গল্পঃ আজো সেই দাঈ আছে আগেরই মতঃ
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১২ মে, ২০১৭, ০৫:১২:০৬ বিকাল
গল্পঃ আজো সেই দাঈ আছে আগেরই মতঃ
আমাদের গ্রামের ছেলে আমিন ইসলামী আন্দলনের অগ্রসর কর্মী, এটা কোন ঘটনা না। সব গ্রামেই এমনকি প্রায় সব বাড়িতেই এমন কর্মী আছে। সে যে ইসলামী আন্দলনের কর্মী হবে সেটা ছিল আমার ধারণার বাহিরে। তারপরেও যখন জানতে পারলাম সে ইসলামী আন্দলনে স্বকৃয়ভাবে কাজ করছে তখন জানার কৌতুহল জাগল যে এটা কিভাবে সম্ভব হল?
কয়েক বছরের আগের ঘটনা। একদিন লঞ্চে চরে গ্রাম থেকে সে ঢাকায় আসছিল। লঞ্চে বসে ইয়াং ছেলেরা এমনকি বয়স্করাও সময় কাটানর জন্য গল্প গুজব বা তাস খেলে থাকে। আমিনও একটা গ্রুপ জুটিয়ে তাস খেলে সময় পার করছিল। তাদের পাশেই একজন যুবক বসে বসে বই পড়ছিল। না কোন নোবেল নাটক বা পাঠ্য বইনা। ইসলামী আন্দলেনের অনেক কর্মীরাই যেমন ভ্রমণ কালে ইসলামী সাহীত্য সাথে রাখে তেমনি সেই যুবক মানে জামিলও রাখত আর তাই খুলেই সে পড়ছিল। বই পড়তে পড়তে যে কখন সে ঘুমিয়ে গেছে তা টেরও পায়নি।
যখন তার ঘুম ভাঙল তখন শেষ রাত। আড়িয়ালখা, মেঘনা ও পদ্মা পাড়ি দিয় লঞ্চটা তখন শীতালক্ষায়। নদীর সেই আগের মত যৌবন নাই তার পরেও রাতের শেষ প্রহরে নদীর বুকচিরে হীমেল হাওয়ার ঠান্ডা পরশে এগিয়ে চলার অনুভুতিই আলাদা। সে কবি নয়, যদি কবি হত তাহলে হয়ত কবিতা লিখে ফেলত। আশ্চর্যের বিষয় হলে লঞ্চের বেশীরভাগ যাত্রী ঘুমিয়ে গেলেও ২/৪জন যাত্রী নামাজ পড়ছে অথচ তখনও ফজরের সময় হয়নি! কয়েকটা গ্রুপ তখনও তাস পেটাচ্ছিল যার মধ্যে তার সিটের পাশেই আমিনও আছে।
জামিল অজু করে মুরুব্বিদের দেখাদেখি নিজেও নামাযে দাঁড়িয়ে গেল, না ফজরের নামাজ নয়, শেষ রাতের নামায। শবেবরাতের নামে আমরা যে নামায পড়ার জন্য বছরে একবার ব্যতিব্যাস্ত হয়ে পরি সেই নামায, যে নামাযের সময় হয় শেষ রাতে এবং নফল এবাদতের মধ্যে যা সবচেয়ে উত্তম সেই তাহাজ্জুতের নামায।
একদিকে চলছে নামাজ আর তার পাশেই তাস খেলা! কিযেন কিভেবে ছেলেগুলো এবার খেলা রেখে সুয়ে পরল। হয়ত পাশেই একজন নামাজ পড়ছে তার প্রতি সম্মান দেখানর খাতিরেই তাদের এই সেক্রিফাইজ।
তাসখেলা গ্রুপের বাকী তিনজন নাক ডেকে ঘুমিয়ে পরলেও আমিনের ঘুম আসছিলনা, সে এপাশ ওপাশ করছিল। ইতি মধ্যে লঞ্চটা বুড়িগঙায় ঢুকে গেছে। বুড়িগঙা ব্রিজটার লাল নীল বাত্তি দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে। ফজরের সময়ও হয়ে গেছে। কাল বিলম্ব না করে জামিল এবার ফজরের নামায জামায়াতে পড়ার জন্য লঞ্চের ছাদে চলে গেল, যেখানে নামায পড়ার ব্যবস্থা আছে।
নামায পড়ে এসেও সে দেখতে পেল যে আমিন এখনও ঘুমায় নি তাই সে বলল ভাই সারা রাত তাস খেল্লেন আর নামাযের সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু আপনার সেদিকে কোন খেয়াল নেই? আমিন একটু লজ্জিত হল কিন্তু কোন প্রতিকৃয়া দেখালনা। একটা ক্যাসেট বাবিয়ে ধরে বলল, ভাই সাঈদী সাহেবের ওয়াজে নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে গুরুত্ব পূর্ণ আলোচনা আছে শুনে দেখবেন। এবার সে বেগুনে জ্বলে উঠল এমন কি সাঈদী সাহেবকে দুহাত নিল!
আমিনের এই প্রতিকৃয়া দেখে জামিল একেবারে চুপসে গেল এবং কোন কথাই মুখ দিয়ে বের হলনা। ফলাফল যা হল সে ক্যাসেট ফেরত দিয়ে উঠে দাড়াল এবং হনহনিয়ে লঞ্চের ছাদে গিয়ে ফজরের নামায পড়ে আসল। ততক্ষণে লঞ্চ সদরঘাটে এসে গেছে। আমিন তার ব্যাগ গুছিয়ে রওয়ানা হল এবং জামিলও তাকে অনুসরণ করল। সে গুলিস্তানের একটা রিক্সা ঠিক করে উঠে পরলে জামিলও তার রিক্সায় উঠে বসে। এতে সে জামিলের প্রতি কিছুটা নরম দিল হয়। গুলিস্তানে এসে সে রিক্সা ভাড়া দেয়ার আগেই জামিল নিজেই রিক্সাভাড়া চুকিয়ে দেয়।
সে উত্তরাগমি বাসে উঠলে জামিলও তাকে অনুসরণ করে তার পাশেই বসে যায়। এতে আমিন বেশ আশ্চর্য হয় কিন্তু কিছু না বলে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। বাসের কন্ডাক্ট্র এলে এবারও জামিল দুজনের ভাড়া আদায় করে দেয়। জামিলের এই অজাচিত আচরণে সে এবার আর চুপ থাকতে পারেল না। সে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে জামিল বলল, ‘ভাই আপনি সাঈদী সাহেবের ক্যাসেট গ্রহণ করেন নি এবং আপনার কথায় বুঝতে পারলাম যে আপনি তাকে অপছন্দ করেন, এর কারণটা জানতেই মূলত আমি আপনার পিছু নিয়েছি। আসলে আমি উত্তরার যাত্রী নই। আমি এসেছি পল্টনের শিবিরের অফিসে কিন্তু যেহেতু লঞ্চে বসে একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে তাই আমি আপনার সাথে এসেছি। ‘
জামিলের কথায় আমিনের মনে বেশ দাগ কাটল, সে জামিলকে নিজের বাসায় নিয়ে গেল এবং বলল, ‘দেখেন ভাই, সাঈদী সাহেব আলেম মানুষ এবং ভালো ওয়াজও করেন কিন্তু সে যেহেতু নোংরা রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন তাই আমি তাকে এবং সে যেই জামায়াত করে সেই জামায়াতকেও পছন্দ করিনা, আমাদের গ্রামের ২/১জন বাদে কেউ তাদের পছন্দ করেনা। আর যারাও পছন্দ করে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস রাখেনা।
জামিল এবার বলল, দেখুন আল্লাহর নবী মোহাম্মদ (সাঃ) যেমনি নামায রোযার দাওয়াত দিয়েছেন এবং মানুষকে আমল করে দেখিয়েছেন তেমনি তিনি হুকুমতে ইলাহীয়াও প্রতিষ্ঠিত করে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন, সাহাবায়ানে কেরাম (রাঃ) আজমাইনও একই কাজ করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এখন যারা রাষ্ট্রিয় দায়িত্ব পালন করে তারা নামায রোযার ব্যাপারে চেতনাহীন আর যারা নামায রোযা করে তারা রাজনীতিকে নোংরা মনে করে এবং সেই নোংরা রাজনীতিকে পবীত্র করার ব্যাপারেও তাদের কোন চেতনা নাই। মাওলানা সাঈদী এবং জামায়াত শিবির সেই কাজটাই করতে চায় যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কা-মদীনার জাহেলী সমাজের শিরকী ইবাদত আর নোংরা বংশীয় রাজনীতির আমুল পরিবর্তন ঘটিয়ে আল্লাহর তাওহীদ এবং হুকুমতে ইলাহীয়া প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
আল্লাহর রাসূল যেহেতু মানব জাতির সর্বত্তম আদর্শ তাই আমাদেরও উচিৎ বাস্তব জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর অনুসরণ অনুকরণ। তিনি তঁর নবুয়তের ২৩ বছরের জীবনে যা যা করেছেন আমাদেরও উচিৎ তাই করা। তিনি যদি রাজনীতি করে থাকেন, যুদ্ধ বিগ্রহ করে থাকেন তাহলে সেটাও আমাদের জন্য ইবাদত যেমনি নামাজ রোযা হজ্ব যাকাত ইবাদত।
কথাগুলো সে মন দিয়ে শুনছিল, তার সম্বিত ফিরল যখন তাদের সামনে নাস্তা চলে আসল। এবার সে জামিলকে নাস্তা শুরু করার অনুরোধ করল কিন্তু জামিলের কথা হল যদি এই ক্যাসেন গ্রহণ না করেন সে নাস্তা খাবনা। আমিনের মা’ও ঘরের ভিতর বসে জামিলের কথা শুনছিলেন। তিনিই পর্দার আড়াল থেকে ক্যাসেটটা রাখতে বললেন। শেষ পর্যন্ত সেই সে ক্যাসেট দিয়ে এবং নাস্তা করেই সেখান থেকে বিদায় নিল। জামিলের কথা এবং সাঈদী সাহেবের ক্যাসেট শুনেই আমিন এখন ইলামী আন্দলনের এক জানবাজ কর্মী। আল্লাহ এমন কর্মীদের এবং দাঈ যুবকদের সহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন