বাড়াভাতে ছাই (পর্ব -০৫)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২২ জুলাই, ২০১৭, ০১:৪৩:০২ দুপুর

বাড়াভাতে ছাই (পর্ব -০৫)

সময়ের চাকা ঘুড়ে আসরের সময় হয়ে গেল, অমনি চটজলদি ওযু করে মসজিদের দিকে রওয়ানা হয়ে গলির মুখে একটা ফাকা মাঠ ছিল যেখানে আমরা ক্রিকেট খেলতাম সেখানে দেখি ওরা কয়েকজন মিলে দল পাকাচ্ছে।

সবাই সিরাজগঞ্জের, তাদের মধ্যে দুইজনের স্থানীয় বাড়ি মাঠের পাশেই আর একজন আমার ক্লাসমেট এবং সিটি কলেজের ছাত্র, এক বাড়িওয়ালার নাতি।

ওদের দেখে আমার পায়ের নিচ থেকে জমিন সরে যাচ্ছিল। সেদিন আমার পা-দুটো এত ভাড়ি লাগছিল যে পদক্ষেপই ফেলতে পারছিলাম না। এমতাবস্থায় পালানোর মানেই রণে ভঙ্গ দেয়া, বিনা যুদ্ধে পরাজয় মেনে নেয়া আর মার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা, তাই সাহস করে ওদের দিকেই এগিয়ে গেলাম।

ওদের দিকে না গিয়েও আমি সরাসরি মসজিদের দিকে যেতে পারতাম, সেটা করলে হয়ত ওরা ভাবতে পারত আমি ভয় পেয়ে গেছি। ওভার কনফিডেন্স অবশ্য অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়, তার পরেও সাহস না বরং দুসাহসের সাথে এগিয়ে গেলাম।

ওদের কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে সবার সাথে হাত মিলালাম এবং যার সাথে আমার অঘটন ঘটেছে সেই মিজানকে সহ সবাইকে নামাজের জন্য ডাকলাম। এমতাবস্থায় আমার ক্লাসমেট শাহিন, ঘটনা জানতে চাইল। জবাবে বললাম, দেখ শাহীন মিজান আমার বন্ধু সামান্য ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে, আমি সরি বলছি, চল দোস্ত নামাজে যাই’।

বকুল বলল বাদদেতো মিজান, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে এমনটা হয়েই থাকে। ওদের কথায় মিজানও হাত মিলালো এবং ওয়াদা করল মাগরিবের সময় আমার সাথে নামাযে যাবে।

আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ বড় একটা ঝামেলা থেকে বাচিয়ে দিলেন।এটা যে সালামের ফল তা হাতেনাতে পেলাম বটে তবে পুরাপুরি সঙ্কা মুক্ত হতে পারলামনা, তার পুলিশ ভাইর জন্য। নাজানি সে কি করে বসে?

মাগরিবের সময় মিজান আমার সাথে নামাযে গিয়েছিল এবং এশার সময়ও। ঐদিন কেন যেন তার মেঝভাই বাসায় ফেরেনি আর বড়ভাই এসেছে রাত দশটায়। বাসায় এসেই সে তার প্রভাষক বন্ধুর কাছে পূর্বাপর সব শুনে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে। তার ডাক শুনে আমার অবস্থাতো ত্রাহী মধুসূদন!

ভয়ে ভয়ে তার রুমে গেলে সে আমাকে যা বল্লেন তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তার ছোট্ট ভাইকে নাকি একটু শাসন করা দরকার ছিল যা তারা করতে পারেনি কিন্তু আমি করেছি। এজন্য আমাকে সাধুবাদ দিলেন তবে হাতাহাতি করেছি বলে মৃদু বৎসনা করলেন তবে ভবিষ্যতে পড়া বাদ দিয়ে তার ছোট্ট ভাই গান শুনলে যেন আমি তাকে জানাই। অবসর সময় গান শুনতে মনচাইলে যেন আমার অনুমতি নিয়ে শোনে। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর ইচ্ছায় সব ঠিক হয়ে গেল।

পরের দিন দুপুরের পর শুক্রাবাদ বাসস্টান্ডের দিকে যাচ্ছিলাম উদ্দেশ্য ঢাকা কলেজ। কলেজের বিপরীত দিকে বদরদ্দোজা ভবনের পিছনের গলিতে একটা টিউশুনি করতাম। ছাত্র ছিল আমার বন্ধু, সে আমার সাথেই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল, আমি ফার্স্ট ডিভিশান পেলেও সে পাশই করতে পারেনি। তার বড় ভাই তখন ঢাবির আই’আর এর ছাত্র এবং ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সদস্য।

সেই বড়ভাই আমাকেই তার ভাই এবং আমার বন্ধু ও তার ছোট বোন বিসিএসআইআর এর ছাত্রীকে পড়ানর দায়িত্ব দেন। কিছুদিন পর তার বাকদত্তা ও এসএসসি পরীক্ষার্থীকে পড়ানর দায়িত্বও দিয়েছিলেন।

পথিমধ্যে আব্দুল আহাদ ভাই শুক্রাবাদ ইউনিটের দায়িত্বশীল এবং জবির ম্যাথমিটিক্স এর ছাত্র, রাত দশটার পরে একটা প্রগ্রামের দাওয়াত দিলেন। এত রাতে কিসের প্রগ্রাম জানতে চাইলে এরিয়ে গেলেন, বললেন প্রগ্রামস্থলে হাজির হলেই বুঝতে পারব।

আমার বুঝতে আর বাকী রইলনা যে এত রাতে কিসের প্রগ্রাম আর কিসের ট্রেনিং। এতদিন বন্ধুরা যা বলেছিলেন আজকে হয়ত তা বাস্তবে দেখতে পারব। সেদিন আর টিউশুনিতে না গিয়ে মনে মনে শিবিরের গোপন অস্ত্র আর ট্রেনিং দেখার স্বপ্নে বিভোর হয়ে রইলাম।

(চলবে.....................।।)

বিষয়: বিবিধ

৭৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File