনি। যে ছেলে ফার্স্ট হয়েছে সে তার স্কুলের বিজ্ঞান মিস এর কাছে প্রাইভেট পড়ত। সেই ছেলের প্রাপ্ত নম্বর ছিল আমার ছাত্রর চেয়ে পচিশ কম তাই সে বিজ্ঞানে আমার ছাত্রকে ৬০ এবং তার ছাত্রকে ৮৬ নম্বর দিয়ে এক নম্বরের ব্যবধানে ফার্স্ট বানিয়েছিল। আমার ছাত্র বিষয়টা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি তাই সে পরে ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ্য শ্রেণীতে ভর্তি হয়, অবশ্য তার স্কুলের ফার্স্টবয়ও ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল কিন্তু চান্স পায়নি।
পরীক্ষার পরে তারা শীতের ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিল। তারা দাদা-নানা বাড়িতে বেড়িয়ে এসে বেশ উৎফুল্ল ছিলে। বিশেষ করে ছাত্রীটি। সে তার নানা বাড়িতে গাভির বাচ্চা দেখে এসেতো বায়নাই ধরে বসেছিল যে তাকে একটা গাভির বাচ্চা কিনে দিতে হবে! গাভির বাচ্চার সে যে কি প্রশংসা। সেটা এভাবে লাম্ফায় ওভাবে দৌড়ায় ইত্যাদি। সেটা সম্পর্কে তার উৎসাহের যেন আর শেষ নাই। এক পর্যায়ে সে বাচ্চাটার জন্ম সম্পর্কে এমন একটা প্রশ্ন করে বসল যার জবাব এমন একটা ছোট্ট মেয়েকে তার মাও দিতে পারবে বলে মনে হয়না।
আমি তার শিক্ষক বটে তাই বলে তার সব প্রশ্নের জবাব দেয়া আমার দায়িত্ব না কিন্তু জবাব না দেয়া এবং ভুল জবাব দেয়াও উচিৎ না। একটা জোকস চালু আছে, কোন এক বাচ্চা মেয়ে তার মাকে ‘ধর্ষন’ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তার মা জবাব দিয়েছিল ‘পিটানো’ একদিন তার গৃহ শিক্ষে তাকে পেটালে মেয়েটা কাদতে কাদতে এসে নাকি তার মায়ের শেখানো কথাটাই তাকে বলেছিল আর এ নিয়ে মহা বিপত্তি ঘটেছিল। সব বিবেচনায় সঠিক জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত শালিন ভাষায় সঠিক জবাবই দিয়েছিলাম তবে মনে মনে আল্লাহর নাম জপছিলাম যাতে সে আবার মানব শিশুর জন্মস ম্পর্কে প্রশ্ন করে না বসে? গাভীর বাচ্চারা আল্লাহর ইচ্ছায় গাভীর পেটের মধ্যেই বড় হতে থাকে। যখন হাটা চলার মত বড় হয়ে যায় তখন একদিন গাভীটা যখন প্রস্রাব করে তখন প্রস্রাবের সাথে বাচ্চাটাও বেড়িয়ে আসে।
জানিনা আমার উত্তরটা কতটা সঠিক ছিল, তবে সে উত্তর শুনে বলেছিল, তার মায়ের কাছেও জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু সে নাকি উত্তর দেয়নি। অজানাকে জানতে পেরে তাকে বেশ আনন্দিত লাগছিল কিন্তু কোন নেগেটিভ ফিলিংস কাজ করেছে বলে মনে হয়নি।
আমার সেই ছাত্র ৭ম শ্রেণীতে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হলে ছাত্রীটাকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়িয়েছিলাম। তার প্রতিই আমার একটা স্বর্গীয় অনুরাগ জন্মেছিল। একদিন পড়াতে গিয়ে দেখি তাকে যিনি কুর’আন পড়ান তিনি তখনও পড়াচ্ছেন তাই আমি সোফায় বসেছিলাম। হুজুরের কাছে সে চমৎকার ভাবে কুর’আন পড়ছিল আর এত সুন্দরভাবে ওড়না পরেছিল মনে হচ্ছিল তার চেহারায় স্বর্গীয় একটা দ্যুতি খেলে যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, দৃষ্টি সরাতে পারছিলাম না।
হুজুর চলে গেলে সে আমার কাছে চিরাচরিত নিয়ম মত ফ্রগ পরে পড়তে আসলে আমার যে কি বিরক্ত লাগছিল তা বুঝাতে পারবনা। সেদিনই তাকে বলে দিয়েছিলাম সে যেন হুজুরের কাছে যেভাবে ওড়না পরে পড়তে আসে আমার কেছেও সেভাবেই আসে। তারপর থেকে সেভাবেই আসত। ৫ম শ্রেণীর পর ষষ্ঠ্য শ্রেণীতে উত্তির্ণ হলে নিজে নিজেই বিপদের আশঙ্কা করলাম আর ইসলাম ভাই বললেন সাথী হতে হবে তাই ৫ম শ্রেণীর উপরের ছাত্রীদের পড়ান যাবেনা, পর্দার খেলাপ হতে পারে তাই। আমিও বুঝলাম মানে মানে কেটে পরাই ভালো। তার পর স্কুল ছুটির সময় তেজগাঁও বালিকা বিদ্যলয়ের সামনে দিয়ে কখনও গেলে খেয়াল করতাম তাকে দেখা যায় কিনা, কিন্তু কোনদিন আর দেখা হয়নি। অনেক দিন পর একদিন পত্রিকার পাতায় দেখলাম তার নাম এবং তার বাবার নাম ছাপা হয়েছে। সে ঢাবি থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে মাস্টার্স পাশ করেছে। আলহামদুলিল্লাহ!
পরীক্ষা এবং টিউশুনির কারণে সাংগঠনিক কাজে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল আর এই ফাকে প্রায় একবছরের চেস্টায় যাদের রেডি করেছিলাম তাদের কয়েকজনকে ভংছং বুঝিয়ে সেই নেতা আমার সাথে একটা দূরত্ব তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু ছিনিয়ে নিতে পারেনি কারণ তার কাছে আকৃষ্ট করার জন্য আমাদের বদনাম করা ছাড়া নতুন কিছুই ছিলনা, ফলে তারও কোন লাভ হয়নি বরং যে ছেলেগুলি নামাযি হয়েছিল এবং ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হতে যাচ্ছিল তাদের কয়েকজনই নামাযে অনিয়মিত হয়ে গিয়েছিল! এভাবে শিবির ছুট সেই নেতা আমার কাঁচা ধানে মই দিয়ে দিয়েছিল।
(আপাতত সমাপ্ত, সম্মানিত পাঠকদের অনুমতি পেলে সামনের ঘটনা গুলো লেখার ইচ্ছে আছে যা ৩০-৩৫ পর্বে গিয়ে ঠকতে পারে, তবে সে জন্য সপ্তাখানেকের বিরতি নিতে হবে।)
বিষয়: বিবিধ
৭৮৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন