ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩৬'তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৭ জুলাই, ২০১৫, ০৯:৫৮:১০ রাত
প্রতিটা মানুষের ভিতরেই একটা সুকুমার বৃত্তি আছে, সময় মত তা জাগ্রত করতে পারলে, সে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। যেমনটা শরিফ অজানা অচেনা রক্তের বন্ধন হীন ক্ষণিকের পরিচিত সাদীর জন্য জীবন দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তার প্রমাণ রেখেছে!
===========৩৬
শায়লা এবং জেল সুপার সাহেব তন্ময় হয়ে শরিফের কথা শুনছিল। তাদের দুজনের গণ্ড বেয়ে চোখের অশ্রু ধারা বিগলিত হয়ে পরছিল।
- বাবা শরিফ তুমি সত্যিই পরিবর্তন হয়েছ। তোমাকে আমি নিজের হাতে তোমার মায়ের কাছে ফেরৎ দিব ইনশা’আল্লাহ। তোমাকে জীবন দিতে হবেনা, সাদীর মুক্তির জন্য শুধু আমাদের একটু সহায়তা করবে। কি পারবে না?
- ইনশা’আল্লাহ! আপনার যে কোন আদেশ পালনকে আমি নিজের কর্তব্য মনে করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, এমনকি আল্লাহর রাহে ভাইয়ের ভালোবাসায় জীবন উৎসর্গ করতেও কুন্ঠিত হবনা।
- ওকে মাই বয়। তুমি এবার যাও। প্রয়োজন হলে আমি তোমাকে আবার ডাকব এবং করণীয় বলে দিব।
সাদীর জীবনের হয়ত এটাই শেষ দিন। আজকের সূর্যাস্তের সাথে সাথেই সাদীর ফাঁসি কার্যকর করা সময়ের ব্যাপার হয়ে যাবে মাত্র। কাগজে কলমে যদিও বলা আছে এক মাসের মধ্যে কিন্তু সেটার কোন নির্দিষ্ট সীমা রেখা নাই। হতে পারে প্রথম দিনে আবার হতে পারে মাসের একেবারে শেষ দিনে। তবে শেষ দিন পর্যন্ত সাধারণত অপেক্ষা করা হয়না। ঘরে বাইরে যেহেতু সব জায়গায়ই সাদীর শত্রু আছে তাই প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে থাকা কুচক্রি মহল কাউকে পরোয়া না করে যে কোন সময় যে কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তাই যা করার শায়লাকে ঝটপট করে ফেলার নির্দেশ দিলেন।
আমজাদ সাহেবকে সাথে নিয়ে শায়লা ছুটে চল্ল রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাতের পাস সংগ্রহের অভিজানে। এঅফিস ও অফিস করে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাতের অনুমতি মিল্ল। কিন্তু ততক্ষণে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা! আম্লাতান্ত্রিক জটিলতা আর রাস্তার যানজট ঠেলে শায়লা এবং আমজাদ সাহেব যখন বঙ্গ ভবনের মূল ফটকে পৌছেছে ততক্ষণে রাত ১০টা।
সাকারের একশত দিন পূর্তি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নৈশ ভোজের আয়জন করেছেন। যাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ মন্ত্রীপরিষদের সম্মানিত সদস্য বৃন্দ, বিদেশী কূটনীতিক বৃন্দ এবং দেশ বিদেশের ভিভিয়াইপি, সিয়াইপি বৃন্দ আমন্ত্রিত। রাত ৮টা থেকেই মেহমানদের আগমন শুরু হলে নিরাপত্তা কর্মীরা সব ধরণের দর্শনার্থিকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
শায়লা এবং আমজাদ সাহেব যেহেতু আমন্ত্রিত মেহমান নন তাই সাক্ষাৎকারের পাশ নিয়ে তাদেরকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছিল না। বরং তাদেরকে গেটের সামনে দাড়াতে পর্যন্ত দেয়া হচ্ছিল না।
শায়লা পাগলিনীর মত নিরাপত্তা কর্মীদের বোঝানর চেষ্টা করছিল কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিলনা। রাত এগারটা ছুই ছুই করেছে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনের সাথে সাথেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে, আর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলে ভিতরে প্রবেশ করেও লাভ হবে না।
একে একে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য বৃন্দ বঙ্গ ভবনের প্রবেশ করছিল, শায়লা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে, এক একজন মন্ত্রীর আগমনের সাথে সাথে সাদীর জীবন থেকে কিভাবে এক একটা মূহুর্ত হারিয়ে যাচ্ছে। শায়লা আর কিছু ভাবতে পারছেনা। দুনিয়া তার কাছে ছোট্ট হয়ে এসেছে। মাথা ঘোরাচ্ছে, যে কোন সময় অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। আমজাদ সাহেব বিষয়টা আঁচ করতে পেরে শায়লাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলনা।
শায়লার সামনে আশার কোন আলোই উঁকি দিচ্ছিলনা তাই চরম উত্তেজনা আর বেকুলতায় শেষ পর্যন্ত জ্ঞান হারিয়ে ফেল্ল। আমজাদ সাহেবও আর সহ্য করতে পারছিলনা, শেষ পর্যন্ত সেও আল্লাহু’আকবার বলে গগন বিদারী চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেল্ল!
অদূরেই বঙ্গ ভবেনের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশের কয়েকজন সদস্য এবং বাহিরে অবস্থান রত সাংবাদিকদের কয়েক জন এগিয়ে এল। অবস্থা বেগতিক দেখে তাদের দুইজনকে ধরাধরি করে এম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছিল। ঠিক এমন সময়ই আনই মন্ত্রী এবং জেল সুপার সাহেব বঙ্গ ভবনের সামনে পৌছেছেন। জটলা দেখে তারা বিষয়টি অনুধাবন করার চেষ্টা করলেন।
জেল সুপার সাহেব গাড়ি থেকে নেমে নিজেই শায়লার অবস্থা দেখে দ্রুত আইন মন্ত্রীর গাড়ির কাছে চেলে আসলেন এবং তাকে ঘটনাটা অবহিত করলেন। সাথে সাথে আইন মন্ত্রী শায়লা ও আমজাদ সাহেবকে হাসপাতালে পাঠাতে এবং যথাযথ চিকিৎসার নির্দেশ দিয়ে জেল সুপার সাহেব কে নিজের গাড়িতে নিয়ে বঙ্গ ভবনে প্রবেশ করলেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি নৈশ ভোজের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য তৈরী হয়ে খাস কামড়ায় বসে আছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগমনের অপেক্ষা মাত্র। এমতাবস্থায় আইন মন্ত্রী এবং জেল সুপার সাহেব সরাসরি মহামান্য রাষ্ট্রপতির খাস কামড়ায় চলে গেলেন। তারা ফর্মালিটিস মেন্টেন না করে শুধু সালাম দিয়েই আসল ঘটনা খুলে বললেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি সাহেব সাবেক বিচারপতি এবং ইসলামী মাইন্ডেট ব্যক্তি হওয়ায় ‘রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা’ চাওয়ার বিষয়টাকে তিনে আগে থেকেই আকীদা বিরোধী বলে মনে করতেন। তিনি মনে মনে এবিষয়টার একটা হাল করার জন্য নিজে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন। মাহামান্য রাষ্ট্রপতি বিষয়টা আইন মন্ত্রী এবং জেল সুপারকে অবহিত করে পরামর্শ্ব চাইলেন।
- স্যার আপনার অনুমতি পেলে আমি একটা পরামর্শ্ব দিতে চাই।
- হ্যা বলুন।
- স্যার, আপনার সাথে আমি একমত যে ‘রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়া’ আকিদা বিরোধী কাজ তাই যারা পরকালে বিশ্বাসী এবং মজবুত ঈমানের অধিকারী তারা এ সুযোগ গ্রহণ না করায় অনেক সময়ই ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় সবাই যেন ন্যায় বিচার পায় তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব।
- হ্যা তা তো বুঝলাম, কিন্তু প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার বিকল্প কি?
- স্যার বিকল্প আছে।
- যেমন?
- ===========৩৭
বিষয়: সাহিত্য
১৪২৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
হেডিং দেইখাই তো মাথা আউলা হইয়া গেল। আঙ্গো দেশে সরকার পারিলে বিয়া ভঙ্গ কইরা দেয়, মামলা দেয়, জরিমানা করে, পুলিশ মাইয়া লোগের বুকে হাত দিয়া অনুমান কইরা লয় ১৮ সাল হইছে নি।
আর আমনে হেডিং মারছেন উল্টা, বুইঝলাম না ব্যাপার খানা কি
বেআক্কেল হয়েও আক্কেল সম্পন্ন প্রশ্ন করায় ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ বদ্দা।
ইয়েস ২/১ দিনের মধ্যেই দিব ইনশা'আল্লাহ।
মা শা আল্লাহ দারুন
ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভ কামনা।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন