ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩৫'তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৯ জুন, ২০১৫, ১২:৪৮:৪৮ দুপুর
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩৫'তম পর্ব)
মন না চাইলেও সময় শেষ হওয়ায় সাদীকে পুনরায় ফিরে যেতে হল ফাঁসির সেলে। সাময়িক অমূল্য কয়েকটা মুহুর্ত ফুরিয়ে গেলে সাদীর শেষ হয়ে আসা দুনিয়ার জীবন থেকে। সাদী তৃপ্তির সাথে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করল। যে দুটো বিষয় সাদীকে প্রেশানীর মধ্যে রেখেছিল তার সমাধান হয়ে যাওয়ায় সাদী এখন আনন্দ চিত্তে ফাঁসির মালা গলায় পড়তে পারবে। তবে শায়লা যে দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছে তা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে পারবে কিনা সেজন্য ভয় হচ্ছিল।
যা হবার তা হয়ে গেছে। চাইলেও এখান থেকে ফিরে আসার সুযোগ নাই তাই সাদী হৃদয় বিগলিত আবেগ দ্বারা আল্লাহর কাছে শায়লার জন্য দুয়া চাইল যাতে সে তার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারে।
===========৩৫
সাদীকে বিদায় দিয়ে ফজরের নামায পরে কাল বিলম্ব না করেই শায়লা জেল সুপারের রুমে চলে গেল। সুপার সাহেব সারা রাতই অফিসেই ছিলেন! এমন বিপদজনক কাজ করে রাতে বাসায় ফিরে যেতে মন তাকে সায় দেয়নি। সাদী এবং শায়লার জন্য সে সারা রাত জেগেছিল। নিজের সন্তানের জন্য হয়ত এমনটা অনেকেই বা সবাই করেন কিন্তু মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত একজন আসামির জন্য এমন কাজ কোন জেল সুপার কোন কালে করেছে বলে দৃষ্টান্ত নাই।
দরজায় নক করে সালাম দিয়ে অনুমতি চাইলে সুপার সাহেব শায়লাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিল। শ্রদ্ধায় আর লজ্জায় শায়লা সুপার সাহেবের দিকে তাকাতে পারছিল না। পরিবেশটাকে হালকা করার জন্য সুপার সাহেবই প্রসঙ্গ তুল্লেন।
- দেখত শায়লা, ওয়াকিল তার মোবাইলে তোমাদের বিবাহের ভিডিও করেছে।
- হ্যা স্যার! চমৎকার হয়েছে। দুই মিনিটের এই ভিডিওটা দুই ঘন্টার হতে পারত কিন্তু তা হয় নাই। সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছা।
- দেখ সাদীর অন্যান্য বন্ধী বন্ধুরা।
- স্যার! স্যার! স্যার! রিওয়ার্ড প্লিজ রিওয়ার্ড প্লিজ।
- হ্যা, কি ব্যাপার?
- স্যার এইযে ছেলেটা, এই ছেলেও কি এখানে বন্ধি?
- হ্যা। আমার জানামতে ওরা সবাই বন্ধী। হল রুমে সাদী ওয়াকীল আর বন্ধী সাদীর বন্ধুরা ছাড়া আর কেউ ছিল না।
- স্যার প্লিজ আমার মোবাইলের এই ভিডিও ক্লিপটা একটু খেয়াল করে দেখুন তো।
- হ্যা দেখলাম।
- স্যার, ভিডিও ক্লিপে আইডেন্টিফাইড ছেলেটার সাথে এই ছেলেটার চেহারা মিলে যাচ্ছে না?
- হ্যা একেবারেই মিলে যাচ্ছে এবং সাদীর চেহারার সাথেও যথেষ্ট মিল রয়েছে।
- ইয়েস স্যার। আমার মনে হয় ক্লু পেয়ে গেছি। এই ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েই সাদীকে শাকিল হত্যার স্পটে উপস্থিৎ দেখিয়ে মৃত্যদন্ড দিয়েছে।
- তাই নাকি?
- আমি নিশ্চিত স্যার। আপনি দয়া করে ছেলেটার সাথে দেখা করার একটু সুযোগ করে দিন।
- তোমাকে দেখা করতে হবেনা আমিই তাকে ডেকে পাঠাচ্ছি।
সুপার সাহেব ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে দুজন সেন্টিকে পাঠিয়ে দিলেন বন্ধী শরিফকে ডেকে আনার জন্য। যথা সময় শরিফকে নিয়ে সেন্টিরা চলে এল। শরিফ ভেবেছিল হয়ত উপরের কোন নির্দেশে তার মুক্তির ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু সুপার সাহেবের রুমে সাদীর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে দেখে শরিফ ভরকে গেল।
- তোমার নাম কি বেটা?
- শরিফ।
- বেটা, তোমার কাছে কয়েকটা প্রশ্ন করব যদি সঠিক জবাব দাও তাহলে সাদীকে হয়ত মুক্ত করা যেতে পারে।
- কি বলেন স্যার? সাদী ভাইর জীবন রক্ষার জন্য কয়েকটা প্রশ্নের জবাব কেন জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি।
- সাবাস মাই বয় সাবাস। আচ্ছা গত রাতের অনুষ্ঠানে তুমিও উপস্থিত ছিলা তাই না?
- হ্যা স্যার ছিলাম।
- ভিডিও ক্লিপে ১মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের এই সিনে তুমি তাই না?
- হ্যা।
- একটু খেয়াল করে দেখ, তোমার সাথে সাদীর চেহারা কত মিল তাই না?
- হ্যা স্যার। সাদী ভাইকে প্রথম যে দিন দেখেছি সেদিনই আমার চেহারার সাথে তার চেহারার মিল পেয়েছি। সাদী ভাইকে বলেছিলাম যদি আমার একটা বড় ভাই থাকত তাহলে সে নিশ্চয়ই আপনার চেহারার হত।
- হুম! তাহলে সাদীর নাম পরিবর্তন করে যদি শরিফ রাখি আর তোমাকে সাদী বানিয়ে যদি ফাঁসির সেলে রেখে আসি তাহলে কেমন হয়? সাদী বেচে যাবে, শায়লা তার স্বামীকে কাছে পাবে আর সাদীর পরিবর্তে তোমার ফাসি হবে।
- ইয়েস স্যার তাই করুণ। আমার মত পাপি বান্দার দুনিয়ায় বেচে থাকার অধিকার নাই। জীবনে এমন কোন অপরাধ নাই যা করিনি। জেলখানায় সাদী ভাইর দেখা পেয়েছি বলে শ্রষ্ঠাকে চিনতে পেরেছি। জীবনে কোন অন্যায় করব না বলে প্রতি জ্ঞাকরেছি। আমার নষ্ট এই জীবনের বিনিময় যদি সাদী ভাইর মত সুন্দর মনের একজন মানুষের জীবন রক্ষা পায় তাহলে আমার কোন আপত্তি নাই বরং আপনি এটাই করুণ স্যার। আপনার কাছে মিনতি করছি স্যার আপনি যা বলেছেন তাই করুণ। তবে একটা অনুরোধ করব স্যার, আমার বৃদ্ধ আলেম বাবা আর দীনদার বৃদ্ধা মায়ের কাছে সাদী ভাইকে তাদের ছেলে শরিফ হিসেবে ফেরত দিতে হবে। আমার উশৃঙ্খলতার কারণে তারা আমাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু আমি জানি তারা আমার অনুপস্থিতিতে কতটা অসহায় জীবন জাপন করছে। পাঁচ মেয়ের পর আমি তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান। শেষ বয়সে তাদের একজন পুত্র সন্তানের যে কত প্রয়োজন তা হয়ত আপনিও বুঝতে পারছেন স্যার। সাদী ভাই আমার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছেন। মনে মনে ভেবেছিলাম জেল থেকে বেড়িয়ে সব মান অভিমান ভুলে মায়ের কাছে ফিরে যাব। তাদেরকে গিয়ে বলব দেখ মা, দেখ বাবা তোমাদের সহজ সরল সেই শরিফ তোমাদের কোলে ফেরেৎ এসেছে। তোমরা যেই অবাধ্য শরিফকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে আমি সেই শরিফ নই।
স্যার, আমার জায়গায় যদি সাদী ভাই শরিফ হয়ে শায়লা ভাবিকে সাথে নিয়ে আমার মা বাবাকে শেষ জীবনে দু’দন্ডের জন্য শান্তি দেয় তাহলে এর চেয়ে আমার কাছে মূল্যবান আর কিছুই নাই। আমার মা-বাবা, সাদী ভাই আর শায়লা ভাবির জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করতে আমি প্রস্তুত।
প্রতিটা মানুষের ভিতরেই একটা সুকুমার বৃত্তি আছে, সময় মত তা জাগ্রত করতে পারলে, সে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। যেমনটা শরিফ অজানা অচেনা রক্তের বন্ধন হীন ক্ষণিকের পরিচিত সাদীর জন্য জীবন দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তার প্রমাণ রেখেছে!
===========৩৬
বিষয়: সাহিত্য
১৬৩০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ
ধন্যবাদ।
ঈদ মুবারক
ধন্যবাদ আপু।
দেরী হয়ে গেল, এ পর্বও দারুন হয়েছে।
জাযাকাল্লাহ খাইর
ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভ কামনা।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন