বেঠিক এক জন্ম দিনের হাজার শুভেচ্ছা!!
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৩:৫৭ দুপুর
যার জন্মেরই ঠিক নাই তার কথার কোনা দাম নাই। এটা একটা প্রচলিত কথা। সকাল থেকে এপর্যন্ত অসংখ্য ভাই বন্ধুর শুভেচ্ছা পেয়ে বুঝলাম আজ আমার জন্ম দিন। কিন্তু আমার জন্মের এই দিনটা ঠিকনা!
নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় হঠাত একদিন স্কুলের লাইব্ররীতে ডাক পরল। আমাদের ক্লাসের সবাকেই যার যার নামের ফরমে সাইন করতে বল্ল আর আমরাও তাই করলাম। পরে বুঝলাম ওটা ছিল রেজিস্ট্রেশান ফরম, যেখানে জন্ম তারিখ লেখা ছিল ০৪ঠা নভেম্বর ১৯৭৪ইং।
ছাত্র জীবনেই একবার বিদেশে যাবার ভুত ছওয়ার হলে পাস্পোর্ট বানাতে দিয়েছিলাম এক দালালের হাতে, যখন তা হাতে পেলাম তখন দেখলাম নিজের আর বাবার নাম বাদে আমার জন্ম পরিচয় এবং তারিখের কোন ঠিক ঠিকানা নাই!
বিয়ের আসরে কাজী সাহেবের ব্যাস্ততা এবং দুই বাবা ও বন্ধু বান্ধবের তাগাদা এবং নিজের লাজুকতার মাথা খেয়ে চোখ বুজে কাবিন নামায় সাইন করে দিলাম, কাবিন নামা যখন হতে পেলাম তখন দেখলাম সব কিছুই ঠিক আছে কিন্তু দুজনার জন্ম তারিখেরই ১২টা বেজে গেছে! পরে জন্ম দাতা বাবাকেই ধরলাম শক্ত করে, বেচারা বাবাও যেন আমার মত নালায়েককে জন্ম দিয়ে দায় ঠেকেছেন। কাজের সময় আমার নাকি কোন কিছুই ঠিক থাকেনা। আমাদদের দুজনের বিয়ের বয়সই সার্টিফিকেট মোতাবেক তখনো ১৮ এবং ২৫ হয়নি তাই কাজী সাহেবের দয়ায় আরো একটা জন্ম দিন পেয়ে গেলাম।
সন্তান জন্ম দেয়া এবং দুই সন্তানের জন্মের মধ্যে গ্যাপের জন্য যদি কোন টাইম ফ্রেম থাকত তাহলে ১০ সন্তানের বাবা মাকে আরো কতবার যে নিজেদের জন্ম তারিখ বদলাতে হত তা আল্লাহই ভালো জানেন।
মা খালাদের আলাপচারিতা থেকে যা বুঝেছি তাতে আমার জন্ম হয়েছিল কোন এক শ্রাবণের ভরা পূর্ণিমার আলো ঝলমলে শেষ রাতে। জন্মের পরে অন্যদের কানে একবার আজান দেয়া হলেও আমার কানে নাকি পর পর তিনবার আজান দেয়া হয়েছিল!
জন্মের সাথে সাথেই নাকি মোরগ গুলো কুক্কুরুতু কুক বলে আজান দিয়েছিল, কানে কানে আজান দিয়েছিল দাদা আর দেরী না করে বাড়ির মসজিদের ইমাম সাহেবও বলে উঠেছিল, "আসসালাতু খায়রুম মিনান নাউম"।
আজ আমার মা বাবা দাদা দাদী নানা নানি শ্বশুর আর বেচে নাই। প্রতি দিনের ঘড়ির কাটা এবং বাতসরিক ক্যালেন্ডার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে পূর্বপুরুষের মত আমিও একপা দুপা করে কবরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
যেখানে প্রস্থান দিবস নিকটে চলে আসা এবং সেই দিনের প্রস্তুতির কথা চিন্তা করে বিচলিত হওয়ার কথা সেখানে আমরা সেই দিনটাকে উতসবের দিনে পরিনত করছি!
যারা ভাবছেন আগের দিনের বাবা মায়েরা ঠিকমত জন্ম তারিখ লিখে রাখতনা কিন্তু এখনকার বাবা মায়েরা আর সেই ভুল করেনা। কথা সত্য কিন্তু কাহিনি ভিন্ন।
আমার সন্তানদের জন্ম তারিখ একেবারে মিনিটের হিসেবে লিখে রেখেছি এবং হাস্পাতাল থেকে বার্থ সার্টিফিকেট নিয়েছি কিন্তু কাজে লাগেনি। স্কুলে ভর্তির সময় বলা হল বয়স ৬ বছর হতে হবে, অতএব পরিবর্তন, পঞ্চম শ্রেণীতে রেজিস্ট্রেশানের সময় বলা হল এসএসসি পাশের বয়স হতে হবে ১৪ বছর অতএব পরিবর্তন আর কন্যা সন্তানকে যদি কোন কারনে ১৮ বছরের ২/৪ দিন আগেই বিয়ে দিতে হয় তাহলে যে জন্ম তারিখে আর একবার পরিবরর্তন আসবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
সব কিছু মিলিয়েই জন্ম দিনের এই শুভেচ্ছা আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়।
অসংখ বন্ধু যারা এই দিনে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, আমার জন্য দুয়া করেছেন তাদের সবার জন্য আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক দুয়া, ফুলেল শুভেচ্ছা ও অকৃত্রিম ভালবাস রইল।
বিষয়: সাহিত্য
১৫৪৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অর্থহীন জন্ম দিনের কথা বলতে গিয়ে রসিয়ে রসিয়ে অনেক কথাই বলে ফেললেন!
আমি আপনার জন্ম দিনে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিনা, কেননা তা ফেইক!
ধন্যবাদ।
আমার জন্মের তারিখ যখন পরিবর্তন করা হয়, তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলনা@ কুয়েত থেকে
ধন্যবাদ।
একটা সময় বেশিরভাগ মানুষই জন্মতারিখ নিয়ে মাথা ঘামাত না। আমাদের দেশে এই সমস্যা সৃষ্টি হয় মুলত স্কুলে ভর্তি আর সরকারি চাকরির বয়সসিমা নির্ধারন করতে গিয়ে। অন্য দিকে বিয়ের বয়স টাও একটা কারন। তবও শুভেচ্ছা!
ধন্যবাদ।
"জন্মতারিখের ঠিক" না থাকলেও "জন্মের ঠিক থাকা" শতভাগ নিশ্চিত ধরে নিতে তো আর দোষ নেই, কি বলেন!!
শুভেচ্ছাগুলো ফ্রীজে রেখে দেন, সুবিধাজনক তারিখগুলোতে বের করে করে ব্যবহার করবেন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন