বাড়াভাতে ছাই (২য় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৮ জুলাই, ২০১৭, ০২:০৪:১২ দুপুর
বাড়াভাতে ছাই (২য় পর্ব)
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভবত ভুগোলের স্যার মাহাবুবুর রহমান আসেন পশ্চিম রাজাবাজার লাগোয়া সোবহানবাগ এলাকায়, সাথে তার ছোট ভাই, যেকিনা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। প্রথম দেখাতেই সে আমাকে টার্গেট করে কিন্তু সে জানতনা যে আমি কোন বনের বাঘ, আমিও ঘাপটি মেরে থাকি এবং তার মনভব বুঝার চেষ্টা করি।
প্রথমে অবশ্য তাকে আমাদের সংগঠনের লোকই মনে করেছিলাম, কারণ তার চালচলন মোটামুটি আমাদের মতই ছিল। সে একদিন আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায় এবং আপ্যায়ন করে। আপ্যায়নের পরেই সে আমাদের ছাত্র সংগঠন এবং মুরুব্বি সংগঠের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতে থাকে। আমিতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই, কারণ আমাদের দাওয়াতের ধরণ হল পজেটিভ, কারো দোষ বলে লোকদের নিজেদের দিকে ডাকা আমাদের কাজনা।
দুনিয়ার কোন মানুষই অন্ধ না তাই তারা নিজেরাই অন্যের দোষ দেখতে পায় অতএব, অন্যের দোষ না ধরে নিজেদের কাছে ভালো কিছু থাকলে তার প্রচার করাই মুখ্য হওয়া উচিৎ এবং আমরা তাই করি তবে একান্ত বাধ্য হয়েই কারো প্রশ্নের জবাব দিতেহলে তখনও এরিয়ে যাওয়ার চেস্টা করি আর তা সম্ভব না হলে যতটুকু জানি ততটুকুই বলি এবং একথাও বলি যে আমার ধারণা সঠিক নাও হতে পারে।
যেসকল সংগঠনের কোন ইসলামী কর্মসূচী নাই তার সাথে পার্থক্য স্পষ্ট যা সবাই বুঝতে পারে তবে অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের সাথে আমাদের যেসব সূক্ষ্ণ কিন্তু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। যেমন, কোন কোন সংগঠন শুধু মাত্র দাওয়াতী কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ অথচ ইসলাম একটা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।
যেসব সংগঠন একামতে দীনের কাজ করার দাবী করে তারাও একসময় ইসলামে যে রাজনীতি আছে তাই মানতে রাজি ছিলনা। ইসলামী হুকুমত কায়েম করার জন্য যেসব মেকানিজম দরকার যেমন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি তা তাদের নাই আর থাকলেও সিন্ধুর মধ্যে বিন্দুর যে অবস্থান অনেকটা সেরকম। নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা পীরের ছেলে পীর, নেতার ছেলে নেতা এবং সংগঠনের আর্থিক বিষয়টাও পীর বা আমীরের হাতে এবং সামাজিক কার্যক্রমেও তারা অনেক পিছিয়ে। প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মোকাবেলা করে টিকে থাকা এবং তাদের হটিয় আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও অন্যান্য অবকাঠাম একান্তই নড়বরে।
এমতাবস্থায় প্রশ্নকারী নিজেই তার অভিগ্যতার আলোকে নিজের ধারনা পাকা পোক্ত করতে পারে। তার পরেও যদি সে ধর্মহীন সেকুলার বা নষ্ট বামদের সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় সে ক্ষেত্রে আমাদের নীতি হল, আমাদের পছন্দ না করলে অন্তত ধর্মহীন সেকুলার আর নষ্টবাম বা ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদেরর রাজনীতি না করে অন্তত অন্য যে কোন একটা ইসলামী সংগঠনের সাথে জড়িত থাকা শ্রেয়, হোকনা সেটা দাওয়াতী সংগঠন বা অন্য কোন ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন।
তার বাসায় চা পান করতে করেত তার কথা থেকে সেদিনই বুঝতেপারি সে আসলে আমাদের সংগঠনের কেউনা বরং সংগঠন ছুট দলের স্থানীয় নেতা! এমতাবস্থায় আমার পরিচয় গোপন রাখার কোন মানেই হয়না, তাই নিজের পরিচয় দিয়ে তাকে অরণ্যে রোদনের হাত থেকে বাচাই কিন্তু তাতেও তার হুশ হয়েনি তাই আমার পিছনে গ্যানর গ্যানর করতেই থাকে। এক পর্যায় সে বুঝতে পারে এভাবে পিছনে ছুটে তার কোন লাভ হবেনা তাই বন্ধুত্ব বজায় রাখলেও অনর্থক গ্যানর গ্যানর থেকে বিরত থাকে এবং সুবহানবাগ মসজিদে তাদের ইফতার মাহফিলে দাওয়াত দেয়।
আশ্চর্যের বিষয় হল সেখানে গিয়ে দেখি সিটি কলেজের শ্রদ্ধেয় যে স্যারকে ছাত্রদলের এক বখাটে নেতা ও ক্রিড়া সম্পাদক শিবির সমর্থক ভেবে মেরেছিলে সেই স্যারই প্রধান অতিথি! তার জ্ঞানগর্ব আলোচনার ফাকে ফাকে মুখ ফসকে কিছু অপ্রাসঙ্গিক কথা বেরিয়ে গেলে বুঝতে পেরেছিলাম তিনিও দলছুট লোক, কিন্তু দুঃখের বিষয় হল স্যার মার খেয়েছে শিবির সমর্থক হওয়ার সন্দেহে ফাও!
রমজানেরর ঈদে বাড়িতে গেলে আমার মুখে সদ্য গজিয়ে ওঠা খোচা খোচা দাড়ি দেখে আমার বাবা, মায়ের কাছে অভিযোগ করলেন যে আমি নিশ্চয়ই শিবির হয়ে গেছি। শিবির কি জিনিস তা আমার মা না জানলেও বাবা ঠিকই জানেন, তাই তিনি মায়ের মাধ্যমে আমকে শিবির ছাড়তে এবং দাড়ি সেভ করতে অথবা বড় করে রাখার হুকুম দিলেন। সুবোধ বালকের মত মাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম যে দাড়িতো নিজের গতিতেই বড় হবে আর শিবিরের মধ্যে অন্যায় কিছু দেখলে শিবির ছেড়ে দিব তাই সেজন্য তারা যেন চিন্তা না করেন।
ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে লঞ্চে বসে একটা বিপত্তি ঘটল, লঞ্চের টিকেট মাস্টার নিচতলা থেকে উপরে উঠছিল আর আমি বসার জায়গা নাপেয়ে সিড়ির উপর দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে আমাকে সরে দাড়াতে বললে সাইড চেপে উপরে ওঠার জন্য তাকে জায়গা করে দেই কিন্তু সে উপরে না উঠে আমাকে ওখানথেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিল, কিন্তু আমি যাব কোথায় তা ঠিক করে উঠার আগেই সে ধাক্কা মেরে আমাকে সরিয়ে দিতে চাইল, আমি সরে যাওয়ার চেস্টা করছিলাম কিন্তু আবার ধাক্কা! এবার সহ্য সীমা ছাড়িয়ে গেল। অগ্রপশ্চাৎ নাভেবে আমিও কষে একটা মেরে দিলাম।
আমারমত পুচকে ছেলের এক ঘুষিতে তার মুখ বাংলা ৫ হয়ে রক্ত প্রবাহীত হতে শুরু করলে সে সাথে সাথে উপরে উঠে আনসার বাহিনী এবং অন্যন্য স্টাফ নিয়ে লঞ্চে ডাকাত উঠেছে বলে সোরগোল পাকিয়ে ফেল্ল। আমি উপায়ন্ত নাপেয়ে ছাদ থকে নামার সিড়ির কাছে পজিশান নেই। এবার হয় ছিনা টান করে বাচা নাহয় ডাকাত হয়ে মরা বা হারগোড় ভেঙ্গে থানায় চালান হওয়ার পালা।
(চলবে .....................)
বিষয়: বিবিধ
৭৫৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন