ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩৭'তম এবং শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৯ জুলাই, ২০১৫, ০৪:৩৮:১৭ বিকাল
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩৭'তম এবং শেষ পর্ব)
- হ্যা তা তো বুঝলাম, কিন্তু প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার বিকল্প কি?
- স্যার বিকল্প আছে।
- যেমন?
- ===========৩৭
আইন মন্ত্রী এবং জেল সুপার সাহেবের পরামর্শ্ব মহামান্য রাষ্ট্রপতির মনপূত হল তাই তিনি তাদের কাছে পরামর্শ্বের লিখিত কপি আছে কিনা জানতে চাইলেন। সাথে সাথেই আইন মন্ত্রী পরামর্শ্বের লিখিত কপি মহামান্য রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দিলেন।
বঙ্গ ভবনের দরবার হলে আমন্ত্রিত মেহমানগণ ইতি মধ্যেই নিজ নিজ আসন গ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সম্মানিত সদস্য বর্গ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিদিশী কূটনীতিক বৃন্দ এবং ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক নেত্রীবৃন্দ সহ সমাজের নেত্রী স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত রয়েছেন।
সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে নতুন সরকারের আমলে বঙ্গ ভবনে এটাই প্রথম অনুষ্ঠান। সরকারের শপথ গ্রহণের পর সফলতার ১০০ দিন পূর্তির এই অনুষ্ঠানে সবার মাঝেই একটা খুশির আমেজ বিরাজ করছে। বিগত দিন গুলোতে এধরণের অনুষ্ঠান গুলো সাধারণত সংসদের প্রধান বিরোধী দল বর্জন করত কিন্তু এবারই প্রথম সেই রীতির ব্যতিক্রম ঘটল। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে প্রাপ্ত গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে সরকার এবং বিরোধীদল একত্রে জাতি গঠনের কাজ করতে এই প্রথম অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে। যা জাতিকে আশান্বিত করেছে।
আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ভাষণ শুরু করলেনঃ
- বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
- আসসালামু’আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহে ওয়াবারাকাতুহ
- মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও সংসদ নেতা, বিরধীদলের নেতা, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিকবৃন্দ ও আমন্ত্রিত অতিথি বৃন্দ! আপনাদের সকলকে আমার এবং আমার স্ত্রী তথা দেশবাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ।
- শুরুতেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, আলহামদুলিল্লাহ এবং রাসূল (সঃ) এর প্রতি দূরুদ পড়ছি, ‘সল্লাল’লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম’। স্বরন করছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্থপতি সহ শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও স্বকৃয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা বীর সেনানীদের।
- সম্মানিত উপস্থিতি, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। যদি আমরা তা করতে পারি তাহলে অচিরেই আমাদের দেশ একটা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে ইনশা’আল্লাহ।
- যে কোন রাষ্ট্র কাঠামকে টিকিয়ে রাখার জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরী। আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সকলের অংশ গ্রন না থাকলে সরকারের একার পক্ষে কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ বা মেঘনাকার্টা হিসেবে আমি আপনাদের সামনে ঘোষণা করছি যে দেশের ভিভিন্ন কারাগারে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত সকল আসামির মৃত্যু দন্ড স্থগিত করা হল।
- জীবনের মালিক আল্লাহ্ তাই আমরা চাইলেই কারো মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে পারিনা। আল্লাহর বিধানে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিকে মাফ করার অধিকার শুধুমাত্র নিহত ব্যক্তির নিকট আত্মীয়দের। তাই আজ থেকে ক্ষমার অধিকার রাষ্ট্রপতির হাত থেকে নিহত ব্যক্তির নিকট আত্মীয়দের হাতে সোপর্দ করা হল যা অচিরেই আইনে রূপ দেয়া হবে ইনশা’আল্লাহ।
- বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি স্বপ্রনদিত হয়ে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়েছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখার স্বার্থে বয়জেষ্ঠ্য তিনজন সাবেক বিচারপতির নেত্রীত্বে একটা রিভিউ কমিটি গঠন করবেন। রিভিউ কমিটির কাজ হবে মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের কার্যক্রমের চুলচেড়া বিশ্লেষণ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আল্লাহর উপর ভরসা করে একান্তই ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামির সাজা বহাল রাখবেন অথবা হ্রাস করবেন অথবা বেকসুর ঘোষণা করবেন যা হবে বিচারেরই একটা অংশ এবং চুড়ান্ত ধাপ।
- রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তে কেউ দোষী প্রমানীত হলেই কেবল তার ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব নিহত ব্যক্তির প্রতিনিধীর উপর ন্যাস্ত হবে। নিহত ব্যক্তির প্রতিনিধী চাইলে আসামির কাছ থেকে রক্তমূল্য আদায় করতে পারবে অথবা বিনামূল্যে মাফ করে দিতে পারবে অথবা সাজা বহাল রাখতে পারবে যা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ারভূক্ত। সরকার এক্ষেত্র কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করবে না। নিহত ব্যক্তির প্রতিনিধী রক্তমূল্য দাবী করলে এবং তা দিতে আসামি পক্ষ অপারগ হলে সরকার যথাসম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। আমাদের উদ্দেশ্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যেন মানুষের জীবন রক্ষা করা যায় সেই পদক্ষেপ নেয়া.........
বঙ্গ ভবনের অনুষ্ঠান সকল টিভি চ্যানেল গুলো এক যোগে লাইভ প্রচার করছিল। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই শায়লা ও আমজাদ শেখ সাহেবের জ্ঞান ফিরে এসেছিল। তারা মনোযোগ সহ মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ শুনছিলেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের এই পর্যায়ে তারা আল্লাহু’আকবার বলে চিৎকার করে উঠলেন এবং সাদীকে ফিরে পাওয়ার আশায় দ্বিগুন বলে বলিয়ান হয়ে উঠলেন। শায়লা ও আমজদাদ শেখ সাহেব তখনই হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছিল কিন্তু বাঁধ সাধল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কারণ আইন মন্ত্রীর নির্দেশেই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাই সম্পূর্ণ সুস্থ্য হওয়ার আগেই তাদের বিদায় করে দিয়ে নিজেদের চাকুরী ঝুকির মুখে ঠেলে দিতে চাচ্ছিল না।
এমন খুশির মূহুর্তে আমজাদ শেখ সাহেব আর শায়লা কোন ভাবেই হাসপাতালে থাকতে চাচ্ছিলনা, কিন্তু বের হওয়ারও উপায় নাই তাই অগত্যা এতবড় খুশির খবর বুকের মধ্যে আটকে রেখেই তাদের হাসপাতালের ক্যাবিনে আইন মন্ত্রীর পরবর্তি নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতে হল।
বঙ্গ ভবনের অনুষ্ঠান শেষ করে আইন মন্ত্রী ও জেল সুপার সাহেব ছুটলেন হাসপাতালের দিকে। শায়লা এবং আমজাদ শেখ সাহেবের কামড়ায় গিয়ে তাদের খোজ খবর নিলেন। জেল সুপার সাহেব আইন মন্ত্রীর বদান্যতা স্বীকার করে পূর্বাপর সব ঘটনা খুলে বললে আমজাদ শেখ সাহেব এবং শায়লা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাল।
আইন মন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে সাদী সাইয়্যেদকে চিনে বলেও জানালেন এবং তিনি দৃঢ়তার সাথে বললেন সাদী অবশ্যই নির্দোষ তাই সে অচিরেই জেল থেকে মুক্তি পাবে ইনশা’আল্লাহ।
সমাপ্ত
বিষয়: সাহিত্য
১৪৪৯ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
আমিও 'থ' হইয়া রইলাম।
আরেকটি শুরু করেন।
ধন্যবাদ টিপু ভাই।
ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া অতি চমৎকার নটকীয়তায় পরিপূর্ণ সুন্দর সমাপ্তির জন্য ।
এবার এটাকে বই আকারে দেখতে চাই ভাইয়া ।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাথে থেকে উৎসাহ দেয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আফরা লিখেছেন : আমাদের দেশ যদি এই গল্পটার মত হত !!
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া অতি চমৎকার নটকীয়তায় পরিপূর্ণ সুন্দর সমাপ্তির জন্য ।
এবার এটাকে বই আকারে দেখতে চাই ভাইয়া ।
সুন্দর ধারাবাহিকটির জন্য শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ খাইর
আফরামণির আবদারটা কাজে পরিণত করার চেষ্টা করব ইনশা'আল্লাহ। ইতিমধ্যেই গৃহমন্ত্রীর অনুমতি পেয়েছি। এখন দরকার শুধু প্রকাশক খুজে বের করা।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাথে থেকে উৎসাহিত করার জন্য আন্তরিক মুবারক'বাদ।
ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আবু জারীর ভাইয়া অতি চমৎকার নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ সুন্দর সমাপ্তির জন্য! আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য কল্যাণের প্রার্থনা আল্লাহর কাছে তিনি যেন আপনাকে সহ আপনার পরিবারের সবাইকে সব সময় নিরাপদে রাখেন! আর আপনার লেখার হাতকে আরো সু-প্রসারিত করে দেন! আমিন!
এবার এটাকে বই আকারে দেখতে চাই ভাইয়া!
সুন্দর ধারাবাহিক গল্পটির জন্য শুকরিয়া জানাচ্ছি! জাযাকুমুল্লাহ খাইরান ফিদ্দারইন! আমাদের জন্যেও দোয়া করবেন ভাইয়া!
আলহামদুলিল্লাহ্ আপনাদের নেক দুয়ার বারকতে গল্পটার সমাপ্তি টানতে পেরেছি। ইনশা'আল্লাহ ভালো প্রকাশক পেলে বই আকারেও প্রকাশিত হবে।
শুরু থেকে সাথে থেকে উৎসাহ দেয়ার জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা সাথে সাথে আপনার এবং টুডে ব্লগ পরিবারের সকলের জন্য নেক দুয়া রইল।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন